কুরবানী ২০১৪

“তাহলে লিখে দেই যে গরুর রং শ্যামলা?” – লোকটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার আর মিরাজ মামার দিকে তাকিয়ে রইল। মিরাজ মামার ততক্ষণে ধৈর্য বলতে যে জিনিসটা থাকার কথা ছিল সেটা বাতাসে মিশে গেছে। ধৈর্যহারা মিরাজ মামাকে দেখতে তেলেগু সিনেমার হিরোদের মত লাগছিল – যারা এক ঘুষিতে মানুষ তো মানুষ, গাড়ি পর্যন্ত ভর্তা করে ফেলে। তেলেগু সিনেমার নায়কদের মতই মিরাজ মামা তখন কটমট করে লোকটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমি ব্যপারটাকে আয়ত্ত্বে আনার জন্য তাড়াতাড়ি বললাম – “জ্বী ভাই লিখে দেন – গরুর গায়ের রং শ্যামলা!”

আমার কথা শুনে লোকটা মহা উৎসাহে লিখে দিল যে গরুর গায়ের রঙ শ্যামলা। লোকটার উৎসাহ দেখে মিরাজ মামার মনে কি খেলা করছিল জানিনা, কিন্তু আমার বারবার মনে হচ্ছিল যে কী কুক্ষণেই যে হাসিল দেবার জন্য এই লোকটার খপ্পরে পড়লাম!

এই কাহিনীর শুরু গতকালকে, ঈদের ঠিক দুইদিন আগে, যখন গাবতলী থেকে আমাদের আর মিরাজ মামার গরু দুটো কেনা হল। গরু কেনার পর গরু দুটোকে বাসায় নেবার জন্য নীল রংয়ের পিকআপ ভ্যান ঠিক করা হল। গরু দুটোকে পিকআপ ভ্যানে তুলে ফেলার পর ছোটমামা আর আব্বুকে পিকআপের সামনে রেখে আমি আর মিরাজ মামা ছুটলাম হাসিলের কাউন্টারের দিকে। কয়েক মিনিটের ব্যাপার। হাসিলের টাকা দেয়া হয়ে গেলেই গরু দুটো নিয়ে পিকআপ ভ্যান ছুটবে ধানমন্ডির দিকে। একটা গরু নামবে মিরাজ মামার বাসায়, আরেকটা আমাদের বাসায়।

Continue reading কুরবানী ২০১৪

মুবারাকময় ঈদ কিংবা ঈদ মুবারাক

গত তিনটা ঈদ (ফিতর আর আদহা আলাদা করে ধরলে অবশ্য সংখ্যাটা দাঁড়ায় ছয়ে) দেশের বাইরে করার সময় মন মেজাজ খুব ত্যাড়া-ব্যাড়া হয়ে থাকত। জন্মের পর থেকেই কাছের মানুষজনদের নিয়ে ঈদ করার অভ্যাস। কাছের মানুষজন না থাকলে ঈদ যে কতটা স্বাদহীন পানসে হতে সেটা দেশের বাইরে না গেলে টের পেতাম না। বিদেশীরা তো আর ঈদ করেনা। তাই ঈদের দিনটার সাথে আর অন্য দশটা দিনের তেমন কোনই পার্থক্য থাকেনা। শুধুমাত্র সকালবেলা ঈদের নামাজ পড়তে গেলে মসজিদের সামনে আরো কিছু লোকজন দেখা যায় – এই যা, এর বেশি কিছু না, নামাজ আদায় করেই লোকজন ছুটে যায় নিজ নিজ কর্মস্থলে, কারো দিকে কারো তাকাবার সময় পর্যন্ত নেই! একেবারে জঘন্য ঈদ বলতে যা বোঝায় সেটাই হয় বিদেশ-বিভুঁইয়ে। যারা বিদেশ থাকেন তাদের সবার কাছেই ব্যাপারটা এইরকম খারাপ লাগে কী না আমি তা জানিনা, তবে একদম ছোটবেলা থেকে পরিবারঘেঁষা বলেই হয়তো এই বর্ণহীন-দ্যুতিহীন ঈদের দিনটা আমার মন মেজাজকে ঈদের আগের রাত থেকেই চিরেচ্যাপ্টা করে রাখত। আল্লাহর অশেষ রহমত যে আমি এইবার আবার আমার কাছের মানুষদের সাথে নিয়ে ঈদ করতে পারছি! পরপর তিনবার দেশের বাইরে বিস্বাদ ঈদ করার পর কাছের মানুষদের সাথে নিজের দেশে নিজের শহরে নিজের বাসায় ঈদ করাটা যে কতটা আনন্দের হতে পারে সেটা নিজে অনুভব না করলে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। দোয়া করি সবার ঈদ যেন সত্যিকার অর্থেই মুবারাকময় হয়।

Continue reading মুবারাকময় ঈদ কিংবা ঈদ মুবারাক