বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষকের অভাব, অপ্রশিক্ষণ, অবকাঠামোর অপ্রতুলতা, পাঠ্যপুস্তকের মানহীনতা, শিক্ষকদের মর্যাদা হ্রাস, রাজনীতির হস্তক্ষেপ ইত্যাদি কারণে শিক্ষার মান ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধ্যয়নের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া, নিম্নমানের শিখন-শিক্ষণ ব্যবস্থা, বিষয় ভিত্তিক শিক্ষার অবলুপ্তি, অ্যাসাইনমেন্ট ও গ্রুপ স্টাডি ভিত্তিক শিক্ষার অসুবিধা ইত্যাদি সমস্যাও বিদ্যমান। এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে, যেমন – শিক্ষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি, নীতি নির্ধারণে শিক্ষকদের মতামত গ্রহণ, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা পুনর্বহাল, অবকাঠামো উন্নয়ন, পাঠ্যপুস্তকের মান উন্নয়ন, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে রাজনীতি দূর করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধ্যয়নের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং শিক্ষার মান নিরীক্ষণ। এছাড়াও, শিক্ষাব্যবস্থায় আরও বেশি রাষ্ট্রীয় বাজেট বরাদ্দ করা এবং গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান খুঁজে বের করার আবশ্যক।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রাথমিক শিক্ষার মতো একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে নানারকম সংকট বিদ্যমান। এই সংকটগুলো শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের নয়, বরং সমগ্র জাতির উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য এই খাতের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি। শুধু জরুরি বললে ভুল হবে, বরং বলা উচিত “আবশ্যক”। এই লেখায় বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করার চেষ্টা করব। সেই সাথে সেসব সমস্যার সমাধানের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা-ও আলোচনা করব। তবে মনে রাখতে হবে যে এই এক লেখাতে সকল সমস্যা তুলে ধরা কিংবা তাদের ফলপ্রসূ সমাধান আলোচনা করা সম্ভব নয়। এ জন্য গভীরভাবে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এই লেখাতে “গভীর গবেষণা” সেই অর্থে করা হয়নি। তবে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তাদের সমাধানের পথ বাতলে দেওয়ার প্রাথমিক একটা প্রচেষ্টা করা হয়েছে এই লেখাতে। এই প্রচেষ্টার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে গভীরভাবে গবেষণার মাধ্যমে আমরা কার্যকরী পদক্ষেপগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।
আমাদের সংকট ও আমাদের চ্যালেঞ্জ
প্রাথমিক শিক্ষা একটি জাতির ভিত্তি। কিন্তু বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার মান যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শিক্ষকদের অভাব, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, দুর্বল অবকাঠামো, পাঠ্যপুস্তকের মানহীনতা ইত্যাদি কারণে শিক্ষার মান ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা হ্রাস পাওয়া, তাদের বেতন-ভাতা কম হওয়া, দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে অসামঞ্জস্য ইত্যাদি কারণে শিক্ষকরা তাদের কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এই একই সমস্যা শুধু প্রাথমিক শিক্ষাতেই নয়, বরং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক – এই দুটো ক্ষেত্রেও দেখা যায়। উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও চিত্র একই রকম। কারণ প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে সংকটে আক্রান্ত শিক্ষার্থীরাই পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঢুকছে। এর সাথে যোগ হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব সংকট – শিক্ষকের অভাব, গবেষণার অভাব, পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শিক্ষার্থীরা কেবল ডিগ্রি অর্জনের জন্যই পড়াশোনা করে, তাদের মধ্যে জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কোচিং সেন্টারের মতো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কোনরকমে মুখস্ত করিয়ে পরীক্ষা বসিয়ে যোগ্যতার চেয়ে বেশি ফল পাইয়ে সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছে। পরবর্তীতে এসব শিক্ষার্থীরা দেশের বেকার সমাজে যুক্ত হওয়া ছাড়া আর তেমন কোনো কাজে আসে না। সব সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে আমাদের একদম মূলে যেতে হবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার করে লাভ নেই। কারণ শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে যেভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে, তা যদি উন্নত করা না যায় – তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত শিক্ষায়ও তাদের কোনো লাভ হবে না। উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে খারাপ ফলাফল করে তারা হতাশ ও হতোদ্যম হয়ে পড়বে। তাই আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষাব্যবস্থায় সংকট ও চ্যালেঞ্জগুলো আগে বের করতে হবে। তারপর তার সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে।
যখন ছোট ছিলাম তখন পত্রিকার ছোটদের পাতাগুলো (নামগুলো এখন ভুলে গেছি) খুব মনযোগ দিয়ে পড়তাম। পাতাটির আগাগোড়া ভাজ ভাজা হয়ে পড়া হয়ে যেত। তবে প্রতি সপ্তাহে মাত্র একটা ছোটদের পাতায় কী আর পোষায়? আর প্রতিটি পাতাই ছিল একই রকম – একটা কি দুইটা গল্প, কয়েকটা ছড়া, কখনোবা বিখ্যাত কারো কবিতা হয়তো একটা–দুইটা থাকতো, কয়েকটা জোক্স, আর আমার মতই ছোট্ট ছোট্ট পাঠকদের আঁকা কয়েকটি ছবি – এইতো! এতটুকুতেই পুরে যেত পুরো একটা পাতা – সব একঘেঁয়ে ব্যাপার স্যাপার। তারপরও ছোটদের পাতাটুকুকে আপন মনে হত খুব – মনে হত যেন বড়দের শুকনো পত্রিকার মাঝে নিজের একটা রঙিন পৃথিবী! কত আগ্রহ নিয়ে থাকতাম সপ্তাহে এই পাতাটির জন্য!
ঠিক চল্লিশ বছর আগে ১৯৭১ সালে তোমার জন্ম হয়েছিল। দেখতে দেখতে ঠিক চল্লিশটা বছর পার হয়ে গেল। চল্লিশ বছরে দেশের বড় বড় লোকেরা তোমাকে কেটকুটে খাচ্ছে প্রতিদিন। জন্মের পরপরই তুমি পেয়েছ ফারাক্কা, এবার হয়তো টিপাইমুখটাও পেয়ে যাবে। উড়ালসেতু, পদ্মাসেতু, পাতালসেতু – এইসব গালভরা নামের সাথে সেইসব বড়লোকেরা তোমাকে সেতু কেলেঙ্কারীতে ফাঁসিয়ে দেয়। ট্রানজিট নামের এক ‘ভদ্রতার’ কারণে তোমার ভেতর দিয়ে অন্য দেশের যন্ত্র দানবকে নিঃসংকোচে চলে যাবার অনুমতি দেয় – এসব দানবরা যে তোমার হার-পাঁজড় গুড়িয়ে দেবে সেটা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র উৎকন্ঠা নেই। এইসব বড় বড় লোকেরা, তোমার খাঁটি সন্তানদের, যারা তোমাকে স্বাধীন করেছিল, তাদেরকে দেয়নি কিছুই। নোবেল পুরস্কার পেয়ে বিশ্ব দরবারে তোমার নাম উজ্জ্বল করা এক সন্তানকে নিয়ে কেটেকুটে ফেলতে চেয়েছিল অনেকেই। ওরা এটুকুও অনুভব করেনি যে নিজের ভাইকে চড় দিলে সেটা নিজের গায়েই লাগে। চল্লিশ বছর আগে, তোমার মেধাবী সন্তানদের যারা মেরে সাপ করে ফেলেছিল, সেসব খুনীগুলো কিন্তু এখনো বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে – তাদের কিছুই হয়নি – বড় বড় লোকেরা তাদের কিছুই করেনি! ঘুষাঘুষি আর দুর্নীতি করে সেসব বড় বড় লোকেরা এখন বিদেশ বিভুঁইয়ে বাড়ি গাড়ি করে। কেউ কেউ তোমাকে শাসন করে, কেউ কেউ আবার তোমাকে শাসন করতে না পেরে ভিন্ন ভিন্ন পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে। তোমাকে ওরা পন্য হিসেবেই দেখে, তোমার কোন দাম তাদের কাছে নেই।
ইদানিং টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বেশ হইচই হচ্ছে। হইচই হবেইনা বা কেন? ভারত রীতিমত ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের গলা চেপে ধরছে – হইচই তো হবেই। ১৯৭৫ এর ফারাক্কা বাঁধ যখন দেয়া হয়, তখন কেবল মাওলানা ভাসানীই এটা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। অন্যরা তেমন একটা উচ্চবাচ্য করেনি, বিশেষ করে সরকার পর্যায়ে ‘কিছুই’ হয়নি! সেই ‘কিছুই না হওয়া’কেই ভারত আমাদের দুর্বলতা ধরে নিয়ে এবার টিপাইমুখে বাঁধ দিচ্ছে। অবাক ব্যাপার হচ্ছে, এবারও সরকারের কাছ থেকে কোন উচ্চ কিংবা নিম্ন – কোন বাচ্যই নেই! নিজেদেরও টনক নড়ছেনা, ফলশ্রুতিতে তারা ভারত সরকারের টনকও নাড়াচ্ছেনা। কিন্তু আমরা সাধারণ জনতাতো আর বসে থাকতে পারিনা। তাই দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেছে প্রতিবাদ। অনলাইন-অফলাইন সবখানে চলছে দেখা যাক আমাদের সরকারের টনক কদ্দূর নড়ে। আমাদের সরকারের টনক নড়লে পরে তবেই না ভারত সরকারের টনক নড়ার ব্যাপারটা আসে।
সপ্তাহ দুয়েকের কিছু বেশি হল নিজের দেশে আসলাম। নিজের দেশে! বাংলাদেশে! নিজের কাছেই বিশ্বাস হচ্ছিলনা। এখনো স্বপ্নের মত মনে হয়। মনে হয় ঘুম ভেঙ্গে গেলেই আবার নিজেকে নেদারল্যান্ডে আবিষ্কার করব। প্লেন থেকে যখন সাদা মেঘের ফাঁক দিয়ে সবুজের মাঝে রূপালি ফিতার মত পেঁচিয়ে থাকা চিকচিকে নদীগুলোকে দেখছিলাম – তখন যে কী খুশি লাগছিল সেটা বলার মত নয়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাথে কোলাকুলি করতে ইচ্ছা করছিল। প্লেনের জানালা দিয়ে এভাবে মনে হয় ঘন্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে তন্ময় হয়ে তাকিয়েছিলাম। ইট পাথরের জঙ্গল ঢাকাকে অদ্ভুত লাগে উপর থেকে। মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। প্লেন ল্যান্ড করার পর সেই মোহ ভাঙ্গল। এর মাঝে প্লেনের ভেতর কি কি হয়েছে কিছু খেয়াল নেই, এমনকি এয়ারহোস্টেস কোনও খাবারদাবার অফার করে গেছে কীনা তাও জানিনা। পায়ের নীচে তখন সবুজ বাংলাদেশ, এ সময় এয়ারহোস্টেস নিয়ে কে মাথা ঘামায়?
আগেই বলে রাখি যে আমি ক্রিকেটবোদ্ধা নই, ক্রিকেটপ্রেমীও নই। টিভির সামনে টানা বসে ক্রিকেট খেলা দেখিনা, ধৈর্য হয়না। টুয়েন্টি-টুয়েন্টি, ওয়ান্ডে বা টেস্ট যাই হোক না কেন – বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ম্যাচ শেষে ফলাফলটা জেনে নেই। ওটাই আমার জন্য অনেক কিছু। তবে বাংলাদেশের খেলা থাকলে অবশ্য অন্য কথা। টেস্ট ছাড়া বাকী দুটো’র জন্য কিছুক্ষণ পর পরই আপডেট জানা দরকার হয়ে পড়ে। সোজা কথা, দর্শক হিসেবে বাংলাদেশের একজন সাধারণ মাপের দর্শকের চেয়েও আমার অবস্থান অনেক নিচে। ক্রিকেটের প্রতি টান নেই, তবে টান রয়েছে বাংলাদেশের প্রতি। তাই ক্রিকেট খেলতে যখন বাংলাদেশ মাঠে নামে, তখন এই টানটাই আমাকে সেই ম্যাচে বুঁদ হয়ে থাকতে অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই আমার এই লেখাটিকে ক্রিকেটিয়-বিশ্লেষণ ধরণের কিছু মনে করবার কোন কারণ নেই। গত কয়েকদিন ধরে উৎপল শুভ্র নামের এক সাংবাদিকের হাগড়পাগড় রিপোর্টিং পড়ে নিতান্তই মেজাজ খারাপ হয়ে এই লেখাটির জন্ম।
মাঝে মাঝে খুব অবাক হই যখন তাকিয়ে দেখি যে ২৩-২৪ বছরের ছেলেগুলো কী দৃপ্তভাবে সামনে থেকে আমার হত দরিদ্র দেশটিকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে! যখন ২৩-২৪ বছরের নিজের দিকে তাকাই, যখন চিন্তা করি যে ষোল কোটি মানুষকে তুলে ধরা ঐ ছেলেগুলোর তুলনায় আমি নিজে কি করেছি, তখন ছেলেগুলোর জন্য এক ধরনের গর্বে বুক ভরে যায়। ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন সাকিবের কথাই ধরুন। ষোল কোটি মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে ছেলেটি ১১ জনের একটি দলকে বিশ্ব পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমার ২৩ বছর বয়সে যদি আমাকে এই কাজটা দেয়া হত তাহলে ভয়ে আদৌ নিতাম কিনা কে জানে! অবশ্য আমার নেয়ার আগেও বড় কথা হচ্ছে আমাকে দেয়া হত কিনা! আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি, খেলাটাকে উপভোগ করার যোগ্যতা থাকলেও খেলাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় দলের অধিনয়াকত্ব করার নূন্যতম যোগ্যতাও আমার নেই। যে কাজে আমার যোগ্যতা নেই, সেই কাজটিই যখন তরুণ একজন ছেলে অসম্ভব অবিচলভাবে দৃপ্ততার সাথে করে চলেছে তখন তাকে স্যালুট জানাতেই হয়। সতেরই ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজেদের অধিনায়ককের তাই দেশের মানুষ বরণ করে নিয়েছিল তুমুল হর্ষধ্বনির মাঝ দিয়ে। সেই হর্ষধ্বনি কিন্তু বাংলাদেশ দলের প্রতি দেশের মানুষের বিশ্বাস ও ভালোবাসার অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ। সাকিব আল হাসানকে যখন অধিনায়ক করা হয় তখন তার যোগ্যতা, তার মেধা, তার অতীত পারদর্শীতা, সর্বোপরি তার জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা – সব কিছুকেই বিচার করা হয়েছে। সাকিবকে অধিনায়ক ঘোষণার পর কাউকে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কোন ধরনের আক্ষেপ পর্যন্ত করতে শোনা যায়নি, বরং সবাই আশস্তই হয়েছিল! কারণ সাকিব আল হাসান লোকজনের কাছে সেই বিশ্বাস অর্জন করেছিল।
ভীষণ ব্যস্ততায় ইদানিং দিন কাটাচ্ছি। এরই মাঝে সময় বের করে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতে বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা দেখলাম। আগেই বলেছি ক্রিকেট বুঝিনা। তারপরও ভারতের বিশাল রানের পাহাড় দেখে মন খারাপ হয়েছিল, কিন্তু তামিম আর ইমরুলের ব্যাটিং সূচনা দেখে সেই মন খারাপ ভাবটা বেশিক্ষণ থাকেনি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচে হেরে গেলেও অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে নিজের ভেতরের মন খারাপ ভাবটা আর ছিলনা। বাংলাদেশের “বিনা যুদ্ধে নাহি দেব ছাড়” ধরণের মানসিকতাটা ছিল দেখার মত। দ্বিতীয় ইনিংস দেখে একবারও মনে হয়নি যে বাংলাদেশ খেলা নিয়ে বিচলিত, তারা আগে থেকেই হার মেনে নিয়েছে – বরং ভারতের মাঝেও একসময় আতংক তৈরি করেছিল। খেলা শেষে যার সাথেই কথা হয়েছে কারো মুখে বাংলাদেশ দলকে আক্রমন করে কিছু বলতে শুনিনি, তাই ভেবেছিলাম যে দলের স্পোর্টসম্যানশিপে সবাই খুশি। ভুল ভেবেছিলাম। সবাই যে খুশি নয় সেটা জানতে পারলাম পরদিন – প্রথম আলোর সাংবাদিক উৎপল শুভ্র’র লেখা পড়ে!
২০শে ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে “পরাজয়ে প্রাপ্তি ভবিষ্যতের রসদ” নামে উৎপল শুভ্র’র একটা লেখা বের হয়। লেখাটার প্রায় প্রতিটি লাইনেই বাংলাদেশ দলের পারফর্ম্যান্সে লেখকের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। এক পর্যায়ে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্তের জন্য সাকিবকে কাটাছেঁড়া করে ফেললেন। তারপর দিন ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সাকিবের এক সাক্ষাৎকারে একই লেখক সাকিবকে পুরোপুরি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একের পর এক আক্রমন চালিয়ে গেলেন। লেখাটাকে সাক্ষাৎকার না বলে বরং পুলিশি জেরা বললে আরো মানানসই হয়। যেকোন মূল্যেই তিনি চাচ্ছিলেন সাকিবের মুখ থেকে শুধু একটি কথা বের করতে যে “টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে আমি ভুল করেছি!“। তার জেরার শিরোনামটাই ছিল “টস নিয়ে এত কথা বলার কারণ দেখছি না“, পড়ে মনে হচ্ছে যেন সাকিব তার টসে করা ‘ভুল‘টাকে ধামাচাপা দিতে চাইছেন। সেই সাক্ষাৎকারে (পড়ুন ‘জেরা’) করা কয়েকটি নমুনা প্রশ্ন দেখুনঃ
টসে জিতে আপনার ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত তো এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’…
আমজনতার মুখে মুখে একটা কথা ফিরছে, বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করলে ভারত চাপে পড়ে যেত। আপনি একমত?
ঠিক আছে, আপনি ক্রিকেটীয় যুক্তিবুদ্ধি দিয়েই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিং-তাণ্ডবের সময় কখনো ‘ভুলই করলাম কি না’ মনে হয়নি?
আলোচনাটা কি টিম মিটিংয়ে হয়েছে, নাকি টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে?
প্রশ্নটা আবার করছি, ভারত ৩০ ওভারেই ২ উইকেটে ১৬৯ করে ফেলার পর সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়েছে কি না, এ নিয়ে নিজের মধ্যে একটুও দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়নি?
সিদ্ধান্তটা বুমেরাং হয়ে যাওয়ার মূল কারণ কী?
৩৭০ হয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ কারণ তো বীরেন্দর শেবাগ। ও যখন ওভাবে মারছিল, অসহায় লাগছিল না?
এই ম্যাচ নিয়ে এমন হাইপ, মাঠভর্তি দর্শক—টস করতে নামার সময় কি একটু নার্ভাস লাগছিল?
৩৭১ টার্গেট হয়ে গেলে অধিনায়কের কী-ই বা বলার থাকে! তার পরও জিজ্ঞেস করি, ব্যাটসম্যানদের আপনি কী বলেছিলেন?
বাংলাদেশ এখন আর সেই অবস্থায় নেই যে কেবলমাত্র “আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি” সেই আনন্দেই সবাই ভাসছে, বরং বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত। প্রতিটি ম্যাচেই জয়ের লক্ষ্য নিয়েই খেলতে নামে। ভারতের বিপক্ষের ম্যাচ হারায় স্বভাবতই দলের মানসিক অবস্থা খারাপ থাকার কথা, আর এ খারাপ সময়ে দলকে সামনের ম্যাচের জন্য চাঙ্গা করে রাখাটাও জরুরি – এটা বোঝার জন্য মনস্তত্ববিদ হবার দরকার পড়েনা। অথচ আমাদের সাংবাদিক সাহেব যেন সেই কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে আনন্দ অন্বেষণে ব্যস্ত! কেন সাকিব টসে জিতে ফিল্ডিং নিলেন, সেই গূঢ় তত্ত্ব জানতে তিনি বদ্ধ পরিকর। তাই ২২শে ফেব্রুয়ারির পত্রিকায়ও দেখা গেল যে “ঝিমিয়ে পড়ল কি বিশ্বকাপ-নগর!” লেখাটিতেও বাংলাদেশ দল কেন নিজেদের উজ্জীবিত করতে শহীদ মিনারে যায়নি সেটা নিয়ে শেষ লাইনে সাকিবকে খোঁচাতে কার্পণ্যবোধ করেননি। শহীদ মিনারে গিয়ে দল মানসিকভাবে চাঙ্গা হত ঠিকই কিন্তু তাই বলে কেন যায়নি সেটা নিয়ে মায়াকান্না করার কোন কারণ তো দেখিনা। একটা কারণ হতে পারে – সাকিবের দোষ ধরা! তার লেখার শেষ লাইনটি ছিল এরকম – “ভালো তো হতোই। কিন্তু বাংলাদেশ দলে এভাবে ভাবার লোক কোথায়?” এর মানে কি? সাকিব দল নিয়ে ভাবেননা? সব ভাবনা কেবল আমাদের উৎপল শুভ্র’র মাথায়?
“দান দান তিন দান” কিংবা “দিন দিন তিন দিন“! পর পর তিন দিন ধরে উৎপল শুভ্র সাকিবকে খুঁচিয়েই যাচ্ছেন। খুব জানতে ইচ্ছা করে কেন করছেন তিনি এটা? তিনি কি জানেন যে কত রকম বিচার বিশ্লেষণ আর পরীক্ষার নীরিক্ষার মাধ্যমে একজন অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়? তিনি কি জানেন না যে টস জিতে ব্যাটিং বা ফিল্ডিং নেবার স্বিদ্ধান্ত কেবল মাত্র অধিনায়ক নেননা? তিনি কি জানেননা বাংলাদেশ দল গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটা খেলেছে তাদের প্রথম খেলায়? তিনি কি জানেন যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আরো ম্যাচ বাকী রয়েছে? মনে হয়না। নাহলে চলমান একটা টুর্নামেন্টে নিজের দেশের অধিনায়কের পেছনে এভাবে আদাজল খেয়ে লাগার অর্থ কি? সাবোটাজ? এ ছাড়া তো আর কিছু মাথায় আসছেনা? তিনি কি ইচ্ছে করেই সাবোটাজ করছেন? ইচ্ছে করেই ভেঙ্গে দিচ্ছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মানসিক শক্তি? সামনের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ যদি খারাপ করে তবে আমার তর্জনী উঠবে উৎপল শুভ্রের দিকে। আমি সব দোষ দিব উৎপল শুভ্র নামের ঐ লোকটাকে, যে কিনা আমার অধিনায়ককে হায়েনার মত নির্লজ্জভাবে কাটাকুটি করেছে!
সাকিব এই অংশটুকু তোমার জন্য ভাই! তুমি যে মাঠে স্পোর্টসম্যানশিপ আর মাঠের বাইরে স্পোকম্যানশিপের পরিচয় দিয়েছ সেটা সত্যিই অতুলনীয়। সত্যি বলতে কী আমার নগন্য ক্রিকেটিয় বিদ্যায় আমি যা বুঝি যে, বাংলাদেশ খুব ভাল এবং যোগ্য একজন অধিনায়কের হাতে রয়েছে, যে কিনা গত কয়েকমাসে আমাদের বড় বড় স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। উৎপল শুভ্ররা ক্ষণিকের অতিথি, এদেরকে কেউ মনে রাখেনা, মনে রাখবেওনা। দেশের লোক উৎপল শুভ্রকে চেনেনা, ওরা চেনে তোমাকে। তাই তো তুমি যখন রিকশা চড়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রবেশ করলে দেশের লোক সজোরে করতালি দিয়ে তোমাকে বরণ করে নিয়েছিল। উৎপল শুভ্ররা কখনোই তোমাকে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারবেনা, তাই ভুলে যাও সেসব লোকদের কথা। ষোল কোটি মানুষের লাল-সবুজ পতাকাটিকে তুমি তোমার দলকে সঙ্গী করে এগিয়ে নিয়ে যাও – আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারিতে বাংলাক্রিকেট ফোরাম এ বাংলাদেশী ক্রিকেট সমর্থকদের প্রতি একটি আবেদন জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বোলিং কোচ ইয়ান পন্ট। মূল ইংরেজি ভাষায় করা পোস্টটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগের বাবুবাংলা। একই সাথে তাঁর এই বার্তাটুকু যতটুকু সম্ভব সবার কাছে পৌঁছে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। সবার কাছে বার্তাটি পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যে কোচের লেখা “Request to fans” নামের মূল লেখাটির বঙ্গানুবাদ (অনুবাদকের সাথে যোগাযোগের কোন উপায় না পেয়ে অনুবাদকের অনুমতি ছাড়াই) আমার ব্লগে পোস্ট করছি।
সমর্থকদের প্রতি আবেদন
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের কাছে ক্রিকেট যে কি বিশাল এক আবেগের নাম, তা আমরা বুঝি। আমি, ইয়ান পন্ট আর বাংলাদেশ দলে আমার সহকর্মী জুলিয়ান ফাউন্টেইন; আমরা দুজনই ইংল্যান্ডের মানুষ- সেখানে বার্মি-আর্মি নামের ক্রিকেট সমর্থকগোষ্ঠীও অনেকটা একই রকমভাবে মনে প্রানে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে সমর্থন করে।
তবে পার্থক্যের জায়গাটা বোধহয় এটুকুই যে, বার্মি-আর্মিরা এ পর্যন্ত কখনোই তাদের নিজের দলের খেলোয়াড়দের অপমানিত করে দুয়োধ্বনি দেয়নি। সব ব্যঙ্গ-তামাশা আর কটুক্তি তারা যেন জমা করে রাখে শুধু প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের জন্য। এই ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপুর্ণ; কারন ভক্ত সমর্থকেরা দলেরই একটা অংশ। তাই প্রকৃত সমর্থকেরা শত ব্যর্থতায়ও নিজের দলের খেলোয়াড়দের দুয়োধ্বনি দিয়ে অপমানিত-লাঞ্ছিত করতে পারে না, কখনোই না। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রতিটি দর্শক-সমর্থক অবিচল ঐক্যে দলের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেরাই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ দলের এক একজন সহকর্মী কিংবা দ্বাদশ খেলোয়াড়। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের এই বড় আসরে বাংলাদেশের দর্শক-সমর্থকেরা এভাবেই দলের জন্য রাখতে পারে বিশাল ভুমিকা।
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ চায় দলের সব কোচ আর খেলোয়াড়েরা নিঃস্বার্থ ভাবে একে অন্যকে সহযোগিতা করুক, দল ও দেশের জন্য নিজেদের সব সামর্থ্য উজাড় করে দিক। এই দেশের প্রতিটি মানুষ চায় দলের বিপদের মুহূর্তে প্রত্যেকে সামর্থ্যের প্রতিটিকণা ঢেলে দিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একাট্টা হয়ে লড়াই চালিয়ে যাক।
আমরা চাই বাংলাদেশ দলের সমর্থকেরাও ঠিক একই দৃঢ়তা আর প্রতিজ্ঞা নিয়ে দলের জন্য নিজেদের উজাড় করে দিক।
দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ কি হাতে হাত রেখে বাংলাদেশ দলের পাশে এসে দাঁড়াবে না? এ আমার একান্ত চাওয়াঃ জয়-পরাজয় যাই আসুক, বাংলাদেশ দলের পাশে দাঁড়ান। হৃদয়ের সব আবেগ দিয়ে দুর্বিপাকের মুহুর্তেও দলের পাশে থাকুন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের আজ এটি এক জাতীয় দায়িত্ব। মনে প্রানে যে দলকে ভালোবাসে, সে কখনোই দলের বিপদের মুহূর্তে তীব্র হতাশায় হাল ছেড়ে দিতে পারে না, পারে না দুয়োধ্বনি দিয়ে নিজ দেশের খেলোয়াড়দের মনোবল চুর্ণ করে মাঠের লড়াইয়ে নিজেদেরকেই পিছিয়ে দিতে।
আমাদের মনে রাখা দরকার মাঠে গালি গালাজ বা কটুক্তি করলে আমরা কেবল আমাদের নিজদের খেলোয়াড়দেরই ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবো। বিদেশী খেলোয়াড়েরা আমাদের ভাষা জানেও না, তাই দর্শকদের হতাশা তাদের কোনভাবেই প্রভাবিত করবে না। দর্শকের দুয়োধ্বনিতে যদি কারো পারফর্মেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তা পড়বে কেবল আমাদের খেলোয়াড়দেরই উপর।
তাই আসুন জয়-পরাজয়ে, সাফল্য-ব্যর্থতায়, সব সময়ে মনে প্রাণে বাংলাদেশ দলের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা এবারের বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিই-দলের সমর্থনে, নিজ দেশের জন্য ভালোভাসায় আমাদের সমতুল্য আর কেউ নেই। দেখিয়ে দেই, আমাদের খেলোয়াড়েরা আমাদের গর্বের ধন। দেখিয়ে দেই বাংলাদেশের ১৪ কোটি মানুষের হৃদয়ে তারা এক একজন সংশপ্তক- শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যারা এই দেশের সন্মানের জন্য, বিশ্বকাপ জয়ের জন্য প্রানপনে লড়ে যায়।
এটি বিশ্বকাপ- সব খেলোয়াড় কিছুটা হলেও মানসিক চাপ অনুভব করবে, খেলার মাঠে যা জন্ম দিয়ে পারে নানা ভুলের। মানসিকের চাপের মুখে খেলোয়াড়েরা কোন ভুল-ভ্রান্তি করলে দর্শক-সমর্থকদের প্রানঢালা সমর্থনই হয়ে উঠবে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় আশার সম্পদ। আমাদের দর্শক-সমর্থকদের শতভাগ সমর্থনই পারবে বিশ্বকাপের বড় আসরে খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তি যোগাতে আর সাহায্য করবে সব ভুল কাটিয়ে উঠতে।
আমি কাছ থেকে দেখেছি, নিউজিল্যান্ড দল মিরপুরে আমাদের দর্শকদের বিপুল সমর্থন আর চিৎকারের মুখে কি ভীষন দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। দর্শকদের উল্লাস ধ্বনিতে তাদের কান ফেটে যাবার দশা হয়েছিল। বিশ্বকাপে আমি এটাই চাই। দর্শকদের এই প্রবল সমর্থনই আমাদের শক্তি। আমি চাই আমাদের ব্যাটসম্যানদের প্রতিটি রানের পর আনন্দ-হুঙ্কারে ফেটে পড়ুক সমস্ত স্টেডিয়াম। আমাদের বোলারদের প্রতিটি উইকেটের পর দর্শকের উল্লাস ধ্বনি সাত আসমান ছাড়িয়ে যাক। আর প্রতিপক্ষের যে কোন অর্জনকে যেন আমরা স্বাগত জানাই পিন-পতন নিস্তব্ধতায়। এই হুঙ্কার আর নিস্তব্ধতার আলো-ছায়ার খেলা বিচলিত করে দিতে পারে যে কোন প্রবল শক্তিশালী প্রতিপক্ষকেও। আসুন বাংলার মাটিতে খেলতে আসা সব প্রতিপক্ষের পায়ের নিচের মাটি আমরা কাপিয়ে দেই কানফাটানো আওয়াজ আর লাল-সবুজ পতাকায় স্টেডিয়াম ছেয়ে দিয়ে।
দেশের মাটিতে এবারের এই বিশ্বকাপ। এই শিরোপা জয়ের আকাঙ্ক্ষা অন্তরে ধারন করেই আমাদের দল মাঠে নামবে। দলের এই লড়াই তাদের একার নয়, আমাদের প্রতিটি দর্শক-সমর্থক এই লড়াইয়ের অংশীদার। আর অংশীদারিত্বের সাথেই আছে কিছু দায়িত্ব। আমরা আমাদের দেশের সন্তানদের কটুক্তি করবো না, দুয়োধ্বনি তুলবো না। যারা দেশের খেলোয়াড়দের লাঞ্ছিত করে, তারা আমাদের দলের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নের সারথী হতে পারে না। আসুন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই বিশ্বকাপ জয়ের লড়াইয়ে সামিল হই। বাংলাদেশ দল দেশের মানুষের জন্যই এই লড়াইটুকু করতে চায়। আমরা চাই দেশের সব দর্শক-সমর্থক বিশ্বকাপ উপভোগ করুক। আমরা নিজেরাও চাই এই বিশ্বকাপ উপভোগ করতে আর বিশ্বকাপে আমাদের প্রতিটি সাফল্য বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের সাথে ভাগ করে নিতে।
প্রতিটি খেলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ান—একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত।
বিনীত
ইয়ান পন্ট
বোলিং কোচ, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল