আমার অভিজ্ঞতা বলে যে লিনাক্স শব্দটার সাথে চার ধরনের মানুষ জড়িত থাকে – যারা কখনো লিনাক্সের নাম শুনেননি, যারা লিনাক্সকে ভয়াবহ ভালবাসেন, যারা লিনাক্স ব্যবহার করতে ভয় পান এবং যারা লিনাক্স নিয়ে উল্টোপাল্টা অমূলক কথা বলে বেড়ান। পয়লা দু’দলকে নিয়ে কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু শেষের দু’দল একটির সাথে আরেকটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। লিনাক্স নিয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণার উৎপত্তি সাধারণত শেষের এ দু’দল থেকেই ঘটে থাকে। এসব ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে লিনাক্স শব্দটি শুনলেই উল্টোদিকে দৌড় দেবার ধান্দায় থাকেন। তাই ভাবলাম এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে একহাত দেখে নেবার জন্য ধাপে ধাপে একটা সিরিজ বের করা দরকার। সেই ভাবনারই একটি ছোটখাট ফসল “লিনাক্সভ্রান্তি” সিরিজ। আমি চেষ্টা করব “লিনাক্সভ্রান্তি” সিরিজটিতে লিনাক্স নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে দূর করতে, যাতে করে লোকজন উল্টোদিকে না দৌড়ে অন্তত ঠিক দিকে দৌড়তে পারে। আর এ সিরিজটিতে “লিনাক্স” বলতে সামগ্রিকভাবে “উবুন্টু”কেই ধরা হচ্ছে/হবে।
আমি মোটামুটি বাজি রেখে বলতে পারি যে ‘লিনাক্স’ – শব্দটা শুনলেই বেশিরভাগ মানুষজনের মাথায় বাই ডিফল্ট যেই দৃশ্যটা খেলা করে সেটা হল – কুচকুচে কালো স্ক্রিনের সামনে একজন উশকোখুষকো চুল-দাঁড়িওয়ালা লোক বিরস বদনে বসে কিবোর্ডে খটর-মটর করে টাইপ করে যাচ্ছে আর সাথে সাথে সেই কালো স্ক্রিনে বিভিন্ন দুর্বোধ্য কমান্ড লেখা হয়ে যাচ্ছে। স্ক্রিনে কোন আইকন নেই, কেবল কঠিন কঠিন কমান্ড – রসকষহীন এই দৃশ্যটা চিন্তা করলেই যে কারো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে (অন্যদের দোষ দেইনা, আমার নিজেরও গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে)। ‘এই দৃশ্য’টা লিনাক্সের সাথে এমনভাবে খাপেখাপে আটকে গেছে যে হলিউডের মুভিগুলোতেও যখন হ্যাকিং-ফ্যাকিং টাইপের উচ্চমার্গীয় জিনিস দেখায়, তখন সেখানেও কালো স্ক্রিনে গাদা গাদা লিনাক্সের কমান্ডের খেলা দেখানো হয়। এসব দেখে যে কারো মনে গেঁথে যাওয়াটাই স্বাভাবিক যে খটর-মটর খোমার লিনাক্সের সাথে কমান্ড-টমান্ড আর কালো স্ক্রিনের মধুর সম্পর্ক! এখন আমি যদি বলি যে লিনাক্সের চেহারা শুধু কালো না বরং সে দুনিয়ার আপামর রং নিয়ে সাজুগুজু করতে পারে, আর লিনাক্সের বদনসুরৎ যে শুধু রসেকষেই টইটম্বুর তা-ই নয় বরং এমনভাবে রসালো যা কী না আপনি কল্পনাও করতে পারবেননা – তাহলে কী বলবেন? ভড়কে গেলেন? হে হে হে … আপাতত কিছু বলার দরকার নেই, শুধু এই লেখাটা পড়তে থাকুন।
এককালে আসলেই লিনাক্সের চেহারা বেশ খটমটে ছিল – কিন্তু জন্মের বিশ বছর পর কোটি কোটি ডেভেলপারের হাতে মেকআপ খেতে খেতে লিনাক্সের চেহারা সুরৎ এখন অতিশয় কমনীয় (এমনকি রমনীয়ও বলা যায়)! এখন অনায়াসেই মাউস দিয়ে টেপাটেপি করে কাজ করা যায়, রয়েছে চমৎকার সব থিম, দারুণ দারুণ সব ইফেক্টের ছড়াছড়ি। মোদ্দাকথা লিনাক্সের এই নজরকাড়া রূপে যে কেউ বারবার ফিরে তাকাতে বাধ্য। প্রশ্ন করতেই পারেন যে ‘নজরকাড়া’টা কতটুকু নজরকাড়া? তাহলে নীচে উবুন্টুর নতুন রিলিজের (১১.০৪ – ন্যাটি নারহোয়াল) কয়েকটি স্ক্রিনশট দেখুনঃ (ছবিগুলো বড় করে দেখতে ছবিগুলোতে ক্লিক করুন)
মন ভরেনি? তাহলে আসুন আমরা আরো সুন্দর আরো রূপের আঁধার কুবুন্টুর নতুন রিলিজের (১১.০৪ – ন্যাটি নারহোয়াল) কয়েকটা স্ক্রিনশট দেখিঃ (ছবিগুলো বড় করে দেখতে ছবিগুলোতে ক্লিক করুন)
মন ভরেছে? এতো গেল ডিফল্ট চেহারা সুরৎ। ইচ্ছা করলে এই চেহারাকেও পাল্টে ফেলা যায়। কতটুকু পাল্টে ফেলা যায়? এটাই ভাবছেন তাইনা? ব্যবহারকারীরা নিজেদের উবুন্টু/কুবুন্টু ডেস্কটপের চেহারা কেমন করতে পারে তার একটা ছোটখাট শোডাউন দিলাম নীচে। নীচে নেট থেকে সংগৃহীত কয়েকজন কুবুন্টু ব্যবহারকারীর ডেস্কটপের কিছু নমুনা দেখুন। (ছবিগুলো বড় করে দেখতে ছবিগুলোতে ক্লিক করুন)
এবার উবুন্টুর পালা। চলুন দেখি তাহলে একেকজন উবুন্টু ব্যবহারকারী তাদের ডেস্কটপকে কী রূপে সাজিয়েছেন।
কী! চমকে গেলেন? ভাবছেন লিনাক্সের এমন চেহারা হয় নাকি? তাহলে এবার আসল গুমড় ফাঁক করে দেই – এইগুলা কিছুই না। আমি বর্তমানে ব্যবহার করছি ল্যুসিড লিংক্স (উবুন্টু ১০.০৪)। আমি নিজে সাদাসিধা মানুষ, কম্পিউটারটাও তাই সেরকম সাদাসিধা – যেকারণে উবুন্টুতে উড়াধুড়া ইফেক্ট খুব একটা পছন্দও করিনা ব্যবহারও করা হয়না। তো আমার সাদাসিধা কম্পিউটারের কয়েকটা স্ক্রিনশট দেখুনঃ (ছবিগুলো বড় করে দেখতে ছবিগুলোতে ক্লিক করুন)
আপনার এতদিনের শুনে আসা খটর-মটর লিনাক্সের চেহারার সাথে তো উপরের ছবিগুলোর কোনও মিল নেই – তাইনা! আসলে অপারেটিং সিস্টেমের চেহারা সুরতের সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম। কমান্ড-টমান্ড দিয়ে কম্পিউটার চালানোর প্রক্রিয়া বেশিরভাগ মানুষকে ভয় পাইয়ে দিলেও অনেকেই কিন্তু ওটাতেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আবার ঝাকানাকা গ্রাফিকাল ইন্টাফেস সিংহভাগ ব্যবহারকারীকে মুগ্ধ করলেও রিসোর্স বেশি লাগে বলে অনেকেই ওসবকে পছন্দ করেনা। লিনাক্স এই দু’ধরনের ব্যবহারকারীকেই সুবিধা দেয়। কমান্ডলাইন থেকে শুরু করে উড়াধুড়া বাক্স ইফেক্ট, সিলিন্ডার ইফেক্ট, মায় ডেস্কটপে আগুন, বরফ, বৃষ্টি, পানি – সব কিছুই সম্ভব এখানে। বছর দুয়েক আগে যখন জন্টি জ্যাকলোপ (উবুন্টু ৯.০৪) ব্যবহার করতাম তখন ডেস্কটপের একটা ভিডিওশট নিয়েছিলাম, ওটা দিয়ে দিলাম নীচে, দেখুন কত কী করা সম্ভব!
মনে আছে আমি বলেছিলাম যে আমার কম্পিউটার খুব সাদাসিধা? জন্টি জ্যাকলোপ যখন ব্যবহার করতাম তখনও একই রকম সাদাসিধাই ছিল। উপরের ভিডিওতে তাই সাদাসিধে চেহারাটাই ধরা পড়েছে। যদি হার্ডকোর ইফেক্টওয়ালা উবুন্টু কম্পিউটারের বদন সুরৎ দেখতে চান তাহলে নিচের ভিডিও লিংক তিনটাতে একটু ঢুঁ মারুন। অবশ্য ইউটিউব বা গুগলে সার্চ করলে এরকম ভুরি ভুরি নজির দেখবেন।
| ভিডিও লিংক – ১ | ভিডিও লিংক – ২ | ভিডিও লিংক – ৩ |
এইবার চট করে বলুন দেখি – লিনাক্সের লাবন্যময় চেহারা নিয়ে আপনার আর কতটুকু সন্দেহ আছে?
পূর্বে প্রকাশিতঃ
আপনি দেখি ডকি ব্যবহার করেন। ডকি আমারও প্রিয়। তবে এখন ব্যবহার করছি AWN. আমার ডেস্কটপ তো আরও সিম্পল। উপরের প্যানেলও নাই। মানে expand এ টিক তুলে দিয়ে ডানে সরিয়ে অটো হাইড করে দিছি! 😀
আচ্ছা, ডকিতে কি Notification area আর Indicator applet যোগ করা যায়?? এভান্টের চেয়ে আমার ডকিই অনেক ভাল লাগে!
আমি কিন্তু ডকি ব্যবহার করিনা, এটা গ্নোম-ডু। ল্যুসিড ইন্সটল করার সময়ই ওটা ইন্সটল করেছিলাম। গ্নোম-ডু এত ভাল লাগে যে ডেভেলপমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবার পরও ব্যবহার করছি!
আসলেই সুন্দর লেখা হয়েছে প্লাস দিলাম 🙂
ডকি থেকে কায়রো ডক টাই আমার বেশি ভাল লাগে