রঙ্গীন দুনিয়া – ১০

শেষ পোস্টের পর অনেককিছুই ঘটে গেছে আবার কিছুই ঘটেনাই! আমার জন্য যেগুলো অনেক কিছু অন্যদের জন্য হয়তো সেগুলো কিছুইনা! যাই হোক, সেসব জিনিসকে একসাথে ভরার চেষ্টা চালাচ্ছি এই পোস্টে। কতটুকু সম্ভব হবে জানিনা।

ইদুর

দেশে থাকতে ইদুর জিনিসটার সাথে তেমন একটা পরিচয় ছিলনা। মাঝে মাঝে বাসায় উৎপাত দেখা দিলে র‍্যাটম বা ঐ টাইপের কিছু একটা কিনে রাতে বাসায় ছড়িয়ে দিলেই কাহিনী শেষ হয়ে যেত, সকালে দেখা যেত কয়েকটা ইদুর বা চিকা প্রজাতির প্রাণী মরে পড়ে আছে। কিন্তু সুদূর হল্যান্ডে এসেও যে ইদুর বাবাজির খেল দেখতে হবে সেটা চিন্তা করিনাই। কাহিনীটা গত সামারের পরের ঘটনা, সেসময় কিছুদিন খালার বাসায় ছিলাম। তো বাসায় ফ্লোরে পা ছড়িয়ে বসে ল্যাপিতে কাজ করছি, এমন সময় মনে হল জীবন্ত কিছু একটা আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল। কাহিনী কি! একটু এদিক সেদিক তাকালাম কিছু চোখে পড়লনা। মনের ভুল নাকি! আবার ল্যাপির দিকে তাকাতে গিয়ে চোখ পড়ল দরজার কোনায়, দেখি একজোড়া কুঁতকুতে চোখ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কোন ইঁদুরের আমার দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকার ঘটনা এই প্রথম!

যাই হোক ইঁদুর থাকা মানেই হল একে খতম করতে হবে। পরদিন থেকেই উঠে পড়ে লাগা হল ইঁদুরের পেছনে। আসমিতা রিপোর্ট করল নীচে বসার ঘরে দেখা গেছে বাবাজীকে। সাথে সাথে ড্রইংরুমের সব দরজা জানালা আটকে ঝাপিয়ে পড়া হল। হঠাৎ চোখ গেল এরিকের দিকে। ও দেখি একহাতে পিনাট বাটারের বৈয়াম আরেক হাতে চামচে পিনাট বাটার নিয়ে পজিশন নিচ্ছে। কাহিনী কি? পরে জানা গেল গুগুল বাবা নাকি ফর্মায়েছেন যে পিনাট বাটার আর চিজ ইঁদুর প্রজাতির অতি প্রিয় খাদ্য। তাই সেই প্রিয় খাদ্য নিয়ে লোভ দেখিয়ে ইঁদুর মারার ফন্দি করেছে এরিক বেচারা। ঐ দিন অবশ্য ইঁদুর নিধন প্রকল্প সফল হয় নাই, শুধু ঐ দিনই না এর পর যতবারই ইঁদুর মারতে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে কোনবারই আর সেটা সফল হয়নি। মাসখানেক পর মনের দুঃখে ইঁদুরটা বাসা ছেড়েই চলে গেল! এরপর থেকে আমরা আর তার লেজের টিকিটিও দেখিনি।
Continue reading রঙ্গীন দুনিয়া – ১০

উবুন্টু আর মিন্টকে ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে…

আমাদের প্রযুক্তি তে উবুন্টু আর মিন্ট সম্পর্কে লোকজনকে কিভাবে আগ্রহী আর সচেতন করা যায় সে বিষয়ে একটা থ্রেড আছে। সেই থ্রেডে একবার প্রস্তাব করেছিলাম যে কিছু ওয়েব-স্টিকার বা ওয়েব-ব্যানার (যেগুলো ইউজারবার নামে পরিচিত) তৈরি করতে যেগুলো সবাই বিভিন্ন ফোরাম, ব্লগ, সাইট, ইমেইল অর্থাৎ পুরো ইন্টারনেটের যেকোন জায়গায় ব্যাবহার করতে পারবে, হোক সেটা সিগনেচার হিসেবে অথবা সাইটের সাইটবার বা ফুটারে ব্যানার হিসেবে। সেই প্রস্তাব থেকেই গুতিয়ে গুতিয়ে নিজে কিছু ইউজারবার বানাবার চেষ্টা করলাম।
Continue reading উবুন্টু আর মিন্টকে ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে…

উবুন্টু উপাখ্যানঃ মানুষের জন্য লিনাক্স!

  • শুরুর গল্পঃ

শুনতে অনেকটা রূপকথার মত শোনাবে। দুষ্ট সফটওয়ার কম্পানিগুলো যখন পৃথিবীর মানুষদের তাদের হাতের মুঠোয় পুরে ফেলার চেষ্টা করা শুরু করল তখন এক আধপাগলা লোক একাই দাঁড়িয়ে গেলেন সেইসব কম্পানির বিপক্ষে। সফটওয়ার কম্পানিগুলো চাচ্ছিল সফটওয়ার লিখতে যেই কোডগুলো দরকার সেগুলোকে নিজের কাছে রাখবে, পৃথিবীর আর কেউ সেগুলো দেখতে পারবেনা। সেই কোড দিয়ে যে সফটওয়ারগুলো তৈরি হবে মানুষ কেবল সেগুলোই ব্যবহার করতে পারবে। কেউ যদি নিজের ইচ্ছেমত সেসব কোড পাল্টাতে চায় তাও সম্ভব না। কিন্তু ঐ আধপাগলা লোক এটা মেনে নিতে পারলেননা। তিনি বললেন সবকিছু হতে হবে ওপেনসোর্স, অর্থাৎ সবাই সব সোর্স কোড দেখতে পাবে, নাড়াচাড়া করতে পারবে, নিজের সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু তৈরি করবে। সোর্স কোড হচ্ছে একটা প্রোগ্রামের সেই কোড যার উপর পুরো সফটওয়ারটা দাড়িয়ে আছে। এই কোড যদি কেউ পায় তাহলে ইচ্ছা করলেই সে সেই প্রোগ্রামে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবে। আধপাগলা সেই লোকটার নাম রিচার্ড স্টলম্যান। দুর্ধর্ষ প্রোগ্রামার হিসেবে পরিচিত স্টলম্যান একাই দাঁড়িয়ে গেলেন দুষ্ট সফটওয়ার কম্পানিগুলোর রাজত্বের বিরুদ্ধে। ধীরে ধীরে তার সাথে আরো অনেকই যোগ দিলেন। তারা গড়ে তোলে নিজেদের মুক্ত রাজত্ব গ্নু (GNU)। কিন্তু গড়ে তুললেই তো আর হবেনা। সেই রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আর দুষ্ট সফটওয়ার কম্পানিগুলোর বিপক্ষে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য একটা অপারেটিং সিস্টেমের যে দরকার। কারন সেই সময়টায় দুষ্ট কম্পানিগুলোর অপারেটিং সিস্টেমে যে বাজার ভরে গেছে। Continue reading উবুন্টু উপাখ্যানঃ মানুষের জন্য লিনাক্স!

আসুন… মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রতিজ্ঞা করি!

আচ্ছা! চুরির সংজ্ঞা কি? কেবল যে চুরি করে শুধু সে-ই চোর? নাকি যারা তাকে চুরি করতে উৎসাহিত করলো তারাও চোর? যারা চুরি করতে ইন্ধন যোগায় বা উৎসাহিত করে তারা কি চোরের চেয়ে কোন অংশে কম? ধরুন আপনার মোবাইল ফোন দরকার, কিন্তু আপনার পঞ্চাশ হাজার টাকার মোবাইল কেনার সামর্থ্য নেই। হঠাৎ একদিন অফার পেলেন যে ঐ মোবাইলটার একটা চোরাই ভার্সন হাজার পাঁচেক টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আপনি কি করবেন? আপনি কি সেই চোরাই জিনিসটা অল্পমূল্যে কিনে ব্যবহার করবেন? নাকি পাঁচ হাজার টাকায় নতুন একটা ফোন কিনবেন যাতে আপনার প্রয়োজনীয় কাজগুলো (কথা বলা, টেক্সট করা ইত্যাদি) করা যায়? একজন চোরের কাছ থেকে একটা চুরির জিনিস কিনে ব্যবহার করতে কি আপনার এতটুকু খারাপ লাগবেনা? কখনো কি মনে হবেনা এই যে আপনি টাকাটা খরচ করলেন চোরাই জিনিসটা কেনার জন্য, এটা করে আপনি আসলে একজন চোরকে আবার চুরি করতে উৎসাহী করলেন?


প্রফেসর হ্যারি বাওম্যান বেশ হাসি খুশি লোক। এই লোকের ক্লাশ করার ভাগ্য হয়েছিল আমার। তো প্রথমদিন এই ডাচ প্রফেসর ক্লাসে কে কোন দেশ থেকে এসেছে জানতে চাইলে যখন বললাম বাংলাদেশের কথা, তখন দেখি তার ঠোঁটের কোনায় হাসি। সেই হাসি মাখা মুখেই বলল যে সে বাংলাদেশকে চেনে। আমারতো ঘাম ছুটে গেল, কারন ভালো কোন দিক থেকে বাংলাদেশকে চেনার কোন কারন নাই, এখন ভরা ক্লাসের সামনে কোন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে কে জানে! ভয়ে ভয়ে অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বলল যে সে বাংলাদেশকে চেনে জর্জ হ্যারিসনের কল্যানে! আরে যোগ করলেন হল্যান্ডও এককালে বাংলাদেশের মত বন্যাপ্রবন দেশ ছিল, তাঁর আশা হল্যান্ডের মত বাংলাদেশও একসময় এই বাধা কাটিয়ে উঠবে। যাক বাবা, এই যাত্রায় বেচে গেছি ভেবে ক্লাস পুরোটা করলাম। ক্লাস শেষে বেরুতে যাব এমন সময় তিনি আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন বাংলাদেশ কি এখনো দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় কিনা? তারপর আরো কথার মাঝে কথায় কথায় বললেন যে “… তোমাদের তো আসলে সবাই চুরি করে, উপর থেকে শুরু করে নিচে সবাই। এই যেমন তোমরা কখনো আসল সফটওয্যার কিননা, কেবল চুরিই কর…”। নিজেকে এভাবে চোর শুনতে কার ভাল লাগে? কিন্তু এটাই বাস্তব! দেশের বাইরে আমাদের পরিচয় চোর হিসেবে যারা যা পায় তাই চুরি করে। বাইরের দেশগুলোতে আমাদের ভাবমূর্তি খুব একটা ভালনা। সহজভাবে বললে তারা আমাদেরকে নিকৃষ্ট হিসেবে দেখে।


ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিং রাইটস (ট্রিপস) এর একটা বেশ বিখ্যাত চুক্তি আছে। এ চুক্তি অনুসারে পৃথিবীর সব দেশের মেধাসম্পদের সর্বজনীন সংরক্ষণের কথা বলা আছে। কিন্তু বাণিজ্যে সমতা সৃষ্টির জন্য উন্নত বিশ্ব আর স্বল্পোন্নত বিশ্বকে তো আর একই কাতারে ফেলা যায় না। তাই কপিরাইট বিষয়ে ডব্লিউটিওতে দরিদ্র−ভদ্র ভাষায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো ছাড় পাওয়ার জন্য হইচই করে। শুরুতেই ট্রিপসে ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়। পরে ২০০৫ সালে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সেই ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ট্রিপসে বলা আছে যে, স্বল্পোন্নত দেশগুলো সাড়ে সাত বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত বিদেশি কপিরাইট, পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক ও অন্যান্য মেধাসম্পদের ক্ষেত্রে এবং ১১ বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ওষুধ শিল্প ছাড় পাবে।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এই ছাড় দেওয়ার কারণ হচ্ছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব দেশ যাতে সমান সুযোগ পায়। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো অনেক এগিয়ে। এখন তথ্যপ্রযুক্তি তথা মেধানির্ভর বিশ্ব বাণিজ্যে টিকে থাকতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সক্ষম হতে হবে।

তাহলে কি দাঁড়ালো? বাংলাদেশ ও ঐ ছাড়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তার মানে কি আমরা নির্বিচারে পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যবহার করব? খেয়াল করুন এইখানে “ছাড়” শব্দটা ব্যবহার করা হচ্ছে। ছাড় কখন দেয়া হয়? যখন কোন অপরাধ করা হয় তখন সেটাকে পাশ কাটানোর জন্য বলা হয় যে “তাকে ছাড় দেয়া হল”। কালো টাকা সাদা করার ঘোষনায় “ছাড়” পাওয়া চোরাকারবারিরা যেমন অপরাধী থেকে নিষ্পাপ মানুষে পরিবর্তিত হয়না তেমনি ট্রিপসের ছাড়ের কারনে কিন্তু পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যবহার করাটা জায়েজ হয়ে যায়না। সোজা কথায় কপিরাইট ভঙ্গ আসলে “অপরাধ” কিন্তু উন্নত বিশ্ব আমাদের “করুনা” করছে। ট্রিপস চুক্তি অনুসারে সফটওয়ার পাইরেসি করা সত্ত্বেও ওরা আমাদের “সরাসরি” চোর বলতে পারছেনা, কিন্তু ২০১৩ সালের পর কিন্তু আমরা লিখিতভাবে চোর হয়ে যাব!


– “বাংলাদেশে আমরা কম্পিউটার নামক যন্ত্রটার সাথে ফ্রীতে একগাদা সফটওয়ার পেয়ে অভ্যস্ত। নতুন কেনা কম্পিউটার কিনে সুইচ অন করলেই মনিটরের পর্দায় ভেসে উঠে উইন্ডোজের চেহারা। আপনি কি জানেন আপনার পিসির সাথে পুরে দেয়া উইন্ডোজটি যে চুরি করা?”
– “কে কইছে চুরি করসি! দামাদামি কইরা ত্রিশ টাকা খরচ কইরা কিনছি মিয়া। আমারে চোর কন!”
– “মাইক্রোসফট কোম্পানী যে জিনিসের দাম রাখে বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা সেটাই আপনি দোকান থেকে কিনছেন ত্রিশ টাকা দিয়ে। এবার ভাইজান বলেন যে আপনি চোর না!”
– “আবার কয় আমি বলে চুরি করছি। আরে মিয়া দুকান্দার কোত্থেইকা এইটা আনসে সেইটা আমি জানিনা, আমার জানবারও দরকার নাই। দুকানে সিডি ছড়াইয়া বেচতাসে, টাকা দিয়া কিনসি। মাগনা চুরি কইরা আনিনাই। গাটের টাকা খরচ করসি… হুমম।”
– “গাটের পয়সা খরচ করেছেন ভালো কথা, কিন্তু কিসের পিছনে? একটা চোরাই মালের পিছনে! ”
– “এই চুরি তো সেই চুরি না। আমাগো আসলটা কিনবার সামর্থ্য নাই। তাই এইটাই তো কিনতে হবে।”
– “ধরুন আপনার পনর লক্ষ টাকার গাড়ীটা কেউ চুরি করে এক লাখে বিক্রি করে দিল। যে চুরি করলো সেতো চোরই যে জেনেশুনে কিনল তাকে কি বলবেন?”
– “ঐ ব্যাটাও চোর। ওর চৌদ্দগুষ্ঠি চোর। জাইনাশুইনা চুরি করা গাড়ি কিনসে, কোন ভদ্রলোকে এই কাজ করে?”
– “ভাইরে… তাহলে তো আপনিও চোরের কাতারে পড়েন। জেনেশুনে চোরাই সফটওয়ার ব্যবহার করছেন।”
– “আরে ভাই… ঐ লোকের পয়সা দিয়া গাড়ি কিনবার সামর্থ্য নাই তো গাড়ি কিনবে ক্যান? বাস, ট্যাক্সি কি দেশ থেইকা উইঠা গেছে? ঐ ব্যাটার তো অন্য আরো রাস্তা খোলা আছে। কিন্তু আমারটা ভাবেন, উইন্ডোজ ছাড়াতো আর কোন উপায় নাই! রাস্তাতো একটাই!”
– “নারে ভাই! রাস্তা আরো আছে। উইন্ডোজই একমাত্র অপারেটিং সিস্টেম না, আরো কয়েকটা অপারেটিং সিস্টেম আছে। এগুলোর মধ্যে ফ্রি বিএসডি, ওপেন সোলারিস এবং লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলোর (উবুন্টু, ওপেনসুস্যে, মিন্ট, ডেবিয়ান ইত্যাদি) সিংহভাগই একেবারে মাগনা। শুধু তাইনা সাথে আছে অনেক ফ্রি সফটওয়ার। আর ঐগুলা ব্যবহার করলে কারও বাপের গায়ে জ্বর যে আপনাকে চোর বলে। আগের জনকে যেভাবে চোরাই গাড়ির বিকল্প দেখিয়ে দিলেন এখনতো আপনিও চোরাই সফটওয়ারের বিকল্প পেলেন। এখন বলেন কি করবেন!”


“চোর” শব্দটা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের দুটো পথ খোলা আছে। প্রথম পথটা বেশ কঠিন, সেটা হল পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যবহার না করে সফটওয়ারগুলোর জেনুইন ভার্সনগুলো কিনে ফেলা। আমাদের মত গরীব দেশের কম্পিউটার ইউজারদের জন্য এই পন্থাটা বেশ কঠিন, বলতে গেলে অসম্ভব। কারন উইন্ডোজ, এমএস অফিস আর এন্টি ভাইরাস সফটওয়ার – এই তিনটার কথা চিন্তা করলেই কিন্তু একটা কম্পিউটারের জন্য কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হবে। তাহলে খোলা থাকলো দ্বিতীয় পথটা, ফ্রি ওপেনসোর্স সফটওয়্যারে নিজেদের বদলে ফেলা। এই পন্থায় বলতে গেলে কোন সমস্যাই নাই। ফ্রিবিএসডি, সোলারিস বা লিনাক্স বেজড ডিস্ট্রগুলোতে ভাইরাসের ঝামেলা নাই, তাই এন্টিভাইরাসের কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব। আর যদি ব্যবহার বান্ধবতার কথা চিন্তা করেন তবে চোখ বন্ধ করে লিনাক্স ভিত্তিক উবুন্টু বা মিন্ট ব্যবহার করা যায়। উইন্ডোজে যা করতেন তার সবই কিন্তু উবুন্টু বা মিন্টে করা সম্ভব। যে কাজ আপনি চুরি করে কিনে অবৈধভাবে করছেন, সেই কাজগুলোই কিন্তু উবুন্টু বা মিন্টে করতে পারবেন বিনা ঝামেলায়।

তাছাড়া অনেকেই কিন্তু ইতিমধ্যে ফায়ারফক্স, থান্ডারবার্ড, ভিএলসি প্লেয়ার, ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, দ্রুপাল, ফাইলজিলা, পিএইচপি, পাইথন, জাভা ইত্যাদি ওপেনসোর্স সফটওয়ার ব্যবহার করছেন জেনে কিংবা না জেনে। যারা এসব ব্যবহার করছেন তাদের নিশ্চয়ই ওপেনসোর্স সফটওয়ারের ক্ষমতা বা কোয়ালিটি নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা না। যেখানে ওপেন সোর্স সফটওয়ার বিনা পয়সায় আমাদের মুক্তি দিতে পারে সেখানে কেন আমরা শুধু শুধু নিজেদের গায়ে “চোর” তকমাটা লাগিয়ে রাখবো?


আপনি নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন হঠাৎ করে কেন আমি এইসব জিনিস নিয়ে পড়লাম? আসলে নিজের জাতি সম্পর্কে কটু কথা শুনতে কারই বা ভালো লাগে বলেন? তবে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু চোর অপবাদটা ঝেড়ে ফেলে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। কিন্তু সেই চেষ্টাটাই আমরা করছিনা। শুধু যে করছিনা তা না, আমরা হাত পা গুটিয়ে বসে আছি যাতে চেষ্টাটা না করতে হয়। কিন্তু এখন থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে না হলে দেখা যাবে যে ২০১৩ সালে সরকারকে মোটা দাগের টাকা অপচয় করে সরকারী কাজে গাদা গাদা লাইসেন্স করা সফটওয়ার কিনতে হচ্ছে। সেই সাথে সাধারন ইউজাররাও পড়বে ঝামেলায়। যেহেতু উইন্ডোজের বাইরে আর কিছু নিয়ে তাদের কোন ধারনা নেই তাই স্বভাবতই তাদেরকেও মোটা দাম দিয়ে উইন্ডোজ কিনতে হবে, সেই সাথে দামী দামী সব সফটওয়ার। তাই এখনই সময় সাধারন পিসি ইউজারদের এই ব্যাপারটা নিয়ে সচেতন হবার এবং করার।


২০০৯ প্রায় শেষ। ২০১০ সাল শুরু হবে আর কদিন পরই। নববর্ষকে দেখা হয় পুরনো সব গ্লানি মুছে নতুন আশার প্রতিক হিসেবে। এই নববর্ষে আমরা কি ছোট্ট একটা প্রতিজ্ঞা করতে পারিনা যে আমরা আমাদের ‘চোর’ তকমাটাকে বিদায় জানাবো। নতুন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো বিশ্ব দরবারে। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোটা কঠিন না কিন্তু মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্বিদ্ধান্ত নেয়াটাই কঠিন। একবার স্বিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে মাথা উঁচু করাটা কোন ব্যাপারই না। এই লেখাটা দিয়ে একজনকেও যদি মাথা উঁচু করে দাঁড়া করাতে পারি তাহলেই আমার লেখাটা সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।


এ লেখাটি এছাড়াও আরো যেখানে প্রকাশিত হয়েছেঃ

পেঙ্গুইনের পয়লা প্যাঁকপ্যাঁকানী

  • সোনালী চুলের ছেলেটিঃ

১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরে যখন ছেলেটার জন্ম হয় তখনই কি সাংবাদিক এবং কবি ওলে টরভাল্ডস বুঝতে পেরেছিলেন যে তার নাতি একদিন বিশ্ব কাঁপাবে? ওলে টরভাল্ডসের ছেলে নিল‍্স বা ছেলের বউ এ্যানাও মনে হয় বুঝেছিল যে তাদের ছেলেকে একদিন পুরো বিশ্ব চিনবে এক নামে। সেজন্যই বোধহয় নোবেল প্রাইজ বিজয়ী আমেরিকান কেমিস্ট “লিনুস পলিং” এর নামানুসারে ছোট্ট ছেলেটির নাম রাখেন লিনুস বেনেডিক্ট টরভাল্ডস। দাদা ছিলেন একাধারে কবি ও সাংবাদিক, বাবা-মা দুজনেই সাংবাদিক, তাই চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায় ছোট্ট লিনুস বড় হলে এই লেখালেখির জগতকেই আপন করে নিবে। লেখালেখির জগৎকে লিনুস আপন করে নিয়েছিল ঠিকই তবে সেটা অন্য ধরনের লেখালেখি আর জগৎটাও হচ্ছে অন্যরকম। ডিজিটাল জগতে কোড লেখালেখিতেই যেন এই ছেলের মূল আনন্দ।
linus
Continue reading পেঙ্গুইনের পয়লা প্যাঁকপ্যাঁকানী

টার্মিনাল নিয়ে টানাটানি

মানুষজন লিনাক্সে আসতে চায়না যে কটা কারনে তার মধ্যে মনে হয় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত কারন হচ্ছে “লিনাক্সে কোড লিখতে হয়“! সাধারন ব্যবহারকারিদের মধ্যে কোড লেখার প্রতি একটা ভীতি সবসময়ই কাজ করে (হাসি দিয়ে লাভ নাই, আমি নিজেও এই জিনিসটাকে ভয় পেতাম)। অনেকে মাউস পয়েন্টারের পরিবর্তে এইসব কোড লেখাকে মহারাজ মান্ধাতার সম্পত্তি মনে করে। ফলে মহারাজের আমলের জিনিসকে বাদ দিয়ে তারা মাউসের উপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। এটা দোষের কিছু না। যার যেটাতে সুবিধা সে সেটাই ব্যবহার করবে। এই বিষয়টা ধরতে পেরেই উবুন্টু গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের উপর এত বেশি জোর দিয়েছে যে, কোন নতুন ইউজার একলাইন কোড না জেনেও তার সাধারন কাজগুলো মাউস ক্লিকে করে নিতে পারবেন। এবার নিশ্চয়ই আমার উপর ক্ষেপে উঠেছেন; নিশ্চয়ই মনে মনে বলছেন – তাহলে ভাই কেন টার্মিনাল নিয়ে খামাখা টানাটানি করছেন? বলছি, একটু সবুর করুন!

Continue reading টার্মিনাল নিয়ে টানাটানি

উবুন্টু ইন্সটলের পর অবশ্য করণীয় কাজের লিস্টি !

বেশ কয়েকজনকে উবুন্টু ইন্সটল করে দেবার পর দেখলাম যে ইন্সটলের পর কিছু কিছু কাজ প্রত্যেকবারই করতে হচ্ছে। নিজের সামান্য জ্ঞানে যা বুঝি সেটা হল এইসব কাজ মোটামুটি সবাইকেই করতে হয়। একজন নতুন উবুন্টু ব্যবহারকারিকেও উবুন্টু ব্যবহারের কোন না পর্যায়ে গিয়ে এই কাজ গুলো করতে হয়। একজন নতুন ব্যবহারকারি যাতে একেবারে ফ্রেশ ইন্সটল করেই খুঁটিনাটি প্রয়োজনীয় সব কিছু হাতের কাছে পায় তার জন্যই এই লিস্টি। আমি চেষ্টা করেছি একেবারে অতি প্রয়োজনীয় ধাপগুলো উল্লেখ করতে যেগুলো কোন পিসিতে উবুন্টু ইনস্টল করার পর আমি সবসময় করে থাকি।
Continue reading উবুন্টু ইন্সটলের পর অবশ্য করণীয় কাজের লিস্টি !

উইন্ডোজের সবচেয়ে বড় শক্তিই যখন তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা!


এই লেখাটা আমার নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা। আমার প্রাত্যহিক জীবনে কম্পিউটার সম্পর্কীত বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন ধ্যানধারনা কিংবা আমার নিজের দেখা বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে এই লেখাটা লেখা হয়েছে। তাই এই লেখাকে দয়া করে এন্টি উইন্ডোজ ঘরানার কিছু মনে করবেনা।

যখন প্রথম কম্পিউটার জিনিসটা দেখি তখন ক্লাস ফোর কি ফাইভে পড়ি। তখন ছিল ডসের যুগ। টেলিভিশনের মত যন্ত্রের সামনের কালো স্ক্রিনে কি কি লেখা আসে। কম্পিউটার বলতে এটাই বুঝতাম। ক্লাস নাইনে বাসা থেকে নিজের জন্য যখন পিসি পেলাম, তখন ছিল উইন্ডোজ ৯৫ এর যুগের একদম শেষের দিক। আমার পিসিতে ছিল প্রিইন্সটলড উইন্ডোজ ৯৮ (বাংলাদেশে তো পিসি কিনলেই উইন্ডোজ থাকে)। নিজে পিসি পাবার আগে অন্যদের পিসিতে হালকা পাতলা গেম খেলেছিলাম, তাই উইন্ডোজের ইন্টারফেসের সাথে খুব একটা অপরিচিত ছিলামনা। তাই আশেপাশে সাহায্য করার মত তেমন কেউ না থাকলেও নিজে নিজে আয়ত্ত্ব করতে বেশি দিন লাগেনাই। আয়ত্ত্ব বলতে মুভি দেখা, গান শোনা, গেম খেলা, টুকাটাক টাইপ করা আর এমএস পেইন্টে ছবি আঁকার চেষ্টা করা। আর এই পাঁচটা কাজের প্রথম চারটা কাজ আমি বয়সানুযায়ী বেশ দক্ষতার সাথেই করতে পারতাম। কম্পিউটারে যে এর চেয়ে বেশি কিছু করা যায় সেটাই জানতামনা! সেটা জেনেছি আরো পরে যখন সি এর সাথে পরিচয় হয়। নটরডেম কম্পিউটার ক্লাবের ছোট্ট রুমটাতে সপ্তাহে একবার যেতাম প্রোগ্রামিং শেখার জন্য। তখনই আস্তে আস্তে বুঝতে শিখি কম্পিউটারের আসল ক্ষমতা। এর আগ পর্যন্ত কম্পিউটার ছিল আমার কাছে টাইপরাইটার, ভিসিডি প্লেয়ার আর সেগা-নিন্টেন্ডোর গেমস্টেশনের মিলিত একটা যন্ত্র। এরও কয়েক বছর পর জানতে পারি উইন্ডোজই কেবল একমাত্র অপারেটিং সিস্টেম না, আরো আছে, আর লিনাক্স হচ্ছে সেরকমই একটা! Continue reading উইন্ডোজের সবচেয়ে বড় শক্তিই যখন তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা!