অনেককেই বলতে শোনা যায় যে “…আর বলেন না ভাই, লিনাক্সে কয়েকদিন ছিলাম, খুবই ভেজালের জিনিস, এত্ত কঠিন যে বহুত সমস্যা হয়। পরে আবার উইন্ডোজে ফেরত আসছি…“। এই “বহুত সমস্যাটা” আসলে কি? এতই যদি সমস্যা হয় তাহলে পৃথিবীর তাবৎ সার্ভারগুলো লিনাক্সে চলতনা। এমনকি খোদ মাইক্রোসফটও তাদের সার্ভার লিনাক্সে চালাতোনা। ভাবছেন ভুল পড়ছেন? নাহ, আপনি ঠিকই পড়েছেন, মাইক্রোসফট নিরাপত্তার জন্য তাদের নিজেদের সার্ভারের বদলে লিনাক্সের সার্ভার ব্যবহার করে! তাহলে চিন্তা করে বলুনতো আসলেই কি লিনাক্স খুবই সমস্যাময়?
- শুরুর কথা
বেশিরভাগ সাধারন কম্পিউটার ইউজারের উইন্ডোজ থেকে লিনাক্সে আসার পিছনে দুইটা কারন কাজ করে। এক নম্বর কারন হচ্ছে লিনাক্স ফ্রি, কিনতে বা ব্যবহার করতে কোন পয়সা খরচ হয়না, খালি যোগাড় করে এনে চালালেই হল, যেখানে প্রচুর টাকা খরচ করে উইন্ডোজ কিনতে হয়। দুই নম্বর কারন হচ্ছে এই ইউজাররা মনে করে লিনাক্স হচ্ছে উইন্ডোজের উন্নতর সংস্করন, ফলে তারা উইন্ডোজে যে জিনিস যেভাবে পেয়ে এসেছে লিনাক্সে সেই একই জিনিস ঠিক সেভাবেই পেতে চায়। সমস্যাটা এই দুই নম্বর কারনেই, কারন লিনাক্স কতটুকু উন্নত সেটা তারা বিচার করে উইন্ডোজের সাথে লিনাক্সের কতটুকু মিল আছে, তার উপর ভিত্তি করে। এই খানে তাদের নিরাশ হতে হয় কারন সহজ বাংলায় বললে বলতে হয় যে লিনাক্স মোটেও উইন্ডোজ নয়।
- লিনাক্স মোটেও উইন্ডোজ নয়
লিনাক্স মোটেও উইন্ডোজ মত না, বরং এটা দাম, পারফরম্যান্স, সিকিউরিটি সবদিক দিয়েই উইন্ডোজ থেকে একেবারেই ভিন্ন একটা অপারেটিং সিস্টেম। বেশিরভাগ সাধারন কম্পিউটার ইউজাররা এই ভিন্নতাকে তো বুঝতে চায়ইনা বরং উল্টো তারা এই ভিন্নতাকেই “বহুত সমস্যা”র জন্য দোষারোপ করে। তারা বুঝতে চায়না যে, কোন জিনিসের কপি কখনোই আসল জিনিসের চেয়ে উন্নত হতে পারেনা, বড়জোর সমান সমান হতে পারে। একটা জিনিসকে আরেকটা থেকে উন্নত হতে হলে অবশ্যই দুটোকে ভিন্ন হতে হবে।
উদাহরন হিসেবে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার আর ফায়ারফক্স ব্রাউজার দুটার কথা বলা যায়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আর বহুল ব্যবহৃত ব্রাউজারের নাম বললেই চলে আসে ফায়ারফক্সের কথা।ফায়ারফক্স হচ্ছে সেই ব্রাউজার যেটা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের দূর্গকে ঝড়ের গতিতে গুড়িয়ে দিয়েছে।এটা সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার থেকে ফায়ারফক্সের ভিন্নতার কারনে। একই উইন্ডোতে অনেকগুলো ট্যাবের অপশন, সুরক্ষিত সিকিউরিটি, সাবলীল ফাইন্ড অপশন, বিল্টইন সার্চবারসহ শতশত কাজের এডঅন অল্পদিনেই ফায়ারফক্সকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। ফায়ারফক্স যদি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের কপি-পেষ্ট কোন কিছু হত তবে কি কখনো এই সাফল্য সম্ভব হত? কখনোই না! লিনাক্স আর উইন্ডোজের জন্যও একই কথা খাটে। উইন্ডোজের ক্লোন না বলেই লিনাক্সের এত নাম ডাক। উইন্ডোজেরও ক্লোন আছে। কিন্তু উইন্ডোজের ক্লোন হিসেবে পরিচিত “রিয়েক্ট ওএস” এর নামই বা কয়জন শুনেছে?
তাই উইন্ডোজ থেকে লিনাক্সে আসা মানে ভিন্নতার এক নতুন উন্নত দুনিয়ায় আগমন। আপনি যদি এখনো এই লেখাটা পড়তে থাকেন তাহলে ভিন্নতার এই নতুন দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম!
- ভিন্নতার দুনিয়া
লিনাক্স উইন্ডোজ থেকে একটু আধটু নয় বরং পুরোপুরি ভিন্ন! এই ভিন্নতার ছোট্ট একটা উদাহরন দেই। টেকনিক্যাল জগতে “আউট-অফ-বক্স-কন্ডিশন” বেশ পরিচিত একটা শব্দ, এর মানে হচ্ছে মাত্র কেনা কোন প্রোডাক্টকে প্যাকেট থেকে বের করার পর পরই এর থেকে কি ধরনের সুবিধা আপনি পেতে পারেন। অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে বলা যায় একটা ওএস ফ্রেশ ইনস্টল করার পর সেটা দিয়ে কি কি করা সম্ভব। একজন উইন্ডোজ ব্যবহারকারি উইন্ডোজ ইন্সটল করেই যে যে সুবিধাগুলো পাবেন তা হল: ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, আউটলুক এক্সপ্রেস, লেখালেখি করার জন্য ওয়ার্ডপ্যাড এবং নোটপ্যাড (অফিস কিন্তু আলাদা ইন্সটল করতে হয়), আঁকাআকি করার জন্য এমএস পেইন্ট আর গান বা মুভি দেখতে মিডিয়া প্লেয়ার। অন্যদিকে একজন লিনাক্স ব্যবহারকারি প্রথমেই পাচ্ছেন উবুন্টু, ফেডোরা, ডেবিয়ান, সুসে, রেডহ্যাট ইত্যাদি প্রায় শ’খানেক ডিস্ট্র থেকে কোন “আউট-অফ-বক্স” ডিস্ট্র ব্যবহার করবেন সেই অপশন। যেকোন একটা ডিস্ট্র বেছে নেবার পর ইন্সটল করেই পাচ্ছেন ডিস্ট্র অনুযায়ী গ্নোম বা কেডিই বা এলএক্সডিই বা ফ্লাক্সবক্সের মত চোখ আটকে থাকার মত ডেস্কটপ, ওপেন অফিস বা কেঅফিসের মত অফিসের পুরো স্যুট, গেডিট বা কেট বা ইম্যাক্স বা ভাইমের মত টেক্সট এডিটর, ব্রাউজার হিসেবে ফায়ারফক্স বা অপেরা বা কংক্যুয়েরর, আঁকাআকি বা ছবি এডিট করার জন্য গিম্প আর গান বা মুভির জন্য সফটওয়্যার তো আছেই, সংগে থাকে কাজের আরো সফটওয়্যার।
সাধারনভাবেই একজন উইন্ডোজ ব্যবহারকারি এতগুলো অপশনের সাথে পরিচিত নন। ফলে তার মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক “আসলেই কি এত অপশনের দরকার আছে?”। আরো সহজ ভাবে বললে প্রশ্নটার মানে দাঁড়ায় “লিনাক্সের কি উইন্ডোজ থেকে ভিন্ন হওয়া খুব জরুরি?”। আসলেই তো, ভিন্ন হবার দরকার কি? কারন শেষমেশে সবই তো অপারেটিং সিস্টেম, এদের সবার কাজ একই, আর তা হল ব্যবহারকারিকে তার কম্পিউটারে বিভিন্ন এ্যাপ্লিকেশন চালাতে সাহায্য করা। তাহলে কেন এই ভিন্নতা? ভিন্ন নাহলে কত সহজেই তো ব্যবহার করতে পারা যেত!
ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে দেখি। ধরুন আপনি ক থেকে খ স্থানে যাবেন। কাজটা আপনি সহজেই করতে পারেন। আপনি একটা মোটরবাইক করে ক থেকে খ স্থানে চলে গেলেন। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন রাস্তায় কিন্তু বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ডিজাইনের মোটরবাইক চলে, সবগুলোর কাজই কিন্তু যাত্রী বহন করা, তাহলে ডিজাইন ভিন্ন কেন? আপনি হয়ত বলবেন ডিজাইন তো কেবল বাইরেই ভিন্ন, ভিতরের যন্ত্রপাতির ফাংশন তো সবগুলোর একই। কথা এক্কেবারে ঠিক! আচ্ছা আপনি কি খেয়াল করেছেন সবাই কিন্তু মোটরবাইক চালায় না, কেউ কেউ কিন্তু কারও চালায়। মোটরবাইক বা কার দুটোরই একই কাজ কিন্তু ডিজাইন থেকে শুরু করে ভিতরের যন্ত্রপাতির ফাংশন সবই কিন্তু আলাদা!
উইন্ডোজের এক ভার্সন থেকে আরেক ভার্সনে যাওয়া হচ্ছে একটা মোটরবাইক থেকে আরেকটাতে যাবার মত, তেমন একটা পার্থক্য নাই, যে আগেরটা ব্যবহার করতে পারে সে নতুনটা ভার্সনটাও ব্যবহার করতে পারবে। উইন্ডোজ থেকে লিনাক্সে আসা মানে মোটরবাইক থেকে কারে আসা, অর্থ্যাৎ অনেক পার্থক্য অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। এরা দুটোই ওএস/যানবাহন, এদের দুটোই হয়তো একই হার্ডওয়্যার/রাস্তা ব্যবহার করে, দুটোই হয়তো পিসিতে কোন এ্যাপ্লিকেশন রান করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার কাজ করে/আপনাকে ক থেকে খ স্থানে নিয়ে যাবে; কিন্তু এদের কাজের পদ্ধতি গোড়া থেকেই সম্পূর্ণ ভিন্ন।
উইন্ডোজ/মোটরবাইক কিন্তু ভাইরাস/চোরের কাছ থেকে ততক্ষন নিরাপদ না যতক্ষন না আপনি এন্টিভাইরাস/চাকায় তালা না লাগাচ্ছেন। লিনাক্সে/কারে আগে থেকেই কঠিন সুরক্ষা/লকসহ দরজা দেয়া থাকে, তাই কোন এন্টিভাইরাস/চাকায় তালা লাগেনা, ফলে লিনাক্স/কার সবসময় ভাইরাস/চোর থেকে নিরাপদ। লিনাক্স/কার ডিজাইন করা হয়েছে অনেক ব্যবহারকারি/যাত্রীর কথা মাথায় রেখে, যেখানে উইন্ডোজ/মোটরবাইক ডিজাইন করা হয়েছে মূলত একজন ব্যবহারকারি/যাত্রীর জন্য। দুটা সিস্টেমের কাজের ধরন ভিন্ন হলেও এরা কিন্তু আসলে একই কাজ সম্পন্ন করছে, সেটা হচ্ছে কম্পিউটার চালানো/পরিবহন করা।
তবে এটা ঠিক যে যখন আপনি মোটরবাইক আর কারের মধ্যে যান পরিবর্তন করবেন তখন অনেক কিছুই পাল্টায়না, যেমন দুটোকেই চালানোর জন্য জ্বালানী ভরতে হবে, দুটোর জন্যই একই ট্রফিক আইন মেনে চলতে হবে, মোড় নেবার আগে দুটোতেই ইন্ডিকেটরে সিগনাল দিতে হয়। আবার অনেক জিনিস পাল্টে যায়, যেমন কারের আরোহীদের হেলমেট পড়তে হয়না, মোটরবাইকের আরোহীদের সিটবেল্ট বাধতে হয়না; স্পিড বাড়াতে হলে কারের ড্রাইভারকে পা দিয়ে ফুট-প্যাডেল চাপতে হয় যেখানে মোটরবাইকের ড্রাইভারকে হাত দিয়ে হ্যান্ডেল ঘোরাতে হয়; মোড় নেবার সময় কারের ড্রাইভার কেবল স্টিয়ারিং ঘুরিয়েই মোড় নেয় যেখানে মোটরবাইকের ড্রাইভারকে একপাশে একটু কাত হয়ে এই একই কাজ করতে হয়।
এখন কোন মোটরবাইক আরোহী যদি কার চালাতে গিয়ে মোড় নেবার সময় কাত হয়ে মোড় নিতে যায় তবে কিন্তু সে খুব দ্রুত দুর্ঘটনায় পড়বে। মোটরবাইক চালানোর জ্ঞান দিয়ে কার চালানো অসম্ভব। ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটে যখন কোন উইন্ডোজ ব্যবহারকারি তার উইন্ডোজের জ্ঞান দিয়ে লিনাক্স আয়ত্ত্ব করতে যায়। লিনাক্সকে উইন্ডোজের মত একই কায়দায় চালানো সম্ভব নয় এটা বুঝতে পারার পরই উইন্ডোজ ব্যবহারকারিরা ঘোষনা দেয় যে “লিনাক্স এখনো ডেস্কটপের জন্য রেডি নয়”! কিন্তু দেখা যায় যে যার লিনাক্স বা উইন্ডোজ নিয়ে কোন ধারনা নেই তাকে লিনাক্সে কম্পিউটিং এর হাতেখড়ি দিলে সে কিন্তু খুব সহজেই লিনাক্সে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আসলে ‘ভিন্নতা’ জিনিসটা শেখার বিষয়, নতুন কোন কিছুতে অভ্যস্ত হতে হলে সেটাকে একদম শূণ্য থেকে শুরু করতে হয়।
শুধু মনে রাখতে হবে যে উইন্ডোজ আর লিনাক্স এক জিনিস না। এই ভিন্নতার বাধা অতিক্রম করতে হলে শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে। শূন্য থেকে শুরু করলে লিনাক্সের সংস্কৃতির সাথে অভ্যস্ত হওয়া কোন ব্যাপারই না। ও আচ্ছা ভালো কথা, আপনি কি জানেন যে অপারেটিং সিস্টেমগুলোর আলাদা আলাদা সংস্কৃতি আছে?
- অপারেটিং সিস্টেম সংস্কৃতি
উইন্ডোজের সংস্কৃতি পুরোটাই ক্রেতা-বিক্রেতা নির্ভর। একজন ব্যবহারকারিকে পয়সা খরচ করে সফটওয়্যার, ওয়ারেন্টি, সাপোর্ট ইত্যাদি কিনতে হয়। তাই একজন ব্যবহারকারি স্বাভাবিকভাবেই ঐ সফটওয়্যারের মধ্যে তার উপযোগী একটা নির্দিষ্ট লেভেলের ব্যবহারযোগ্যতা প্রত্যাশা করতেই পারে। তাছাড়া যেহেতু পয়সা দিয়ে কিনতে হচ্ছে তাই ঐ সফটওয়্যারের যেকোন টেকনিক্যাল সাপোর্ট তারা দাবী করতেই পারে। উইন্ডোজ সংস্কৃতিতে সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারিরা কম্পানির সাথে সরাসরি চুক্তিবদ্ধ থাকে এবং কম্পানি তাদের সব ধরনের সাহায্য করতে বাধ্য।
লিনাক্সে ব্যাপারটা অন্যরকম। এখানে সবাই একটা কমিউনিটির অংশ। এই কমিউনিটির সদস্যদের সফটওয়্যার কেনার কোন দরকার নাই, তারা বিনাপয়সায় সফটওয়্যার ডাউনলোড করে নেয়। তারা পয়সা দিয়ে টেকনিক্যাল সাপোর্ট কেনেনা বরং যেকোন টেকনিক্যাল সাহায্যের জন্য তারা কমিউনিটির অন্য সদস্যদের সাথে ফোরামের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। এক্ষেত্রে তাদের সম্পর্ক থাকে সত্যিকারের মানুষের সাথে, কোন কম্পানির সাথে না।
উইন্ডোজ ব্যবহারকারিরা লিনাক্সে এসে এই কমিউনিটির ব্যাপারটায় সমস্যায় পড়েন। কারন তারা সবসময় “চাহিবামাত্র” সাহায্য পেয়ে অভ্যস্ত, তাই দেখা যায় যে অনেকেই ফোরামে সাহায্য “প্রার্থনা” না করে “দাবী” করে বসে। তারপর সাথে সাথে সমাধান না পেলে “লিনাক্স ফালতু” বা “এখানে কারো সাহায্যের মনোভাব নাই” এসব বলে অভিযোগ করেন। তারা এটা বুঝতে চায়না যে তারা লিনাক্সে যে টেকনিক্যাল সাপোর্ট পাচ্ছে সেটা পুরোপুরি বিনাপয়সায়, যারা সাহায্য করছে এর মধ্যে তাদের কোন লাভ নেই, তারা এখানে সহৃদয়বান কিছু স্বেচ্ছাসেবক মাত্র যারা অন্যদের সাহায্য করার জন্য মুখিয়ে আছে। সাহায্য করতে তাদের কিছু সমসয় বেশি লাগতেই পারে সেজন্য অভিযোগ করাটা কি শোভা পায়? আরেকটা ব্যাপার হল, ফোরামে নিবন্ধন করা মানেই এই না যে আপনি শুধু সাহায্য নিবেনই দিবেননা।অন্যের সমস্যায় সাহায্য আপনাকেও করতে হবে। আর একে অপরকে সাহায্য করার এই মানসিকতাই কিন্তু লিনাক্সকে দিনে দিনে শক্তিশালী ও ব্যবহারবান্ধব করে তুলছে।
- ব্যবহারবান্ধব বা ইউজার-ফ্রেন্ডলিনেস
ব্যবহারবান্ধব আসলে কি? কোন সফটওয়্যারই কিন্তু জন্ম থেকেই ব্যবহারবান্ধব থাকেনা। ব্যবহার করতে করতে সেটা ব্যবহারবান্ধব হয়ে যায়। ধরুন কেউ সারা জীবন কেবল টেক্সট এডিটর ব্যবহার করে গেল। তার জন্য কিন্তু মাউসের চেয়ে বিভিন্ন কিবোর্ড শর্টকাট ব্যবহার করাটা বেশি সুবিধাজনক। কারন যেহেতু সে টেক্সট এডিটরে একজন এক্সপার্ট কিবোর্ড শর্টকাট ব্যবহারে তার কাজ অনেক বেশি সহজ হয়। তার জন্য টেক্সট এডিটরে কিবোর্ডের সাপোর্ট থাকাটাই হচ্ছে ইউজার-ফ্রেন্ডলিনেস। আবার যে টেক্সট এডিটর কালেভদ্রে ব্যবহার করে, তার জন্য কিবোর্ড শর্টকাট প্রয়োগ করা বেশ কঠিন কাজ, বরং তার কাছে মাউস দিয়ে কাজ করাটা সুবিধাজনক। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ইউজার-ফ্রেন্ডলিনেস আসলে একটা আপেক্ষিক বিষয়।
তাহলে ইউজার-ফ্রেন্ডলি সফটওয়্যার আসলে কি? সংজ্ঞানুসারে বলা যায় যে সফটওয়্যার ব্যবহার করতে একজন ব্যবহারকারির মোটামুটি লেভেলের জ্ঞান থাকলেই চলে এবং যেটা ব্যবহার করতে ঐ সফটওয়্যার সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়েনা, সেটাই ব্যবহারবান্ধব সফটওয়্যার। কিন্তু আসলে হওয়া উচিত যেটা ব্যবহারে ঝক্কি কম সেটাই ইউজার ফ্রেন্ডলি!
এবার আসুন উইন্ডোজ আর লিনাক্সের সামান্য দুটো টেক্সট এডিটর তুলনা করি। উইন্ডোজের নোট প্যাড তো সবার কাছেই পরিচিত, লিনাক্সের জন্য জনপ্রিয় একটা টেক্সট এডিটর হচ্ছে ভিম (Vim)। নোট প্যাড কোন লেখা কাট-পেস্ট করতে হলে Ctrl-X আর Ctrl-V ব্যবহার করতে হয়। একই কাজ ভিমে করতে গেলে ব্বহার করতে হবে “d” আর “p”। “d” আর “p” দিয়ে যে delete আর paste বোঝায় এটা বুঝতে কোন সমস্যা হবার কথা না কিন্তু আগে থেকে না জানলে কারো বোঝার উপায় নাই যে Ctrl-X আর Ctrl-V দিয়ে ডিলিট আর পেস্ট বোঝায়। কিন্তু কেউ বলেনা যে ভিম ইউজার-ফ্রেন্ডলি? অবাক ব্যাপার না! আসুন আরো একটু দেখি। কিবোর্ড ব্যবহার করে Ctrl-X দিয়ে কোন শব্দকে মুছে ফেলার নিয়ম কি? শব্দটার শুরুতে কার্সর নিয়ে Ctrl-Shift-Right চেপে আগে শব্দটা সিলেক্ট করতে হবে তারপর Ctrl-X চেপে কাট করতে হবে। ভিমে কিভাবে করবেন? শুধুমাত্র dw (Delete Word). Ctrl-X দিয়ে পাঁচটা শব্দ কিভাবে মুছবেন? প্রথমে প্রথম শব্দটার শুরুতে কার্সর নিতে হবে তারপর (Ctrl-Shift-Right)+(Ctrl-Shift-Right)+(Ctrl-Shift-Right)+(Ctrl-Shift-Right)+(Ctrl-Shift-Right)+( Ctrl-X)। আর ভিমের নিয়মটা কি? শুধু d5w।এখন বলুন তো কোনটা বেশি “ইউজার ফ্রেন্ডলি”?
লিনাক্স এককালে গিক শ্রেনীর লোকদের জন্য ব্যবহারবান্ধব ছিল বলা যায়। এখনো “লিনাক্স ইউজার” নাম শুনলেই অনেকের মনে ভেসে উঠে হলিউডি মুভির খোচা খোচা দাড়ির উস্কোখুস্কো চুলের মোটা চশমা পড়া কোন কম্পিউটার গিকের ছবি! লিনাক্সের সেইদিন আর নাই। এখন যে কেউ লিনাক্স ইন্সটল করে এর চেহারা দেখেই ব্যবহার শুরু করতে পারবে। এর গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস সম্পর্কে সোজা বাংলায় বললো বলতে হয় একেবারে “জলবৎ তরলং”! লিনাক্সের ইউজার ফ্রেন্ডলিনেসের আরেকটা উদাহরন দেই। উইন্ডোজে কোন প্রোগ্রাম, ধরুন মাল্টিমিডিয়ার জন্য বিখ্যাত ভিএলসি প্লেয়ার, ইন্সটল করতে হলে প্রথমে সেটাপ ফাইল জোগাড় করতে হয়, তারপর সেটা ওপেন করে একগাদা নেক্সট বাটন ক্লিক করে তারপর ইন্সটল করতে হয়। আর লিনাক্সে কি করতে হয়? সফটওয়্যার চ্যানেলে গিয়ে ভিএলসির পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে ইন্সটলের অপশনে ক্লিক করলেই কাজ শেষ! আরো সহজে করতে চান? তাহলে টার্মিনালে কেবল মাত্র একটি লাইন লিখুন: sudo apt-get install vlc, ব্যস আপনার কাজ শেষ, পুরো সফটওয়্যার ইন্সটল হয়ে আপনার কাজ করার জন্য রেডি হয়ে থাকবে! তাহলে বলুন কোথায় আপনার কষ্ট কম হচ্ছে? লিনাক্সে না উইন্ডোজে? এখন তাহলে কি বলবেন? লিনাক্স শেখাটা কষ্ট?
- লিনাক্স শিখতে কষ্ট?
একবার ভাবুনতো, যখন প্রথম উইন্ডোজ চালানো শুরু করেন তখন উইন্ডোজের পিছনে কতটুকু সময় দিতেন! লিনাক্স শিখতে কিন্তু আপনার অত সময় দেবার দরকার নেই, যেহেতু আপনার আগেই অন্য আরেকটা ওএস নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, সেহেতু কম্পিউটারের বেসিক জিনিস নিয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবেনা। আর লিনাক্সের ডেস্কটপগুলো ইদানিং এত দৃষ্টি নন্দন হয়েছে যে অনায়াসে ম্যাকিনটশের সাথে পাল্লা দিতে পারে, উইন্ডোজ তো পরের কথা। আর কমান্ড লাইনের কথা বলছেন, ভাবছেন একের পর এক কমান্ড দিয়ে কাজ করে যেতে হবে? তাহলে ওটাকে ভাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখুননা। দৈনন্দিন কাজের জন্য আপনি কমান্ড প্রম্পটকে ভুলে যেতে পারেন, এমনকি কিছু কিছু ডিস্ট্র ইন্সটল করার জন্য পর্যন্ত কমান্ডের কোন প্রয়োজন নেই। যদিও কমান্ড প্রম্পটই লিনাক্সের আসল সৌন্দর্য!
- শেষের কথা
গাড়ির সাথে তুলনা দিয়ে শুরু করেছিলাম, শেষও করছি গাড়ির সাথে তুলনা দিয়ে। উইন্ডোজ ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালানো, যেখানে আপনি পিছনে বসে থাকবেন আর ড্রাইভার আপনাকে গাড়ি চালিয়ে আপনাকে ঘোরাবে। আপনার নিজের গাড়ি অথচ আপনি জানেনই না কিভাবে সেটা চালাতে হয়। আর লিনাক্স ব্যবহার করা মানে হচ্ছে চাবি নিয়ে নিজেই ড্রাইভিং সিটে বসে পড়া। নিজের গাড়ি নিজের মত করে চালানো। লিনাক্স আপনাকে ড্রাইভিং উপভোগ করার স্বাদটা চেখে দেখার সুযোগ করে দেয়।
আমার কথা শেষ। এখনো লিনাক্সে সমস্যা? সমস্যাটা তাহলে কোথায় সেটা খুঁজে বের করাটা এবার আপনার পালা!
যে লেখাটা পড়ে আমি এই ছাইপাশ লিখতে উদ্বুদ্ধ হলাম সেটা পাওয়া যাবে এইখানে।
পূর্বে প্রকাশিতঃ
Lekha ta purota porlam. Besh bhalo laglo. Apni dekchi ashol jaiga gulo shothik bhabe tule dhorechen. Boltegele ami amar mathar bhitorer kotha gulo eikhane lekha dekhte pacchi. Ei odbhut manushikota ami o prottokkhyo korechi, ebong shob shomoi cheshta kore jate manushjon ke ekta Windows alternative er shathe porichay korano jai, tar por tader iccha. Je je shomossha bollen ta chara ar ekta jinish holo, manush e notun jinish nite chai na. Bole je "ja cholche ta to bhaloi cholche abar notun jinish ene ki hobe" . Dhorun keu GNU+Linux lagalo, tarpor dhorun kono ekta kaj shothik bhabe korte parlen na tokhon, "dhur ekta kicchu kora jacche na, Windows thakle 5 min a kaj hoea jeto".
Tao bhalo, ami ontoto pokkhe 3 jon bondhu ke GNU+Linux babohar korate shokkhom, ebong tader 2 jon ekhon motamuti GNU+Linux e babohar kore shorbokkhon. Kichu kichu lokjonder gyan diea onek bhul dharona katano geche. Dhire dhire hobe, ebong poriborton ta hocche.
আসলেই ব্যাপারটা এটা। লোকজন উইন্ডোজ প্রথম প্রথম চালাবার সময় যে সময়টুকু ব্যয় করত, লিনাক্স ব্যবহারের সময় তার ছিটেফোটাও দিতে চায়না। আর লিনাক্স নিয়ে ভীতি সবার মধ্যেই কাজ করে। তাই দেখা যায় নতুন কিছুতে আসতে সবার মধ্যেই একটা অনীহা কাজ করে।
আমি মাসখানেক হলো উবুন্টু ব্যবহার করছি। আমার কাছে মনে হয় ভিসতা বা সেভেনের চেয়ে উবুন্টু অনেক ভাল । আপনার এই লেখাটায় ভিম সম্পকের্ জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
উবুন্টু যে কত সহজ আর কত উন্নত সেটা ব্যবহার না করলে বোঝা যায় না। সেদিন এক পিসিতে উইন্ডোজ সেভেন চালাতে গিয়ে দেখি কাজের জিনিসগুলো হাতের কাছে পাচ্ছিনা, অথচ উবুন্টুতে কত সহজে সবকিছু এ্যাপ্লিকেশনে থাকে…
আমি পড়েছি উপর থেকে নীচ পর্যন্ত ।
ধন্যবাদ
আমি টেকি না। নিজ উৎসাহে কয়েকবার উবুন্টু ইন্সটল করেও পিছিয়ে এসেছি কেবলমাত্র সিটিসেল জুম ও লেক্সমার্ক জেড ৬৪৫ প্রিন্টার ইন্সটল করতে না পেরে।
সিটিসেল জুম কনফিগার করতে এই লেখাটি দেখুন। আর লেক্সমার্ক প্রিন্টার ইন্সটল করতে এই লেখাটি পড়ুন। আসলে উবুন্টু ব্যবহার করতে টেকি হওয়া লাগেনা। উইন্ডোজ ব্যবহার করতে কি টেকি হওয়া লাগে? কিন্তু উবুন্টু শিখতে একটু সময় তো দিতে হবে, যেমনটি দিয়েছিলেন প্রথম প্রথম উইন্ডোজ শেখার সময়। আর যে কোন সমস্যায় আমাদের প্রযুক্তিতে ঢুঁ মারতে ভুলবেননা।
নীল ভাইয়ার লিখা পড়ে ভাল লাগলো ।
onak valo laglo………….
thx
আমি উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করছি নিছক অভ্যাসবশত। লিনাক্স সম্পর্কে না জানার কারণেই বলা সঙ্গত। কিন্তু আমি উইন্ডোজে খুব বিরক্ত। কিছুদিন পর পর রিইন্সটল করতে হচ্ছে দোকানে নিয়ে গিয়ে। মূলত ভাইরাসের কারণে, নরটনের লাইসেন্সড কপি ইন্সটলড্ থাকা সত্ত্বেও। লিনাক্স সম্পর্কে ভীতি : নিজে নিজে ইন্সটল করতে, ব্যবহার করতে পারব কি না। লিনাক্সে কি ভাইরাসের ভয় একেবারেই নেই? অভ্র কিবোর্ড ইন্সটল করা যায়? বিজয় ২০০৩? (বিজয়ের লাইসেন্সড কপি আছে)। ঢাকায় কেউ আমার ল্যাপটপে লিনাক্স/উবুন্টু ইন্সটল করে দিয়ে প্রাথমিক ব্যবহারবিধি শিখিয়ে দেবেন এমন সহায়তা সম্ভব পাওয়া? জানাবেন প্লিজ। (–আলতাফ হোসেন) altaf_khokon@yahoo.com
আমি উবুন্টু ব্যবহার করছি কোন রকম অ্যান্টি ভাইরাস ছাড়াই। উইন্ডোজে ভাইরাস যেমন নিজে নিজে মাল্টিপ্লাই করে উবুন্টুতে ব্যপারটা ঠিক সেরকম না। আপনার হুকুম না পেলে উবুন্টু কোন ফাইল/প্রোগ্রাম চালাবে না। তবে আপনি নিজে যদি ভাইরাস ধরে এনে সেটাকে চালাবার জন্য উবুন্টুর সব গেট খুলে দেন এবং সেই ভাইরাস যদি লিনাক্সকে টার্গেট করে বানানো হয় তাহলে সমস্যা হবে। কিন্তু এই দুটো কাজ একসাথে ঘটার সম্ভাবনা খুবই নগন্য। এতই নগন্য যে আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
অভ্র ফনেটিক অবশ্যই উবুন্টুতে ইন্সটল করা যায়। তাছাড়া উবুন্টু ইন্সটল করলেই আপনি প্রভাত ও জাতীয় কিবোর্ড পেয়ে যাবেন। আপনার কাছে যে বিজয় আছে সেটা সম্ভবত উইন্ডোজের জন্য। সমস্যা হচ্ছে, উইন্ডোজ আর উবুন্টু – দুটোতে দু’রকম ভাবে প্রোগ্রাম চলে। উইন্ডোজে চলে উইন্ডোজের নিয়ম মেনে আর উবুন্টুতে চলে উবুন্টুর নিয়ম মেনে। তাই বিজয়ের সেই ভার্সনটা চলবেনা (সম্ভবত)।
উবুন্টু নিয়ে প্রাথমিক জ্ঞান পেতে চাইলে নিচের লিংকে দেখুন।
https://adnan.quaium.com/ubuntu
আপনি আমাদের মেইলিং লিস্টে যোগ দিয়ে সাহায্য চেয়ে মেইল করতে পারেন, সেক্ষেত্রে উৎসাহী অনেকেই আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমাদের মেইলিং লিস্টের ঠিকানা হচ্ছে https://lists.ubuntu.com/mailman/listinfo/ubuntu-bd
লেখাটা পরে নতুন করে অনুপ্রেরনা জাগলো উবুন্টু ব্যবহার করার । কিন্তু একটি বিষয় আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই আমি যখন উইন্ডোজ দিয়ে ডাটা পার করতে যাই তখন দেখি 14-15 মেগাবাইট পার সেকোন্ড ডাটা ট্রান্সফার স্পিড থাকে কিন্ড আমার একই কম্পিউটারে যখন উবুন্টু 12.04 ব্যবহার করি তখন ডাটা ট্রান্সফার স্পিড 600-700 কিলোবাইট করে পাই । এই সমস্যাটা কেন হয় ?
মজার ব্যাপার! আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো ছিল। আগে যখন উইন্ডোজ ব্যবহার করতাম তখন যে স্পিড পেতাম তার চেয়ে উবুন্টুতে ভালো স্পিড পেতাম। যার কারণে নেট ব্যবহার করলেও উবুন্টুতেই করতাম! 🙂
চমৎকার লেখা। আমি এক্স উইন্ডোজিয়ান, এবং উইন্ডোজ আমার কাছে বরং কঠিন লাগে
লেখাটা ভালো লেগেছে। ব্যবহার বান্ধব কিনা, অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে লিনাক্স একদম সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য অবশ্যই ব্যবহারবান্ধব! শেয়ার করে দিলাম টাইমলাইনে।