ঘটনার শুরু আইইউটি’র সাউথ হলের ৫২১ নম্বর রুমে। এক সন্ধ্যায় শাদিদ গল্পটা যখন বলা শুরু করলো তখন শ্রোতা কেবল আমি, দিপু আর মিফতাহ্; ৫২১ এর ত্রিরত্ন। গল্পটার কাহিনী অনেকটা এইরকম ছিল,“…রাতের বেলায় এক লোক পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। বেশ জোরেশোরে বৃষ্টি পড়ছিলো। কিছুদুর যাবার পর সে একটা গাড়িকে রাস্তায় মুখ থুবরে পড়ে থাকতে দেখলো। সাহস করে কাছে গিয়ে সে দেখল এক মহিলার লাশ গাড়িতে পড়ে আছে। অবাক ব্যাপার হচ্ছে, মহিলার পুরো শরীর ভর্তি গহনা! কেউ সেগুলোতে হাত দেয়নি পর্যন্ত। লোকটার মাথায় লোভ মাথাচাড়া দিয়ে ঊঠলো। সে একে একে সব গহনা খুলে নিলো। ঝামেলা বাঁধালো মহিলার ডান হাতের অনামিকার একটা আঙটি। কিছুতেই খুলা যাচ্ছেনা সেটা। লোকটাও ছাড়বার পাত্র নয়। সে পরে সেই অনামিকা কেটে আংটিটা নিয়ে যায়। … বিশ বছর পরের কথা… লোকটা এখন বিশাল বড়লোক। এক বৃষ্টির রাতে সে আবার সেই পথ দিয়ে আসছিলো। হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয়ে গেল। কাছাকাছি এক কুঁড়েতে সে গেলো পানি চাইতে। এক মহিলা ছিল সেই কূঁড়েতে। লোকটা পানি চাইলে সে ভেতর থেকে এক গ্লাস পানি এনে দিল। লোকটা তখন মহিলাকে বিশ বছর আগের সেই কাহিনী বলা শুরু করে। কাহিনী শেষ হলে মহিলা হঠাৎ করে তার ডান হাত বাড়িয়ে দেয় লোকটার দিকে, লোকটা আতংকের সাথে দেখলো মহিলাটার ডান হাতের অনামিকাটা কাটা…” – এটুকু বলে শাদিদ হঠাৎ অনামিকাটা ভাঁজ করে ওর ডান হাত বাড়িয়ে দেয় । এইরকম একটা ভয়ের গল্প শুনার সাথে সাথে এইরকম আচমকা ডান হাত বাড়িয়ে দেয়ায় আমাদের কলিজা পুরা ঠান্ডা হয়ে গেল। ভয় কাকে বলে টের পেয়েছিলাম সেইরাতে।
যাই হোক নিজেরা ভয় পেয়েছি ভালো কথা, তবে পোলাপানদের ভয় দেখানোর একটা উপায়তো পাওয়া গেল!
সাউথ হল, রুম নম্বর ৫১৩। এই রুমের অধিবাসী রাতুল, সাদাত আর আতিক। টার্গেট করলাম সাদাতকে ভয় দেখাব এই গল্পটা বলে। গেলাম ওদের রুমে। রাতুল ছিলনা। আতিক আর সাদাতকে পেলাম। সব আলো নিভিয়ে দিয়ে গল্পের আসর জমিয়ে ফেললাম। গল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে… আচমকা ডান হাত বাড়িয়ে দেয়ার সময় আসলো… সাদাতের দিকে বাড়িয়েও দিলাম… কিন্তু এরপর যা ঘটলো তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। হঠাৎ খাট থেকে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ পেলাম। আমি আর সাদাত দুজনেই মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম আতিক ভয় পেয়ে পড়ে গেছে। গল্পটা রঙ নাম্বারে চলে গেছে!
আলো জ্বালানো হলো। আতিককে শান্ত করা হলো। বেচারার বুকের ধুকপুকানি তখনো কমেনি। সাদাত বললো ও এই গল্পটা অন্যভাবে শুনেছে। শেষ অংশে নাকি বক্তা নিজের ডান হাত হঠাৎ বাড়িয়ে দিয়ে শ্রোতাকে বলে, “তুই এজন্য দায়ী!” বলতে বলতে সাদাত ব্যাপারটা করেও দেখাল। সে একটু বেশিই জোরে বলে উঠেছিল, কারন সাথে সাথেই আবার ধপ্ একটা আওয়াজ। মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম আতিক ওর জায়গায় নাই, চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে!
সাউথ হল, রুম নম্বর ৫২১। নিজের রুমে এসে দিপু আর মিফতাহ্কে ৫১৩ তে ঘটে যাওয়া কাহিনী বলছি। এমন সময় দরজায় কেউ নক্ করল। উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই ওপাশ থেকে কেউ চিৎকার করে বলে ঊঠলো, “তুই এজন্য দায়ী!” … কাজটা আতিকের। হঠাৎ বলে উঠায় ভয়ানক চমকে গিয়েছিলাম। কিন্তু চেহারা ভাবলেষহীন রেখে ওকে আমার চমকানোটা বুঝতে দেইনি। যথাসম্ভব স্বাভাবিক স্বরেই ওকে বললাম, “কী ব্যাপার আতিক?” আতিক বেশ অবাক! আমি ভয়-টয় কিছু পাইনাই। বেচারা এসেছিল প্রতিশোধ নিতে। এমন সময় আমার পিছন থেকে আচমকা দিপু এসে আতিকের দিকে ডান হাত বাড়িয়ে বললো, “তুই এজন্য দায়ী!” আমার চোখের সামনে আতিককে তৃতীয়বারের মতো ফ্ল্যাট হতে দেখলাম… তবে এবার ব্যালকনিতে!
আইইউটি নিয়ে এত সুন্দ্র লেখা ওয়েবে আছে জানতাম না।
আমাদের ইঊনিভার্সিটিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
এমন বাজে ভূতের গল্প আমি জীবনেও শুনিনি