রঙ্গীন দুনিয়া – ৮

ইডলস

রোটরড্যামের খুব বিখ্যাত এক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট হল আইডলসএটা নামে চাইনিজ হলেও এতে ইন্ডিয়ান আর জাপানিজ খাবারও পাওয়া যায়। তবে এই রেস্টুরেন্ট বিখ্যাত অন্যকারনে। এইখানে খাবার ভোক” করা যায়। ভোক হচ্ছে অতিথিদের সামনে তাদের পছন্দমত খাবার রান্না করে দেবার একটা চাইনিজ প্রসেস। টেবিলে সব কিছু কাঁচা সাজানো থাকে, যার যা দরকার সেটা প্লেটে তুলে নিয়ে রাধুঁনির কাছে নিয়ে যেতে হয়। তারপর রাধুঁনি ফরমায়েশানুযায়ী মসলা-টসলা দিয়ে খাবার তৈরি করে দেয়।

খালু এবার হল্যান্ডে আসাতে প্ল্যান হল যে আইডলসে খাওয়া হবে। মার্চের এক শনিবারের সন্ধ্যাকে টার্গেট করা হল আমাদের সঙ্গে আবার এনেকা আর জুয়ায়েরও যাবে। সময়মত আমরা সব রেডি হয়ে খালার বাসায় আসলাম। এসে শুনি খালুর বিএমডব্লু তে লুব্রিক্যান্ট ফেইলুর ইন্ডিকেশন দিচ্ছে। তিনটা গাড়ির বদলে এখন দুটো গাড়িতে যেতে হবে- মামার গাড়ি আর এনেকাদের গাড়ি। মোটামুটি সবাই ভাগভাগি করে গাড়িতে বসে রওয়ানা হলাম। আমি ছিলাম মামার সিট্রোঁতে। গাড়ি ছাড়ার পাঁচ মিনিট পর মামা বললো ভাইগ্না গাড়ির টেম্পারেচারে প্রব্লেম দিতেসেবলে কি! ড্যাশবোর্ডে উঁকি দিলাম, ইঞ্জিন টেম্পারেচার আশি ডিগ্রী ছাড়ায় গেছে। যে হারে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করছে তাতে যে কোন মুহূর্তে ইঞ্জিন উড়ে যাবার চান্স আছে! মামারে বললাম গাড়ি সাইড করতে। রাস্তায় গাড়ি থামায়ে রেডিয়টেরে উঁকি দিলাম, যা চিন্তা করছিলাম দেখি সেটাই ঘটেছে, পানি বলতে গেলে একদমই নাই। গাড়ির পিছন থেকে পানির বোতল বের করে পুরাটাই ঢেলে দিলাম। রেডিয়েটরের যেন রাজ্যের ক্ষুধা, দেয়া মাত্রই সব পানি উধাও! রেডিয়েটরে আরো আপনি ভরতে হবে। এইদিকে আসমিতা আবার এনেকাদের গাড়িতে খালাকে ফোন দিল সবকিছু জানাবার জন্যকিছুক্ষনের মধ্যে খবর আসলো আমাদের কাছের ফুয়েল স্টেশনে যেতে বলা হয়েছে, জুয়ায়ের নিজে গাড়ি দেখবে!

Continue reading রঙ্গীন দুনিয়া – ৮

রঙ্গীন দুনিয়া – ৭

শীত কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?

প্রথম ধাক্কায় এইটা বলে নেয়া ভালো এইবার উইন্টারে নেদারল্যান্ডসে গত চৌদ্দ বছরের সবচেয়ে ঠান্ডা পড়লো। রাতের বেলা হেগ শহরে টেম্পারেচার মাইনাস পনেরতে গিয়ে ঠেকত। সাগরের পাশে থাকাতে হেগে ঠান্ডা কম ছিল, অন্যান্য জায়গায় তাপমাত্রা মাইনাস বিশের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো! ঠান্ডায় আমি কি কাবু হব, ডাচ লোকেরাই কাবু হয়ে গেছে! রাস্তায় সবাই বস্তা (ঠান্ডায় যে পরিমান কাপড়চোপড় পড়া হয় সেগুলাকে বস্তা বললে খুব একটা ভুল হবেনা) পড়ে ঘোরাঘুরি করছে, এইটা এদের কাছেও অপরিচিত দৃশ্য। তবে তুষার একেবারেই পড়েনি। এখন পর্যন্ত মাত্র তিন দিন তুষার পড়েছে তাও যেটা সবচেয়ে বেশীক্ষন পড়েছিলো সেটার স্থায়ীত্বকাল ছিল টেনেটুনে চার ঘন্টা!

শীতের দিনে সবচেয়ে যেটা কষ্টের সেটা হল ঘড়ির কাঁটা বলে সকাল আটটা কিন্তু ঘরের বাইরে জমাট অন্ধকার! সূর্য উঠতে উঠতে সকাল নয়টা। মাঝে মাঝে এমনও হয়েছে সাড়ে দশটায় ক্লাস শেষ করে প্রফেসর আমাদের গুড মর্নিং জানিয়ে চলে যান। আবার অন্যদিকে বিকেল চারটা বেজেছে কি বাজেনি সাথে সাথে চারদিকে ঝপাস করে অন্ধকার জেঁকে বসলো। রাতে আঁধারে বাসা ছাড়ি আবার রাতের আঁধারেই বাসায় ফিরি। কি কপাল!

তবে তুষার না পড়লেও বাড়ির পাশের খাল ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল। শুধু বাসার পাশের খাল না, অন্যান্য সব খাল, লেক, নদীও ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছিলো। নেদারল্যান্ডসের সবগুলো খাল, লেক, নদী একটার সাথে আরেকটা কানেক্টেড। তাই কেউ ইচ্ছা করলেই যে কোন খালে নৌকা ভাসিয়েই যে কোন নদীতে গিয়ে হাজির হতে পারে। অবশ্য সেই জন্য রূট জানা চাই। তো শীতে যখন সব পানি জমে বরফ হয়ে গেলো, এইখানকার লোকজন তখন স্কেটিং করা শুরু করল। স্কেটিং করে তারা এক শহর থেকে আরেক শহরে হাজির হত, প্রত্যেক শহরের মাথায় আবার চেকপোস্ট টাইপের একটা পোস্ট বসানো হল, স্কেটিং করে একেকটা পোস্ট পার হলে সেই পোস্ট থেকে একটা সার্টিফিকেট মিলে যাতে লেখা থাকে যে ঐ সার্টিফিকেটের মালিক এই শহর স্কেটিং করে পার হয়েছে! এইভাবে সবাই চায় বেশি বেশি সার্টিফিকেট নেবার জন্য।

পাগল সব দেশেই থাকে। কোথাও একটা দুইটা আবার কোথাওবা দল বেঁধে – এই যা পার্থক্য! এইখানে ও সেরকম দলবদ্ধ পাগলের কমতি নাই, তবে একসাথে আমার দেখা সে পাগলদের সংখ্যাটা শতিনেকের কাছাকাছি। তো এই পাগলদের দেখা মিললো জানুয়ারির এগারো তারিখ স্ক্যাভেনিংখে। স্ক্যাভেনিংখ হল হেগের একটা বীচ, হেগের আরেকটা বীচের নাম কাইকডাউন। যাই হোক স্ক্যাভেনিংখে সব ধরনের সব বয়সের পাগল এক হল, সেসব পাগলদের উৎসাহ দিতে আরো অনেক পাতি-পাগল আসলো। ঠিক দুপুর বারটায় কনকনে শীতের মধ্যে পাগলরা সবাই জামা কাপড় খুলে বরফ শীতল সমুদ্রের পানিতে দিল দৌড়! পেছন থেকে পাতি পাগলেরা চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছে। তাদের শখ হল ঐ বরফ শীতল পানিতে সাঁতার কাটবে। এই কাজটা এরা প্রতিবছর জানুয়ারিতে করে থাকে!

Continue reading রঙ্গীন দুনিয়া – ৭