একটি বর্ষাপ্লাবিত দিন!

বাংলাদেশে এসে অনেকদিন পর কুকুর-বিড়াক টাইপের মুষলধারে বৃষ্টি দেখলাম। কথা নাই বার্তা নাই রাত বারটার দিকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হল। ভ্যাপসা গরমের পর বৃষ্টি বেশ ভালোই লাগলো। রাতে আরামে ঘুমানো যাবে চিন্তা করেই বিছানায় চলে গেলাম! তাছাড়া আবার পরদিন আমার পুরনো কর্মক্ষেত্রে প্রাক্তন কলিগদের সাথে দেখা করার কথা। তাই এমন বৃষ্টির রাতে ঝরঝরে ঘুম হওয়াটা বেশ জরুরি ব্যাপার।

পরদিন সকালে সকাল আটটার দিকে ঘুম ভাঙলো। বাইরে তখনো বৃষ্টি হচ্ছে! একটানা বৃষ্টি হচ্ছে নাকি মাঝে বন্ধ হয়ে আবার শুরুর হয়েছে বোঝার কোন উপায় নাই। বন্ধ হয়ে থাকবে হয়তো, কারন টানা বৃষ্টি বাংলা দেশে দেখিনা বহুদিন। ছোটবেলায় এমন বৃষ্টি নামতো যে স্কুল ছুটি করে দেয়া হত, ঐদিনকে বলা হত রেইনি ডে। সেসময় ঝুম বৃষ্টি হলেই দোয়া পড়তাম যেন স্কুল বন্ধ ঘোষনা করে! সেরকম বৃষ্টি দেখিনা অনেক বছর। এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে দেখি আম্মু চলে এসেছে। প্রতিদিন সকালে ছোট বোনকে কলেজে দিয়ে আম্মু বাসায় চলে আসে। তবে আজকে ব্যতিক্রম, সঙ্গে দেখি বোনও চলে এসেছে? কাহিনী কি! পরে শুনি আজকে ওদের স্কুলে রেইনি ডে!

ছবিটি ২৯ শে জুলাইয়ের প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠা ছাপা হয়।

আম্মুর কাছেই প্রথম শুনলাম যে ঢাকার রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে! যেই ধানমন্ডি সহজে ডুবেনা সেটা পর্যন্ত পানিতে থইথই করছে, ধানমন্ডি লেক পানিতে টইটুম্বুর! বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন খবর পেতে লাগলাম- সাতাশ নম্বরে রাপাপ্লাজার সামনে নাকি মাথার উপর দিয়ে পানি যাচ্ছে, মানুষজন লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে ডুব সাঁতার দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে, রাস্তা ঘাটে গাড়িগুলো সব অচল হয়ে পড়ে আছে, কোন কোন জায়গায় নাকি গাড়ির ছাদ পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে- আরো কত কি! যাই হোক সব শুনেটুনে মনে হল আজকে সংগত কারনেই আর পুরনো কর্মস্থল পরিদর্শনে যাওয়া হবে না। শরীফ ভাইকে ফোনে জানালাম যে আসতে পারছিনা, ঢাকার অবস্থার বর্ননা দিলাম! বেচারা ঘুম ঘুম চোখে কি শুনল কে জানে তবে বেশ খুশিই হল মনে হল, একটা টানা ঘুম দিতে পারবে অন্তত।

বাসায় বড়মামা ফোন দিল, মালিবাগে আমার নানুবাড়ির একতলায় হাঁটু পানি। এইটা একটু ভয়ঙ্কর ব্যাপার, মালিবাগ এলাকাটা এমনিতেই একটু নিচু, তাই বৃষ্টি হলে পানি জমে যাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। সেই পানি ঠেকাতে ঘরেরে সামনে এবং গেটের সামনে ইট সিমেন্ট দিয়ে সাত-আট ইঞ্চি উঁচু ছোটখাট বাঁধ দেয়া হয়েছিল। সেই বাঁধ টপকে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি উঠার প্রথম পর্বে একতলায় নাকি পানি সেচার কাজ হচ্ছিল, এখন বাইরের পানি আর ঘরের পানির লেভেল এক হয়ে যাওয়াতে সেই কাজ আপাতত বন্ধ!

এরপর ফোন দিল মিনহাজ ভাই, তার বাসায়ও নাকি হাঁটু পানি! এইবার ভালো বিচলিত হলাম, যতদূর জানি এই লোক থাকে তিনতলায় বা চারতলায়, অর্থ্যাৎ ছাদের ঠিক নিচের ফ্লোরেই। তারমানে কি এতই বৃষ্টি হল যে তার বাড়ির একতলা দোতলা ডুবে গিয়ে তিনতলার ফ্লোরও ডুবিয়ে দিয়েছে! পরে জানলাম খবর অন্য, উনাদের ছাদের পানি জাবার পাইপ ব্লকড হয়ে যাওয়ায় ছাদের সব পানি সিঁড়ি দিয়ে তাদের বাসায় চলে এসেছে!

ঢাকার ষাট বছরেরে ইতিহাসে নাকি সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে সেদিন, ৩৩০ মিলিলিটার! দশ ঘন্টার সেই বৃষ্টি হলে ঢাকা হয়ে যায় একটা বড়সর লেক – কোন ছাগল যে ঢাকাকে আধুনিক শহর নাম দিয়েছিল! টিভি আর খবরের কাগজে দেখলাম চিরাচরিত সেই দৃশ্য- সিটি কর্পোরেশন দোষ দিচ্ছে ওয়াসার ঘাড়ে আর ওয়াসা দিচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের ঘাড়ে। অথচ জলাবদ্ধতা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নাই- যেন এইটা তাদের কাজ না! অশিক্ষিত মূর্খ একেকটা সরকার আর তাদের গবেট পা চাটা সরকারি লোকগুলোর পাল্লায় পড়ে স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ভাবতে বসলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। হয়তোবা আজ থেকে আরো চল্লিশ বছর পর ইতিহাস বইয়ে লেখা থাকবে “দক্ষিন এশিয়ায় বাংলাদেশ নামে একটা দেশ ছিল যার অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে কেটেকুটে খেয়ে ফেলে পুরো বিলুপ্ত করে ফেলেছে”!

রঙ্গীন দুনিয়া – ৯

বহুদিন ধরে লেখা হয়না। অনেকগুলো কারনের মধ্যে প্রধান কারন হচ্ছে ফাঁকিবাজী। ইদানিং সবকিছুতেই ফাঁকিবাজী করতে ইচ্ছে করে। আমার ইংলিশ ব্লগটা আপডেট করিনা, ফেসবুকে বন্ধুদের ওয়ালে লিখিনা, একেরপর এক এসাইনমেন্ট বাকী পড়ছে, পরীক্ষার পড়া জমে উঠেছে – সবকিছুতেই ফাঁকি দিচ্ছি। মাঝখানে ওয়াটারলু, বেলজিয়াম আর ট্যাসেলে গিয়েছিলাম, ফাঁকিবাজীর ঠ্যালায় পড়ে সেইগুলা কিছুই লেখা হয়নাই। গত সপ্তাহে হঠাৎ করে জার্মানি গেলাম। এই জায়গাতেও ফাঁকি মারতে ইচ্ছা করছিল, তারপর কী যেন মনে করে লিখতে ইচ্ছা করল। তাই ল্যাপিটাকে কোলের উপর নিয়ে বসে লিখতে শুরু করলাম।

প্রথমেই জানতে হবে জার্মানি যাবার কেন ঠ্যাকা পড়লো। মামীর এক আপা সম্পর্কীয় আত্মীয় জার্মানীতে তার ছেলের বাসায় এসেছে। সেই মহিলার হঠাৎ করেই মামীকে দেখবার খায়েশ হলো (সেই সাথে হল্যান্ড আসার খায়েশও ছিল), সেই খায়েশ পূরণ করতে জার্মানী যেতে হবে। প্ল্যান মোতাবেক, মামীরা প্রথমে জার্মানি যাবে তারপর ছেলেসহ আপাকে হল্যান্ডে আনা হবে- পুরোটাই হবে একটা রোডট্রিপ! যেহেতু রোডট্রিপ সেহেতু পুরাপুরি নেভিগেটরের উপর নির্ভর করতে হবে, যেহেতু নেভিগেটরের উপর নির্ভর করতে হবে সেহেতু মামীর চেয়ে আমি বেশি রিলায়েবল (মামী আবার টেকনোসাইডে কিঞ্চিত কচি-কাঁচা), যেহেতু আমি বেশি রিলায়েবল সেহেতু মামা আমাকে নিবেই নিবে, যেহেতু আমাকে নিবেই নিবে সেহেতু আমার না গিয়ে কোন গতি নাই, যেহেতু আমার না গিয়ে কোন গতি নাই সেহেতু যাবার আগের দিন রাতের বেলা ঠিকানা নিয়ে নেভিগেটর সেট করতে বসলাম। ঠিকানা বলছে জার্মানির উল্‌ম শহরে যেতে হবে, নেভিগেটরে ঠিকানা ঢুকানোর পর দেখি ডিস্ট্যান্স দেখাচ্ছে ৭১৬ কিমি! বিশাল ড্রাইভিং ডিস্ট্যান্স! প্রায় তিনবার ঢাকা-চিটাগাং আসা যাওয়া করা যাবে। অবশ্য সেই তুলনায় সময় কম লাগবে, একটানা যেতে পারলে নেভিগেটরের হিসাব অনুযায়ী ছয় ঘন্টায় যাওয়া সম্ভব। ইউরোপীয়ান রাস্তা বলে কথা!

রাতে জার্মানী থেকে খবর আসলো, আন্টির (মামীর বোন হলে আমার নির্ঘাৎ আন্টি!) পান লাগবে! জার্মানীতে পান জিনিসটা নাই। ভারতবর্ষের বাইরে কোথাও পান জিনিসটা পাওয়া যায় বলে জানতামনা। আন্টি নাকি বেশ পান-পিয়াসী, কিন্তু জর্ম্মন দেশে আসার পর থেকে আর পান পায়না, উপরি পাওনা হিসেবে ইউরোপীয়ান খাবার খেতে হয় (বোনাস হিসেবে উনি জার্মান পুত্রবধূ অর্জন করেছেন কিনা!), তার মুখ নাকি পুরা বিস্বাদ হয়ে গেছে। স্বাদ ফিরিয়ে আনতে তার দরকার পান! এই ইউরোপের এক ইংল্যান্ড ছাড়া আর কোন জায়গার নাম মাথায় আসলোনা যেখানে পান পাওয়া যেতে পারে। এ্যামস্টারড্যামে পাওয়া গেলেও যেতে পারে – চান্স কম। মামা বেশ দুশ্চিন্তা নিয়ে বিছানায় গেল!

সকালবেলা আটটার দিকে আমাদের জার্নি শুরু হল। প্রথমে গেলাম এক ইন্ডিয়ান দোকানে – যদি পান পাওয়া যায়! কপাল খারাপ – ওদের কাছে পান নাই। তবে ওরা এক তুর্কী দোকান দেখিয়ে দিল যেখানে পাওয়া হয়তো যেতে পারে। মামা-ভাগ্নে মিলে গেলাম সেই দোকানে। কাউন্টারে এক ভূঁড়িওয়ালা তুর্কি বীর বসে হাই তুলছে – সম্ভবত রাতে ঘুম ঠিকমত হয়নাই। সেই লোকরে পানের কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে টের পেলাম পানের ইংলিশ আমরা কেউই জানিনা, তার উপর আবার সেই তুর্কীর ইংলিশ জ্ঞানও অসাধারন! কি আর করা আকারে ইঙ্গিতে বুঝায় বললাম “জায়ান্ট ইন্ডিয়ান লীফ” যেইটা আবার “ফ্ল্যাট”! তুর্কী বীর পুরোপুরি বিভ্রান্ত – “ফ্ল্যাট লীফ” আবার কি জিনিস, সব লীফই তো ফ্ল্যাট। বেচারা লাল শাক আনে, পালং শাক আনে, আরো হাবিজাবি কত “লীফ” আনে কিন্তু পান আর আনেনা। কী আর করা দোকান থেকে বের হয়ে দেখি এক সুরিনামী দোকান। পানের আশায় সেই দোকানেও ঢুকলাম, আর কী আশ্চর্য সামনেই প্যাকেট প্যাকেট পান সাজিয়ে রাখা! দু’খান প্যাকেট চটপট নিয়ে ফেললাম। দাম জিজ্ঞেস করে দেখা গেল প্রতি বিশটা পানের দাম চব্বিশ ইউরো মানে প্রায় দু’হাজার টাকা – মানে পানপ্রতি একশ টাকা!

যাই হোক মিশন পান একমপ্লিশ করে আবার রওনা দিলাম। এবার গন্তব্য জার্মানী। প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে গেল, গাড়ি একটানা চালিয়ে মাম ক্লান্ত। সামনের এক পেট্রল স্টেশনে থেমে গাড়ির পেট ভরা হল সেই সঙ্গে আমাদেরও পেট খালি করে ভর্তি করে নিলাম। আবার রওনা দিলাম। নেদারল্যান্ডের হাইওয়েতে সর্বোচ্চ স্পীড হচ্ছে ১২০ কিমি/ঘন্টা। মামা ১২০ এই চালাচ্ছিল। হঠাৎ দেখি পিছন থেকে একের পর এক গাড়ি ওভারটেক করে চলে যাচ্ছে, কাহিনী কি! আমরা কি তাহলে কম স্পীডে যাচ্ছি? কিন্তু স্পিডোমিটারতো তা বলেনা। চোখ পড়লো রাস্তার ‘Exit’ সাইনের উপর। ডাচ ভাষায় ‘Exit’ সাইনবোর্ডটাতে লেখা থাকে ‘Uitgang’, সেটা পালটে এখন ‘Ausfahrt’ লেখা দেখাচ্ছে – তারমানে আমরা এখন জার্মানীতে! এই জন্যই আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি কারন, জার্মানীর হাইওয়েতে কোন স্পীড লিমিট নাই! আহা রাস্তায় কী গাড়ির বাহার! একেবারে আনকোড়া নতুন মার্সিডিজ, ক্রাইসলার, অডি, বিএমডব্লিউ, ওপেল পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে – স্বপ্নের মত দৃশ্য। ডাচ লোকজন কিপটা হওয়াতে হল্যান্ডে এত আনকোড়া নতুন গাড়ি দেখা যায়না। এই কিপটা লোকজন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফোর্ড, ভল্ভো, সিত্রঁ আর রেনল্টের উপর দিয়েই খায়েশ মেটায়।

হঠাৎ কোত্থেকে এক ভ্যান এসে সামনে পড়ল। ভ্যানের পেছনে ইলেক্ট্রনিক ডিস্পলে বোর্ডে লেখা উঠল “ফলো মি”! নিশ্চয়ই পুলিশ মামু! একপাশে গাড়ি পার্ক করতেই সামনের ভ্যান থেকে ইউনিফর্ম পড়া পাঁচজন মামু আর একজন মামী লাফ দিয়ে বের হয়ে আসলো। রুটিন চেকয়াপ করবে, হল্যান্ডের নাম্বার প্লেট দেখে গাড়ি থামিয়েছে। আমাদের আইডেন্টিটি কার্ড চেক করে হাই হ্যালো বলে ছেড়ে দিল। আবার যাত্রা শুরু হল। একটু পরেই শুরু হল পাহাড়ি এলাকা। সে কি দৃশ্য – পাহাড় ডিঙ্গিয়ে রাস্তা চলে গেছে, মাঝে মাঝে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে টানেল, পাশাপাশি রয়েছে ট্রেন লাইন! অসাধারন ব্যাপার – মনে হচ্ছে যেন রোলার কোস্টার চড়ছি। এরই মধ্যে দেখি পাশ দিয়ে ভুম ভুম আওয়াজ করে দুইখান পোর্শে যেন উড়ে গেল। আমাদের গাড়ির স্পিডের কাটা ছিল ১৬৫ এর মত, তাহলে ঐ দুইটা নিশ্চয়ই ২০০’র মত চলছিল! আমি তাই সবসময় বলি, সেই রকম গাড়ির মত গাড়ি কিনলে চালায়া মজা জার্মানীতে!

জার্মানীতে প্রথম ব্রেক নিয়ে এক পেট্রল স্টেশনের বাথরুমে ঢুকে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। জনপ্রতি পঞ্চাশ সেন্ট দিয়ে ঢুকতে হবে, মানে প্রায় পঞ্চাশ টাকা! হুলান্ট দেশে বাথরুম ফ্রী অফ চার্জ আর এই জর্ম্মন দেশে পয়সা দিয়ে ঢুকতে হয় – কী ক্যারদানী! কিন্তু আমারো ঠ্যাকা পড়ছে, টয়লেটে না গিয়ে উপায় নাই। কী আর করা গাঁটের টাকা খরচ করেই ঢুকলাম সেই বাথরুমে। ভাবলাম পয়সা খরচ করে ঢুকতে হল যখন টয়লেটটা দেখতে না জানি কেমন, নিশ্চয়ই টেকনিক্যাল ক্যারাব্যারায় ভর্তি; কোথায় কি – পুরাই নরমাল একটা টয়লেট, খামাখা এতগুলা টাকা নিসে ব্যাটারা।

প্রায় সাতখান ব্রেক নিয়ে অবশেষে বিকাল চারটায় আমরা উলমে গিয়ে পৌছালাম। ইউনিভার্সিটি আর পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু গির্জার শহর এই উল্‌ম জার্মানীর একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে। এই শহর আইন্সটাইনের জন্ম শহর। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইউরোপখ্যাত দানিয়ুব নদী। আমার কাছে ইউরোপের সব শহরই দেখতে একই রকম লাগে, একই ধরনের রাস্তা, বাড়ি, গাছপালা। সিটি সেন্টারগুলোতে মনুমেন্টের ছড়াছড়ি, বেশিরভাগেরই আবার ভিতর থেকে পানির ফোয়ারা পড়ছে। যাই হোক, একসময় গিয়ে পৌছালাম সেই ভদ্রলোকের (উনি আবার সম্পর্কে আমার ভাই হন, যেহেতু মামীর আপার ছেলে) বাসায়। গিয়ে দেখি জার্মান ভাবী টেবিলে পোলাও সাজাচ্ছে আমাদের জন্য। কী আর করা সাজানো পোলাও তো ফেলে রাখা যায়না, অগত্যা খেতে বসতেই হল! ঐদিকে পান পেয়ে আন্টির মুখের হাসি আর ধরেনা, ভদ্রমহিলা সাথে সাথে কয়েক খিলি মুখে পুরে ফেললো!

খাওয়াদাওয়া করে বের হলাম শহর দেখতে। নামডাকের তুলনায় উল্‌ম অনেক ছোট শহর। মোটামুটি লাখখানেকের কিছু বেশি লোকের বাস এই শহরে। ইউরোপের আর সব শহরের মত এর সিটি সেন্টারও একই রকম- পাথরের রাস্তা, মনুমেন্টের ফোয়ারা, পুরানো দালান কোঠা। তবে একটা দিক থেকে অন্য রকম – দানিয়ুব নদীকে বিভিন্ন ছোট ছোট শাখা প্রশাখায় ভাগ করে শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করা হয়েছে, যার ফলে একে দেখতে অনেকটা ভেনিসের মত লাগে। ঠিক এই কারনে এখানকার লোকজন একে ‘লিটল ভেনিস’ বলে। সিটি সেন্টারের ঠিক মাঝেই হচ্ছে বিখ্যাত ‘উল্‌ম মিন্সটার’ বা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু চার্চ। চার্চ থেকে কিছুদূর গেলেই উল্‌মের সিটি কর্পোরেশনের খান্দানী পুরানো বিল্ডিং। আরো কিছুদূর এগোতেই সামনে পড়লো দানিয়ুব নদী। নদীর দুই পাশে প্রায় ত্রিশ ফুট উঁচু দেয়াল দেয়া। শহরের মধ্যে যেই জিনিসটা বেশি চোখে পড়ে সেইটা হল ‘উল্মার স্পাটয্‌’- একটা চড়ুই পাখির স্ট্যাচু। এই পাখি উল্‌ম শহরের প্রতীক। সূর্য ডুবে প্রায় রাত হয়ে গেল। পরদিন তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে তাই বাসার দিকে রওনা হলাম। আসার সময় পথের পাশে এক দূর্গের ওয়াচ টাওয়ার দেখতে গাড়ি রাখা হল। টাওয়ারের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঢুকতে গিয়ে নাকে ঝাঝালো গন্ধের ধাক্কা খেয়ে মনে হল যেন বাংলাদেশের পাব্লিক টয়লেটে ঢুকলাম! কে জানতো জার্মান পাব্লিকরা বাসা বাড়ি ফেলে এই টাওয়ারে ‘ছোট টয়লেট’ সারে। প্যাচানো সিড়ি বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে শুনি ফিসফিস শব্দ। কাহিনী কি! বাংলাদেশে কখনো ভূত দেখিনাই, শেষ পর্যন্ত জার্মান ভূত দেখতে হবে? ছাদের কাছে এসে সাবধানে মাথা তুলতে গিয়ে টকাস করে সিলিঙ্গে একটা বাড়ি খেলাম আর সাথে ফিসফিস শব্দ বন্ধ! ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখি আমার চেয়েও ভ্যাবচ্যাকা চোখে এক জুটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে – বাসা-বাড়ি ফেলে দিয়ে টাওয়ারের ছাদে প্রেম! এইটা কি বাংলাদেশ পাইসে নাকি? ওরা যা খুশি করুক আমি আমার মত টাওয়ারে উঠে রাতের উল্‌ম দেখতে লাগলাম। টাওয়ারের উপরে খানিকটা আবছা আলো ছিলো। সেই আলোতে দেখলাম দেয়ালে বিভিন্ন কালি দিয়ে লেখা ‘অমুক+তমুক’! আবার বঙ্গদেশের ঘ্রান – জার্মানদের দিয়ে সবই হয়!

জার্মানীতে একটা জিনিস ভীষন ভালো লাগলো – ঐখানে আমার নিজেকে অনেকদিন পর স্বাভাবিক উচ্চতার মানুষ বলে মনে হল। হল্যান্ডের লোকজন বিচ্ছিরি ধরনের লম্বা হয়, এদের গড় হাইট থাকে ৬ ফুট! এরা জন্মের পর থেকে সাইকেল চালায় আর সাঁতার কাটে – এদের ছয়ফুট না হয়ে কোন উপায় নাই। এইসব ছ’ফুটিদের সাথে থাকতে থাকতে নিজেকে লিলিপুট মনে হত। জার্মানীতে এসে দেখি যে নাহ্‌ এরা আমার কাছাকাছি; আমার চেয়ে ছোট, আমার সমান, আমার চেয়ে বড় – সবধরনেরই আছে!

একজন মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

তখন ক্লাশ সিক্সে পড়ি, কিশোর বয়স। কমিক্সের পাশাপাশি তিনগোয়েন্দা পড়া শুরু করেছি মাত্র। একদিন ক্লাশে মুশফিকের কাছে একটা বই দেখলাম, নাম “দুষ্ট ছেলের দল”, লেখকের নাম পরিচিত জাফর ইকবাল! পরিচিত এই হিসেবে যে আমি জাফর ইকবাল কে চিনতাম, আসলে একজন জাফর ইকবালকেই আমি চিনতাম, সে লোক সিনেমার হিরো ছিলো! আমি তো অবাক, সিনেমার হিরোরা বই লিখতে পারে বলে আমার কোন ধারনা ছিলোনা, তাও আবার কিশোর উপন্যাস! মূশফিক জিজ্ঞেস করলো যে বইটা আমি পড়ব নাকি! আমি তখন কিশোরদের বই বলতে চিনি তিনগোয়েন্দা, গোয়েন্দা রাজু, ফেলুদা, শঙ্কু – এইসব। তখন আমার প্রিয় লেখক ছিল সত্যজিত রায় (এখনো আছে!)। সেই লোকের গল্প, উপন্যাস, ছড়া, আঁকাআঁকি- সবকিছুতেই আমি মুগ্ধ! তাই কোথাকার কোন সিনেমাওয়ালা বই লিখেছে, সেটা পড়ার কোন উৎসাহ আমার মধ্যে হলনা। আমি না বলে দিলাম। মুশফিক দমবার পাত্র না, সে বুঝাতে লাগলো এই লোক হুমায়ুন আহমেদের আপন ভাই। হুমায়ুন আহমেদকে সবাই খুব পছন্দ করলেও কেন জানি আমি পছন্দ করিনা, আমার মতে তার সবচেয়ে দারুন সৃষ্টি হচ্ছে “বোতল ভূত” (যে বইটা পড়ে আমি হোমিওপ্যাথিকের শিশিতে কাগজ পোড়ানো ধোঁয়া ভরে সত্যি সত্যি পকেটে ভরে হাঁটতাম)। তাই হুমায়ুন আহমেদের ভাই শুনে মনটা আরো দমে গেল!

মাসখানেক পরের কথা। ছোটবেলায় চিটাগাং নিউমার্কেটে গেলে মিনিমাম একটা বই কেনা ছিল আমার রুটিন ওয়ার্ক। আম্মুর সাথে নিউমার্কেট গিয়ে সেই রুটিন কাজের অংশ হিসেবে বইয়ের দোকানের সামনে যখন গেলাম তখন দেখি দোকানি “দুষ্ট ছেলের দল” ঝুলিয়ে রেখেছে। কী মনে হল কে জানে, ঐ বইটা কিনে ফেললাম। বাসায় আসার পর যখন বইটা এক নিঃশ্বাসে শেষ করে ফেললাম তখন অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম, আমার প্রিয় লেখকের তালিকায় আরেকটা নতুন নাম ঢুকে পড়েছে – মুহম্মদ জাফর ইকবাল!

Continue reading একজন মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

ছবিতা ০১

ছবি আর কবিতা নিয়ে একটা পরীক্ষামূলক জগাখিচুড়ি প্রজেক্ট এই লেখাটা। শিরোনামে “০১” ব্যবহার করলেও এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত না যে “০২” আদৌ আসবে কিনা! এই জগাখিচুড়ি তে যদি কারো বদহজম হয় তাহলে অবশ্যই জানাবেন, বদহজম না হলেও জানাবেন! 😀

আরো বড় করে দেখতে হলে ছবিটার উপর ক্লিক করুন।

Continue reading ছবিতা ০১

রঙ্গীন দুনিয়া – ৮

ইডলস

রোটরড্যামের খুব বিখ্যাত এক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট হল আইডলসএটা নামে চাইনিজ হলেও এতে ইন্ডিয়ান আর জাপানিজ খাবারও পাওয়া যায়। তবে এই রেস্টুরেন্ট বিখ্যাত অন্যকারনে। এইখানে খাবার ভোক” করা যায়। ভোক হচ্ছে অতিথিদের সামনে তাদের পছন্দমত খাবার রান্না করে দেবার একটা চাইনিজ প্রসেস। টেবিলে সব কিছু কাঁচা সাজানো থাকে, যার যা দরকার সেটা প্লেটে তুলে নিয়ে রাধুঁনির কাছে নিয়ে যেতে হয়। তারপর রাধুঁনি ফরমায়েশানুযায়ী মসলা-টসলা দিয়ে খাবার তৈরি করে দেয়।

খালু এবার হল্যান্ডে আসাতে প্ল্যান হল যে আইডলসে খাওয়া হবে। মার্চের এক শনিবারের সন্ধ্যাকে টার্গেট করা হল আমাদের সঙ্গে আবার এনেকা আর জুয়ায়েরও যাবে। সময়মত আমরা সব রেডি হয়ে খালার বাসায় আসলাম। এসে শুনি খালুর বিএমডব্লু তে লুব্রিক্যান্ট ফেইলুর ইন্ডিকেশন দিচ্ছে। তিনটা গাড়ির বদলে এখন দুটো গাড়িতে যেতে হবে- মামার গাড়ি আর এনেকাদের গাড়ি। মোটামুটি সবাই ভাগভাগি করে গাড়িতে বসে রওয়ানা হলাম। আমি ছিলাম মামার সিট্রোঁতে। গাড়ি ছাড়ার পাঁচ মিনিট পর মামা বললো ভাইগ্না গাড়ির টেম্পারেচারে প্রব্লেম দিতেসেবলে কি! ড্যাশবোর্ডে উঁকি দিলাম, ইঞ্জিন টেম্পারেচার আশি ডিগ্রী ছাড়ায় গেছে। যে হারে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করছে তাতে যে কোন মুহূর্তে ইঞ্জিন উড়ে যাবার চান্স আছে! মামারে বললাম গাড়ি সাইড করতে। রাস্তায় গাড়ি থামায়ে রেডিয়টেরে উঁকি দিলাম, যা চিন্তা করছিলাম দেখি সেটাই ঘটেছে, পানি বলতে গেলে একদমই নাই। গাড়ির পিছন থেকে পানির বোতল বের করে পুরাটাই ঢেলে দিলাম। রেডিয়েটরের যেন রাজ্যের ক্ষুধা, দেয়া মাত্রই সব পানি উধাও! রেডিয়েটরে আরো আপনি ভরতে হবে। এইদিকে আসমিতা আবার এনেকাদের গাড়িতে খালাকে ফোন দিল সবকিছু জানাবার জন্যকিছুক্ষনের মধ্যে খবর আসলো আমাদের কাছের ফুয়েল স্টেশনে যেতে বলা হয়েছে, জুয়ায়ের নিজে গাড়ি দেখবে!

Continue reading রঙ্গীন দুনিয়া – ৮

লিনাক্সগুরুকূলের নিকট খোলা পত্র

সকল শ্রদ্ধেয় লিনাক্স বোদ্ধাগণ,

অনুগ্রহপূর্বক বয়ঃশ্রেণী অনুসারে আমার সম্ভাষন গ্রহন করিবেন। আশাকরি পরিবার পরিবর্গের সহিত একপ্রকার কুশলেই রহিয়াছেন।

চরম বিপদে পড়িয়া এই পত্রখানি লিখিতেছি। পুর্বেই বলিয়া রাখিতেছি আমার টেকি জ্ঞান অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ের। আমার গণকযন্ত্র সম্পর্কিত অজ্ঞানতাকে ক্ষমা সুন্দর চক্ষে দেখিবেন বলিয়া আশা করিতেছি। যদি কেহ পত্রখানির জবাব দেবার প্রয়োজন অনুভব করেন তবে তাহা দিতে কোন দ্বিধা করিবেননা।

পরসমাচার এই যে গত এক বৎসর ধরিয়া অভ্র নামক চাবির বাক্স (কীবোর্ডের বাংলা করিলে ইহাই দাঁড়ায়) ব্যবহার করিয়া আমার মত নাদান মানুষ (যাহারা বিজয় বা ঐ ধরনের লে-আউট রপ্ত করিতে অপারগ) বাংলা ভাষায় জালের জগতে মাতিয়া উঠিয়াছে। ইহাতে বাংলা ভাষার কতটুকু ক্ষতি সাধিত হইয়াছে তাহা সঠিকভাবে নিরূপন করা মুশকিল, তবে নাদান প্রজাতি যাহারা রোমান অক্ষরে বাংলা লিখিতে অভ্যস্ত ছিল তাহাদের যে অশেষ উপকার সাধিত হইয়াছে তাহা নিন্দুক জনেও অকপটে স্বীকার করিবে। সত্য বলিলে বলিতে হয়, অভ্র আছে বলিয়াই আমি গণকযন্ত্রে বাংলা লিখিতে পারিতেছি। অন্যথায় সমগ্র জীবন ভরিয়া আংরেজীতে লিখিতে হইত।

avro_keyboard

Continue reading লিনাক্সগুরুকূলের নিকট খোলা পত্র

উচ্চশিক্ষার্থে (প্রথমবারের মত) বিদেশগামী পোলাপানদের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সহজ শপিং গাইড

leaving

গত বছর আইইউটির আমাদের ব্যাচের ফাহিম [সিআইটি০২] বিদেশে নিয়ে যাবার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের একটা লিস্ট বানিয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই লিস্টটা পেয়ে বেশ উপকৃত হয়েছিলাম। বিদেশ যাবার সময় কি নিব আর কি নিবনা এইটা নিয়ে মাথা খুব গরম থাকে। সেদিক থেকে এই লিস্ট থাকাতে অন্তত নিজের মাথা খাটিয়ে বের করতে হয়নাই কোনটা নিতে হবে আর কোনটা নিতে হবে না, কোন জিনিসটা বেশি দরকারি আর কোনটা তেমন দরকারি না। কেনাকাটা করার সময় হাতের সামনে লিস্টটা ছিল বলে অনেক কম সময়ে সব কিছু যোগাড় করা সম্ভব হয়েছিল। সেই লিস্টটার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ফাহিমের কাছে কৃতজ্ঞ।

গতবারের ঐ লিস্টের সাথে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা জুড়ে দিয়ে আমি একটা আপডেটেড ভার্সন দিলাম। পুরো লিস্টটা ইউনিকোড বাংলায় লেখা। যেহেতু পিডিএফ করা তাই কোন সমস্যা হবার কথা না। যদি কোন সমস্যা হয় তবে সোলায়মান লিপি ফন্ট ডাউনলোড করে কম্পিউটারে ইন্সটল করতে হবে। এই ভার্সনটা ওপেন সোর্স অর্থাৎ যে কেউ যে কোন জায়গায় অব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করতে পারবে।

এই ভার্সন নিয়ে কারো কোন মতামত থাকলে নিচের কমেন্ট বক্স ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হল।


Continue reading উচ্চশিক্ষার্থে (প্রথমবারের মত) বিদেশগামী পোলাপানদের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সহজ শপিং গাইড

ভিজিটিং কার্ড

খুব ছোটবেলাতে দেখতাম বড় বড় মানুষেরা কথায় কথায় নিজেদের মধ্যে একটুকরা কাগজ চালাচালি করেসেই কাগজে মানুষটার নাম, অফিসের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার থাকতযাকে দিচ্ছে সে আবার খুব যত্ন করে সেই কাগজ তার মানি ব্যাগে রেখে দিচ্ছে। আরো পরে ঐ টুকরা কাগজের নাম জানলাম, একে বলা হয় ভিজিটিং কার্ড বড় বড় মানুষেরা তাদের পরিচয় অন্যদের দেবার জন্য এই সব কার্ড ব্যবহার করে। আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একটা ফোন নাম্বার দিতে কত ঝক্কি পোহাতে হত। তখন তো আর মোবাইল ছিলনা, ফোন নাম্বার দিতে হলে সেটা কাগজে লিখে দেবার নিয়ম, লিখার জন্য তাই কাগজের খোঁজ পড়ে যেত। যখন কারো কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে একটুকরো কাগজ পাওয়া গেলো তখন দেখা গেলো কলম নাই! এইবার আবার কলম খোঁজার ধুমঅনেক্ষন পর কলমও হয়ত একটা পাওয়া গেল। তারপর লিখে দিতে হত ফোন নম্বর। এই সময় পাশ দিয়ে হয়তো আরেক জন যাচ্ছে, হঠাৎ থেমে হয়ত জিজ্ঞেস করলো আরে এইটা আপনার নাম্বার? আমাকেও একটু লিখে দিয়েন তো। কি আর করা! আবার কাগজের খোঁজ কর, কলম খোঁজ, তারপর লিখ। কপাল খারাপ থাকলে হয়তো আরো একজন এসে চাইবে। অথচ যাদের কার্ড আছে তাদের ঐ ভেজাল নাই। খালি হাসিমুখে একটা কার্ড বের করে দিলেই হল। আহা কী সুখ! তাদের এই সুখ আমাকেও পেয়ে বসল। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম কবে কবে আমি বড় হব, কবে আমার ভিজিটিং কার্ড হবে।

Continue reading ভিজিটিং কার্ড