কেন উবুন্টু ব্যবহার করবেন?

যারা নতুন লিনাক্সে আসেন তারা প্রথমেই যে সমস্যায় পড়েন সেটা হল লিনাক্সের শত শত ডিস্ট্রো থেকে কোনটা ব্যবহার করবেন? অবশ্যই আপনার প্রয়োজনমত যেটাকে সবচেয়ে কাজের মনে হয় সেটা ব্যবহার করবে। কারন একেকজনের প্রয়োজন একেকরকম, যিনি ভিডিও এডিটিং করেন তার কাজের সাথে যিনি প্রোগ্রামার তার কোন মিল নেই, এই দুজনের জন্য দরকারী সফটওয়্যারও তাই ভিন্ন হবে। তাই বিভিন্ন পেশার মানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে লিনাক্স ডিস্ট্রও বিভিন্ন রকম হয়। তবে যারা সাধারন ইউজার তাদের কাজের ধরণ কিন্তু মোটামুটি একই – লেখালেখি, ইন্টারনেট ব্রাউজ, গান শোনা, মুভি দেখা, গেম খেলা ইত্যাদি টুকটাক কাজই সবাই করে। এসব বিচারে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হচ্ছে উবুন্টু।

কেন উবুন্টু ব্যবহার করবেন- এই প্রশ্নের উত্তর যদি খুঁজতে বের হন তবে হাজার হাজার জবাব পাবেন। ইদানিংকার খুব জনপ্রিয় এই অপারেটিং সিস্টেমটি লিনাক্সের কার্নেলের উপর তৈরি বলে সিকিউরিটি থেকে শুরু করে স্ট্যাবিলিটি পর্যন্ত লিনাক্সের সব ধরনের সুবিধাই এতে পাবেন। তাহলে কোন বৈশিষ্ট্য একে লিনাক্সভিত্তিক অন্যান্য ডিস্ট্রগুলো থেকে আলাদা করেছে? আসুন তাহলে এক ঝলক দেখে নেই।

উবুন্টু অন্যান্য ডিস্ট্রোর মত “কেবলই আরেকটা লিনাক্স”ডিস্ট্রো না। এটা ডেবিয়ানের মত শক্তিশালী ডিস্ট্রোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া একটি ডিস্ট্রো যার মূল স্লোগান হল “মানুষের জন্য লিনাক্স”। আক্ষরিক অর্থেই উবুন্টুকে সাধারন মানুষের ব্যবহারের জন্যই বানানো হয়েছে। এক সময় মনে করা হত খোঁচা খোঁচা দাড়ি গোঁফ ওয়ালা জিনিয়াস টাইপের লোকজন কীবোর্ডে খটাখট আওয়াজ করে লিনাক্স ব্যবহার করে। দিন এখন পালটে গেছে, সেই সাধারন ব্যবহারকারীদের জন্য কমান্ডের লিনাক্সের যুগ আর নেই। ডেস্কটপে লিনাক্স এসেছে অনেক বছর। আর সেই ডেস্কটপ লিনাক্সকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে উবুন্টু। উবুন্টু ব্যবহার করতে খুব আহামরি কোন কম্পিউটার জ্ঞানের দরকার নেই, – এতই সোজা এই অপারেটিং সিস্টেমটি। আর এর ইউজার ফ্রেন্ডলিনেসের কথা তো লিনাক্সের এখন সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। উবুন্টুই একমাত্র লিনাক্স ডিস্ট্র যেটাকে মাইক্রোসফট সমীহ করে চলে, কারন বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, উবুন্টু ইউজার ফ্রেন্ডলিনেসের দিক থেকে উইন্ডোজের চেয়েও উন্নত।

সবচেয়ে সহজ ওএস ইন্সটলেশন পদ্ধতি সম্ভবত উবুন্টুর। খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেসে কেবল মাউস দিয়ে টিপে টিপে যে কেউ উবুন্টু ইন্সটল করতে পারবে মাত্র কয়েকটি  ধাপে। সফটওয়্যার খোঁজার জন্য গুগল নিয়ে ঘাঁটাঘাটির দরকার নাই। সফটওয়্যারের বিশাল রিপজিটরি আছে এতে, যেখানে হাজার হাজার ফ্রী সফটওয়্যার তালিকাভুক্ত হয়ে আছে। শুধু গিয়ে ইন্সটল দিলেই হল, সাথে সাথে ইন্সটল হয়ে যাবে। যেকোন সফটওয়্যার আপডেটও খুব সহজেই করা যায়। কোন সফটওয়্যারের আপডেট চলে আসলে উবুন্টুই আপনাকে আপডেট নোটিফিকেশন দেখাবে আর আপডেটের অপশন দিবে। গুগল সার্চ করে আপডেট নামানোর কোনই প্রয়োজন নাই।

উবুন্টুর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর বিশাল ইউজার কমিউনিটি। লিনাক্সের সবচেয়ে বিশাল কমিউনিটি হচ্ছে উবুন্টুর। যেকোন সমস্যায় কেবল কমিউনিটির কাছে ধর্না দিলেই হবে, সমাধান করার জন্য লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়বে। কমিউনিটি’র লোকজনও কিন্তু বেশ বন্ধুভাবাপন্ন। যেকোন প্রশ্নকেই অবহেলার চোখে দেখা হয়না এই কমিউনিটিতে। যত বোকাই প্রশ্ন করুন না কেন, আপনি ঠিকই আপনার জবাব পেয়ে যাবেন। বোকা বোকা প্রশ্নের জন্য আপনার উপর কেউ বিরক্ত হবেনা বা আপনাকে খোঁটাও দেবেনা – এমনই চমৎকার কমিউনিটি।

উবুন্টু’র  সিডি হচ্ছে লাইভ সিডি অর্থাৎ পিসিতে ইন্সটল না করেই আপনি সিডি থেকে সব প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনসহ উবুন্টু ব্যবহার করতে পারবেন, এমনকি সেই সিডি থেকে ইন্টারনেটেও কানেক্ট হয়ে ওয়েব ব্রাউজ করতে পারবেন!

লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে হার্ডওয়্যার কম্পিটিব্যালিটি উবুন্টুরই সবচেয়ে বেশি। অর্থ্যাৎ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হার্ডওয়্যার উবুন্টুই চিনতে পারে। ফলে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক এডাপ্টারের মত হার্ডওয়্যার চিনে নিতেও উবুন্টুর কোন সমস্যা হয়না। ডেল, হিউলেটপ্যাকার্ড, লেনোভো সহ নামকরা ব্র্যান্ডগুলো এখন উবুন্টুর কথা মাথায় রেখে হার্ডওয়ারের ড্রাইভার রিলিজ করে। তাই হার্ডওয়ার নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়না।

বলা হয়ে থাকে যে, বর্তমানে লিনাক্সের জয়যাত্রার পতাকা যদি কারো বহন করার ক্ষমতা থাকে তো সেটা উবুন্টুর আছে। গুগলের মত বিশ্বখ্যাত কোম্পানি তাদের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উবুন্টুকে বেছে নিয়েছে। তাহলে আর আপনি বসে থাকবেন কেন? ঘুরে আসুন উবুন্টুর সাইট থেকে, সংগ্রহ করুন আপনার উবুন্টু!

ধাপে ধাপে উবুন্টু ইন্সটলেশান (তিনটি পার্টিশান করে)

এই টিউটোরিয়ালটা হচ্ছে তাদের জন্য যারা কম্পিউটারে উইন্ডোজকে পুরোপুরি মুছে ফেলে পার্টিশান করে কেবল মাত্র উবুন্টুকে কম্পিউটারে ইন্সটল করতে চান। এই টিউটোরিয়াল অনুযায়ী উবুন্টু ইন্সটল করলে আপনার পিসির হার্ডডিস্ক পুরোপুরি ফর্ম্যাট হয়ে গিয়ে কেবলমাত্র উবুন্টু থাকবে, এবং উইন্ডোজ সম্পূর্নরূপে মুছে যাবে। শুধু তাই-না আপনার কম্পিউটারে থাকা সমস্ত তথ্য এবং ফাইল (ছবি, গান, সিনেমা, ডকুমেন্টস, সফটওয়্যার ইত্যাদি সবকিছুই) পুরোপুরি মুছে যাবে। তাই এই  টিউটোরিয়াল অনুসরণ করার আগে আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় ফাইল অন্য কোন হার্ডডিস্ক বা রিমুভেবল-মিডিয়া বা অন্য কোন কম্পিউটারে অবশ্যই অবশ্যই ব্যাকআপ করে রাখুন।

Continue reading ধাপে ধাপে উবুন্টু ইন্সটলেশান (তিনটি পার্টিশান করে)

ধাপে ধাপে উবুন্টু ইন্সটলেশান (পার্টিশান ছাড়া, ডুয়েল বুট)

এই টিউটোরিয়ালটা হচ্ছে তাদের জন্য যারা উবির সাহায্য ছাড়াই সম্পূর্ণরূপে উবুন্টুকে উইন্ডোজের পাশাপাশি হার্ডডিস্কে ইন্সটল করতে চান, কিন্তু নিজে নিজে পার্টিশন করতে ভয় পান। এই টিউটোরিয়াল অনুযায়ী ইন্সটল করলে আপনার পিসিতে উইন্ডোজ ও উবুন্টু ডুয়েল বুট থাকবে, অর্থাৎ আপনি উইন্ডোজ বা উবুন্টু যেকোনো একটা পছন্দ করে চালাতে পারবেন।

Continue reading ধাপে ধাপে উবুন্টু ইন্সটলেশান (পার্টিশান ছাড়া, ডুয়েল বুট)

ধাপে ধাপে উবুন্টু ইন্সটলেশান (পার্টিশান ছাড়া)

এই টিউটোরিয়ালটা হচ্ছে তাদের জন্য যারা উবির সাহায্য ছাড়াই সম্পূর্ণরূপে উবুন্টুকে কম্পিউটারে ইন্সটল করতে চান, কিন্তু নিজে নিজে কোনো রকম পার্টিশন করতে ভয় পান। তবে একটা সাবধানবাণীঃ এই টিউটোরিয়াল অনুযায়ী উবুন্টু ইন্সটল করলে আপনার পিসির হার্ডডিস্ক পুরোপুরি ফর্ম্যাট হয়ে গিয়ে কেবলমাত্র উবুন্টু থাকবে, এবং উইন্ডোজ সম্পূর্নরূপে মুছে যাবে। শুধু তাই-না আপনার কম্পিউটারে থাকা সমস্ত তথ্য এবং ফাইল (ছবি, গান, সিনেমা, ডকুমেন্টস, সফটওয়্যার ইত্যাদি সবকিছুই) পুরোপুরি মুছে যাবে। তাই এই  টিউটোরিয়াল অনুসরণ করার আগে আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় ফাইল অন্য কোন হার্ডডিস্ক বা রিমুভেবল-মিডিয়া বা অন্য কোন কম্পিউটারে অবশ্যই অবশ্যই ব্যাকআপ করে রাখুন।

Continue reading ধাপে ধাপে উবুন্টু ইন্সটলেশান (পার্টিশান ছাড়া)

লাইভ সিডি’র জাদু

উবুন্টু-মিন্টের খুব দারুণ একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এদেরকে লাইভ সিডি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নিশ্চয়ই ভাবছেন যে “লাইভ সিডি” আবার কি জিনিস? নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এটা হচ্ছে “জীবন্ত সিডি”। সাধারণত যেকোন অপারেটিং সিস্টেম (যেমন উইন্ডোজ) কম্পিউটারে ইন্সটল না করে ব্যবহার করে দেখার কোন উপায় নেই। অর্থাৎ আপনি যদি দেখতে চান যে উইন্ডোজ ভিস্তা বা উইন্ডোজ ৭ দেখতে কেমন, তবে সেটা দেখার একমাত্র উপায় হল সেটাকে কম্পিউটারে ইন্সটল করা। কিন্তু লিনাক্স-নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমগুলো এর ব্যতিক্রম। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার হার্ডডিস্কে ইন্সটল না করেই সিডি থেকে বা ইউএসবি স্টিক থেকে এদেরকে চালাতে পারেন। অর্থাৎ ইন্সটল না করেই দেখে নিতে পারবেন যে অপারেটিং সিস্টেমটি কেমন। শুধু দেখাই না বরং একটা পরিপূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমের মত একে ব্যবহারও করতে পারবেন। লেখালেখি, ইন্টারনেট ব্রাউজ, অডিও-ভিডিও চালানো ইত্যাদি সব কাজই করতে পারবেন সিডি থেকে। আর যেহেতু লাইভ মোডে ব্যবহার করতে ইন্সটলেশান করার কোনো দরকার পড়েনা তাই আপনার কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের পার্টিশনও অটুট থাকবে, কোনো ধরণের ড্যাটা হারাবার ভয় থাকেনা। অর্থাৎ ইন্সটলেশান ছাড়াই পুরো সিডিটাকে “জীবন্তভাবে” ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্যই এর নাম “লাইভ সিডি”।
Continue reading লাইভ সিডি’র জাদু

অফলাইনে কেরাইক্স (Keryx) দিয়ে সফটওয়্যার ইন্সটলেশান

উবুন্টুতে সফটওয়্যার ইন্সটল করা খুব সোজা যদি কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ থাকে। যদি ইন্টারনেট সংযোগ না থাকে তবে কিছুটা সমস্যা হয়। কারণ শুধু .deb ফাইলটি নামালেই হয়না, সেসাথে বিভিন্ন ডিপেনডেন্সিও আলাদাভাবে নামাতে হয়। এখন কোন প্রোগ্রাম কোন ডিপেন্ডেন্সির উপর নির্ভরশীল সেটা জেনে নিয়ে একটা একটা করে ফাইল নামানো বেশ সময়সাপেক্ষ। তাছাড়া দেখা গেল যে কষ্ট করে একটা ডিপেন্ডেন্সি নামিয়ে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু সেটা আগে থেকেই আপনার পিসিতে ছিল, সেটা খামোখা নামানো হয়েছে। তার উপর যারা ঝানু ব্যবহারকারী তারা আবার এসব কাজ করার জন্য কমান্ডের এমন জটিল মারপ্যাচে ফেলবে যে নতুন ব্যবহারকারীরা আতংকিত হয়ে উল্টো দিকে দৌড় দিয়ে বাঁচে। এসব ঝামেলাকে এড়িয়ে সহজেই আপনার পিসির জন্য সফটওয়্যার ইন্সটল করার জন্য রয়েছে কেরাইক্স (Keryx)। একেবারে গ্রাফিকাল ইন্টারফেসওয়ালা এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে কেবল মাউস টেপার জ্ঞান থাকতে হবে, আর কিছু না!
Continue reading অফলাইনে কেরাইক্স (Keryx) দিয়ে সফটওয়্যার ইন্সটলেশান

বুন্টু ব্যাটেলিয়ন!

ধরে নিচ্ছি আপনি লিনাক্স এবং উবুন্টুর মধ্যে কী সম্পর্ক আছে সেটা জানেন। না জানলেও সমস্যা নেই, এখান থেকে দেখে নিন। যেহেতু আপনি উবুন্টু’র নাম শুনেছেন, সেহেতু ধরে নেয়া যায় যে আপনি কুবুন্টু, জুবুন্টু, লুবুন্টু এইসবের নামও শুনেছেন। এবং সেই সাথে চার-চারটা বুন্টু’র নাম শুনে নিশ্চয়ই মাথায় ব্যাড়াছ্যাড়া লেগে গিয়েছে। নিশ্চয়ই মাথার মধ্যে গাদাগাদি করে বহু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে! “বুন্টু”র আগে “হ্রস্ব-উ” ঠিক আছে, কিন্তু “বুন্টু”র আগে “কু”, “জু”, “লু” – এইসব লাগানোর শানে নুযুল কি? বিশাল এই বুন্টু ব্যাটেলিয়ন কি কাজে আসে? এত্তোগুলো বুন্টুর মধ্যে সম্পর্কই বা কি? আসুন তাহলে শুরু করা যাক।

উবুন্টু, কুবুন্টু, জুবুন্টু, লুবুন্টু- প্রথমেই এ চারটা শব্দের সাথে পরিচিত হয়ে নিন (যদি আগে শুনে না থাকেন)। কুবুন্টু, জুবুন্টু, লুবুন্টু হচ্ছে উবুন্টু’র বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট বা রূপভেদ। এরা সবাই আদতে উবুন্টুই কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন রূপ। এদের সবগুলোকেই ক্যানোনিকাল তৈরি করে। এদের সবগুলোই একই সাথে রিলিজ হয়। এদের মধ্যে পার্থক্য কেবল এদের ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট (Desktop Environment বা DE)। সোজা করে বললে, ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট বা ডিই হচ্ছে ইউজার ইন্টারফেস। অর্থাৎ যে ইন্টারফেস ব্যবহার করে একজন মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করে। অনেক ধরনের ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট আছে; যেমন: গ্নোম, কেডিই, এক্সএফসিই, এলএক্সডিই ইত্যাদি। সহজভাষায় লিনাক্সবেজড অপারেটিং সিস্টেমে কম্পিউটার চালু করলে ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড দেয়ার পর গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের যে ডেস্কটপ দেখেন সেটাই হচ্ছে ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট বা ডিই। ডিইকে অনেকটা পোশাকের সাথে তুলনা করা যায়। উবুন্টু’র ডিই (বা পোশাক) হচ্ছে গ্নোম, কুবুন্টুর হচ্ছে কেডিই, জুবুন্টুর হচ্ছে এক্সএফসিই, লুবুন্টুর হচ্ছে এলএক্সডিই। একই মানুষ বিভিন্ন পোশাক পড়ে যেমন বিভিন্ন রূপে হাজির হতে পারে, ঠিক সেভাবে উবুন্টুর উপর বিভিন্ন পোশাক চাপিয়ে তার চেহারায়ও পরিবর্তন আনা হয়। এজন্য দেখবেন উবুন্টু, কুবুন্টু, জুবুন্টু, লুবুন্টু’র চেহারায় অনেক তফাৎ।

আরেকটু সহজ করে বলি। ধরুন আজকে ‘আপনি‘ শার্ট প্যান্ট পড়ে বাইরে গেলেন, আর গতকালকে বের হয়েছিলেন পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে। বলুনতো আজকের আর গতকালকের ‘আপনার‘ মধ্যে পার্থক্য কিসে? কেবল মাত্র পোশাকে তাইনা! কিন্তু পোশাকের ভেতরের মানুষ আপনি যেমন ছিলেন তেমনই কিন্তু আছেন, সেখানে কোন পার্থক্য নেই। উবুন্টু আর কুবুন্টুর পার্থক্যও একই রকম, কেবল বাইরেই ভিন্নতা ভিতরে দুটোই এক। ক্যানোনিকাল কম্পানি যেই ওএস বানায় সেটার মূল ডিস্ট্র’র নাম হচ্ছে উবুন্টু। উবুন্টু ব্যবহার করে “গ্নোম” নামের একটি পোশাক আর কুবুন্টু ব্যবহার করে “কেডিই” নামের আরেকটা পোশাক। সহজভাবে বললে উবুন্টুর উপর “গ্নোম” পোশাকটি না দিয়ে তার উপর “কেডিই” পোশাক পড়িয়ে কুবুন্টু নামের ভার্সনটি বের করা হয়। পোশাক পড়ার পর কুবুন্টু’র চেহারা আর “গ্নোম” পড়া উবুন্টুর চেহারা দেখুন এখানে। এই পোশাকটাকে লিনাক্সে বলা হয় “ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট” বা সংক্ষেপে “ডিই”। এরকম আরো দুটি ডিই হল এক্সএফসিই ও এলএক্সডিই। উবুন্টুর যেই ভ্যারিয়েন্টটি এক্সএফসিই পোশাক পড়ে থাকে তাকে বলে জুবুন্টু আর যে ভ্যারিয়েন্টটি এলএক্সডিই’র পোশাক পড়ে তার নাম লুবুন্টু। চারটি ভিন্ন ভিন্ন পোশাক পড়া অবস্থায় (বা ভিন্ন ভিন্ন ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টের) চারটি ভ্যারিয়েন্টের ডেস্কটপের ছবিগুলো দেখুন নীচে।

উবুন্টুর গ্নোম ডেস্কটপ কুবুন্টুর কেডিই ডেস্কটপ

জুবুন্টুর এক্সএফসিই ডেস্কটপ লুবুন্টুর এলএক্সডিই ডেস্কটপ

একেবারে সহজ করে বললে উপরের আলোচনাগুলো সারসংক্ষেপে অনেকটা নীচের মত দাঁড়ায়:

কেডিই উবুন্টু (Kde UBUNTU) => কুবুন্টু (KUBUNTU)
এক্সএফসিই উবুন্টু (Xfce UBUNTU) => জুবুন্টু (XUBUNTU)
এলএক্সডিই উবুন্টু (Lxde UBUNTU) => লুবুন্টু (LUBUNTU)

এতটুকু পড়ে মনে হতে পারে ডিই বুঝি উইন্ডোজের স্কিনের বা থিমের মত কোন ব্যাপার। আসলে সেটা না। উইন্ডোজের থিম পাল্টালে কিন্তু কেবল চেহারাটাই পাল্টায়, আর কিছু না। কিন্তু লিনাক্স বেজড অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে ডিই পাল্টালে চেহারার সাথে আরো অনেক কিছুই পাল্টে যায় (যেমন মেমরি কনজাম্পশন, ডিফল্ট এ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি)। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, ধরুন আপনি শার্ট পাল্টে পাঞ্জাবি পড়লেন, এতে কিন্তু আপনার কিছু উপযোগিতা বেড়ে/কমে যায়। যেমন শার্টে বুকের কাছে একটা পকেট থাকতো যেখানে আপনি পাঞ্জাবিতে কোমড়ের কাছে দুই পাশে দুটা পকেট পাচ্ছেন। কিংবা আপনি স্যুট পড়লেন, তাহলে আপনার ব্যবহারবিধিও অনেক পাল্টে যাবে। প্রতিটা ক্ষেত্রে আপনি কেবল পোশাক পাল্টাচ্ছেন কিন্তু সেই সাথে আপনার অনেক কিছুও পাল্টে যাচ্ছে। ডিই’র ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটাই ঘটে। যেমন উবুন্টুর (গ্নোমের) ডিফল্ট ফাইল ম্যানেজারের নাম হচ্ছে নটিলাস কিন্তু কুবুন্টুর (কেডিই’র) ডিফল্ট ফাইল ম্যানেজার হচ্ছে ডলফিন। একইভাবে উবুন্টুর (গ্নোমের) ডিফল্ট মিউজিক প্লেয়ার হচ্ছে রিদমবক্স যেখানে কুবুন্টুর (কেডিই’র) ডিফল্ট হচ্ছে এ্যামারক। আবার মেমরি কনজাম্পশনের দিক থেকে সবচেয়ে কম মেমরিতে চলে লুবুন্টু, লুবুন্টুর চেয়ে বেশি মেমরি নেয় জুবুন্টু, তার চেয়ে বেশি দরকার হয় উবুন্টু চালাতে আর সবচেয়ে বেশি মেমরি দরকার হয় কুবুন্টুর জন্য। এভাবে প্রতিটা ডিই’র সাথে ফাইল ম্যানেজার থেকে শুরু করে এদের ডিফল্ট অনেক এ্যাপ্লিকেশন, এ্যাপ্লেটম, ডিসপ্লে টুল ইত্যাদি অনেক কিছু পাল্টে যায়। তাই ডিই পাল্টালে শুধু চেহারাই না বরং কাজের ধরনও খানিকটা পাল্টে যায়। উইন্ডোজের থিমের ক্ষেত্রে কিন্তু অন্য ঘটনা ঘটে। অনেকটা এইরকম: ধরুন আপনি নীল পাঞ্জাবি পড়লেন, সেটা পাল্টে লাল পাঞ্জাবি পড়লেন, কিংবা সাদা পড়লেন, অথবা শর্ট পাঞ্জাবি পড়লেন। প্রতি ক্ষেত্রেই আপনার কেবল পাঞ্জাবীটাই পাল্টে যাচ্ছ, অন্য কোন নতুন পোশাক কিন্তু আসছেনা, ফলে নতুন কোন অপশনও যোগ হচ্ছেনা বা পুরনো কোন অপশনও বাদ পড়ছেনা। পাঞ্জাবি যেমন ছিল তেমনই আছে শুধু পাঞ্জাবিটা পাল্টাচ্ছে। অর্থাৎ আপনি উইন্ডোজে যে থিমই ব্যবহার করুননা কেন (হোক সেটা এক্সপির র‍য়্যাল ব্লু থীম বা উইন্ডোজ ক্লাসিক থীম) আপনার ফাইল ম্যানেজার কিন্তু উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারই থাকবে কিংবা ডিফল্ট প্লেয়ার থাকবে উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার। কেবল চেহারাটাই পাল্টাচ্ছে, এখানেই হচ্ছে উইন্ডোজের থিম আর লিনাক্সের ডিই’র মধ্যে পার্থক্য। আর পার্থক্যটা বেশ বিশাল।

আপনি উবুন্টুর যেই ভ্যারিয়েন্টই ব্যবহার করুন না কেন তাতে সব প্রোগ্রামই চালাতে পারবেন। কুবুন্টুর এ্যামারক মিউজিক প্লেয়ার যেমন উবুন্টুতে চালাতে পারবেন ঠিক সেভাবে উবুন্টুর মিউজিক প্লেয়ার রিদমবক্সও কুবুন্টুতে চালাতে পারবেন। এভাবে একটার প্রোগ্রাম আরেকটাতে চালানো সম্ভব- কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি কমান্ড ছাড়া উবুন্টুর সব কমান্ডই বাকী সব ভ্যারিয়েন্টে কাজ করবে। লিনাক্সের জগতে এরকম প্রচুর ডিই পাবেন। এসব ডিই’র প্রত্যেকের রয়েছে আবার নিজেদের ফ্যান (ইহা পাংখা নহে, ইহা ভক্ত)। তাই কোনোটাকে এককভাবে প্রাধান্য দেয়া ঠিক হবেনা। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে গ্নোম ও কেডিই। সিমপ্লিসিটি ও ব্যবহারবান্ধবতার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে গ্নোম। আবার প্রচুর অপশন ও রূপলাবণ্যের জন্য কেডিই’র রয়েছে বেশ নাম ডাক।

মোদ্দা কথা হচ্ছে- উবুন্টু, কুবুন্টু, জুবুন্টু, লুবুন্টু- আপনি যা-ই ব্যবহার করেননা কেন আসলে আপনি উবুন্টুই ব্যবহার করছেন। এজন্য যখন নতুন ভার্সনের উবুন্টু রিলিজ হয় তখন একই সাথে একই ভার্সনের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলোও রিলিজ হয়। অর্থাৎ উবুন্টু ১০.১০ রিলিজ পেলে চোখ বন্ধ করে ধরে নিতে পারেন যে কুবুন্টু ১০.১০, জুবুন্টু ১০.১০ এবং লুবুন্টু ১০.১০ ও একই সাথে একই তারিখে রিলিজ পাবে। এদের নাম গুলোও একই থাকে, অর্থাৎ উবুন্টু ১০.১০ এর নাম যেহেতু ম্যাভরিক মির্ক্যাট; সেহেতু কুবুন্টু ১০.১০, জুবুন্টু ১০.১০ ও লুবুন্টু ১০.১০- সবগুলোর নামই হবে ম্যাভরিক মির্ক্যাট। বলার সুবিধার জন্য অনেকে এভাবে বলে থাকেন যে কুবুন্টু ম্যাভরিক মির্ক্যাট, জুবুন্টু ম্যাভরিক মির্ক্যাট ও লুবুন্টু ম্যাভরিক মির্ক্যাট। তাই ব্যবহারের আগে আপনার প্রয়োজন চিন্তা করে ব্যবহার করুন যে, কোনটি আপনার জন্য বেশি যুৎসই হবে। আর যদি নিজের প্রয়োজন না বুঝেন তাহলেও সমস্যা নেই, ১গিগাবাইট বা তার চেয়ে বেশি মেমরি (RAM) হলে উবুন্টু বা কুবুন্টু চালান আর ৫১২ মেগাবাইটের কম হলে জুবুন্টু বা লুবুন্টু চালান। তবে ৫১২ মেগাবাইটেও অনেকে উবুন্টু ও কুবুন্টু চালিয়েছেন। তবে চালাবার আগে দয়া করে এদের সাইট থেকে এদের চালানোর জন্য পিসির মিনিমাম রিকোয়্যারমেন্ট দেখে নেবেন। যাই হোক, বুন্টু ব্যাটেলিয়ন আপনার পিসিতে দৌড়ানোর জন্য অপেক্ষা করছে। তাই বুন্টু ব্যাটেলিয়নের কোন সদস্যকে বেছে নেবেন- সেটা পছন্দ করা আপনার পালা।



পরবর্তীতে প্রকাশিতঃ

উবুন্টুর ফাইল স্ট্রাকচারের অ আ ক খ

উইন্ডোজ ব্যবহারকারী যারা উবুন্টুতে আসার পর যে জায়গায় সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খান সেটা হল উবুন্টু বা লিনাক্সের ফাইল সিস্টেম হায়ার্রকি। উইন্ডোজে কোন ফোল্ডার বা ফাইল কোথায় আছে সেটা তারা সহজে বের করতে পারলেও উবুন্টুতে এসে তারা খাবি খেতে থাকেন। কারণ উবুন্টুতে ফাইল হায়ারার্কি মানে কোন ফাইল কোথায় আছে সেটা উইন্ডোজের চেয়ে সামান্য আলাদা। তাই পরিচিত উইন্ডোজের গন্ডি থেকে বের হয়ে উবুন্টুতে (বা অন্য কোন লিনাক্স ডিস্ট্রতে) আসলে তাদের কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেতেই হয়। তবে কিনা উবুন্টুর ফাইল হায়ারার্কি কিন্তু মোটেও কঠিন কিছুনা, শুধু জানতে হবে কোথায় কি আছে। এই লেখাটাতে উবুন্টুর কথা লেখা হয়লেও প্রায় সব লিনাক্স ডিস্ট্র’র জন্য লেখাটা প্রযোজ্য। ডিস্ট্রভেদে একটা-দুটো ফাইল হয়তো আলাদা থাকতে পারে, বাদবাকী সব একই।
Continue reading উবুন্টুর ফাইল স্ট্রাকচারের অ আ ক খ