উৎপলের উৎপাত আর কত?

আগেই বলে রাখি যে আমি ক্রিকেটবোদ্ধা নই, ক্রিকেটপ্রেমীও নই। টিভির সামনে টানা বসে ক্রিকেট খেলা দেখিনা, ধৈর্য হয়না। টুয়েন্টি-টুয়েন্টি, ওয়ান্ডে বা টেস্ট যাই হোক না কেন – বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ম্যাচ শেষে ফলাফলটা জেনে নেই। ওটাই আমার জন্য অনেক কিছু। তবে বাংলাদেশের খেলা থাকলে অবশ্য অন্য কথা। টেস্ট ছাড়া বাকী দুটো’র জন্য কিছুক্ষণ পর পরই আপডেট জানা দরকার হয়ে পড়ে। সোজা কথা, দর্শক হিসেবে বাংলাদেশের একজন সাধারণ মাপের দর্শকের চেয়েও আমার অবস্থান অনেক নিচে। ক্রিকেটের প্রতি টান নেই, তবে টান রয়েছে বাংলাদেশের প্রতি। তাই ক্রিকেট খেলতে যখন বাংলাদেশ মাঠে নামে, তখন এই টানটাই আমাকে সেই ম্যাচে বুঁদ হয়ে থাকতে অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই আমার এই লেখাটিকে ক্রিকেটিয়-বিশ্লেষণ ধরণের কিছু মনে করবার কোন কারণ নেই। গত কয়েকদিন ধরে উৎপল শুভ্র নামের এক সাংবাদিকের হাগড়পাগড় রিপোর্টিং পড়ে নিতান্তই মেজাজ খারাপ হয়ে এই লেখাটির জন্ম।


মাঝে মাঝে খুব অবাক হই যখন তাকিয়ে দেখি যে ২৩-২৪ বছরের ছেলেগুলো কী দৃপ্তভাবে সামনে থেকে আমার হত দরিদ্র দেশটিকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে! যখন ২৩-২৪ বছরের নিজের দিকে তাকাই, যখন চিন্তা করি যে ষোল কোটি মানুষকে তুলে ধরা ঐ ছেলেগুলোর তুলনায় আমি নিজে কি করেছি, তখন ছেলেগুলোর জন্য এক ধরনের গর্বে বুক ভরে যায়। ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন সাকিবের কথাই ধরুন। ষোল কোটি মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে ছেলেটি ১১ জনের একটি দলকে বিশ্ব পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমার ২৩ বছর বয়সে যদি আমাকে এই কাজটা দেয়া হত তাহলে ভয়ে আদৌ নিতাম কিনা কে জানে! অবশ্য আমার নেয়ার আগেও বড় কথা হচ্ছে আমাকে দেয়া হত কিনা! আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি, খেলাটাকে উপভোগ করার যোগ্যতা থাকলেও খেলাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় দলের অধিনয়াকত্ব করার নূন্যতম যোগ্যতাও আমার নেই। যে কাজে আমার যোগ্যতা নেই, সেই কাজটিই যখন তরুণ একজন ছেলে অসম্ভব অবিচলভাবে দৃপ্ততার সাথে করে চলেছে তখন তাকে স্যালুট জানাতেই হয়। সতেরই ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজেদের অধিনায়ককের তাই দেশের মানুষ বরণ করে নিয়েছিল তুমুল হর্ষধ্বনির মাঝ দিয়ে। সেই হর্ষধ্বনি কিন্তু বাংলাদেশ দলের প্রতি দেশের মানুষের বিশ্বাস ও ভালোবাসার অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ। সাকিব আল হাসানকে যখন অধিনায়ক করা হয় তখন তার যোগ্যতা, তার মেধা, তার অতীত পারদর্শীতা, সর্বোপরি তার জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা – সব কিছুকেই বিচার করা হয়েছে। সাকিবকে অধিনায়ক ঘোষণার পর কাউকে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কোন ধরনের আক্ষেপ পর্যন্ত করতে শোনা যায়নি, বরং সবাই আশস্তই হয়েছিল! কারণ সাকিব আল হাসান লোকজনের কাছে সেই বিশ্বাস অর্জন করেছিল।


ভীষণ ব্যস্ততায় ইদানিং দিন কাটাচ্ছি। এরই মাঝে সময় বের করে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতে বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা দেখলাম। আগেই বলেছি ক্রিকেট বুঝিনা। তারপরও ভারতের বিশাল রানের পাহাড় দেখে মন খারাপ হয়েছিল, কিন্তু তামিম আর ইমরুলের ব্যাটিং সূচনা দেখে সেই মন খারাপ ভাবটা বেশিক্ষণ থাকেনি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচে হেরে গেলেও অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে নিজের ভেতরের মন খারাপ ভাবটা আর ছিলনা। বাংলাদেশের “বিনা যুদ্ধে নাহি দেব ছাড়” ধরণের মানসিকতাটা ছিল দেখার মত। দ্বিতীয় ইনিংস দেখে একবারও মনে হয়নি যে বাংলাদেশ খেলা নিয়ে বিচলিত, তারা আগে থেকেই হার মেনে নিয়েছে – বরং ভারতের মাঝেও একসময় আতংক তৈরি করেছিল। খেলা শেষে যার সাথেই কথা হয়েছে কারো মুখে বাংলাদেশ দলকে আক্রমন করে কিছু বলতে শুনিনি, তাই ভেবেছিলাম যে দলের স্পোর্টসম্যানশিপে সবাই খুশি। ভুল ভেবেছিলাম। সবাই যে খুশি নয় সেটা জানতে পারলাম পরদিন – প্রথম আলোর সাংবাদিক উৎপল শুভ্র’র লেখা পড়ে!


২০শে ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে “পরাজয়ে প্রাপ্তি ভবিষ্যতের রসদ” নামে উৎপল শুভ্র’র একটা লেখা বের হয়। লেখাটার প্রায় প্রতিটি লাইনেই বাংলাদেশ দলের পারফর্ম্যান্সে লেখকের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। এক পর্যায়ে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্তের জন্য সাকিবকে কাটাছেঁড়া করে ফেললেন। তারপর দিন ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সাকিবের এক সাক্ষাৎকারে একই লেখক সাকিবকে পুরোপুরি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একের পর এক আক্রমন চালিয়ে গেলেন। লেখাটাকে সাক্ষাৎকার না বলে বরং পুলিশি জেরা বললে আরো মানানসই হয়। যেকোন মূল্যেই তিনি চাচ্ছিলেন সাকিবের মুখ থেকে শুধু একটি কথা বের করতে যে “টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে আমি ভুল করেছি!“। তার জেরার শিরোনামটাই ছিল “টস নিয়ে এত কথা বলার কারণ দেখছি না“, পড়ে মনে হচ্ছে যেন সাকিব তার টসে করা ‘ভুল‘টাকে ধামাচাপা দিতে চাইছেন। সেই সাক্ষাৎকারে (পড়ুন ‘জেরা’) করা কয়েকটি নমুনা প্রশ্ন দেখুনঃ

  • টসে জিতে আপনার ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত তো এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’…
  • আমজনতার মুখে মুখে একটা কথা ফিরছে, বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করলে ভারত চাপে পড়ে যেত। আপনি একমত?
  • ঠিক আছে, আপনি ক্রিকেটীয় যুক্তিবুদ্ধি দিয়েই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিং-তাণ্ডবের সময় কখনো ‘ভুলই করলাম কি না’ মনে হয়নি?
  • আলোচনাটা কি টিম মিটিংয়ে হয়েছে, নাকি টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে?
  • প্রশ্নটা আবার করছি, ভারত ৩০ ওভারেই ২ উইকেটে ১৬৯ করে ফেলার পর সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়েছে কি না, এ নিয়ে নিজের মধ্যে একটুও দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়নি?
  • সিদ্ধান্তটা বুমেরাং হয়ে যাওয়ার মূল কারণ কী?
  • ৩৭০ হয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ কারণ তো বীরেন্দর শেবাগ। ও যখন ওভাবে মারছিল, অসহায় লাগছিল না?
  • এই ম্যাচ নিয়ে এমন হাইপ, মাঠভর্তি দর্শক—টস করতে নামার সময় কি একটু নার্ভাস লাগছিল?
  • ৩৭১ টার্গেট হয়ে গেলে অধিনায়কের কী-ই বা বলার থাকে! তার পরও জিজ্ঞেস করি, ব্যাটসম্যানদের আপনি কী বলেছিলেন?

বাংলাদেশ এখন আর সেই অবস্থায় নেই যে কেবলমাত্র “আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি” সেই আনন্দেই সবাই ভাসছে, বরং বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত। প্রতিটি ম্যাচেই জয়ের লক্ষ্য নিয়েই খেলতে নামে। ভারতের বিপক্ষের ম্যাচ হারায় স্বভাবতই দলের মানসিক অবস্থা খারাপ থাকার কথা, আর এ খারাপ সময়ে দলকে সামনের ম্যাচের জন্য চাঙ্গা করে রাখাটাও জরুরি – এটা বোঝার জন্য মনস্তত্ববিদ হবার দরকার পড়েনা। অথচ আমাদের সাংবাদিক সাহেব যেন সেই কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে আনন্দ অন্বেষণে ব্যস্ত! কেন সাকিব টসে জিতে ফিল্ডিং নিলেন, সেই গূঢ় তত্ত্ব জানতে তিনি বদ্ধ পরিকর। তাই ২২শে ফেব্রুয়ারির পত্রিকায়ও দেখা গেল যে “ঝিমিয়ে পড়ল কি বিশ্বকাপ-নগর!” লেখাটিতেও বাংলাদেশ দল কেন নিজেদের উজ্জীবিত করতে শহীদ মিনারে যায়নি সেটা নিয়ে শেষ লাইনে সাকিবকে খোঁচাতে কার্পণ্যবোধ করেননি। শহীদ মিনারে গিয়ে দল মানসিকভাবে চাঙ্গা হত ঠিকই কিন্তু তাই বলে কেন যায়নি সেটা নিয়ে মায়াকান্না করার কোন কারণ তো দেখিনা। একটা কারণ হতে পারে – সাকিবের দোষ ধরা! তার লেখার শেষ লাইনটি ছিল এরকম – “ভালো তো হতোই। কিন্তু বাংলাদেশ দলে এভাবে ভাবার লোক কোথায়?” এর মানে কি? সাকিব দল নিয়ে ভাবেননা? সব ভাবনা কেবল আমাদের উৎপল শুভ্র’র মাথায়?


দান দান তিন দান” কিংবা “দিন দিন তিন দিন“! পর পর তিন দিন ধরে উৎপল শুভ্র সাকিবকে খুঁচিয়েই যাচ্ছেন। খুব জানতে ইচ্ছা করে কেন করছেন তিনি এটা? তিনি কি জানেন যে কত রকম বিচার বিশ্লেষণ আর পরীক্ষার নীরিক্ষার মাধ্যমে একজন অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়? তিনি কি জানেন না যে টস জিতে ব্যাটিং বা ফিল্ডিং নেবার স্বিদ্ধান্ত কেবল মাত্র অধিনায়ক নেননা? তিনি কি জানেননা বাংলাদেশ দল গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটা খেলেছে তাদের প্রথম খেলায়? তিনি কি জানেন যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আরো ম্যাচ বাকী রয়েছে? মনে হয়না। নাহলে চলমান একটা টুর্নামেন্টে নিজের দেশের অধিনায়কের পেছনে এভাবে আদাজল খেয়ে লাগার অর্থ কি? সাবোটাজ? এ ছাড়া তো আর কিছু মাথায় আসছেনা? তিনি কি ইচ্ছে করেই সাবোটাজ করছেন? ইচ্ছে করেই ভেঙ্গে দিচ্ছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মানসিক শক্তি? সামনের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ যদি খারাপ করে তবে আমার তর্জনী উঠবে উৎপল শুভ্রের দিকে। আমি সব দোষ দিব উৎপল শুভ্র নামের ঐ লোকটাকে, যে কিনা আমার অধিনায়ককে হায়েনার মত নির্লজ্জভাবে কাটাকুটি করেছে!


সাকিব এই অংশটুকু তোমার জন্য ভাই! তুমি যে মাঠে স্পোর্টসম্যানশিপ আর মাঠের বাইরে স্পোকম্যানশিপের পরিচয় দিয়েছ সেটা সত্যিই অতুলনীয়। সত্যি বলতে কী আমার নগন্য ক্রিকেটিয় বিদ্যায় আমি যা বুঝি যে, বাংলাদেশ খুব ভাল এবং যোগ্য একজন অধিনায়কের হাতে রয়েছে, যে কিনা গত কয়েকমাসে আমাদের বড় বড় স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। উৎপল শুভ্ররা ক্ষণিকের অতিথি, এদেরকে কেউ মনে রাখেনা, মনে রাখবেওনা। দেশের লোক উৎপল শুভ্রকে চেনেনা, ওরা চেনে তোমাকে। তাই তো তুমি যখন রিকশা চড়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রবেশ করলে দেশের লোক সজোরে করতালি দিয়ে তোমাকে বরণ করে নিয়েছিল। উৎপল শুভ্ররা কখনোই তোমাকে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারবেনা, তাই ভুলে যাও সেসব লোকদের কথা। ষোল কোটি মানুষের লাল-সবুজ পতাকাটিকে তুমি তোমার দলকে সঙ্গী করে এগিয়ে নিয়ে যাও – আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।


আর কিছু বলার নেই, কেবলমাত্র নিচের ভিডিওটি ছাড়া!


লেখাটি সচলায়তনে প্রকাশিত।

বাংলাদেশের সমর্থকদের প্রতি জাতীয় ক্রিকেট দলের বোলিং কোচের আহবান!

বিশ্বকাপকে সামনে রেখে গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারিতে বাংলাক্রিকেট ফোরাম এ বাংলাদেশী ক্রিকেট সমর্থকদের প্রতি একটি আবেদন জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বোলিং কোচ ইয়ান পন্ট। মূল ইংরেজি ভাষায় করা পোস্টটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগের বাবুবাংলা। একই সাথে তাঁর এই বার্তাটুকু যতটুকু সম্ভব সবার কাছে পৌঁছে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। সবার কাছে বার্তাটি পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যে কোচের লেখা “Request to fans” নামের মূল লেখাটির বঙ্গানুবাদ (অনুবাদকের সাথে যোগাযোগের কোন উপায় না পেয়ে অনুবাদকের অনুমতি ছাড়াই) আমার ব্লগে পোস্ট করছি।

world cup cricket 2011

সমর্থকদের প্রতি আবেদন

বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের কাছে ক্রিকেট যে কি বিশাল এক আবেগের নাম, তা আমরা বুঝি। আমি, ইয়ান পন্ট আর বাংলাদেশ দলে আমার সহকর্মী জুলিয়ান ফাউন্টেইন; আমরা দুজনই ইংল্যান্ডের মানুষ- সেখানে বার্মি-আর্মি নামের ক্রিকেট সমর্থকগোষ্ঠীও অনেকটা একই রকমভাবে মনে প্রানে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে সমর্থন করে।

তবে পার্থক্যের জায়গাটা বোধহয় এটুকুই যে, বার্মি-আর্মিরা এ পর্যন্ত কখনোই তাদের নিজের দলের খেলোয়াড়দের অপমানিত করে দুয়োধ্বনি দেয়নি। সব ব্যঙ্গ-তামাশা আর কটুক্তি তারা যেন জমা করে রাখে শুধু প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের জন্য। এই ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপুর্ণ; কারন ভক্ত সমর্থকেরা দলেরই একটা অংশ। তাই প্রকৃত সমর্থকেরা শত ব্যর্থতায়ও নিজের দলের খেলোয়াড়দের দুয়োধ্বনি দিয়ে অপমানিত-লাঞ্ছিত করতে পারে না, কখনোই না। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রতিটি দর্শক-সমর্থক অবিচল ঐক্যে দলের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেরাই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ দলের এক একজন সহকর্মী কিংবা দ্বাদশ খেলোয়াড়। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের এই বড় আসরে বাংলাদেশের দর্শক-সমর্থকেরা এভাবেই দলের জন্য রাখতে পারে বিশাল ভুমিকা।

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ চায় দলের সব কোচ আর খেলোয়াড়েরা নিঃস্বার্থ ভাবে একে অন্যকে সহযোগিতা করুক, দল ও দেশের জন্য নিজেদের সব সামর্থ্য উজাড় করে দিক। এই দেশের প্রতিটি মানুষ চায় দলের বিপদের মুহূর্তে প্রত্যেকে সামর্থ্যের প্রতিটিকণা ঢেলে দিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একাট্টা হয়ে লড়াই চালিয়ে যাক।

আমরা চাই বাংলাদেশ দলের সমর্থকেরাও ঠিক একই দৃঢ়তা আর প্রতিজ্ঞা নিয়ে দলের জন্য নিজেদের উজাড় করে দিক।

দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ কি হাতে হাত রেখে বাংলাদেশ দলের পাশে এসে দাঁড়াবে না? এ আমার একান্ত চাওয়াঃ জয়-পরাজয় যাই আসুক, বাংলাদেশ দলের পাশে দাঁড়ান। হৃদয়ের সব আবেগ দিয়ে দুর্বিপাকের মুহুর্তেও দলের পাশে থাকুন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের আজ এটি এক জাতীয় দায়িত্ব। মনে প্রানে যে দলকে ভালোবাসে, সে কখনোই দলের বিপদের মুহূর্তে তীব্র হতাশায় হাল ছেড়ে দিতে পারে না, পারে না দুয়োধ্বনি দিয়ে নিজ দেশের খেলোয়াড়দের মনোবল চুর্ণ করে মাঠের লড়াইয়ে নিজেদেরকেই পিছিয়ে দিতে।

আমাদের মনে রাখা দরকার মাঠে গালি গালাজ বা কটুক্তি করলে আমরা কেবল আমাদের নিজদের খেলোয়াড়দেরই ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবো। বিদেশী খেলোয়াড়েরা আমাদের ভাষা জানেও না, তাই দর্শকদের হতাশা তাদের কোনভাবেই প্রভাবিত করবে না। দর্শকের দুয়োধ্বনিতে যদি কারো পারফর্মেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তা পড়বে কেবল আমাদের খেলোয়াড়দেরই উপর।

তাই আসুন জয়-পরাজয়ে, সাফল্য-ব্যর্থতায়, সব সময়ে মনে প্রাণে বাংলাদেশ দলের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা এবারের বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিই-দলের সমর্থনে, নিজ দেশের জন্য ভালোভাসায় আমাদের সমতুল্য আর কেউ নেই। দেখিয়ে দেই, আমাদের খেলোয়াড়েরা আমাদের গর্বের ধন। দেখিয়ে দেই বাংলাদেশের ১৪ কোটি মানুষের হৃদয়ে তারা এক একজন সংশপ্তক- শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যারা এই দেশের সন্মানের জন্য, বিশ্বকাপ জয়ের জন্য প্রানপনে লড়ে যায়।

এটি বিশ্বকাপ- সব খেলোয়াড় কিছুটা হলেও মানসিক চাপ অনুভব করবে, খেলার মাঠে যা জন্ম দিয়ে পারে নানা ভুলের। মানসিকের চাপের মুখে খেলোয়াড়েরা কোন ভুল-ভ্রান্তি করলে দর্শক-সমর্থকদের প্রানঢালা সমর্থনই হয়ে উঠবে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় আশার সম্পদ। আমাদের দর্শক-সমর্থকদের শতভাগ সমর্থনই পারবে বিশ্বকাপের বড় আসরে খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তি যোগাতে আর সাহায্য করবে সব ভুল কাটিয়ে উঠতে।

আমি কাছ থেকে দেখেছি, নিউজিল্যান্ড দল মিরপুরে আমাদের দর্শকদের বিপুল সমর্থন আর চিৎকারের মুখে কি ভীষন দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। দর্শকদের উল্লাস ধ্বনিতে তাদের কান ফেটে যাবার দশা হয়েছিল। বিশ্বকাপে আমি এটাই চাই। দর্শকদের এই প্রবল সমর্থনই আমাদের শক্তি। আমি চাই আমাদের ব্যাটসম্যানদের প্রতিটি রানের পর আনন্দ-হুঙ্কারে ফেটে পড়ুক সমস্ত স্টেডিয়াম। আমাদের বোলারদের প্রতিটি উইকেটের পর দর্শকের উল্লাস ধ্বনি সাত আসমান ছাড়িয়ে যাক। আর প্রতিপক্ষের যে কোন অর্জনকে যেন আমরা স্বাগত জানাই পিন-পতন নিস্তব্ধতায়। এই হুঙ্কার আর নিস্তব্ধতার আলো-ছায়ার খেলা বিচলিত করে দিতে পারে যে কোন প্রবল শক্তিশালী প্রতিপক্ষকেও। আসুন বাংলার মাটিতে খেলতে আসা সব প্রতিপক্ষের পায়ের নিচের মাটি আমরা কাপিয়ে দেই কানফাটানো আওয়াজ আর লাল-সবুজ পতাকায় স্টেডিয়াম ছেয়ে দিয়ে।

দেশের মাটিতে এবারের এই বিশ্বকাপ। এই শিরোপা জয়ের আকাঙ্ক্ষা অন্তরে ধারন করেই আমাদের দল মাঠে নামবে। দলের এই লড়াই তাদের একার নয়, আমাদের প্রতিটি দর্শক-সমর্থক এই লড়াইয়ের অংশীদার। আর অংশীদারিত্বের সাথেই আছে কিছু দায়িত্ব। আমরা আমাদের দেশের সন্তানদের কটুক্তি করবো না, দুয়োধ্বনি তুলবো না। যারা দেশের খেলোয়াড়দের লাঞ্ছিত করে, তারা আমাদের দলের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নের সারথী হতে পারে না। আসুন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই বিশ্বকাপ জয়ের লড়াইয়ে সামিল হই। বাংলাদেশ দল দেশের মানুষের জন্যই এই লড়াইটুকু করতে চায়। আমরা চাই দেশের সব দর্শক-সমর্থক বিশ্বকাপ উপভোগ করুক। আমরা নিজেরাও চাই এই বিশ্বকাপ উপভোগ করতে আর বিশ্বকাপে আমাদের প্রতিটি সাফল্য বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের সাথে ভাগ করে নিতে।

প্রতিটি খেলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ান—একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত।

বিনীত
ইয়ান পন্ট
বোলিং কোচ, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল


বাংলাক্রিকেট ফোরামে ইয়ান পন্টের কথা মূল পোস্টঃ Requests to fans
সামহোয়্যারইন ব্লগে বাবুবাংলার করা বঙ্গানুবাদঃ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে জাতীয় ক্রিকেট দলের বোলিং কোচ ইয়ান পন্টের বিশেষ আহ্ববান

শুভ জন্মদিন আইওটু!

আজকে বিখ্যাত ১২ই জানুয়ারি। তারিখটা বিখ্যাত কারণ এরকমই এক ১২ই জানুয়ারির শীতের সকালে, দৌড় শুরু করে আইইউটির আইওটু (বা আইইউটিয়ান্স-জিরো-টু) ব্যাচটি। অন্য ব্যাচগুলো হেঁটে হেঁটে শুরু করেছিল কিনা জানা নেই, কিন্তু আমরা (বিশেষ করে আমি) আক্ষরিক অর্থেই দৌড় দিয়ে শুরু করেছিলাম আমাদের আইইউটি জীবন! সে বছরের জানুয়ারির ১২ তারিখের সকালবেলাটা ছিল পুরো কুয়াশাঢাকা একটা সকাল। এত ঘন কুয়াশা ছিল যে জানালা দিয়ে বাইরে অন্ধকার দেখা যাচ্ছিল, ফলে ঘুমের রেশ কাটিয়ে যখন বুঝতে পারলাম যে সকাল বেশ কিছু আগেই হয়ে গিয়েছে তখনই শুরু হল দৌড়ঝাঁপ। আমার মত আশপাশের রুমগুলোর ছেলেপেলের মাঝেও দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই দৌড়ঝাঁপ দিয়েই আইইউটি জীবন শুরু!

IUT Bangladesh

সেই যে শুরু হল, এরপর কালে কালে কেটে গেল অনেকটা সময়। সেই সময় শুধুই সমৃদ্ধ হবার সময়। পেলাম দিপু-মিফতাহ’র মত অসাধারণ দুই রুমমেট-বন্ধু। পাশেই ছিল শাহান, সাদ, ইমন, সর্প, শাদিদ, সিনা, তাসনিম, বলদা, বিলাই, মীম, ব্যাঙ, লালের মত চমৎকার কিছু প্রতিবেশী। সেই সাথে ছিল জাপানী, ষান্ডা, ঘাসা, বগলা, এঁইরঁকি, লাল-রকি, গুখা, আফসানা, পাঁচু-জামিল, ওয়ালা-জামিল, কোকেন, হাফব্লাড-আশেক, পাখি, কাদু, পাগলা-সবুজ, আঁতেল-সবুজ, কাউয়া, বন্ধু, গাবড়, ম্যাচো, দাদা, চুনু, চিকি, মহেষ, আব্বু, ভাতিজা, সখিনা, গরীব-আজমান, বদু, রাতুল, মোয়াক্ষার, পারু, শাকিল, রায়হান, মালেক, ভাই-তুষার, কপি-জাকি, হাসান-ভাই, ফুয়াদ, মিষ্টি, আলোকিত-সাজেদ, হ্যান্ডসাম-সাদাত – আরো কত জন! সবার নাম-ধাম লিখতে গেলে এই লেখাটাই বিশাল একটা রোলকল খাতা হয়ে যাবে! খুব মিস করি সেই জীবনটাকে, যেই জীবনটাতে সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই কোনমতে জামাকাপড় পাল্টে ক্লাসে গিয়ে চোখ কষ্ট করে খোলা রেখে লেকচার শুনতে হত, ১৫ মিনিটের ক্লাসব্রেকে ক্যান্টিনে গিয়ে সকালের নাস্তা সারা হত, ক্লাসের ফাঁকে রেলিংএ পা ঝুলিয়ে আড্ডা মারা হত, কম্পিউটার ল্যাবে গিয়ে ইমেইল চেক করা হত, লাঞ্চের পর বিছানায় চিৎপটাং ঘুম দেয়া যেত, বিকালে সবাই দলবেঁধে একসাথে হাঁটাহাঁটি করা হত, শাহী মামা’র দোকানে পুরি-সিঙ্গারা খাওয়া হত, রাতের ডিনার সেরে আইইউটিকে (প্রায়) একটা চক্কর দিয়ে হাঁটা হত, তারপর রুমে ফিরে আজাইরা গ্যাঁজানো হত, কখনো কখনো সবাই মিলে ছাদে গিয়ে পানির ট্যাংকের উপর বসে থাকা হত, বোনাস হিসেবে বিলাইয়ের গান শোনা হত – আরো কত কী! সেই জীবনটাতে রঙের ছড়াছড়ি অনেক বেশি ছিল। সেইসব দিনগুলোর সাথে তুলনা করলে এখনকার জীবন অনেক বেশি পানসে লাগে। রঙিন ঐ জীবনটার শুরু হয়েছিল সেই বারই জানুয়ারিতে।

এখনো যখন পেছনে ফিরে দেখি, মিস্তিরি হবার প্রত্যয়ে শুরু করা সেই দিনটা আজও প্রেরণা যোগায়। এ দিনটা ছিল আমাদের শুরুর বিন্দু, আমাদের নতুন জীবনের সূচনা লগ্ন, জিরোটু ব্যাচের জন্মক্ষণ, আমাদের ব্যাচের জন্মদিন, আমাদের জন্মদিন! শুভ জন্মদিন আইইউটিয়ান্স-জিরো-টু ব্যাচ। কেমন আছিসরে সবাই? তোদের অনেকের সাথেই সেভাবে যোগাযোগ নেই, অনেকেই আমার মত দেশের বাইরে, অনেকে একলা থেকে দোকলা হয়ে তেকলা-চাকলাও হয়ে গিয়েছিস, তারপরও যে যেখানেই থাকিস না কেন সবার প্রতি হৃদয়ের গভীর থেকে শুভ কামনা রইল।

শুভ জন্মদিন দোস্তরা!

ল্যাম্প (LAMP) ইন্সটলেশানের সহজ তরিকা

ওয়েব ডেভেলপের সাথে যারা জড়িত, তাদের সবারই লোকালসার্ভার প্রয়োজন হয়। লোকাল সার্ভার হল নিজের কম্পিউটারে তৈরি করা একটা সার্ভার। ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, ড্রুপাল বা যেকোন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করতে হলে লোকাল সার্ভারে আগে ডেভেলপ করে পড়ে সেটা অনলাইনে উন্মুক্ত করা হয়। সহজ কথায়, কোন সাইট ডিজাইন করার সময় বা কোন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করার সময়, ইন্টারনেটে বা অনলাইনে চালু করার আগে যতরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, তার প্রায় সবই করা হয় লোকাল সার্ভারে। এই লোকাল সার্ভার একজন ডেভেলপার তার কম্পিউটারে স্থাপন করে। একটা সত্যিকারের সার্ভারে যেসব সফটওয়্যার থাকে (Apache HTTP Server, MySQL, Perl/PHP/Python), প্রয়োজনীয় সেসব সফটওয়্যারগুলো দিয়েই লোকাল সার্ভারটা বানানো হয়ে থাকে। উবুন্টুতে লোকাল সার্ভারের জন্য বহুল প্রচলিত সফটওয়্যার বান্ডেলের নাম হচ্ছে ল্যাম্প (LAMP – Linux, Apache, MySQL, PHP)।এই পোস্টে আমরা প্রথমে দেখব কীভাবে উবুন্টু/কুবুন্টুতে ল্যাম্প ইন্সটল করতে হয়। তারপর ইন্সটলকৃত ল্যাম্পটি ঠিকমত কাজ করছে কীনা সেটাও দেখব। সবশেষে ডেটাবেস ম্যানেজ করার সুবিধার জন্য পিএইচপিমাইঅ্যাডমিন ইন্সটল পদ্ধতিও আলোচনা করা হবে।

LAMP ইন্সটলেশানঃ

প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে এখানকার ধাপগুলো কাজ করবেনা। এবার টার্মিনাল খুলে তাতে কেবল নীচের কমান্ডটি রান করান, এক ধাক্কাতেই ল্যাম্প ইন্সটল হয়ে যাবে।

sudo apt-get install lamp-server^

লক্ষ্য করুন, উপরের কমান্ডে যে ক্যারেট চিহ্নটি (^) রয়েছে সেটা অবশ্যই দিতে হবে। নাহলে কিন্তু কাজ হবেনা। কমান্ডটি চালালে কি কি সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হবে টার্মিনালে তার একটা তালিকা আসবে। y টাইপ করে Enter বাটন চেপে সম্মতি দিয়ে দিলে ইন্সটলেশন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এবার MySQL ডেটাবেজের পাসওয়ার্ড দেবার জন্য নীচের ছবির মত একটা নোটিশ আসবে।

দ্বিতীয়বার পাসওয়ার্ড নিশ্চিতকরণের জন্য আবার আপনাকে একই পাসওয়ার্ড দিতে হবে। পাসওয়ার্ড নিশ্চিতকরণের পর ইন্সটলেশনের বাকী কাজগুলো সম্পুর্ণ হয়ে যাবে। ব্যস! আপনার ল্যাম্প সার্ভার ইন্সটলেশন শেষ! এবার চলুন যাচাই করে দেখা যাক যে সবকিছু ঠিকঠাকমত ইন্সটল হয়েছে কীনা।

Apache যাচাইকরণঃ

অ্যাপাচে ঠিকমত ইন্সটল হয়েছে কীনা তা যাচাই করতে ব্রাউজার খুলে অ্যাড্রেসবারে http://localhost/ অ্যাড্রেসটিতে যান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নীচের ছবির মত “It Works!” লেখা একটি পেজ দেখবেন।

PHP যাচাইকরণঃ

পিএইচপি’র ইন্সটলেশন যাচাই করতে হলে আমাদের প্রথমেই /var/www ডিরেক্টরিতে test.php নামে একটা ফাইল তৈরি করতে হবে। এজন্য উবুন্টু ব্যবহারকরীরা টার্মিনালে নিচের কমান্ডটি চালান।

sudo gedit /var/www/test.php

আর কুবুন্টু ব্যবহারকারীরা উপরের কমান্ডের পরিবর্তে নিচের কমান্ডটি লিখুন।

sudo kate /var/www/test.php

একটা টেক্সট এডিটর ওপেন হবে। ওপেন হওয়া সেই টেক্সট এডিটরে নিচের লাইনটি কপি করে সেভ করুন।

phpinfo(); ?>

এবার নিচের কমান্ডটি চালিয়ে অ্যাপাচে রিস্টার্ট করুন।

sudo /etc/init.d/apache2 restart

এবার ব্রাউজার খুলে তাতে http://localhost/testing.php/ অ্যাড্রেসে যান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নিচের ছবির মত পিএইচপি ইন্সটলেশনের যাবতীয় তথ্যাদি ব্রাউজারে দেখা যাবে।

localhost যাচাইকরণঃ

যেহেতু লোকালভাবে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য ল্যাম্প ইন্সটল করা হয়েছে, সেহেতু মাইসিকিউএলকে লোকাল হোস্টের আইপি অ্যাড্রেসে ‘বাইন্ড’ করে রাখতে হবে। লোকাল হোস্টের অ্যাড্রেস হচ্ছে 127.0.0.1। আপনার লোকাল হোস্টের অ্যাড্রেস 127.0.0.1 আছে কীনা তা যাচাই করতে নিচের কমান্ডটি রান করান।

cat /etc/hosts | grep localhost

এতে করে আইপি অ্যাড্রেস 127.0.0.1 দেখানোর কথা। মাইসিকিউএলের my.cnf ফাইলে একই অ্যাড্রেস আছে কিনা তা যাচাই করতে নিচের কমান্ডটি চালান।

cat /etc/mysql/my.cnf | grep bind-address

এতে করে নিচের লাইনটির মত একটি লাইন দেখতে পাবেন যাতে আপনার লোকালহোস্টের বাইন্ড অ্যাড্রেসটা দেয়া থাকবে।

bind-address = 127.0.0.1

যদি অ্যাড্রেসটি উপরের লাইনের সাথে না মেলে তবে my.cnf ফাইলটি এডিট করে সেখানে অ্যাড্রেসটি বসিয়ে দিতে হবে।

phpMyAdmin ইন্সটলেশানঃ

এটা ইন্সটল করাটা অবশ্যই করণীয় কিছু নয়, তবে যারা মাইসিকিউএলের কমান্ডের সাথে পরিচিত নয় তাদের জন্য পিএইচপিমাইঅ্যাডমিন দিয়ে ডেটাবেজ ম্যানেজ করাটা খুবই সহজ হয়। তাই সহজে ডেটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য পিএইচপিমাইঅ্যাডমিন ইন্সটল করা যেতে পারে। এটি ইন্সটল করতে টার্মিনালে নিচের কমান্ডটি চালানঃ

sudo apt-get install libapache2-mod-auth-mysql phpmyadmin

একটা ইন্সটলেশন উইজার্ড আসবে। ok বাটনে চাপ দিলে আপনাকে অটোমেটিক কনফিগার করার জন্য সার্ভার পছন্দ করতে বলবে। তালিকা থেকে apache2 সিলেক্ট করুন। সিলেক্ট করার জন্য কিবোর্ডের Space কি ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখবেন, যেটি সিলেক্ট হবে তার পাশে অ্যাস্টেরিক (*) সাইনটি আসবে। ব্যাপারটা বুঝতে নিচের ছবিটি দেখুনঃ

পরের ধাপে নিচের ছবির মত ডেটাবেজ কনফিগারেশনের জন্য কিছু তথ্য দেখাবে। Enter কি চাপুন।

এবার আপনি dbconfig-common নামের নতুন ডেটাবেজ কনফিগার করতে চান কী না তা নিচের ছবির মত জানতে চাইবে। যেহেতু এটা প্রথমবার ইন্সটল করছেন সেহেতু কনফিগার করাটা দরকার। এজন্য Tab চেপে Yes সিলেক্ট করে Enter চাপুন।

এখন নিচের ছবির মত স্ক্রিন আসবে যেখানে MySQL এর রুট পাসওয়ার্ড দিতে হবে আপনাকে। আগেরবার তৈরি করা MySQL এর পাসওয়ার্ডটি এখানে দিয়ে দিন। তারপর Tab চেপে Ok সিলেক্ট করে Enter কি চাপুন।

এবার phpMyAdmin এর জন্য MySQL অ্যাপ্লিকেশন পাসওয়ার্ড লাগবে। কাজের সুবিধার জন্য আগের ধাপে দেয়া একই পাসওয়ার্ড এখানে দিয়ে দিন (সাবধানঃ যদি কোন পাসওয়ার্ড না লিখেই Enter চাপেন, তাহলে একটা র‍্যান্ডম পাসওয়ার্ড তৈরি হবে)।

নিচের ছবির মত পাসওয়ার্ড নিশ্চিতকরণ একটা ম্যাসেজ আসবে। সেখানে একই পাসওয়ার্ড লিখে Enter চাপুন।

সবকিছু ঠিকঠাকমত হয়ে থাকলে আপনার phpMyAdmin সুষ্ঠুভাবে ইন্সটলেশান ও কনফিগারেশন হবার কথা। ঠিকঠাকমত হল কীনা তা দেখার জন্য চলুন নিচের প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করি।

phpMyAdmin যাচাইকরণঃ

ব্রাউজার খুলে তা দিয়ে http://localhost/phpmyadmin/ অ্যাড্রেসে যান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নিচের ছবির মত একটা পেজ খোলার কথা।

আপনি এখানে লগিন করার অপশন পাবেন। এক্ষেত্রে আপনার ইউজারনেম হবে root এবং পাসওয়ার্ড হবে আগের ধাপগুলোতে রুটের জন্য যে পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন সেটি। ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করলে আপনি নিচের ছবির মত অ্যাডমিন প্যানেল পাবেন।

এতটুকু পর্যন্ত করে ফেলা মানে হচ্ছে আপনি সুষ্ঠুভাবে আপনার কম্পিউটারে লোকাল সার্ভার স্থাপন করেছেন এবং তাতে phpMyAdmin ও ইন্সটল করেছেন। এবার আপনি যে সাইট নিয়ে কাজ করতে চান তার সমস্ত ফাইলগুলো /var/www/html ডিরেক্টরিতে রাখুন এবং মনের মাধুরী মিশিয়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করুন। 🙂

খোঁজ দ্যা সার্চ: খোঁজাখুঁজি’র এক কালোত্তীর্ণ মহাকাব্য!

আমাদের বাংলা সিনেমার ইতিহাসে মহাকাব্যের সংখ্যা সম্ভবত হাতে গোনা – বেদের মেয়ে জোছনা (নাকি জোৎস্না?), রূপভান, নবাব সিরাজুদ্দৌলা ও সোহরাব-রুস্তম ছাড়া স্মৃতি হাতড়ে আর কিছু বের করতে পারলাম না। তবে ডাইহার্ড ফ্যানদের দাবীর মুখে মাহমুদ কলি, ওয়াসিম কিংবা ইলিয়াস কাঞ্চনের একগাদা রাজা-বাদশাহ-জমিদার-প্রজা টাইপ সিনেমাগুলোকে গোনায় ধরলে অবশ্য অন্য কথা, গুনতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলতে হবে। সেই সাথে যদি যুক্ত হয় কিংবদন্তী পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু’র নাম- তাহলে তো কথা নেই! সংখ্যা যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে কে জানে! এ সব অবশ্য মহাকাব্যিক সিনেমার কথা। আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমাদের এই সব মহাকাব্য গুনতে টুনতে হবেনা। কারণ আমাদের এই আলোচনা এসব মহাকাব্যিক বাংলা সিনেমা নিয়ে নয় বরং কালোত্তীর্ণ এক মহাকাব্য নিয়ে! আর এখনও পর্যন্ত বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ‘কালোত্তীর্ণ মহাকাব্য’ কিন্তু একটিই নির্মিত হয়েছে, সেটা হল – “খোঁজ দ্যা সার্চ”!

Khoj the search

প্রথমেই একটা সাফ কথা জানিয়ে দেই – আমি বাংলা সিনেমার একনিষ্ঠ দর্শক নই। তাই আমার রিভিউকে রামায়ন ধরে নেবার কোন কারণই নেই। এই ছবি দেখার পর হাত এতই নিশপিশ করছিলো যে এর একটা রিভিউ না লিখলে বদহজম হয়ে যাবার জোগাড় হচ্ছিল। তাই নিজের হজমকে বদ হওয়া থেকে রক্ষা করতেই এই দাওয়াই। প্রশ্ন আসতেই পারে যে কেন এই ছবিকে “কালোত্তীর্ণ মহাকাব্য” বললাম? এই সিনেমাটির ট্রেইলার দেখে যা ভেবেছিলাম, চাক্ষুষ পুরো সিনেমাটি দেখার পর মনে হচ্ছে যে “কালোত্তীর্ণ মহাকাব্য” বললেও এই ছবি সম্পর্কে সঠিক মূল্যায়ন করা হয়না। কিন্তু আর কোন বিশেষণ মাথায় এলোনা দেখে আপাতত এই বিশেষণেই থাকি। কালোত্তীর্ণ এই সিনেমাটির ‘দুর্ধর্ষ’ ট্রেইলার দেখে যারা এটাকে রস-কষহীন অ্যাকশন সিনেমা হিসেবে ভেবে নিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যেই বঙ্গদেশীয় কবি বলেছেন “চকচক করলেই সোনা হয়না” – ট্রেইলার দেখে সিনেমা বোঝা যায়না; অ্যাকশনের মোড়কে আবৃত এই সিনেমাটি আদতে আগাগোড়াই কমেডি একটা সিনেমা, আরো ভালো করে বললে ‘একটা ট্রেইলার’! জ্বী, ঠিকই শুনেছেন এটা একটা ট্রেইলার, বেশ বড়সর ধরনের ট্রেইলার, এই ধরুন গিয়ে পুরো দুই ঘন্টাব্যাপী বিশাল ট্রেইলার। কেন ট্রেইলার? সেই ব্যাপারে একটু পরে আসি, তারচেয়ে বরং চলুন কালোত্তীর্ণ এই মহাকাব্যের অন্য বিষয়গুলোও একটু দেখি।

সবার আগে আসুন নামকরণের ব্যাপারে। এই মহাকাব্যের নাম দেখে একজন অশিক্ষিত গন্ডমূর্খও বুঝবে যে এটা কত উঁচুমাপের সৃস্টি – ইংলিশ ও বাংলার মত দু’দুটো ভিন্ন ভাষা ব্যবহার করতে হয়েছে এই সৃষ্টির নামকরণে। তাছাড়া নামটাও বেশ চিন্তাউদ্দীপক – “খোঁজ দ্যা সার্চ”। কিছু একটা খুঁজতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কি খুঁজবেন? ঘোড়েল প্রশ্ন! তারচেয়েও ঘোড়েল প্রশ্ন হচ্ছে, যা খোঁজার কথা সেটা কি দর্শক হিসেবে আপনি খুঁজবেন নাকি সিনেমার কলাকুশলীরা খুঁজবে? তবে সারা ছবি দেখেও কূলকিনারা করতে পারলাম না যে আসলে কি খোঁজ করার কথা। আরো সহজভাবে বললে কি বা কে হারিয়ে গিয়েছে সেটাই বুঝলামনা! সিনেমার মাঝখানে অবশ্য নায়ক বাবাজীর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল, শুধু হারিয়ে গিয়েছিল বললে ভুল হবে, বরঞ্চ ভিলেনপক্ষ সেটা ওভাররাইট করে নিজেদের বানানো তথ্য নায়ক সাহেবের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল! ভাবছেন সাইফাই মুভি’র মত কোন গুন্ডা-ডাক্তার আজগুবি কোন যন্ত্র দিয়ে এই মহাকর্মটি সাধন করেছে? মোটেইনা। গডফাদার শামসুদ্দীন নওয়াবের আর্মস সাপ্লাইয়ার ‘মাস্টার’ কেবলমাত্র একটি ডান্ডা, কয়েক গামলা পানি ও একটি হাডুড়ি দিয়ে এই কাজটি একা একাই করে ফেলেছেন! কাকতালীয়ভাবে এই মাস্টার অবশ্য ব্যক্তিগত জীবনে ডাক্তার, অন্তত নামের আগে ডাক্তার পদবী লাগায়, তার নাম হচ্ছে ডাঃ এজাজ। যা বলছিলাম … পুরো ছবিতে নায়কের স্মৃতি ছাড়া আর কোনকিছু হারিয়েছে বলে মনে হল না। অবশ্য স্মৃতি হারাবার ফলে সেটা ‘সার্চ’ করার জন্য নায়কের মাঝে কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। সে ধীরে সুস্থে তার কমেডি ছবি টেনে নিয়ে গিয়েছেন। ভালো কথা… আগেই বলেছিলাম যে এই ছবিটা কমেডি ছবি। ছবি দেখে দমফাটানো হাসি আসাটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। তাই দেখার সময় খুব সাবধান! ছবি দেখে কেউ হাসতে হাসতে অসুস্থ হয়ে পড়লে এই লেখক কোনভাবে দায়ী থাকবেনা।

মহাকাব্যের মহানায়কের নাম মেজর মাহমুদ হাসান, সে বাংলাদেশ সিক্রেট সার্ভিস (বিএসএস) এর একজন স্পাই (!)। বাংলাদেশ সিক্রেট সার্ভিসের অফিসটা বেশ ভালোই, সেখানে সবাই ইংলিশে কথা বলে। মেজর কামরুল নামের একজন আছেন, সে যেকোন বিষয়ে একেবারে গলা বাড়িয়ে ইংলিশে বুলি আওড়ানো শুরু করে, কিন্তু এই লোকই যখন নায়কের মাকে নায়কের মৃত্যুর খবর দিতে যায় তখন তার মুখনিঃসৃত বাংলা শুনে মনে হল উল্টা দিকে দৌড় দেই। তো এসব বাংলাদেশী ইংলিশম্যানদের খপ্পড়ে পড়ে বিএসএস’র চিফ সোহেল রানাকেও বাংলাদেশীদের সাথেই ইংলিশে বাক্যবিনিময় করতে হয়। তার এই কাজটা আরো কঠিন হয়ে যায় যখন আমেরিকা ফেরত নায়ক এসে ইংলিশ বুলি আওড়ানো শুরু করে। আহা কী সেই ইংলিশ! শুধু নায়কের ইংলিশের প্রশংসা করলে কম করে বলা হবে, নায়কের বাংলাও মাশাল্লাহ ‘সেইরকম’। শুনলে মনে হবে কেউ যেন কানের ভেতরটা চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। তবে একদিক দিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায় যে সিনেমাটিতে বেশ কিছু গূঢ় তথ্য রয়েছে, যেমন ধরুন, নায়কের মোহনীয় বাংলা ও সুললিত ইংলিশ উচ্চারণ কিন্তু সচেতন মহলে বিবিসি জানালার পাশাপাশি বিটিভি জানালা চালু করার একটা প্রচ্ছন্ন বার্তাও প্রেরণ করে।

সিনেমার নায়কের আগমন দৃশ্য বেশ চৌকস। বিএসএস চিফ যখন জানতে পারেন যে তার তুরুপের তাস মেজর মাহমুদ হাসান আম্রিকায় স্পাইয়িংয়ে ব্যস্ত তখনই দেখা যায় স্ক্রিন ধোঁয়ায় ভরে উঠে। সেকেন্ডের মাঝেই সেই ধোঁয়া কেটে বেরিয়ে আসে নায়কের দুধ-ঘি খাওয়া আদুল দেহ, পরের সেকেন্ডেই নায়ককে দেখা যায় সুইমিং পুলে সাঁতারে ব্যস্ত, পরের সেকেন্ডেই আমরা আবিষ্কার করি নায়ক লাস ভেগাসের আকাশে হেলিকপ্টার নিয়ে চক্কর খাচ্ছে এবং পরের সেকেন্ডেই নায়ককে লাসভেগাসের রাস্তায় কালো আলখাল্লা পরিহিত অবস্থায় অশরীরিভাবে পদচারণা করতে দেখা যায় (হেলিকপ্টারটি কোথায় ক্র্যাশ করেছিলো সেটা দেখায়নি যদিও)। লাসভেগাসে এক হোটেলের সামনে দুই আম্রিকান ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট এসে মাহমুদ সাহেবকে একটা ডিস্ক ভর্তি ইন্টেলিজেন্স দিয়ে গেল। এই ইন্টেলিজেন্স কিন্তু নায়কের মাথায় ভরার জন্য নয়, বরং ‘নিনো’ নামের বিশ্ব তামা-তামা করা এক সন্ত্রাসীর ইন্টেলিজেন্স ইনফরমেশন। পরের দৃশ্যে আমরা দেখি নায়ক সাহেব এক বিদেশিনীকে গাড়ি করে পুরো হলিউড ঘুরিয়ে তার বাসার দোরগোড়ায় নামিয়ে দিয়ে সিনেমায় তার সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ বাক্য উচ্চারণ করেন – “টেল মি ইবাউট নিনু”! তার পরের দৃশ্যে দেখা যায় বিএসএস চিফ তার তুরুপের তাস মেজর মাহমুদকে নিনোর কেস ফেলে দিয়ে বাংলাদেশে ডেকে পাঠান নতুন কেসের তদন্ত করতে। কী তামশা, নতুন কেসও হচ্ছে নিনো নিয়ে!

এরমাঝে ক্যাপ্টেন ববি’র আগমন ঘটে বিএসএস অফিসে। লাস ভেগাস ফেরৎ মেজর মাহমুদকে চিফ পরিচয় করিয়ে দেয় ক্যাপ্টেন ববির সাথে, সঙ্গে এও উল্লেখ করতে ভুলেননা যে মেজর মাহমুদের সাক্সেস রেট ১০০% মানে এখনো কোনকিছুতে ফেল্টুস হননাই নায়ক বাবাজী! চিরাচরিত নিয়মানুসারে ক্যাপ্টেন ববিকেই নায়কের সাথে কাজ করার জন্য জুটিয়ে দেয়া হল, হাজার হোক নায়িকা বলে কথা। এদিকে আমরা আবিষ্কার করি যে নায়কের স্বাস্থ্য মাশাল্লাহ ‘সেরকম’ হলেও নায়ক মনেপ্রাণে কিন্তু বেশ স্বাস্থ্যসচেতন। সেজন্যই সকালবেলা নায়ককে দেখা যায় জিন্স পড়ে গ্রামের রাস্তায় জগিং করতে, বুকডন দিতে, নারিকেল গাছের সাথে ঘুষাঘুষি করতে (সুপারি গাছ বা খেজুর গাছ ও হতে পারে, নিশ্চিত না)! তাছাড়া নায়ক আবার গল্ফপ্রেমী। সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট, সাদা জুতা, সাদা ক্যাপ পড়ে তাকে দেখা যায় গল্ফ মাঠে। একটা শট খেলেইই স্লোমোশনে মোহনীয় ভঙ্গিতে ভুড়ি দুলিয়ে নায়িকার দিকে আসতে আসতেই মন জয় করে ফেলে নায়িকার। আর যায় কই! সাথে সাথে শুরু হয় গান!

এভাবেই চলছিল। তারপর কাহিনী জট পাকিয়ে যায় যখন ১০০% সাক্সেস রেটের মেজর সাহেব একটা মিশনে ফেল্টুস মেরে গুন্ডাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তারপর গুন্ডারাজ ‘মাস্টার’ মেজরকে এমন ধোলাই দেয় যে মেজর আক্ষরিক অর্থেই নিজের নাম ভুলে গেল! এরপর থেকেই ছবিতে নায়কের নতুন নাম হয় ‘অনন্ত’। গোলাপ ফুলের উপর টার্গেট প্র্যাকটিস করে বেড়ে (!) উঠতে থাকে অনন্ত। সেই সাথে স্মৃতি হারিয়ে অনন্ত ক্রমাগত প্রশ্ন করে যায় – “আমি ক্যা?”। স্মৃতি হারানো অবস্থাতেই তার সাথে দেখা হয় ছবির আরেক নায়িকা বর্ষা’র সাথে। বর্ষা হচ্ছে মাস্টারের বস শামসুদ্দিন নওয়াবের একমাত্র বোন। শামসুদ্দিন নওয়াব হচ্ছে বাংলাদেশের গডফাদার যে কিনা স্যুটবুট পড়ে সারক্ষণ মুখে পাউডার আর ঠোঁটে লিপস্টিক মেখে রাখে! যাই হোক, এক বিটকেলে পরিস্থিতিতে বর্ষাকে তার নিজের ভাইয়ের গুন্ডারা তাড়া করলে মহানায়ক একাই পুরো গ্যাংকে শুইয়ে দিয়ে মোটরবাইকে বর্ষাকে নিয়ে কেটে পড়ে। এদিকে নিনো আসে বাংলাদেশে। অনন্ত’র নাই স্মৃতিশক্তি! সেই সাথে ক্যাপ্টেন ববি’র সাথে প্যারালালি যুক্ত হয়েছে বর্ষা! বর্ষা ও নায়ক কক্সবাজারে। ঐ দিকে সিনেমার সেকেন্ড হিরো আবার বর্ষার বয়ফ্রেন্ড। টান টান উত্তেজনা! এমন সময়ই নায়ক বাবাজী সব স্মৃতি ফিরে পায়, মানে মাস্টার মশাই প্রাণের ভয়ে (নাকি বিরক্তিতে কে জানে?) নায়কের কাছে তার পরিচয় ফাঁস করে দেয়। অবশ্য না দিয়েও উপায় নাই, নায়ক কয়েক গন্ডা মানুষ মেরে মাস্টারের সামনে এসে ওভারকোট পড়ে “মা-আ-শ-টা-আ-র” বলে চেঁচিয়ে যেভাবে অস্ত্র ধরেছিল, তাতে এই বিরক্তিকর চরিত্রের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যই মাস্টার সব হড়বড় করে বলে দেয় বলে আমার ধারণা। অবশ্য তারপরও মাস্টার এই বিরক্তিকর চরিত্রকে মারার জন্য একটা চেষ্টা নিয়েছিলেন। কিন্তু নায়ক আচমকা “মাশটার! আপনার মত পপেশনালের পেসন তেকে গুলি করা মানায়না” – বলে, মাস্টারকে গুলি করে নিজেই সিনেমা থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে দেয়। খুনোখুনি করার পর নায়কও তার নিজের পরিচয় পেয়ে কিংকংয়ের মত দেহখানা নিয়ে ঠিক ঠিক মায়ের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়!

হলিউডের টার্মিনেটরের পরের সিরিজগুলোর জন্য নায়ক অনন্তকে অফার দেয়া যেতে পারে। কারন তার রোবটিক অঙ্গভঙ্গি, যান্ত্রিক বাচনভঙ্গি কিংবা ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি – আর যাই হোক মানবসম্প্রদায়ের কাউকে মনে করিয়ে দেয়না। এর সাথে নায়কের শরীর-স্বাস্থ্য বিবেচনা করলে প্রাণীজগতে বড়জোর টেনেটুনে কিংকং পর্যন্ত যাওয়া যেতে পারে, এর বেশি কিছু নয়! তবে নায়ক মানুষ নাকি রোবট সেটা নিয়ে বিভ্রান্ত নায়িকাও প্রশ্ন করেছিল নায়ককে “আপনি রোবটের মত কেন?”। এমনকি ভিলেনকূলও মহা গবেষণা শুরু করে দিয়েছিল যে এই লোক মানুষ নাকি রোবট – তা নিয়ে। এই নায়কের পোশাক আশাক দেখে মনে হল নায়ক বঙ্গবাজারের বিশেষ ফ্যান। তার ছিড়া-বিড়া জামাকাপড় আর হাতে পায়ে বিভিন্ন পট্টি দেখে তাকে গুলিস্তানের ফ্যান বলেও মনে হতে পারে। তবে পরে জানলাম যে তার নিজেরই একখান গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে! সন্দেহ হচ্ছে এইসব টুটা-ফাটা কাপড়-চোপড় সেই ফ্যাক্টরিরই অবদান।

এতক্ষণ দেখি কেবল নায়কের কথাই বলে গেলাম, ছবির অন্যান্য ব্যাপারে কিছুই বললাম না! অন্য ব্যাপারগুলোও কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য ব্যাপারের মাঝে প্রথমেই আসি গানের ব্যাপারে। ইমন সাহা ও হাবিব ওয়াহিদের মত সংগীত পরিচালকরা কাজ করেছেন এই ছবিতে। গানগুলোও বেশ ভালো, তবে শর্ত হচ্ছে চোখ বন্ধ করে শুনতে হবে! যদি আপনি চোখ খোলা রেখে টুটা-ফাটা পোশাক পরিহিত বাংলার কিংকংএর হাত ছোঁড়াছুঁড়ি দেখতে দেখতে (একটা নায়ক যে কেবলমাত্র হাতকে নাড়াচাড়া একটা সিনেমার সব গান গেয়ে ফেলতে পারে সেটা এই সিনেমা না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর) গান শুনতে চান তাহলে সেটা নিজ দায়িত্বে করবেন। শুধু মনে রাখবেন যে আমি আপনাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম। তবে সেনাবহিনীর সুশৃংখল জীবনে অভ্যস্ত মেজর মাহমুদের এইসব ‘আইকনিক’ ফ্যাশান ও গানের সাথে হাদুমপাদুম নড়াচড়া দেখে আমাদের সেনাবাহিনীর মেজররা কাজেকর্মে উদাস কিংবা হতাশ হয়ে যেতে পারেন! এ ব্যাপারে সরকারে আশু দৃষ্টি দেয়া দরকার।

ছবির নির্মাণশৈলীতে রয়েছে নতুনত্ব। এই ছবিতে সম্ভবত নতুন ফর্মুলা অ্যাপ্লাই করা হয়েছে – অনেকগুলো ছোট ছোট দৃশ্যকে একসাথে জুড়ে দিয়ে পুরো সিনেমাটা বানানো হয়েছে। তবে কিনা ঐসব ছোট ছোট দৃশ্যের নিজেদের ভেতর তেমন একটা মিল নেই! এই ছবির এডিটরকে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। এক হাতে কাঁচি আরেক হাতে আইকা নিয়ে ফিল্মের রোল খালি কেটেছে আর জোড়া দিয়েছে। কয়েক মিনিটের কাজ! উপরে বলছিলাম না যে এটা একটা ট্রেইলার? ঠিক এ কারণেই বলেছিলাম। একটা ট্রেইলারে যেমন পুরো ছবির বিভিন্ন খাপছাড়া দৃশ্য দিয়ে জনমনে কৌতুহল তৈরি করে, এখানেও ঠিক তাই-ই করা হয়েছে। তাই এটাকে সিনেমা না বলে বিশাল বড় কোন ট্রেইলার বলাটাই বেশি মানানসই। সবচেয়ে দীর্ঘ ট্রেইলারের জন্য গিনেস বুকে একটা ট্রাই মারা যেতে পারে, বলা তো যায় না যদি লাইগ্যা যায়!

ছবির কাহিনীর গাঁথুনীও অভিনব। এর শক্তিশালী চিত্রনাট্য দর্শকদের চিন্তাশক্তিকে উস্কে দেয় অনেকগুলো প্রশ্ন ও ধাঁধাঁ দিয়ে। বিশেষ করে নায়িকা বর্ষা যখন সরাসরি মাথায় গুলি খায়, তারপর তাকে সে অবস্থায় ফেলে রেখে নায়ক চলে যায় নিনোকে ধাওয়া করতে, ঐ দিকে কিভাবে কিভাবে যেন নায়িকা গুলি খাওয়া মাথা নিয়ে পৌঁছে যায় হাসপাতালে। প্রশ্ন জাগে যে নায়িকা কিভাবে গেল হাসপাতালে? কারণ ইতিমধ্যেই সেকেন্ড হিরো অক্কা পেয়েছে। তাছাড়া বিএসএস চিফ সোহেল রানা শেষমেষ বেঁচে থাকে না মারা যায় সেটাও একটা অমিমাংসিত ধাঁধা। এদিকে গন্ডা গন্ডা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত নায়ক যখন নিনো’র সাথে শেষ মারপিট করতে যায় তখন কুদরতিভাবে তার সব অস্ত্র হাওয়া হয়ে গিয়ে একটা গ্রেনেড ছাড়া আর কিছুই থাকেনা। তারপরও ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে ঝুলে ঝুলে নিনোর প্যান্টের ভেতর কিভাবে কিভাবে যেন ঢুকিয়ে দেয় সেই গ্রেনেড। ফলাফল ট্রেনের ইঞ্জিনের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে থাকা নিনোর জায়গায় মাঝারি আকারের ধোঁয়ার বিস্ফোরণ। অথচ পুরো রেলগাড়ীর ডিজেল ইঞ্জিনে একটা আচঁড়ও নেই! বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন তাহলে কি ধাতু দিয়ে তৈরি? বিস্ফোরণের পরপরই মাথার ঘিলুতে গুলি খাওয়া নায়িকাকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় নায়কের সাথে নাচগান করতে দেখা যায়। ঘিলুতে গুলি লাগলে চিকিৎসা কি? এদিকে অন্য নায়িকার কোন খোঁজ খবর নেই, কি হয় ক্যাপ্টেন ববির? মেজর কিংবা ক্যাপ্টেন হয়ে এত নাচানাচি আর গানের তালিম কোত্থেকে পাওয়া যায় – সেটা জানার বড়ই শখ ছিল। এক দৃশ্যে নায়ক লাফ দিয়ে ঘোড়ার উপর উঠতে গেলে দেখা যায় যে, ঘোড়া শেষ মুহুর্তে অনীহা প্রকাশ করে পিছিয়ে যায়। খুব জানতে ইচ্ছা করে কী চিন্তা করছিল তখন ঘোড়াটা?

সিনেমা শেষে এতসব উন্মুক্ত ধাঁধাঁ থাকার অর্থ কিন্তু একটাই – অদূর ভবিষ্যতে এই মুভির সিক্যুয়াল আসছে (আল্লাহ রহম কর)। কি হবে সেই সিক্যুয়ালের নাম? “পাইছি দ্যা ফাউন্ড”?

কেন উবুন্টু ব্যবহার করবেন?

যারা নতুন লিনাক্সে আসেন তারা প্রথমেই যে সমস্যায় পড়েন সেটা হল লিনাক্সের শত শত ডিস্ট্রো থেকে কোনটা ব্যবহার করবেন? অবশ্যই আপনার প্রয়োজনমত যেটাকে সবচেয়ে কাজের মনে হয় সেটা ব্যবহার করবে। কারন একেকজনের প্রয়োজন একেকরকম, যিনি ভিডিও এডিটিং করেন তার কাজের সাথে যিনি প্রোগ্রামার তার কোন মিল নেই, এই দুজনের জন্য দরকারী সফটওয়্যারও তাই ভিন্ন হবে। তাই বিভিন্ন পেশার মানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে লিনাক্স ডিস্ট্রও বিভিন্ন রকম হয়। তবে যারা সাধারন ইউজার তাদের কাজের ধরণ কিন্তু মোটামুটি একই – লেখালেখি, ইন্টারনেট ব্রাউজ, গান শোনা, মুভি দেখা, গেম খেলা ইত্যাদি টুকটাক কাজই সবাই করে। এসব বিচারে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হচ্ছে উবুন্টু।

কেন উবুন্টু ব্যবহার করবেন- এই প্রশ্নের উত্তর যদি খুঁজতে বের হন তবে হাজার হাজার জবাব পাবেন। ইদানিংকার খুব জনপ্রিয় এই অপারেটিং সিস্টেমটি লিনাক্সের কার্নেলের উপর তৈরি বলে সিকিউরিটি থেকে শুরু করে স্ট্যাবিলিটি পর্যন্ত লিনাক্সের সব ধরনের সুবিধাই এতে পাবেন। তাহলে কোন বৈশিষ্ট্য একে লিনাক্সভিত্তিক অন্যান্য ডিস্ট্রগুলো থেকে আলাদা করেছে? আসুন তাহলে এক ঝলক দেখে নেই।

উবুন্টু অন্যান্য ডিস্ট্রোর মত “কেবলই আরেকটা লিনাক্স”ডিস্ট্রো না। এটা ডেবিয়ানের মত শক্তিশালী ডিস্ট্রোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া একটি ডিস্ট্রো যার মূল স্লোগান হল “মানুষের জন্য লিনাক্স”। আক্ষরিক অর্থেই উবুন্টুকে সাধারন মানুষের ব্যবহারের জন্যই বানানো হয়েছে। এক সময় মনে করা হত খোঁচা খোঁচা দাড়ি গোঁফ ওয়ালা জিনিয়াস টাইপের লোকজন কীবোর্ডে খটাখট আওয়াজ করে লিনাক্স ব্যবহার করে। দিন এখন পালটে গেছে, সেই সাধারন ব্যবহারকারীদের জন্য কমান্ডের লিনাক্সের যুগ আর নেই। ডেস্কটপে লিনাক্স এসেছে অনেক বছর। আর সেই ডেস্কটপ লিনাক্সকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে উবুন্টু। উবুন্টু ব্যবহার করতে খুব আহামরি কোন কম্পিউটার জ্ঞানের দরকার নেই, – এতই সোজা এই অপারেটিং সিস্টেমটি। আর এর ইউজার ফ্রেন্ডলিনেসের কথা তো লিনাক্সের এখন সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। উবুন্টুই একমাত্র লিনাক্স ডিস্ট্র যেটাকে মাইক্রোসফট সমীহ করে চলে, কারন বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, উবুন্টু ইউজার ফ্রেন্ডলিনেসের দিক থেকে উইন্ডোজের চেয়েও উন্নত।

সবচেয়ে সহজ ওএস ইন্সটলেশন পদ্ধতি সম্ভবত উবুন্টুর। খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেসে কেবল মাউস দিয়ে টিপে টিপে যে কেউ উবুন্টু ইন্সটল করতে পারবে মাত্র কয়েকটি  ধাপে। সফটওয়্যার খোঁজার জন্য গুগল নিয়ে ঘাঁটাঘাটির দরকার নাই। সফটওয়্যারের বিশাল রিপজিটরি আছে এতে, যেখানে হাজার হাজার ফ্রী সফটওয়্যার তালিকাভুক্ত হয়ে আছে। শুধু গিয়ে ইন্সটল দিলেই হল, সাথে সাথে ইন্সটল হয়ে যাবে। যেকোন সফটওয়্যার আপডেটও খুব সহজেই করা যায়। কোন সফটওয়্যারের আপডেট চলে আসলে উবুন্টুই আপনাকে আপডেট নোটিফিকেশন দেখাবে আর আপডেটের অপশন দিবে। গুগল সার্চ করে আপডেট নামানোর কোনই প্রয়োজন নাই।

উবুন্টুর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর বিশাল ইউজার কমিউনিটি। লিনাক্সের সবচেয়ে বিশাল কমিউনিটি হচ্ছে উবুন্টুর। যেকোন সমস্যায় কেবল কমিউনিটির কাছে ধর্না দিলেই হবে, সমাধান করার জন্য লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়বে। কমিউনিটি’র লোকজনও কিন্তু বেশ বন্ধুভাবাপন্ন। যেকোন প্রশ্নকেই অবহেলার চোখে দেখা হয়না এই কমিউনিটিতে। যত বোকাই প্রশ্ন করুন না কেন, আপনি ঠিকই আপনার জবাব পেয়ে যাবেন। বোকা বোকা প্রশ্নের জন্য আপনার উপর কেউ বিরক্ত হবেনা বা আপনাকে খোঁটাও দেবেনা – এমনই চমৎকার কমিউনিটি।

উবুন্টু’র  সিডি হচ্ছে লাইভ সিডি অর্থাৎ পিসিতে ইন্সটল না করেই আপনি সিডি থেকে সব প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনসহ উবুন্টু ব্যবহার করতে পারবেন, এমনকি সেই সিডি থেকে ইন্টারনেটেও কানেক্ট হয়ে ওয়েব ব্রাউজ করতে পারবেন!

লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে হার্ডওয়্যার কম্পিটিব্যালিটি উবুন্টুরই সবচেয়ে বেশি। অর্থ্যাৎ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হার্ডওয়্যার উবুন্টুই চিনতে পারে। ফলে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক এডাপ্টারের মত হার্ডওয়্যার চিনে নিতেও উবুন্টুর কোন সমস্যা হয়না। ডেল, হিউলেটপ্যাকার্ড, লেনোভো সহ নামকরা ব্র্যান্ডগুলো এখন উবুন্টুর কথা মাথায় রেখে হার্ডওয়ারের ড্রাইভার রিলিজ করে। তাই হার্ডওয়ার নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়না।

বলা হয়ে থাকে যে, বর্তমানে লিনাক্সের জয়যাত্রার পতাকা যদি কারো বহন করার ক্ষমতা থাকে তো সেটা উবুন্টুর আছে। গুগলের মত বিশ্বখ্যাত কোম্পানি তাদের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উবুন্টুকে বেছে নিয়েছে। তাহলে আর আপনি বসে থাকবেন কেন? ঘুরে আসুন উবুন্টুর সাইট থেকে, সংগ্রহ করুন আপনার উবুন্টু!

ঘোষণাঃ নতুন রূপে লিনাক্স ফোরাম আপনারই প্রতীক্ষায়!

    উবুন্টু বাংলাদেশ তাদের অফিসিয়াল ফোরামটি উবুন্টুর মূল ফোরামে স্থানান্তর করেছে। নতুন ফোরামটি পাওয়া যাবে এখানে। তাই এখন থেকে উবুন্টু বাংলাদেশের ফোরামে অংশগ্রহনের জন্য দয়া করে নতুন ঠিকানাটি বুকমার্ক করে রাখুনঃ http://bd.ubuntuforums.org/

আপনি লিনাক্স ব্যবহারকারী। কিন্তু আপনার মনে খুব দুঃখ যে শুধুমাত্র লিনাক্স নিয়ে আলোচনা করার জন্য বাংলায় কোনো ফোরাম নেই। সমস্যায় পড়লে বিভিন্ন বাংলা ফোরাম কিংবা ব্লগে গিয়ে সাহায্য চাইতে হয়। তাছাড়া অনলাইনে লিনাক্স নিয়ে বাংলায় আলোচনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ফোরাম না থাকায় লিনাক্স ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন বাংলা  ব্লগ ও ফোরামে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছেন। কেমন হত যদি এই সব লিনাক্স ব্যবহারকারীদের একছাদের নীচে আনা যেত। যদি শুধু লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য একটা ফোরাম থাকতো! যেখানে সব লিনাক্স ব্যবহারকারীরা একসাথে আড্ডা মারবেন। মনের সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারবেন, একে অন্যকে সাহায্য করতে পারবেন, সেই সাথে নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা তামাশাও করতে পারবেন। শুধু চিন্তা করে দেখুন, সব লিনাক্স ব্যবহারকারী এক জায়গায়! আপনি উবুন্টু-মিন্ট-ফেডোরা যেটা নিয়েই সমস্যায় পড়েন না কেন, কেবল কোনো মতে হাঁচড়ে পাঁচড়ে সেই জায়গায় গিয়ে পৌঁছুতে পারলেই হয়, বাঘা বাঘা লিনাক্স ব্যবহারকারীরা আপনার সমস্যা সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ভাবতেই মনটা ভালো হয়ে যাচ্ছে – তাইনা!

২০০২ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজার্স এলায়েন্স বা বিএলইউএ বাংলাদেশে লিনাক্স ছড়িয়ে দেবার জন্য কাজ করে আসছে।  বিএলইউএ এর শাখা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে “উবুন্টু বাংলাদেশ” এবং “ফেডোরা বাংলাদেশ”। তাছাড়া বাংলাদেশে ক্রিয়েটিভ কমন্স এর অ্যাফিলিয়েট হিসেবে কাজ করছে বিএলইউএ। পাশাপাশি বেশ কিছু সফটওয়্যারের বাংলা লোকালাইজেশনের উপরও কাজ হচ্ছে বিএলইউএ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে যে, সেই ২০০৫ সাল থেকেই কেবলমাত্র বাংলাদেশী লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য বিএলইউএ একটি ফোরাম রয়েছে। এর নাম “লিনাক্স ফোরাম“।

অবাক হচ্ছেন তাইনা! একটা পুরো ফোরাম লিনাক্সের জন্য, তাও আবার বাংলাদেশের লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য – অথচ এ ব্যাপারটাই  আপনি জানতেননা। না জানার মূল কারণ হচ্ছে “লিনাক্স ফোরাম” যখন থেকে শুরু হয় (২০০৫ সালে) তখনও লিনাক্স বাংলাদেশে ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি, তাছাড়া সেসময় লোকজন এখনকার মত ব্যাপকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতো না ফলে ব্লগে ও ফোরামগুলোতে এত লোকের আনাগোনা ছিলনা। তাই স্বল্পসংখ্যক ব্যবহারকারীর ব্যবহার করা ফোরামটি অনেকটা আড়ালেই ছিল। তাছাড়া ফোরামটি বাংলাদেশীদের জন্য  তৈরি করা হলেও সেসময় বাংলা লোকালাইজেশনের সুবিধা সেরকম না থাকায় এর ভাষা ছিল ইংলিশ। ফলে মায়ের ভাষায় সেভাবে আলোচনা করতে না পারায় এবং তার কিছু পরেই অনলাইনে সম্পূর্ণ বাংলা কয়েকটি ফোরাম চলে আসায়, “লিনাক্স ফোরাম” কার্যত অদৃশ্য হয়ে পড়ে।

বর্তমানে বাংলাদেশে লিনাক্স প্রসার ও প্রচারে এবং নবীন ব্যবহারকারীদের জন্য লিনাক্স সম্পর্কীত বিভিন্ন আলোচনার জন্য কয়েকটি বাংলা ফোরাম ও ব্লগের অবদান অনস্বীকার্য। সত্যি বলতে কি, ঐ সব ফোরামে মাধ্যমেই লোকজন লিনাক্স সম্পর্কে উৎসাহী হয়েছে এবং এখন লিনাক্স ব্যবহার করছে। কিন্তু এতে কিছু সমস্যায়ও পড়তে হয় নতুন ব্যবহারকারীদের। যেহেতু এরকম কোনো ফোরাম বা ব্লগ নেই যেখানে সকল লিনাক্স ব্যবহারকারী একসাথে রয়েছেন, সেহেতু দেখা যায় যে সর্বোচ্চ সাহায্য পাবার আশায় একজন ব্যবহারকারী একই প্রশ্ন বিভিন্ন ফোরাম ও  ব্লগে পোস্ট করেন এবং উত্তর দেখার জন্য সবগুলো ফোরাম ও  ব্লগে তাকে নিয়মিত যেতে হয়। ব্যাপারটা বেশ ঝামেলার। তাই শুধুমাত্র লিনাক্সের জন্য একটা বাংলা ফোরামের অভাব সবসময়ই অনুভূত হত। এমন একটা ফোরাম যেখানে নবীন থেকে প্রবীন কিংবা নাদান থেকে ঝানু – সব ধরনের লিনাক্স ব্যবহারকারীরা একত্রিত হবেন, যেখানে নতুন ব্যবহারকারীরা সব রকমের সাহায্য পাবেন, যেখানে পুরনো ব্যবহারকারীরা তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন ব্যবহারকারীদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবেন, যেখানে লিনাক্স ব্যবহার করতে গিয়ে মুখোমুখি হওয়া যে কোনো সমস্যা নিয়ে যে কেউ নির্দ্বিধায় আলোচনা করতে পারবেন। সোজা কথায়, শুধু বাংলায় পুরোপুরি লিনাক্সময় একটা ফোরামের খুব অভাব ছিল।

বাংলা ভাষায় নির্মিত সম্পূর্ণ লিনাক্স ফোরামের এই অভাবটি এবার ঘুচতে যাচ্ছে। বিএলইউএ “লিনাক্স ফোরাম“টিকে পুরোপুরি বাংলায় রূপান্তর করে ফেলা হয়েছে। সেই সাথে নতুন থিম ব্যবহার করে চেহারায়ও নতুনত্ব দেয়া হয়েছে “লিনাক্স ফোরাম“।  বলা যায় যে নতুন রূপে লিনাক্স ফোরামের পুণর্জন্ম হয়েছে। এবার লিনাক্সপ্রেমী ও লিনাক্স ব্যবহারকারীদের কলতানের অপেক্ষায় রয়েছে ফোরামটি। আপনি যদি লিনাক্স নিয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন কিংবা আপনি যদি লিনাক্সের দুনিয়ায় নতুন হয়ে থাকেন, যদি লিনাক্সের সাথে আরো ভালোভাবে পরিচিত হতে চান, যদি লিনাক্সের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে চান, যদি লিনাক্স নিয়ে যেকোন সমস্যায় অভিজ্ঞদের পরামর্শ পেতে চান – তবে আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে “লিনাক্স ফোরাম“। আর আপনি যদি লিনাক্সের দুনিয়ায় পুরনো হয়ে থাকেন, আপনি যদি আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি দিয়ে নতুনদেরকে সাহায্য করতে উদগ্রীব হয়ে থাকেন, আপনি যদি বাংলাদেশে লিনাক্স প্রচার ও প্রসারে যদি কিছু করতে চান – তাহলে আপনার জন্যও ফোরামটি অপেক্ষা করছে।  আপনি যদি উপরের দু’ধরনের কোনটাই না হয়ে থাকেন, তারপরও আপনি “লিনাক্স ফোরামে” আমন্ত্রিত; লিনাক্স কি, এটা দিয়ে কি করা যায় না করা যায়, আপনার সব কাজ কিভাবে লিনাক্স দিয়ে করতে পারবেন ইত্যাদি নিয়ে কিছু ধারণা পাবেন। আর কিছু নাহোক, বাংলাদেশী লিনাক্স ব্যবহারকারীদের সাথে অন্তত আড্ডা তো মারতে পারবেন।

লিনাক্স ফোরাম” আপনার জন্য প্রস্তুত। আপনি যোগ দিতে প্রস্তুত তো? আমরা কিন্তু আপনার নিবন্ধনের অপেক্ষায় রয়েছি…

প্রচারে: বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজার্স এলায়েন্স (বিএলইউএ)

ধাপে ধাপে উবুন্টু ইন্সটলেশান (তিনটি পার্টিশান করে)

এই টিউটোরিয়ালটা হচ্ছে তাদের জন্য যারা কম্পিউটারে উইন্ডোজকে পুরোপুরি মুছে ফেলে পার্টিশান করে কেবল মাত্র উবুন্টুকে কম্পিউটারে ইন্সটল করতে চান। এই টিউটোরিয়াল অনুযায়ী উবুন্টু ইন্সটল করলে আপনার পিসির হার্ডডিস্ক পুরোপুরি ফর্ম্যাট হয়ে গিয়ে কেবলমাত্র উবুন্টু থাকবে, এবং উইন্ডোজ সম্পূর্নরূপে মুছে যাবে। শুধু তাই-না আপনার কম্পিউটারে থাকা সমস্ত তথ্য এবং ফাইল (ছবি, গান, সিনেমা, ডকুমেন্টস, সফটওয়্যার ইত্যাদি সবকিছুই) পুরোপুরি মুছে যাবে। তাই এই  টিউটোরিয়াল অনুসরণ করার আগে আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় ফাইল অন্য কোন হার্ডডিস্ক বা রিমুভেবল-মিডিয়া বা অন্য কোন কম্পিউটারে অবশ্যই অবশ্যই ব্যাকআপ করে রাখুন।

Continue reading ধাপে ধাপে উবুন্টু ইন্সটলেশান (তিনটি পার্টিশান করে)