এই লেখাটা প্রথম লিখি সচলায়তনের জন্য। তারপর মনে হল কিছু কিছু জায়গা আরো চমৎকার করে লেখা যায়। তাই ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে লেখাটার এই ব্লগে আগমন।
জালের জগতের সাথে প্রথম মোলাকাত ইন্টার পরীক্ষা দেবার ঠিক আগে আগে। সময়টা ছিলো ২০০২ এর শুরু’র দিকে। আমার জালের জগত সম্পর্কে জ্ঞান তখন খুবই করূণ। ইন্টারে রচনা কমন ফেলার জন্য যতটুকু জানা দরকার তার চেয়ে বেশি না। এই জগতের মাজেজা আমার কাছে তাই সম্পূর্ণ অচেনা। এক বন্ধু তখন এমএসএন ম্যাসেঞ্জারে চুটিয়ে প্রেম করছে কানাডা প্রবাসী (আদৌ কানাডা প্রবাসী কি না কে জানে!) এক মেয়ের সাথে। বন্ধুর সাথে সেই মেয়ের ছবি দেখতে গিয়ে আমার জালের জগতে হাতে খড়ি। তো আমার এই হাতেখড়ির পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি- আমার বন্ধুর না ওর বান্ধবীর (আরো সহজ করে বললে একজন নরের নাকি নারীর) সেটা এখনো আমাকে বেশ ভাবায়। যাই হোক আমার মত নাদান তখনো এই জগতের মহীমা বুঝতে পারেনাই!
মহীমা বুঝতে পারি যখন আমার প্রথম ইমেইল এড্রেসটা খুলি। কী ফটাফট এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চিঠি চলে যায়! জালের জগতে আমার প্রথম ঠিকানা তৈরি করি আইইউটিতে ভর্তি হবার পর। এই ঠিকানা খুলতে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। একে তো ইন্টারনেট কী তা জানিনা তার উপর ইমেইল কেমন করে ব্যবহার করে সেটা সম্পর্কেও অজ্ঞ।
আইইউটিতে ভর্তি হবার পর একদিন আমাদের ফার্স্ট ইয়ারের সবাইকে একটা এপ্লিকেশন ফর্ম দিয়ে জানানো হলো যে আমাদের সবার নামে স্টুডেন্ট ইমেইল একাউন্ট খোলা হবে, সবাই যেন নিজেদের পছন্দের নাম জমা দেয়। আগেই বলেছি আমি ছিলাম নাদান। তো নাম যেহেতু চাইলো আমি তাই বাবা-মা’র দেয়া আমার ঊনিশ অক্ষরের (আন্ডারস্কোরসহ একুশ অক্ষর) বিশাল নামটাই দিয়ে দিব বলে ঠিক করলাম। এরই মধ্যে একদিন আবিষ্কার করলাম পোলাপান সব কাব্যিক নাম দিচ্ছে। কী বাহার সেই সব নামের! স্বপ্নীল, দলছুট, নীলআকাশ। আবার মারমার কাটকাট নামও ছিলো বেশ কয়টা; যেমন ডেথবয়, হেলকীপার, ফায়ার অফ ফিউরি। একজনতো ম্যাট্রিক্স মুভি দেখে সেই ছবির নায়ক চরিত্র নিও’র নাম দিয়েছিল নিজের একাউন্টে। আমার মত আরেকজন নাদান আবার তার প্রেমিকার নামে নিজের একাউন্ট খুলে বসেছিলো!
এতসব নামের বাহার দেখে আমি বুঝলাম যে স্মার্ট হতে আমার এখনও অনেক দেরী। কী আর করা, আমার ইমেইলের নামতো বদলাতে হবে। স্টাইলিশ নাম দিতে হবে। চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমার ঊনিশ অক্ষরের নামের মধ্যে মোট তিনটা অংশ, যার মধ্যে শেষ অংশের বাংলা মানে করলে দাঁড়ায় “যার কোন ক্ষয় নাই”। ডিকশনারি নিয়ে বসলাম এর ইংলিশ প্রতিশব্দ বের করার জন্য। শেষমেষ বের করে ফেললাম। নামটা জমাও দিয়ে দিলাম। আমার প্রথম ইমেইল নিকটা ছিল “ইটারনাল” [ETERNAL]। সেই অনুযায়ী জালের জগতে আমার প্রথম ঠিকানাটা ছিলো eternal@iut-dhaka.edu . বিভিন্ন ল্যাব রিপোর্ট কিংবা এসাইনম্যান্ট দেবার কাজেই কেবল এই ঠিকানাটা ব্যবহার করতাম। পাঠশালার চার বছর এই ঠিকানা আমার সাথে ছিলো। পাঠশালার পাট চুকে যাবার সাথে সাথে এই ঠিকানাটাও বিলীন হয়ে যায়।
ল্যাব রিপোর্ট কিংবা এসাইনম্যান্ট জমা দেয়া ছাড়া অন্য কোন কাজে এই ঠিকানাটা খুব একটা ব্যবহার করতামনা, কারন কদিন পরেই হটমেইল আর ইয়াহু’র খোঁজ় পেয়ে গেলাম। এর পর কত জায়গায় কত নামে ঠিকানা খুলেছি তার ইয়েত্তা নাই। অবশ্য সার্বজনীন ঠিকানায থিতু হতেও খুব একটা সময় লাগেনি। কিন্তু ঐ প্রথম ঠিকানাটা কখনোই ভুলতে পারিনা।
ভাইয়া,
আপনি IUT র ছাত্র?
এখন কোন ইয়ার?
নাকি পাশ করে বের হয়ে গেছেন?
আমিও IUT র ছাত্র।
এখন সেকেন্ড ইয়ার, EEE department.
রুম নংঃ ৩১৩ নর্থ হল।
আমি আইইউটিতে ছিলাম… কিন্তু এখন আর নাই। আমি ছিলাম ০২ ব্যাচ ইলেক্ট্রিক্যাল।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ইমেইল খোলার কথায় আমার অভিজ্ঞতা মনে পড়ে গেল। নাটোরে তখন প্রথম সাইবার ক্যাফে খুলেছে। দুয়েকদিন আসা যাওয়াও করেছি।তো তখনি আরেক বন্ধুর পরামর্শে গেলাম ইমেইল খুলতে।তখন সবেধন নীলমনি ইয়াহুর ওয়েব এড্রেসটাই জানা। তো গিয়ে গুতাগুতি করে রেজি ফর্মে গিয়ে বাধল বিপত্তি। দুজন মিলে কিছুতেই @ চিহ্ন দিতে পারিনা। সাইবার ক্যাফেওয়ালাকে ভয়ে ভয়ে বলার পর বলল SHIFT প্রেস করে 2 এ প্রেস করতে। সেটাই করলাম(SHIFT প্রেস করে ছেড়ে দিয়ে তারপর 2 তে প্রেস করছিলাম :p) তাতেও কাজ না হওয়ায় ক্যাফেওয়ালা এসে @ দিয়ে গেল।সাথে কিছু ফ্রী গালি। উফ! এতবড় কমেন্ট করে ফেললাম