কি বোর্ড সমাচার!

কি বোর্ডের অক্ষরগুলো এলোমেলোভাবে সাজানো থাকে কেন? কিবোর্ডে F কি গুলোর কাজই বা কি?

কিবোর্ডে গুঁতোগুঁতি করতে গিয়ে নিশ্চয়ই আপনার মাথায় এই প্রশ্নগুলো কখনও না কখনও এসেছে। তাহলে চলুন প্রশ্নগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি।

প্রথম প্রশ্নের ক্ষেত্রে বলতে হয় – অক্ষরগুলো কিন্তু এলোমেলো থাকেনা। বরং একটা নির্দিষ্ট বিন্যাস মেনেই কি বোর্ডের অক্ষরগুলোকে সাজানো হয়েছে। কিন্তু বিন্যাসটি বর্ণানুক্রমিক নয়।

কেন বর্ণানুক্রমিক নয় সেটা নিয়ে মোটামুটি দু’টি মতবাদ রয়েছে।

মতবাদ – ১ :

  • কিবোর্ডের অক্ষরগুলোর বিন্যাসের ধারণাটা এসেছে টাইপরাইটারের কিবোর্ড থেকে।

প্রথমদিকে টাইপরাইটারে কিন্তু ইংলিশ বর্ণমালা অনুসারেই কিবোর্ডের সকল কি বিন্যস্ত থাকতো। ঐভাবে টাইপ করতে সুবিধা হত ঠিকই কিন্তু বিন্যাসটি একটি বড় সমস্যাও ছিল। যেসব অক্ষর খুব ঘন ঘন ব্যবহৃত হত সেগুলো পাশাপাশি থাকত, ফলে দ্রুত টাইপ করতে গেলে কি গুলো জ্যাম হয়ে যেত। নিচে ঘন ঘন ব্যবহৃত হওয়া অক্ষরগুলোর একটি তুলনামূলক চিত্র দেখানো হল।

এই সমস্যা সমাধান করার জন্য ঘন ঘন ব্যবহৃত অক্ষরগুলোকে কি বোর্ডে দূরে দূরে স্থাপন করা হল যাতে করে টাইপ করার গতি ধীর হয়ে আসে। গতি ধীর হয়ে আসলে টাইপরাইটারের মেকানিকাল কিবোর্ডের কি জ্যাম ও কম হবে। অনেকে অবশ্য বলেন, টাইপিং গতি ধীর করার জন্য নয় বরং কি জ্যাম না করে টাইপিং গতি দ্রুত করার জন্য অক্ষর বিন্যাস বর্ণানুক্রমিক করা হয়নি। অক্ষরগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলে দুহাতে সমান তালে টাইপ করা যায়, ফলে গতি দ্রুততর হয়।

এই ধারণা থেকেই QWERTY কিবোর্ড তৈরি করা হয়। কিবোর্ডের ওপরের সারির বাম পাশের ছয়টি অক্ষর Q, W, E, R, T, Y এর কারণেই একে QWERTY বলা হয়। নিচের ছবিটি দেখুন তাহলেই বুঝবেন।

পরবর্তীতে কম্পিউটারের কি বোর্ড ডিজাইন করার সময় নতুন বেশকিছু অক্ষর বিন্যাস তৈরি করা হলেও সেগুলো QWERTY এর মত জনপ্রিয়তা পায়নি (যেমন – DVORAK, AZERTY প্রভৃতি)। যদিও কম্পিউটারের কিবোর্ডে ম্যাকানিকাল জ্যাম হবার সম্ভাবনা নেই, তারপরও টাইপরাইটারে আগে থেকেই ব্যবহার করে আসার কারণে QWERTY কিবোর্ডই ডিফল্ট কিবোর্ড হয়ে যায়।

মতবাদ – ২ :

  • কিবোর্ডের অক্ষর বিন্যাস বর্ণানুক্রমিক না হবার আরেকটি কারণ হচ্ছে মোর্স কোড।

আগের দিনে টেলিগ্রাফের লাইন দিয়ে প্রতিটি অক্ষরের জন্য “টরে-টক্কা” যে সংকেত পাঠানো হত সেটি হচ্ছে মোর্সকোড। যারা মোর্সকোড নিয়ে কাজ করতেন তাদের কাছে অক্ষরগুলো বর্ণানুক্রমিক থাকলে সেগুলো নিয়ে কাজ করা কঠিন হয়ে যেত। মোর্সকোডের তালিকা নিচে দেয়া হল:

ওপরের ছবি থেকে বোঝা যায় যে, পাশাপাশি বর্ণগুলোর মোর্সকোডও কাছাকাছি। যার ফলে টাইপরাইটারে টািপ করার সময় বর্ণগুলোকে শনাক্ত করতে বেশ কষ্ট করতে হত। সে কারণে টেলিগ্রাম এর কথাগুলো লেখার জন্য যখন টাইপরাইটার ডিজাইন করা হয়েছিল, তখন পাশাপাশি অক্ষরগুলোকে কাছাকাছি না রেখে দূরে দূরে রেখে কিবোর্ড তৈরি করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়, সে থেকেই কিবোর্ডের অক্ষর বিন্যাস বর্ণানুক্রমিক না হয়ে অন্য রকম বিন্যাসের হয়েছিল।

এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্নের বেলায়। যেকোন কি বোর্ডের উপরের দিকে বামপাশে F1 থেকে F12 পর্যন্ত যে কিগুলো আছে তাদেরকে ফাংশন কি বলা হয়। এদের ফাংশন কি বলার কারণ হচ্ছে এদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু কাজ (বা ফাংশন) করা যায় । যেমন – কোন প্রোগ্রামের জন্য help অথবা কোন প্রোগ্রাম রান করানো ইত্যাদি কাজে এই কিগুলোর ব্যবহার করা হয়।

অপারেটিং সিস্টেমভেদে ও সফটওয়্যারভেদে এই কিগুলোর বিশেষ কিছু কাজ রয়েছে। নিচে হালকা পাতলা একটা ধারণা দেয়া হল। খেয়াল রাখবেন – সফটওয়্যারভেদে একই কি এর ভিন্ন ভিন্ন কাজ হতে পারে।

F1

  • বেশিরভাগ সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে এই ফাংশন কি হেল্প মেনু হিসেবে কাজ করে থাকে। কোনো প্রোগ্রামে কাজ করতে গিয়ে কোনো সাহায্যের প্রয়োজন পড়লে, F1 চেপে হেল্প মেনু খোলা যায়।

F2

  • এটি ব্যবহার করে যেকোনো ফাইল ও ফোল্ডারের নাম পরিবর্তন (রিনেম) যায়। যেকোনো ফোল্ডার নির্বাচন করে F2 চাপলে সেই ফোল্ডারের নামবদলের সুযোগ পাবেন।
  • কম্পিউটার বুট করার সময় F2 কি চেপে কোনো কোনো মাদারবোর্ডের বায়োস সেটাপে ঢোকা যায়।
  • তাছাড়া উবুন্টুতে চটজলদি কনসোলে কমান্ড দেবার জন্য ALT + F2 খুব কাজে লাগে।

F3

  • কম্পিউটারে কাজ করার সময় কোনো তথ্য খুঁজে নিতে হলে F3 চাপতে হবে।
  • লিব্রাঅফিস রাইটারে লেখা নির্বাচন করে SHIFT + F3 কি চাপলে নির্বাচিত অংশের লেখা ছোট হাতের থেকে বড় হাতের লেখায় (কিংবা উল্টোটায়) পরিণত হবে।

F4

  • ALT + F4 চেপে চালু থাকা যেকোনো প্রোগ্রাম বন্ধ করা যায়।
  • লিব্রাঅফিসে CTRL + F4 চাপলে চালু থাকা সকল ডকুমেন্টসের উইন্ডো বন্ধ হবে।

F5

  • ব্রাউজারে F5 চাপলে ওয়েবপেজটি রিফ্রেশ হয়।
  • লিব্রাঅফিস ইম্প্রেসে F5 চেপে স্লাইডশো দেখা যায়।
  • লিব্রাঅফিস রাইটারে F5 কি চাপলে নেভিগেটর চালু হবে।
  • লিব্রাঅফিস রাইটারে CTRL + F5 চেপে সাইডবার খোলা বা বন্ধ করা যায়।
  • লিব্রাঅফিস রাইটারে CTRL + SHIFT + F5 চেপে যেকোন পৃষ্ঠায় যাওয়া যায়।

F6

  • এই কি চাপলে মাউস কার্সর ব্রাউজারের ঠিকানা লেখার জায়গায় (অ্যাড্রেস বার) চলে যায়।

F7

  • লিব্রাঅফিস রাইটারে F7 কি চাপলে বানান বা ব্যাকরণ ঠিক করে নেয়া যায়।

F8

  • উবুন্টুতে ALT + F8 চেপে যেকোন উইন্ডোকে রিসাইজ করা যায়।

F9

  • লিব্রাঅফিস রাইটারে CTRL + F9 কি চাপলে ফাঁকা ক্ষেত্র (বা ফিল্ড) তৈরি হয়।

F10

  • F10 চাপলে অধিকাংশ প্রোগ্রামের মেনু বার দেখায়।
  • যেকোনো ফোল্ডার নির্বাচন করে SHIFT + F10 চাপলে শর্টকাট মেনু দেখাবে।
  • ALT + F10 চাপলে উইন্ডো বড় কিংবা ছোট হবে।

F11

  • ব্রাউজারে F11 চাপলে সেটি পর্দাজুড়ে (ফুলস্ক্রিন) দেখায়।
  • অনেক পিডিএপ রিডারও F11 চাপলে সেটি পর্দাজুড়ে (ফুলস্ক্রিন) দেখায়।

F12

  • CTRL + F12 কি চাপলে লিব্রাঅফিস রাইটারে টেবিল তৈরি করার অপশন আসে।
  • কম্পিউটার বুট করার সময় বুট ডিভাইস (হার্ডডিস্ক, ইউএসবি ডিস্ক, সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি) নির্বাচন করার সময় অনেক ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও Fn কি নামে আরও একটি কি রয়েছে, যার সাথে অন্য ফাংশন কি গুলো একসাথে চাপলে ডিভাইস নির্ভর কাজ হবে। যেমন, নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে Fn + F12 চাপলে ভলিউম নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এভাবে Fn ব্যবহার করার জন্য ফাংশন কি গুলোতে সাধারণত বিভিন্ন ছবি সম্বলিত চিহ্ন বা সংকেত দেয়া থাকে। যেমন, ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে F12 এ ভলিউম নিয়ন্ত্রণের ছবি দেয়া আছে।

One thought on “কি বোর্ড সমাচার!”

Leave a Reply