লিনাক্সভ্রান্তি-২: লিনাক্সের বদন-সুরৎ অতিশয় খটর-মটর

আমার অভিজ্ঞতা বলে যে লিনাক্স শব্দটার সাথে চার ধরনের মানুষ জড়িত থাকে – যারা কখনো লিনাক্সের নাম শুনেননি, যারা লিনাক্সকে ভয়াবহ ভালবাসেন, যারা লিনাক্স ব্যবহার করতে ভয় পান এবং যারা লিনাক্স নিয়ে উল্টোপাল্টা অমূলক কথা বলে বেড়ান। পয়লা দু’দলকে নিয়ে কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু শেষের দু’দল একটির সাথে আরেকটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। লিনাক্স নিয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণার উৎপত্তি সাধারণত শেষের এ দু’দল থেকেই ঘটে থাকে। এসব ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে লিনাক্স শব্দটি শুনলেই উল্টোদিকে দৌড় দেবার ধান্দায় থাকেন। তাই ভাবলাম এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে একহাত দেখে নেবার জন্য ধাপে ধাপে একটা সিরিজ বের করা দরকার। সেই ভাবনারই একটি ছোটখাট ফসল “লিনাক্সভ্রান্তি” সিরিজ। আমি চেষ্টা করব “লিনাক্সভ্রান্তি” সিরিজটিতে লিনাক্স নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে দূর করতে, যাতে করে লোকজন উল্টোদিকে না দৌড়ে অন্তত ঠিক দিকে দৌড়তে পারে। আর এ সিরিজটিতে “লিনাক্স” বলতে সামগ্রিকভাবে “উবুন্টু”কেই ধরা হচ্ছে/হবে।


Continue reading লিনাক্সভ্রান্তি-২: লিনাক্সের বদন-সুরৎ অতিশয় খটর-মটর

লিনাক্সভ্রান্তি-১: লিনাক্স ব্যবহার অতিশয় কঠিন

আমার অভিজ্ঞতা বলে যে লিনাক্স শব্দটার সাথে চার ধরনের মানুষ জড়িত থাকে – যারা কখনো লিনাক্সের নাম শুনেননি, যারা লিনাক্সকে ভয়াবহ ভালবাসেন, যারা লিনাক্স ব্যবহার করতে ভয় পান এবং যারা লিনাক্স নিয়ে উল্টোপাল্টা অমূলক কথা বলে বেড়ান। পয়লা দু’দলকে নিয়ে কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু শেষের দু’দল একটির সাথে আরেকটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। লিনাক্স নিয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণার উৎপত্তি সাধারণত শেষের এ দু’দল থেকেই ঘটে থাকে। এসব ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে লিনাক্স শব্দটি শুনলেই উল্টোদিকে দৌড় দেবার ধান্দায় থাকেন। তাই ভাবলাম এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে একহাত দেখে নেবার জন্য ধাপে ধাপে একটা সিরিজ বের করা দরকার। সেই ভাবনারই একটি ছোটখাট ফসল “লিনাক্সভ্রান্তি” সিরিজ। আমি চেষ্টা করব “লিনাক্সভ্রান্তি” সিরিজটিতে লিনাক্স নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে দূর করতে, যাতে করে লোকজন উল্টোদিকে না দৌড়ে অন্তত ঠিক দিকে দৌড়তে পারে। আর এ সিরিজটিতে “লিনাক্স” বলতে সামগ্রিকভাবে “উবুন্টু”কেই ধরা হচ্ছে/হবে।


অনেকেই বলে থাকেন যে লিনাক্স ব্যবহার খুব কঠিন। কিন্তু যখনই কাউকে জিজ্ঞেস করি যে লিনাক্স ব্যবহার কেন কঠিন – তখন আর কেউ সুস্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেনা। গাঁইগুঁই করে যে জিনিসটি শেষমেষ বেরিয়ে আসে সেটা হল – “লিনাক্স দেখতে জানি কেমুন কেমুন লাগে”! আরো সহজ করে বললে, লিনাক্স দেখতে কিংবা ব্যবহার পদ্ধতি উইন্ডোজের মত নয়। একটা অপারেটিং সিস্টেম দেখতে বা ব্যবহার পদ্ধতি আরেকটির মত নয় বলে অপারেটিং সিস্টেমটি কঠিন – ব্যপারটা যেন কেমন হয়ে গেল না! চার চাকার টয়োটার চেহারা বা ব্যবহার পদ্ধতি দুই চাকার হোন্ডার চেয়ে আলাদা হবে সেটাই তো স্বাভাবিক (যদিও দুটো দিয়েই যাতায়াত করা সম্ভব)। বরং এখানে যে ফ্যাক্টরটি কাজ করছে সেটা হল “অনভ্যস্ততা”। দু’চাকায় অভ্যস্ত চালককে চার চাকা চালাতে দিলে অনভ্যস্ততার কারণে প্রথম প্রথম তার একটু “কেমুন কেমুন” লাগবে। দিন কয়েক পরে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে সবই ঠিক!

একসময়কার ভয়ালদর্শন লিনাক্স এখন রূপে-লাবন্যে অনেক কমনীয় (রমনীয়ও বলা যেতে পারে)। কিবোর্ড-মাউস দিয়েই লিনাক্সে সব কাজ করা যায়। মাউস ক্লিক করেই কোন প্রোগ্রামকে ক্লোজ-মিনিমাইজ-ম্যাক্সিমাইজ করা হয়, মাউস দিয়ে টিপেই বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন খোলা-পরিচালনা-বন্ধ করা হয়, কাজের সুবিধার জন্য সমস্ত অ্যাপ্লিকেশনকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিন্যস্ত করা থাকে, রয়েছে আইকন ও মেনুবারের ব্যবহার, ফাইল ম্যানেজ করার জন্য রয়েছে ফাইল ব্রাউজার। তাছাড়া উবুন্টু ইন্সটল করলেই সাধারণ একজন ব্যবহারকারির প্রয়োজনীয় সমস্ত সফটওয়্যার; যেমন – সম্পূর্ণ অফিস স্যুট, বিট টরেন্ট ক্লায়েন্ট, চ্যাট ক্লায়েন্ট, ইমেইল ক্লায়েন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজার (ফায়ারফক্স), সোশ্যাল সাইট (ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি) ম্যানেজার, মাল্টিমিডিয়া প্লেয়ার, সিডি/ডিভিডি বার্নার, ফটোম্যানেজার, আঁকাআঁকি করার সফটওয়্যার, পিডিএফ রিডারসহ আরো অনেক কিছু ইন্সটল হয়ে যায়। অর্থাৎ একজন গড়পরতা সাধারণ ব্যবহারকারীকে কেবল মাত্র উবুন্টু ইন্সটল করলেই হল – সাথে সাথেই সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহ তার সামনে পুরো সিস্টেম হাজির, আলাদা আলাদা করে তেমন কিছুই আর ইন্সটল করতে হয়না। হিসেব করলেতো দেখা যায় উবুন্টু বরং ব্যবহার করা সহজ, ব্যবহারকারীর অনেকটুকু ঝামেলা সে শুরুতেই কমিয়ে দিচ্ছে!

আমি ব্যক্তিগতভাবে সকল কাজেই উবুন্টু ব্যবহার করি। ইন্টারনেট ব্রাউজিং থেকে শুরু করে অফিস ডকুমেন্ট তৈরি, কিংবা গান শোনা থেকে শুরু করে ম্যাটল্যাবে সিমুলেশন করা – সবই করি উবুন্টুতে। দীর্ঘদিনের অনভ্যস্ততার কারণে উইন্ডোজের সামনে বসলে আমি উসখুস করতে থাকি, কারণ কাজের জিনিস কোনটাই হাতের কাছে পাইনা। একজন উইন্ডোজ ব্যবহারকারী যখন নতুন উবুন্টু ব্যবহার করতে আসেন তারও এই একই সমস্যাটা দেখা দেয়। এ সমস্যাকে তাই “কঠিন” না বলে বরং “অনভ্যস্ততা” বলাটাই বেশি মানানসই। আর মানুষ যে অভ্যাসের দাস সেটা কে না জানে! উবুন্টুতে অভ্যস্ত হওয়াটাও তাই কারো পক্ষেই অসম্ভব কিছু নয়। উবুন্টুর মোহনীয় রূপ আর সাবলীল ব্যবহারবান্ধবতার কারণে এই অসম্ভবের সম্ভব হবার সময়কালও কিন্তু অনেকটুকু কম হয়।

মোদ্দাকথা “ব্যবহার করতে কঠিন” – কথাটা অন্যের কাছ থেকে শুনে মেনে না নিয়ে বরং নিজেই একটু পরখ করে দেখুননা। এই পরখটুকু করতে উবুন্টু ইন্সটলও করা লাগবেনা, কেবল সিডি ইমেজ ডাউনলোড করে সেটা থেকেই লাইভ বুট করতে পারবেন। আপনার কম্পিউটারের কোন ফাইলে এতটুকু আচঁড়ও পড়বেনা! তারপর নিজেই সিদ্ধান্ত নিন, মাউস টেপার জ্ঞান সম্বল করে উবুন্টু (কিংবা লিনাক্স) ব্যবহার কতটুকু কঠিন!


পূর্বে প্রকাশিতঃ