মেঘের ভেতর মেঘ সাজান

— আপনি কি খুব ব্যস্ত? যদি ব্যস্ত থাকেন তাহলে কোন কথা নাই। আর যদি ব্যস্ত না থাকেন তাহলে একটু কথা ছিল।
— জ্বী না ব্যস্ত না। বলেন, কী বলবেন।
— আপনি কি পিক্লাউড ব্যবহার করেন? যদি ব্যবহার করেন তাহলে কোন কথা নাই। আর যদি ব্যবহার না করেন তাহলে একটু কথা ছিল।
— জ্বী না ব্যবহার করি না।
— ইয়ে … আপনি কি আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো অনলাইনে ব্যাকআপ রাখতে চান? যদি ব্যকআপ রাখতে না চান তাহলে কোন কথা নাই। আর যদি ব্যাকআপ রাখতে চান তাহলে একটু কথা ছিল।
— ভাই, আপনার সমস্যা কোথায়? আপনি এভাবে ভানুর মত কথা বলছেন কেন? অসহ্য লাগছে। যা বলবেন সেটা সরাসরি বলুন।
— খুক… খুক… খুক… (গলা পরিস্কার করে) …মূল কথা হল আপনি কি পিক্লাউড ব্যবহার করতে চান? করতে চাইলে আমার রেফারাল লিংকটা ব্যবহার করতে পারেন।
— হুম … কিন্তু কি জিনিস এই পিক্লাউড? আর ব্যাকআপের কথা কি যেন বলছিলেন?

— ধরেন, আপনার কম্পিউটারে আপনার সব সার্টিফিকেটগুলো স্ক্যান করা অবস্থায় আছে। এখন আপনার হঠাৎ সার্টিফিকেটগুলো দরকার পড়ল, কিন্তু আপনার সাথে সেগুলো নাই। কি করবেন?
— কী আর করব? বাসা থেকে নিয়ে আসব।
— ধরেন আপনি থাকেন ঢাকার উত্তরায়, আর আপনি বেড়াতে গেছেন সিলেটের ছাতকে। মনের সুখে ছাতক বেড়াতে গিয়ে দেখেন যে আমেরিকা থেকে মার্ক জাখারবার্গও সেখানে বউ-বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে আসছে। আপনার সাথে কথা বলে তার এত ভাল লাগল যে, সে আপনাকে ফেসবুকে চাকরির অফার দিয়ে দিল। মার্ক অবশ্য বেশিক্ষণ আর বাংলাদেশে নাই, সন্ধ্যার সময় তার ফ্লাইট। ফ্লাইটে উঠার আগে সে আপনার সার্টিফিকেটগুলো দেখতে চাইল সে। কিন্তু আপনার সার্টিফিকেটগুলো ঢাকার উত্তরায়! কি করবেন আপনি?
— কী আর করব! বলব যে পরে ইমেইল করে পাঠিয়ে দিব।
— জাখারবার্গ যেই ব্যস্ত মানুষ। সে আপনার কথা পরে মনে রাখবে? রিস্কি না?
— তাহলে?
— ঐ যে ব্যাকআপের কথা বলছিলাম যে! সেটা করবেন। ইন্টারনেটে সার্টিফিকেটগুলার একটা কপি থাকলে, আপনি তখনই জাখারবার্গ মিয়াকে কিন্তু সেগুলো দেখায় দিয়ে চাকরি পাকা করতে পারতেন। জানেনইতো বাংলাদেশে এখন সবখানেই ইন্টারনেট আছে!
— হুম… কথায় যুক্তি আছে। এই ব্যাকআপ করার নিয়মটা কি? পয়সা খরচ গেলে কিন্তু আমি নাই।
— সেইজন্যই তো পিক্লাউডের কথা বলছিলাম। এটা দিয়ে আপনি ইন্টারনেটে আপনার গুরুত্বপূর্ণ যেকোন ফাইল ব্যাকআপ রাখতে পারবেন। তারপর পৃথিবীর যে চিপাতেই আপনি থাকেননা কেন, ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোন কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন দিয়ে সেই ফাইলগুলো আপনি যখন খুশি তখন ব্যবহার করতে পারবেন।
— হুম… শুনতে তো ভালই লাগছে। কিন্তু পয়সা খরচ হবে নাকি? পয়সা খরচ গেলে কিন্তু আমি নাই।
— একটা পয়সা খরচ না করেও অবশ্য পিক্লাউডের কাজ করা যায়। যে কেউ ফ্রিতে পিক্লাউড ব্যবহার করতে পারে। ফ্রি সার্ভিসে পিক্লাউড আপনাকে জায়গা দিবে দশ গিগাবাইট। এই দশ গিগাবাইট আপনি সারা জীবন ব্যবহার করতে পারবেন।
— এইজন্য কোন পয়সা খরচ করা লাগবেনা?
— এক কানাকড়িও না।
— যদি দশ গিগাবাইটে আমার না হয়? আমার যদি সব ফাইল রাখতে জায়গা লাগে বারো গিগাবাইট? তাহলে?
— ব্যাপার না। আপনি ছোট ছোট কিছু ধাপ অনুসরণ করে আরও চার গিগাবাইট পেতে পারেন। যেমন – আপনি ইমেইল ভেরিফাই করলে অতিরিক্ত এক গিগাবাইট জায়গা পাবেন। মোবাইল অ্যাপ ইন্সটল করলে আরও এক গিগাবাইট পাবেন। এভাবে আরও কিছু ধাপ অনুসরণ করলে অতিরিক্ত চার গিগাবাইট জায়গা পাবেন। আপনার মোট জায়গা গিয়ে দাঁড়াবে চৌদ্দ গিগাবাইট!
— যদি এরচেয়েও বেশি জায়গা লাগে? তাহলে?
— আরে সেইজন্যই তো আপনার সাথে যেচে পড়ে কথা বলতে আসলাম। নাহলে খামাখা আপনাকে পিক্লাউডের জ্ঞান দিয়ে আমার লাভ কি? প্রত্যেকটা পিক্লাউড অ্যাকাউন্টে একটা অপশন থাকে। সেটা হল আপনি একটা রেফারাল লিংক পাঠাতে পারবেন আপনার বন্ধুদের। লিংকটা ইমেইল করতে পারেন কিংবা ফেসবুক-টুইটারে শেয়ার করতে পারেন। সেই লিংকে ক্লিক করে যারা পিক্লাউডে অ্যাকাউন্ট খুলবে তারা ঐ চৌদ্দ গিগা’র সাথে আরও এক গিগা ফ্রি জায়গা পাবে। মানে মোটমাট পনের গিগাবাইট জায়গা পাবে। এভাবে যতজন ঐ লিংক ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলবে, প্রত্যেকেই চৌদ্দ গিগাবাইটের জায়গায় পনের গিগাবাইট করে পাবে। আর তাদের প্রত্যেকের জন্য আপনার অ্যাকাউন্টে এক গিগাবাইট করে জায়গা বাড়তে থাকবে।
— মানে আমি চৌদ্দ গিগাবাইট জায়গা দিয়ে শুরু করব। কিন্তু অন্যরা আমার লিংক ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুললে, আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য এক গিগাবাইট করে অতিরিক্ত জায়গা পাব?
— জ্বী অনেকটা সেরকম। তবে আপনি যদি আমার রেফারাল লিংকটা দিয়ে অ্যাকউন্ট খুলেন, তাহলে আপনি চৌদ্দ গিগাবাইট না বরং পনের গিগবািট জায়গা পাবেন।
— হুমমম … আর আপনার লাভ কি?
— ঐ যে … আপনার জন্য আমিও এক গিগাবািট বাড়তি জায়গা পাব।
— তার মানে, আপনারও লাভ আমারও লাভ?
— জ্বী! দু’জনেরই লাভ! দুজনেই আরামসে মেঘের ভেতর মেঘ সাজাতে পারব!
— ভাই, আপনার রেফারাল লিংকটা যেন কি ছিল?
— আপনি যদি আমার রেফারাল লিংকটা ব্যবহার করতে চান, তাহলে কষ্ট করে এইখানে ক্লিক করুন। তারপর পিক্লাউড অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। এরপর মেঘের ভেতর মেঘ সাজান!


2 thoughts on “মেঘের ভেতর মেঘ সাজান”

Leave a Reply