কোরবানীর ঈদ
দ্বিতীয়বারের মত দেশের বাইরে ঈদ করলাম। দেশের বাইরে ঈদ করার ঝামেলা একটাই, ঈদ-ঈদ ভাবটা কোনমতেই আসেনা। সাদামাটা একটা দিন, আশেপাশের সবাই যার যার মত কাজে যাচ্ছে মাঝখানে কেবল আমরা কয়েকজন ঈদের নামায পড়ার জন্য বের হয়েছি। সারা জীবন যেইখানে হইহুল্লোড় করে ঈদ করে অভ্যাস সেইখানে এইরকম ম্যাদামারা নির্জীব ঈদ পালন করাই বিরক্তিকর। দেশের ফেলে আসা মুখগুলোর কথা মনে পড়ে, পুরোনো ঈদ্গুলোর কথা মনে পড়ে, মনটা বিরক্তিতে তেতো হয়ে আসে এম্নিতেই।
চুল কাটা
দেশ ছাড়ার পর এই প্রথম চুল কাটাতে গেলাম। যেটাতে চুল কাটাতে গেলাম সেটা আসলে চুল কাটাবার স্কুল, সোজা কথায় নাপিত তৈরির পাঠশালা। এই খানে ভবিষ্যতের নাপিতেরা চুল কাটার তালিম নেয়। এই পাঠশালায় যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য এইটা বেশ সস্তা, নয় ইউরোতে চুল কাটানো যায়, যেখানে অন্য সবখানে লাগে মিনিমাম পচিশ ইউরো। নাপিতের দোকানে ছেলে মেয়ে বাচ্চা বুড়ো কোন ভেদাভেদ নাই- সবাই এইখানে কাস্টমার।
নাপিত-নাপিতানী সবাই নিজের নিজের কাজ করে যাচ্ছে। আমার সাথে যে কয়জন লোক ছিলো সবাই কে দেখলাম একজন করে নাপিতানী এসে নিয়ে যাচ্ছে চুল কাটাবার জন্য। আমিও বসে আছি একজন নাপিতানির জন্য। একসময় আমার ডাক পড়ল, তবে ভাগ্যে নাপিতানী পড়লোনা, কার্লোস নামের এক নাপিত পড়লো। সে হাসি মুখে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল যে আজকে সে আমার নাপিত। কার্লোসের একটা ছোটখাট বর্ণনা দেয়া উচিত। হাইটে ছোটখাট এই শ্বেতাংগ ছেলের কান এবং ঠোঁট ফুট করা এবং সেই ফুটো থেকে বেষ কয়েক ধরনের অলংকার বের হয়ে আছে। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে তার চুলের স্টাইল। একই মাথায় সে দুই ধরনের স্টাইল করে বসে আছে। পুরো মাথার চুলকে দুই ভাগে ভাগ করে সে ডান পাশে এক ডিজাইন করেছে আর বাম পাশে আরেক ডিজাইন। ডান পাশ থেকে দেখলে তাকে মনে হয় মাথায় “মুরগীর ঝুঁটি” কাট আর বাম পাশ থেকে দেখলে মনে হয় বাটি ছাঁট! একেবারে টুইন-ওয়ান যাকে বলে। তবে মাথায় চুলের গোছা যেমনই হোক ছেলে চুল কাটে ভালো।
নিউইয়ার
পশ্চিমা দেশগুলোতে নিউইয়ার একটা কালচারাল ইভেন্টের চেয়েও বড় কিছু। থার্টি ফার্স্ট নাইটে এদের নিউইয়ারের আসল উৎসবটা চোখে পড়ে। পুরো ডিসেম্বর জুড়ে চলে ক্রিস্মাস আর নিউ ইয়ারের প্রস্তুতি। চায়না টাউন বিভিন্ন ধরনের আতশবাজীতে ভরে যায়। আতশবাজী কেনার ধুম পড়ে যায় সারা দেশে। অর্থনৈতিক মন্দার এই বাজে সময়েও কেবল মাত্র নেদারল্যান্ডসে থার্টি ফার্স্টে পোড়ানোর জন্য আতশবাজী বিক্রি হয়েছে প্রায় ছেষট্টি মিলিয়ন ইউরোর যেখানে আগে বছর অর্থাৎ ২০০৭ এ বিক্রির পরিমান ছিলো ষাট মিলিয়ন ইউরো!
থার্টি ফার্স্ট নাইটে আমাদের দাওয়াত ছিলো জুয়ারের বাসায়। দাওয়াত বলে দাওয়াত, একেবারে এলাহী খাওয়া দাওয়া। আম দিয়ে রাঁধা মুরগীর তরকারী থেকে শুরু করে ক্যাংগারুর মাংসের পুরি কোন কিছুই বাদ যায়নাই! খাবার উদ্ভট হলেও খেতে ভালো লাগতো যদি এরা লবন ঠিকমত দিত। এরা আবার লবন খায়না বললেই চলে! টেবিল ভর্তি লোভনীয় সব খাবার কিন্তু সবগুলাতে লবন কম- কেমন লাগে!
আতশবাজী পোড়ানো দেখলাম এবং দেখে শিহরিত হলাম! আতশবাজী যে কেমন হতে পারে সেটা এই প্রথম দেখলাম। কিছু কিছু বাজী আবার তিন চার ধাপে ফুটে। অনেকে আবার ফানুশ বানিয়ে উড়াচ্ছে। চারদিকে পুরোপুরি উৎসব। প্রথমে আতশবাজী পোড়ানো দেখতে স্ক্যাভেনিংখ (হেগ শহরের বীচের নাম) যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু জুয়ারের বিশাল খাবার দাবার আয়োজনের ফলে আর যাওয়া হয়নাই, তবে বাড়ির সামনে যা পোড়ানো হয়েছে সেটাও খুব একটা ছোট না। এক রাতে ছেষট্টি মিলিয়ন ইউরো পোড়ানোর সাক্ষী হয়ে রইলাম।
সেল
ডিসেম্বর মাসের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হল এইটা সেল দেবার মাস। মাঝে ৭৫% পর্যন্ত সেল পাওয়া যায়। জামা, জুতা, পারফিউম সব কিছুতেই সেল। আর এই সময় নারী প্রজাতি আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে। যখনই কোন দোকানে সেল দেয় তখনই সেখানে হানা দেয় তারা। পৃথিবীর সব মার্কেট আসলেই মেয়েদের জন্য। আরো মজার ব্যাপার হল ছেলেদের জিনিসের চেয়ে মেয়েদের জিনিসে সেল বেশি দেয়। কেন কে জানে?
বেশ মজা করে লিখেনতো আপনি!
তাই নাকি! 😀