এক শেয়াল বেশ খোশমেজাজে বনের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় দেখলো যে একটা খোরগোশ তার ল্যাপটপে খুটখাট করে কী যেন করছে। কৌতুহলী শেয়াল খরগোশের কাছে এগিয়ে গেল। উঁকি দিয়ে দেখল যে খরগোশ কী সব যেন লিখে যাচ্ছে। শেয়াল খরগোশকে জিজ্ঞেস করল – ‘কি করছিসরে তুই?’
খরগোশ ল্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়েই বলল – ‘আমার থিসিস লিখছি।’
শেয়াল বলল – ‘কিসের উপর থিসিস লিখছিস? বিষয়বস্তু কি?’
খরগোশ ল্যাপটপে লিখতে লিখতে বলল – ‘আমার থিসিসের মূল বিষয় হচ্ছে খরগোশরা কিভাবে শেয়াল খায়।’
থিসিসের বিষয়বস্তু শুনে শেয়াল হতভম্ব হয়ে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল – ‘এ কী ধরণের গাঁজাখুরি থিসিস? কোন উজবুকও বিশ্বাস করবেনা যে খরগোশ শেয়াল খায়!’
এবার খরগোশ শেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল – ‘অবশ্যই খরগোশরা শেয়াল খায়। প্রমাণ চাও?’
মুচকি হাসি দিয়ে শেয়াল বলল – ‘অবশ্যই। ‘
খরগোশ ল্যাপটপ ছেড়ে উঠে বলল – ‘তাহলে আমার সাথে গুহায় চল। সব ড্যাটা ঐখানে আছে।’
শেয়ালও রাজি হয়ে গেল। তারপর শেয়াল ও খরগোশ দু’জনে খরগোশের গুহার ভেতরে গেল। কিছুক্ষণ পর খরগোশটি গুহা থেকে একা বের হয়ে এল এবং আগের মতই তার ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
কিছুক্ষণ পর ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিল এক নেকড়ে। খরগোশকে ল্যাপটপের ব্যস্তভাবে কাজ করতে দেখে সেও থেমে গিয়ে জিজ্ঞেস করল – ‘কীরে কি করছিস?’।
খরগোশ ব্যস্তসমস্ত হয়ে উত্তর দিল – ‘খরগোশরা কিভাবে নেকড়ে খায় সেটা নিয়ে একটা থিসিস লিখছি।’
শুনে নেকড়ে অট্টহাসিতে পেটে পড়ল। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল – ‘এইসব হাগড়পাগড় থিসিস কোনো সুপারভাইজার অ্যাক্সেপ্ট করবেনা।’
খরগোশ বেশ জোর দিয়ে বলল – ‘মোটেও হাগড়পাগড় কিছু না। তুমি দেখতে চাও? আমার কাছে তথ্য-প্রমাণ সবই আছে, দেখতে চাইলে আমার সাথে আমার গুহায় যেতে হবে।’
নেকড়ে রাজি হল। খরগোশ ও নেকড়ে দু’জনেই গুহার ভেতর গেল। কিছুক্ষণ পর খরগোশ একলা বের হয়ে এসে আবার তার ল্যাপটপে খুটখাট করে তার থিসিস লিখে চলল।
আরো কিছুক্ষণ পর আরেকটা খরগোশ যাচ্ছিল সেই একই পথ দিয়ে। ল্যাপটপে বুঁদ হয়ে থাকা খরগোশটিকে দেখে দ্বিতীয় খরগোশটি এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল – ‘কি লিখছ তুমি?’
প্রথম খরগোশটি বলল – ‘খরগোশরা কিভাবে শেয়াল আর নেকড়ে খায় সেটার উপর থিসিস লিখছি।’
দ্বিতীয় খরগোশটি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর জিজ্ঞেস করল – ‘এটা কি করে সম্ভব?’
প্রথম খরগোশটি বলল – ‘খুব সম্ভব। আমার গুহায় চল, তাহলেই সবকিছু দেখতে পাবে।’
দ্বিতীয় খরগোশটি রাজি হয়ে প্রথম খরগোশটির পেছন পেছন তার গুহায় গেল। গুহায় গিয়ে তো দ্বিতীয় খরগোশের চোখ ছানাবড়া। সে দেখলো গুহার এক কোণায় শেয়ালের হাড়ের স্তুপ, আরেক কোণায় নেকড়ের হাড়ের স্তুপ হয়ে আছে। দুই হাড়ের স্তুপের মাঝে বসে এক সিংহ দাঁত খোঁচাচ্ছে আর ঢেঁকুড় তুলছে!
এই গল্পের নীতিকথাঃ
তুমি কি বিষয়ে থিসিস করছ সেটা মুখ্য নয়, কি উপায়ে তুমি উপাত্ত সংগ্রহ করছ সেটাও মুখ্য নয়। মূল ব্যাপার হচ্ছে থিসিস সুপার ভাইজার হিসেবে তুমি কাকে নিয়েছ?
খরগোশের থিসিস। দারুন লেখা! আরও থিসিস লিখে যান।
😀
I will take care of the moral in future 😉
খরগোশের থিসিস যেন নতুন ঈশপের লেখা , শেষে আবার নীতিকথাও রয়েছে । আমার দুই ছেলেকে দেখালাম । ওরা লেখাটা পড়ে আনন্দিত ও উত্তেজিত হয়ে খুব নেচে নিল আর খুব হৈ – হৈ করে নিল । একজন সপ্তম , অন্যজন নবম শ্রেণীতে পড়ে । আমাদের কচি ঈশপকে অভিনন্দন । চালিয়ে যান দাদা । আপনার হাত সোনা দিয়ে বাঁধানো হোক । আপনার কিছু কিছু লেখা আগে http://www.linux.org.bd তে পড়েছি । আচ্ছা ঐ সাইটটার কি হোল ? আর আপনার অত সুন্দর অভ্রনীল নামটা ছাড়লেন কেন ? আমার বড় ছেলের নাম আকাশনীল আর ছোটোটা অম্লাণকুসুম । এই জন্যই আপনার নামটা আমার মনে আছে । আমাদের কলকাতায় উবুন্টু ভিত্তিক “বৈশাখী লিনাক্স” আছে । বাংলাদেশেরও নিশ্চয়ই আছে । তার নাম কি ? কোথায় পাবো তা’রে ?
ইয়ে … গল্প কিন্তু আমার লেখা নয়, অনেক আগে কোথাও পড়েছিলাম বা শুনেছিলাম। নিজের থিসিস করতে গিয়ে আবছা মনে পড়ে গেল। সেই আবছাটাকেই ঘষে গাঢ় করে দিলাম। নিজের থিসিস লেখার সময় মেজাজ সব সময় খটমটে হয়ে থাকত। সেজন্যই এসব লিখে মন হালকা করতাম! 🙂 লেখাটা পড়ে আপনাদের ভাল লেগেছে শুনে আমারও বড় ভাল লাগল। 🙂
http://www.linux.org.bd সাইটটা কারিগরি কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। কবে চালু হবে জানা নেই! 🙁
নামটা এখনো আছে। “আমাদের প্রযুক্তি” আর “সচলায়তন” এ ঐ নামেই লিখি। আপনার বড় ছেলের নাম দেখি আমার নামেরই উনিশ-বিশ 😛
বাংলাদেশে ছিল দুটো ছিল – “হৈমন্তি” আর “রয়েল বেঙ্গল লিনাক্স”। বর্তমানে উৎসাহী লোকবলের অভাবে আমরা মূল উবুন্টু দিয়েই কাজ চালাচ্ছি। 🙁