গত তিনটা ঈদ (ফিতর আর আদহা আলাদা করে ধরলে অবশ্য সংখ্যাটা দাঁড়ায় ছয়ে) দেশের বাইরে করার সময় মন মেজাজ খুব ত্যাড়া-ব্যাড়া হয়ে থাকত। জন্মের পর থেকেই কাছের মানুষজনদের নিয়ে ঈদ করার অভ্যাস। কাছের মানুষজন না থাকলে ঈদ যে কতটা স্বাদহীন পানসে হতে সেটা দেশের বাইরে না গেলে টের পেতাম না। বিদেশীরা তো আর ঈদ করেনা। তাই ঈদের দিনটার সাথে আর অন্য দশটা দিনের তেমন কোনই পার্থক্য থাকেনা। শুধুমাত্র সকালবেলা ঈদের নামাজ পড়তে গেলে মসজিদের সামনে আরো কিছু লোকজন দেখা যায় – এই যা, এর বেশি কিছু না, নামাজ আদায় করেই লোকজন ছুটে যায় নিজ নিজ কর্মস্থলে, কারো দিকে কারো তাকাবার সময় পর্যন্ত নেই! একেবারে জঘন্য ঈদ বলতে যা বোঝায় সেটাই হয় বিদেশ-বিভুঁইয়ে। যারা বিদেশ থাকেন তাদের সবার কাছেই ব্যাপারটা এইরকম খারাপ লাগে কী না আমি তা জানিনা, তবে একদম ছোটবেলা থেকে পরিবারঘেঁষা বলেই হয়তো এই বর্ণহীন-দ্যুতিহীন ঈদের দিনটা আমার মন মেজাজকে ঈদের আগের রাত থেকেই চিরেচ্যাপ্টা করে রাখত। আল্লাহর অশেষ রহমত যে আমি এইবার আবার আমার কাছের মানুষদের সাথে নিয়ে ঈদ করতে পারছি! পরপর তিনবার দেশের বাইরে বিস্বাদ ঈদ করার পর কাছের মানুষদের সাথে নিজের দেশে নিজের শহরে নিজের বাসায় ঈদ করাটা যে কতটা আনন্দের হতে পারে সেটা নিজে অনুভব না করলে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। দোয়া করি সবার ঈদ যেন সত্যিকার অর্থেই মুবারাকময় হয়।
অনেকদিন পর আবারো মজার মজার ইফতার করা হল এবার। রাস্তার ধারে লোভনীয় ইফতারের পসার সাজিয়ে বসে থাকা, আর হুমড়ি খেয়ে সেই ইফতার কেনার জন্য মানুষের হুড়োহুড়িও দেখা হল যেন বহুদিন পর। সেই সাথে ইফতারের দাওয়াত কিংবা পাড়া-পড়শীর বাসা থেকে আসা ইফতারের সম্ভার তো রয়েছেই। বলতে গেলে ভুলেই গিয়েছিলাম যে ঢাকার ইফতার কতটা বর্ণীল হতে পারে। বিদেশ-বিভুঁয়ের ইফতারীতে যে জিনিসটার প্রচন্ড অভাববোধ করতাম তা হল জিলাপী, গরম গরম মুচমুচে রসালো জিলাপী। যারা জিলাপীর কদর বোঝেনা তাদেরকে জিলাপীর মাহাত্ম্য বোঝানো বেশ শক্ত – অনেকসময় বোঝাতে গিয়ে জিলাপীর প্যাঁচে পড়ে যেতে হয়। আরেকটা খাদ্যের কথা না বললেই নয় – সেটা হল বেগুনী! বেগুন জিনিসটা আমার খুবই অপছন্দের, কোন কিছুতে বেগুন থাকলে সেটা খেতে রুচি হয়না। অথচ বেগুনী না থাকলে ইফতার ও কেন জানি জমেনা। তাছাড়া পিয়াঁজু, বুট, বড়া, পাকোড়া, খেজুর ইত্যাদি তো আছেই। এতটুকু পড়েই মনে হতে পারে যে আমি বেশ খাদক কিসিমের লোক, সংযমের মাসে উদরপূর্তি করে উদারভাবে দেশের খাদ্যসংকটকে ঘনীভূত করছি। আসলে কিন্তু তা নয় – রমজান মাসে আমি খাই দুইবেলা – ইফতার আর সাহরী। কাঁচা ঘুম থেকে তুলে দিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দেয়া হয় বলে সাহরীর সময় পেটে তেমন কিছু পড়েনা। আর সারাদিন কিছু খাওয়া হয়না বলে খালি পেটে ইফতারের সময় হাপুস-হুপুস করে পেট ভরে খাওয়াও যায়না, সব কিছুই অল্প অল্প করে খাওয়া হয়। তাই আমাকে ঠিক গোগ্রাসে খাওয়া পেটুক শ্রেণীর মাঝে ফেলা যায়না, আবার খাদ্যে উদাসীন গোষ্ঠীরও অন্তর্ভুক্ত করা যায়না। বরং এই দুই প্রজাতির মাঝামাঝিতেই পড়ি আমি – একেবারেই সাধারণ খাদকশ্রেনী যাদের বলে আর কী!
ঈদের সময় হলেই কীভাবে কীভাবে যেন ঢাকার লোকজন প্রচুর বেড়ে যায়। ঢাকার বাইরে থেকে এসময়টায় প্রচুর লোকের আমাদানী ঘটে। রাস্তায় বের হতে গেলে তখন বেশ ভয় করে, রিক্সা-গাড়ী তো রয়েছেই কখন যে মানুষের তলায় চাপা পড়ি সেটাও চিন্তা করতে হয়! যারা মানুষের তলায় চাপা খাবার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন তাদের বলছি, দয়া করে ঈদের মৌসুমে দুপুর বারটা’র পর গাউসিয়া-চাঁদনীচক থেকে একটিবার ঘুরে আসুন। আমার সারা জীবনে গাউসিয়া-চাঁদনীচকে শপিং করতে (পড়ুন শপিং বহন করতে) যাবার অভিজ্ঞতা মাত্র দু’বার। প্রথমবার সম্ভবত বছর দশেক আগে, আম্মুর মোট বইবার জন্য আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে কী জায়গা রে বাবা! বাংলাদেশের একমাত্র জায়গা যেখানে সম্ভবত নারী পুরুষের কোন ভেদাভেদ নাই – যে যাকে পারছে ধাক্কা দিয়ে ল্যাং মেরে সামনে চলে যাচ্ছে, সবাই দরদর করে ঘামছে, সেই ঘর্মাক্ত পরিবেশেই দোকানীদের সাথে মহিলারা দাম নিয়ে ভয়ানক যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছে, পারলে লাঠিসোটা নিয়ে মারামারি শুরু করে দেয় আরেকটু হলে। সেবার প্রাণ নিয়ে বাসায় ফিরে কানে ধরেছিলাম যে এরকম যুদ্ধময় পরিবেশে আর কখনো যাবনা। কিন্তু ন্যাড়াদের একটা ফর্মুলা আছে – শত বাধা বিপত্তি ডিঙিয়েও তারা কীভাবে কীভাবে যেন বেলতলায় বারবার গিয়ে হাজির হয়। আমিও দ্বিতীয়বারের মত আবার ঐ ভয়াল পরিবেশে গেলাম সপ্তাহ কয়েক আগে, এবারের ভূমিকাও একই – আম্মুর কুলি! আমি যে খুব সহজেই যেতে রাজি হয়েছিলাম তা কিন্তু নয়, কিছুতেই যেতে চাচ্ছিলাম না, তারপর কীভাবে কীভাবে যেন চলে গেলাম। মনে মনে ভয় ছিল, দশ বছর আগেই যে দশা দেখেছিলাম, দশ বছর যে কী হয়! কিন্তু গিয়ে দেখলাম যে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। গাউসিয়াতে হাঁটতে হয়না, কেবল চলমান জনস্রোতে একবার গা ভাসিয়ে দিতে পারলেই হয়, জনস্রোতই আপনাকে টেনে-ঠেলে সামনে নিয়ে যাবে, কষ্ট করে দু’পা ব্যবহার করে হাঁটতে হয়না। আমি আর আম্মুও ঐরকম জনস্রোতে ভেসে চলছিলাম, জনস্রোতে মাথা উঁচু করে শ্বাসপ্রশ্বাস নেবার কায়দাটা আয়ত্ত্ব করেছি মাত্র, এমন সময় আম্মু বললো বাম পাশের দোকানে যেতে হবে। কী সমস্যা! স্রোত আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সামনে এখন বামে ঘুরি কীভাবে? যা আছে কপালে চিন্তা করে একটু বামে ঘুরলাম, দেখলাম স্রোত আমাকে বামে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যস পেয়ে গেলাম সমাধান – দোকানকে বামে রেখে একটু একটু করে বামে ঘুরে যাচ্ছি আর স্রোতও আমাকে দোকানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে একসময় দোকানের কাছে পৌঁছে গেলাম, তারপর টুপ করে দোকানে উঠে গেলাম। পিছে আওয়াজ শুনে ঘুরে দেখি আমার মত কায়দায় আরেকজন লোক একইভাবে দোকানে কাছাকাছি চলে এসেছেন, কিন্তু স্রোতের কারণে দোকানে উঠতে পারছেননা, ডুবন্ত মানুষের মত অনবরত দু’হাত নেড়ে চলেছেন। তা দেখে দোকানেরই দু’জন লোক খপ করে তার দু’হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে দোকানে তুলে ফেলে। ফেরার সময় আবিষ্কার করলাম গাউসিয়ার গোলকধাঁধায় আমি কোন পথে এসেছি সেটা ভুলে গিয়েছি। তারপর অন্ধের মত বিভিন্ন গলি-উপগলিতে ডান-বাম-ডান-বাম করে অবশেষে মেইন রোডে আবার ফেরত আসি। যাই হোক না কেন – প্রাণ নিয়ে বাসায় ফিরে আমি আবারো কান ধরে প্রতিজ্ঞা করেছি যে আর ঐ ঝুকিপূর্ণ পরিবেশে ফিরে যাচ্ছিনা, হাজার টাকা দিলেও না (তবে টাকার অংক কোটির ঘরে গেলে কথা ভিন্ন)।
আমি যখন এই লেখাটা লিখছি তখন ঢাকার লোকসংখ্যা কমে যাওয়া শুরু করেছে, ঈদে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে অনেকেই। রাস্তা ঘাটও ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এই ফাঁকা ঢাকার আবার আরেক রূপ। রাস্তায় সেরকম মানুষ নেই, রিকশা নেই, কান ঝালাপালা করে দেয়া গাড়ির হর্নের শব্দ নেই, দূষিত বাতাস নেই, ট্রাফিক পুলিশেরও কাজের ব্যস্ততা নেই – চারদিকে বেশ শান্তি শান্তি একটা ভাব। বছরে কেবল দুই ঈদেই মাত্র কয়েকদিনের জন্য ঢাকার এই রূপ দেখা যায়। আমরা যারা ঢাকার মূল বাসিন্দা, তারা এই ক’টা দিনের জন্য তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করতে থাকি। সেই প্রতীক্ষিত সময় আবার শুরু হল – অন্তত কয়েকদিন কোন জনস্রোতে না পড়ে কিংবা মানুষের তলায় চাপা খাওয়ার ভীতি সরিয়ে ঢাকায় আরাম করে হাঁটাচলা করা যাবে!
যারা জানেননা তাদের বলি – আমাদের বাংলাদেশে ঈদুল ফিতরের কিন্তু একটা থিম সং রয়েছে – “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ… “। এই গানটার স্রষ্টা আমার খুব প্রিয় একজন সাহিত্যিক – কাজী নজরুল ইসলাম। এই গানটা ছাড়া কেন জানি কখনোই আমার ঈদ পূর্ণ হয়না। বাংলাদেশে তো চাঁনরাতেই টিভি-রেডিওতে এই গানটা ভেসে আসতে থাকে। ছোটবেলায় দেখতাম পাড়ার বড় ভাইরা মোড়ে মোড়ে এই গানটা বাজাতো। হয়তো তখন থেকেই গানটা মনের মাঝে গেঁথে গিয়েছে। যখন নেদারল্যান্ডে থাকতাম তখন চাঁনরাতে মন-মেজাজ ব্যাজার করে হলেও ঐ গানটা শুনতাম। গানটা শুনলেই মনটা একধরনের অনাবিল ভালো লাগায় ভরে উঠে, ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুন। খুব ছোটবেলায় গানটার অর্থ বুঝতামনা, কিন্তু এখন বুঝি ঈদের আনন্দ ও শিক্ষা – এ দুটো অংশকেই নজরুল কী নিগূঢ় দক্ষতায় পুরো গানটিতে তুলে ধরেছেন। সবার ঈদকে আরেকটু আনন্দময় করার জন্য মুস্তফা জামান আব্বাসীর কন্ঠে গাওয়া কোন ধরণের ‘রিমিক্স’ করা ছাড়া গানটি নিচে দিয়ে দিলাম (ইদানিং গানটা এত ‘রিমিক্সড’ হয়ে যাচ্ছে যে গানটির মূল আবেদনটাই হারিয়ে যাচ্ছে)।
এবারের ঈদে সবার জীবন অনেক অনেক হাসি আনন্দে ভরে উঠুক। কাছের মানুষদের কাছাকাছি থেকে মুবারাকময় হয়ে উঠুক সবার ঈদ। যারা এই পোস্টটি পড়ছেন কিংবা পড়ছেননা – তাদের সবার প্রতি রইল ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারাক!
ঈদ মোবারক 🙂
বাপরে! পোস্ট করার সাথে সাথেই কমেন্ট। ওৎ পেতে ছিলে নাকি? যাই হোক … তোমাকেও ঈদ মুবারাক! 🙂
সাবস্ক্রিপশন করা আছে তো 😛
অসাধারণ লিখেছেন। যদিও আপনার সব লেখাই আমার ভাল লাগে।
ঈদ মোবারক
আপনাকেও ঈদ মুবারাক! 🙂
আপনাকে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে ঈদের শুভেচ্ছা। বিদেশ-বিভুঁইয়ের ঈদ আপনি
যেভারে উপস্থাপন করলেন, সেভাবে কেউ আমাদের বলেনি বা আমরা উপলব্ধি করতে
পারিনি। আমার কিছু নিকট আত্বিয় বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকেন। তাদের জন্য কষ্ট
লাগছে। ঈদের মোলাকাতে জন্য আপনার দাওযাত রইলো। ধন্যবাদ।
—
শ্যামলিমা
+8801678702533
সভাপতি
ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশনস বাংলাদেশ
শুভেচ্ছার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনাকেও ঈদ মুবারাক! 🙂
হায়রে খোদা, ব্লগ কমেন্টেও মানুষ এই রকম সিগনেচার বসায় এই প্রথম দেখলাম।
ঈদ মুবারক। দেশে ঈদ উপভোগ করুন দোয়া করি 🙂
ফিরতি ঈদ মুবারাক। 🙂
আপনার খুব সুন্দর লেখার মধ্যে গত দু বছরের ব্যাথাটা যেন খানিকটা অনুভব করতে পারলাম । তবে এবার দেশে আছেন , গত দু বছরের অপ্রাপ্তি এবার ষোল আনার উপর আঠারো আনা উসুল হয়ে যাক এই কামনাই করি । আপনি , আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আপনার পরিবারের সবাইকে পবিত্র খুশীর ঈদের শুভেচ্ছা জানাই ।
শুভ কামনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আসলে বহুদিন পর নিজের পরিচিত আলো-হাওয়ায় ঈদ করছি তো, তাই উচ্ছ্বাসটা বেজায় বাঁধ ভাঙা! আঠারো আনার হিসেবটা অবশ্যই মনে রাখব। এবং অবশ্যই ঈদ মুবারাক। 🙂
ঈদ মুবারাক অভ্রনীল ভাই। দোয়া করি… গত ছয় ঈদের গ্লানি এই ঈদের আপনার মন থেকে ধুয়ে মুছে যাক।
ইনশাল্লাহ মুছে যাবে আশা করি। আপনার ঈদও যেন আনন্দময় হয়, ঈদ মুবারাক!
ঈদ মুবারাক! ভাবী ভাল আছে? 🙂
ফিরতি ঈদ মুবারাক!
ভাবী কেমন আছে জানিনা… কোন খোঁজখবর নাই… কই আছে কে জানে! তবে জিজ্ঞেস না করলেও বলি – আমি ভাল আছি। 😀
ঈদ মুবারাক, ঈদের শুভেচ্ছা রইল।
আপনাকেও ঈদ মুবারাক! দারুণভাবে ঈদ করুন এই কামনা করি।
ঈদ মোবারাক. . .
ঈদ মুবারাক!
আদনান ভাই আপনাকে ঈদ মোবারক । আদনান ভাই আপনার নিকট আমার একটি অনুরোধ রইল । আপনি প্লীজ উবুন্টু কাস্টম ব্যকাপ নিয়ে একটি লেখা সাবমিট করুন । আমার কম্পিউটারের সকল সফট গুলি সহ উবুন্টু টি আমি অন্য আরেক জনকে দিতে চাই। যাতে তাকে কষ্ট করে সব কিছু নতুন করে ডাউনলোড করতে না হয় । প্লীজ বিষয় টি একটু দেখবেন ।
আপনাকেও ঈদ মুবারাক!
দেখা যাক ব্যাকাপ নিয়ে লেখার সময় পাই কী না। তবে সবচেয়ে সহজ হল রিমাস্টারসিস ব্যবহার করা। ছবিসহ এ বিষয়ের উপর খুব সহজ একটা টিউটোরিয়াল পাবেন এখানে।