মনে পড়ে যায়… আশির দশকের সেইসব সোনালী দিনগুলোর কথা।
মনে পড়ে যায়… শুক্রবারের থান্ডারক্যাটস বা জেটসন্স এর কথা। সঙ্গে ছিলো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট, কেয়ার বেয়ার আর টিনেজ মিউট্যান্ট নিনজা টার্টেলস। আরো ছিল ভল্ট্রন আর গোবট।
মনে পড়ে যায়… রবিবার আর বুধবার রাত থাকতো ইংলিশ সিরিয়ালের জন্য বরাদ্দ। ম্যাকগাইভার, মায়ামি ভাইস, এয়ারউলফ, নাইট রাইডার, স্টারট্রেক, দ্যা ফলগাই, দ্যা এটিম, হাওয়াই ফাইভ ও… কতকিছু।
মনে পড়ে যায়… বহুব্রীহি, সংশপ্তক আর এইসব দিনরাত্রির কথা। তখন কেউ সারাদিন টিভির সামনে বসে থাকতোনা, কারন শুক্রবার ছাড়া বিটিভি প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত চলতো। ছিলনা অন্য কোন চ্যানেল দেখার সুযোগ।
মনে পড়ে যায়… ঈদ আনন্দমেলা, যদি কিছু মনে না করেন আর ইত্যাদির কথা।
মনে পড়ে যায়… প্রতি বুধবারে রাত নটায় ম্যাকগাইভার দেখার জন্য নৃত্যের তালে তালে অনুষ্ঠানটা জোর করে দেখার কথা।
মনে পড়ে যায়… শুক্রুবারের মুভি অফ দ্যা উইক আর মনের মুকুরে নাটক। রাতে ছিল বিল কসবি শো , আরো পরে এলো পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জারস।
মনে পড়ে যায়… টার্মিনেটর টু দেখে রাতে ঘুমাতে না পারার কথা।
মনে পড়ে যায়… তখন খেলার সরঞ্জাম বলতে ছিল লাটিম, মার্বেল আর কোকাকোলার কল্যাণে ইয়ো ইয়ো। প্লাস্টিকের পিস্তল কারো হাফপ্যান্টের বেল্টের হুক থেকে ঝুলতে দেখলে সবাই এসে ভাব জমাতো শুধুমাত্র পিস্তলটা একবার হাতে নেবার জন্য।
মনে পড়ে যায়… হ্যালির ধুমকেতু, আটাশি’র বন্যা আর ম্যারাডোনার একহাতে গোল দেবার কথা।
মনে পড়ে যায়… কাউকে শালা বলে গালি দিতেও তখন মুখে আটকাতো।
মনে পড়ে যায়… দোকান থেকে কার্টুনের স্টিকার কেনার কথা। বাবলগাম খাওয়া হত ডাইনোসোরাসের ট্যাটুর জন্য।
মনে পড়ে যায়… ভিসিপি আর ভিসিয়ারের কথা। সবার মুখে মখে তখন ছিল “হাওয়া হাওয়া” গানটা।
মনে পড়ে যায়… ব্রিক গেমের কথা। তখন ছিলো না কম্পিউটারের জোয়ার।
মনে পড়ে যায়… বড়লোক বন্ধুদের কথা, যাদের কে তাদের বাবা-মা রা টিফিনের জন্য প্রতিদিন দুই টাকা করে দিত।
মনে পড়ে যায়… শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা আর যাদুঘরের কথা, সপ্তাহশেষে ঘোরাঘুরির একমাত্র যায়গা ছিলো ঐগুলো।
মনে পড়ে যায়… ট্রাকের মত চেহারার কাঠের সিটওয়ালা মুড়ির টিন বাস গুলোকে। তখন কোন এসি বাস ছিলোনা।
মনে পড়ে যায়… চাচা চৌধুরি, বিল্লু, পিঙ্কী, টিনটিন আর আর্চির কথা। পাওয়া যেত থান্ডারক্যাটস, স্পাইডারম্যান আর সুপারম্যানের কমিক্সও।
মনে পড়ে যায়… গোয়েন্দা রাজু আর তিন গোয়েন্দার কথা।
মনে পড়ে যায়… ফীডব্যাক, সোলস, মাইলস, মাইকেল জ্যাক্সন, আবা আর মর্ডাণ টকিঙ্গের কথা। প্রিয় গান ছিল “চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে…” তখনো জানতামনা গানটা কে গেয়েছে!
মনে পড়ে যায়… অঙ্ক ক্লাসে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠা বানরটার কথা, যে আমাদের জীবনকে অতীষ্ট করে রাখতো।
মনে পড়ে যায়… স্কুলে টেনিস বল দিয়ে ফুটবল খেলার কথা।
মনে পড়ে যায়… বরফ-পানি, লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি, কুমির-তোর-জলে-নেমেছি, চোর-পুলিশ আর সাত চারার কথা।
মনে পড়ে যায়… টীচার হেড ডাউন করে রাখতে বললে হেডডাউন করে কোলের উপর কমিক্স বই পড়ার কথা।
মনে পড়ে যায়… কোক আর পেপসি খেয়ে কে কত ঢেকুর তুলতে পারে সেই প্রতিযোগীতার কথা।
মনে পড়ে যায়… স্কুলে যাবার সময় গলার কাছে মালার মত করে ফ্লাক্সটা ঝুলতো।
মনে পড়ে যায়… রিংচিপ্স আর সিভিটের কথা। মিমি আর বেবি লজেন্সও বাদ ছিলোনা।
মনে পড়ে যায়… পোলার আর বেবি আইস্ক্রিমের কথা। চকোবারের নাম তখনো কানে আসেনি।
মনে পড়ে যায়… একজনের কাছে পেজার দেখে অবাক হয়েছিলাম খুব!
মনে পড়ে যায়… ঘুড়ি উড়ানোর দিনগুলোকে। সুতায় মাঞ্জা দিতে গিয়ে হাত কেটেছি কতবার!
মনে পড়ে যায়… ভিউকার্ড, পোস্টার, স্ট্যাম্প আর কয়েন জমানোর কথা। এগুলো পাবার জন্য যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম!
মনে পড়ে যায়… কলম ফাইটের কথা। স্কুলের টিফিনের অন্যতম প্রধান কাজ ছিলো স্পেশাল কলম দিয়ে কলম ফাইট খেলা।
মনে পড়ে যায়… স্কুলের সেই দেমাগী ক্যাপ্টেনের কথা, যার হাতে ছিলো প্রেসিডেন্টের সমান ক্ষমতা। ক্লাসে কথা বললেই নাম উঠে যেত ব্লাকবোর্ডে। অনেক সময় নাম উঠতে কথা বলার দরকার হতনা, ক্যাপ্টেনের সাথে ঝগড়াঝাঁটিই এর জন্য যথেষ্ট ছিলো।
মনে পড়ে যায়… প্রায় ফাঁকা একটা শহরে বেড়ে উঠার কথা। যা এখন লোকে লোকারন্য।
মনে পড়ে যায় আশির দশকের সেইসব সোনালী দিনগুলোর কথা।
শুক্রবার আসলেই উৎসব উৎসব মনে হত। দুপুরে বাংলা সিনেমা, রাতে আলিফ লায়লা, রবিন হুড, রোবোকপ সহ কত সব সিরিয়াল দেখার জন্যে এক সপ্তাহ অপেক্ষা।
মার্বেল খেলতাম প্রচুর, ইয়ো ইয়োর কথা তো এতদিন মনেই ছিল না
চুইংগামের স্টিকার সব জায়গায় লাগানো থাকতো, হে হে।
ক্লাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর স্যার ক্লাস ক্যাপ্টেনকে নাম লিখার দ্বায়িত্ব দিয়ে যেত। পুরা ক্লাস চুপচাপ, কেউ একটু কথা বললেই খাতায় নাম উঠে যেত। পরের দিন ক্লাসে স্যারের হাতের মার মাফ নাই
সব ছেলে-মেয়ে, পিচ্চিরা মিলে গোল্লাছুট, বউ তোলাতুলি (:P) সহ আরো কত নাম ভুলে যাওয়া খেলা।
এন্টেনায় ইন্ডিয়ান DD1(ন্যাশনাল) ধরত, চন্দ্রকান্তা, শক্তিমান সহ আরো কত সিরিজ দেখা
আরো কত কি…। সত্যিই ৮০’র দশকে জন্মে গর্বিত (তবে বাল্যবেলা বলতে ৯০’র দশক বলতে হবে, হা হা হা)
আলিফ লায়লা, রবিন হুড, রোবোকপ তো সেদিনের জিনিস! ৮০’র দশকে বাংলায় ডাব করা কিছুই ছিলনা – একেবারেই নির্ভেজাল ইংলিশ।
আমাদের DD1 (ন্যাশনাল) ধরত না। মনে হয় রাজশাহী’র লোক হওয়াতে তোমরা ভারতের কিছু কিছু সিগনাল পেয়ে যেতে! তবে রেডিও ফাইন টিউনিং করলে আকাশবাণী শোনা যেত।
ভালই মিল পেলাম নিজের সাথে, আমিও আশির দশকের কিনা
চমৎকার লিখেছেন ভাই। ভিডিও গেমের দোকানে স্যারের কাছে হাতে-নাতে ধরা পরার কথাও মনে পড়ে।
মোস্তফা’র কথা বলছেন? পাড়ায় পাড়ায় ভিডিও গেমের প্রচলনও সম্ভবত ৯০’র শুরুতে কিংবা ৮০’র একেবারে শেষে হয়েছিল – সঠিকভাবে মনে করতে পারছিনা।
THESE DAYS CANNOT BE FORGOTTEN………………..
আবারও আদনান ভাইয়ে লেখার প্রশংসা করতে হয়।
আমি একটু পরের প্রজন্মের। বিরানব্বই।আমার এই সময়টার কিছুটা কেটেছে পাড়াগাঁ এ। আর কিছুটা মফস্বলে। মিশ্র অনুভূতি নিয়ে ছিলো আমার শৈশব। কিন্তু এই লেখার সাথে ছিলো যথেষ্ট মিল।
তারমানে চোখ ফুটতে ফুটতে প্রায় মিলেনিয়াম! নাহ … অনেক কিছু মিস করেছ।
আমরা এইসব কিছুই দেখলাম না! Missed all!
৭০’র দশকের লোকজনের খবর ততটা জানিনা, কিন্তু আশির দশক আসলেই রক্স! পুরো একটা ট্রানজিশান পিরিয়ড ছিল সময়টা – এখনো পর্যন্ত এই রকম পিরিয়ড আর পাইনি।
অভ্রনীল দা, বহুদিন পরে একটা চমৎকার লেখা পড়লাম। ভীষন স্মৃতিকাতর করে তুললেন দাদা। তবে খুব মনে পড়ে ম্যাকগাইভার আর সাদ্দাম হোসেনের ছবিযুক্ত নিউজপ্রিন্ট খাতাগুলোর কথা। গোটাদশেক এখনো সংগ্রহে রেখেছি নাতি-নাতনিকে দেখাবো বলে। আর মনে পড়ে ক্যাম্পাস আর রাইটার কলমের কথা। পাইলট ব্র্যান্ডের দোয়াত কলমের কথা বেশ মনে আছে, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেই বাবা উপহার হিসেবে দিতেন। আর নার্সারীতে পড়বার সময় তো পরীক্ষার হলে যাবার পথে হৃদপিন্ড মার্কা সন্দেশ ছিলো অত্যাবশ্যক।
কলমের কথা বলাতে মনে পড়ে গেল যে আমার কলম জীবনের শুরু পার্কারের ফাউন্টেন পেন দিয়ে। সেসময় কালো আর নীলের মিশেলে নতুন একটা কালি এসেছিল বাজারে, কলমে সেটাই ভরে ব্যবহার করতাম। বলপেন ব্যবহার শুরু করি আরো পরে নব্বুইতে – সম্ভবত রেডলিফ ছিল আমার প্রথমদিককার স্কুল কলম।
আমার ছিল ম্যাকগাইভার আর ম্যারাডোনার খাতা। ৮৬’র বিশ্বকাপের জন্য ম্যারাডোনার খাতা হু হু করে বেচা বিক্রি হত।
পরীক্ষায় ভালো করলে বাসায় বকা খেতে হতনা – ওটাই ছিল ভালো করার পুরষ্কার!
দারুণ লাগলে লেখাটি, কিছুটা মনে পড়ে গেল সত্যি।
চোখের সামনে নিজের ছোট বেলাকে দেখতে পেলাম। পোস্ট লেখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমি আমার ছোটবেলা নিয়ে কিছুটা দুঃখ করতাম কিছু করতে না পারার জন্য। কিন্তু এই লেখা পড়ে অনেকদিন পর আমার ছেলেবেলার কথা মনে পরছে আর বড় একটা হাসি আমার মুখে লেপ্টে আছে।
ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে কথাগুলো লেখার জন্য
আরো খানিক্ষণ চিন্তা করলে হয়তো আরো অনেক কিছুই বেরিয়ে আসতো!
সব change হলেও তিন গোয়েন্দা এখনও আছে…
আশির দশকে জন্ম হলেও নব্বইয়ের দশকও জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। আশির দশকে স্কুলে যাই যাই অবস্থা, হানিফ সংকেতের গানের একটা ক্যাসেট কিনেছিল বাবা। সেটা শুনে মুগ্ধ হতাম। তার হাস্যরসে না বুঝেও হাসতাম। ম্যাকগাইভার দেখার জন্য কিনা কি করেছি। নৃত্যের তালে তালে অনুষ্ঠানটা ছিল চরম বিরক্তির। তখন টিভিতে রেসলিং, থ্রী স্টুজেস ইত্যাদি দেখাত। সেগুলোর ভক্ত ছিলাম। সচলে বোধহয় আপনার লেখাটি দেখেছিলাম প্রথমে। নস্টালজিক হয়ে পড়ি যতবার দেখি, ভেসে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলি। ঢাকায় তো তখন ছিলাম না, দ্বিরাই-জামালগঞ্জ-স্বন্দীপে কেটেছে আমার জীবনের আশির দশক। ছায়াঘেরা প্রকৃতির মাঝে সাগরের ঢেউয়ের শব্দ শুনে। সত্যিই, আবার ফিরে পেতে চাই দিনগুলো। ইশশ, যদি টাইম মেশিনে করে সেখানে যেতে পারতাম !
Awesome writing Tanim!
Now-a-days, I am watching the Thundercats reboot with the same characters but slightly different storyline.
http://en.wikipedia.org/wiki/ThunderCats_%282011_TV_series%29