গুগল ট্রান্সলেট তার ঝুলিতে বাংলা ভাষা যোগ করেছে এটা পুরনো কথা। এটা যে পরীক্ষামূলক অবস্থায় আছে সেটাও পুরনো কথা। আর একমাত্র ‘এক্সাম-পরীক্ষা’ ছাড়া অন্য যে কোন ‘এক্সপেরিমেন্ট-পরীক্ষা’র ক্ষেত্রে যে সব ধরণের দোষ ত্রুটি উপেক্ষা করে সেসব দোষ শোধরাণোতেই সবাই বিশেষ মনোযোগী হয় – সেসবও জানা কথা। তবে এই সব জানা কথাটিই সম্ভবত ‘অজানা’ রয়ে গিয়েছে প্রথম আলো পত্রিকার!
গুগল ট্রান্সলেট বাংলা ভাষা পরীক্ষামূলকভাবে সাপোর্ট করছে – বেশিদিন হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে বাংলা ভাষা ভাষীদের জন্য প্রচন্ড আনন্দের খবর। চিন্তা করে দেখুন – বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওয়েবসাইট কিংবা ডকুমেন্ট আমরা আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষায় পড়তে পারব – ব্যাপারটা চিন্তা করেই তো ভালো লাগছে। বাংলাভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভাষা হিসেবে যতটাই খ্যাত, ব্যাকরণগত দিক থেকে ততটাই জটিল। এই জটিলতার কারণেই একজন বিদেশী মানুষের পক্ষে আমাদের ভাষা আত্মস্থ করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষের ক্ষেত্রেই যদি এমন কঠিন মনে হয়, তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে যে এই ভাষাটিকে আয়ত্ত্ব করা ‘অতিশয়’ কঠিন হবে – সেটা বলাই বাহুল্য! গুগল ট্রান্সলেটরও একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সে গণিত বোঝে, ভাষা বোঝেনা। তাই এটি নিজের বোঝার সুবিধার জন্য প্রতিটি ভাষাকে গাণিতিকভাবে রূপান্তরের চেষ্টা করে। বাংলাভাষা নিয়ে সেই অর্থে গাণিতিক কাজ একেবারেই হয়নি। তাই গুগল ট্রান্সলেটরের জন্যও ভাষাটা নিয়ে কাজ করাটা বেশ কঠিন। তারপরও অনেক বাংলা ভাষাপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবকরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন ঠিকঠাকমত গুগল ট্রান্সলেটরকে দাঁড় করাবার জন্য। একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে বলে এখনো অনেক ভুলভাল দেখাচ্ছে। কিন্তু এসব ভুলভাল ঠিক করার দায়িত্বও কিন্তু আমাদের। সত্যি বলতে কী, এ প্রজেক্টটা এখন ছোট একটা বাচ্চার মত, আপনি যতই এর ভুল শুধরে দেবেন এটি ততই পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। কিভাবে এসব ভুল সংশোধনে অবদান রাখা যায় – তা নিয়ে ব্লগার জামালউদ্দিন খানের একটা দারুণ লেখা রয়েছে।
এত কথা কেন বললাম? বললাম আজকের প্রথম আলো পত্রিকার ব্যাঙ্গাত্মক সাপ্লিমেন্ট রস+আলো’র একটা ফিচার দেখে। ফিচারটিতে লেখক গুগল ট্রান্সলেটরের বাংলা সাপোর্টের পুরো ব্যাপারটিকে ব্যাঙ্গ কিংবা রং-তামাশা হিসেবে নিয়েছেন বলেই মনে হল। লেখার এক কোনায় আবার হাইলাইট করে দেয়া আছে যে – ‘আরো মজার মজার অনুবাদ করতে লগিন করুন translate.google.com’! বেশ দুঃজনক! ফেব্রুয়ারি কিংবা ডিসেম্বর মাসে এই পত্রিকাটিই দেশের সেরা সেরা বুদ্ধিজীবিদের হাজির করে তাদের পাতা দেশপ্রেম দিয়ে ভরিয়ে দেবার জন্য। সেই পত্রিকাটিই কীনা এখন বাংলা ভাষা নিয়ে মজা করছে, আবার অন্যদেরকে লিংক দিয়ে বলছে সেই মজায় অংশ নেবার জন্য! অথচ শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলোরই কিন্তু গুগল ট্রান্সলেটরকে বাংলা ভাষায় সমৃদ্ধ করার জন্য এগিয়ে আসা উচিত ছিল, কিভাবে সবাই অবদান রাখতে পারে সে ব্যাপারে লেখা প্রকাশ করা উচিত ছিল, সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার কাজটি করা দরকার ছিল। তা না করে বিষয়টি নিয়ে ঠাট্টা-মস্করা করাটা খুবই দুঃখজনক। আগেই বলেছি যে প্রজেক্টটি একটি ছোট শিশুর মত অবস্থায় রয়েছে। ছোট শিশুরা ভুল করতে করতেই শেখে। এখন তাদের না শিখিয়ে যদি তাদের ভুল নিয়ে রং-তামাশা করি তবে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়?
প্রথম আলোর টেকি বিভাগ নিয়ে আমার ছিটেফোঁটা কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই। কোন কিছু না জেনে কিংবা ভুলভাল জিনিস ঠুশঠাশ করে ছাপিয়ে দিতে এদের জুড়ি নেই। তাই গুগল ট্রান্সলেটর কিভাবে কাজ করে সেটা নিয়ে তাদের যে বিন্দুমাত্র ধারণা থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক – আগেও এরকম দেখেছি, এখনো দেখে যাচ্ছি। গুগল ট্রান্সলেট বাংলা ভাষা সাপোর্ট করছে, ভুলভাল যাই হোক সে আমাদের প্রিয় বাংলা বর্ণমালা দেখাচ্ছে – এটা যে মোটেও কোন ঠাট্টা-মস্করার বিষয় নয় , এই ব্যাপারটা নিয়েও দেখা যাচ্ছে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। ‘আলু’ তবে ‘আলু’ই রয়ে গেল, ‘আলো’ আর হয়ে উঠলোনা!
Wonderful write-up. Prothom-Alo should be ashamed for its act.(sorry for English comment from mobile device).
আদনান ভাইকে অনেক ধন্যবাদ সত্যটাকে তুলে দরার জন্য। আলো যদি আলো ছড়াত তা হলে খু্বই ভাল হত।
আলু’ তবে ‘আলু’ই রয়ে গেল, ‘আলো’ আর হয়ে উঠলোনা!
“গুগল ট্রান্সলেটরও একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সে গণিত বোঝে, ভাষা বোঝেনা।”
ভাষা বোঝাও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বের অংশ. Unfortunately, we are not ‘that’ ‘advanced’. But it is true that Google translator uses statistical machine translation and this methodology does not try to understand language.
Forgot to mention the most important thing.
SHAME on Prothom Alo for doing this.
এ লিখাটি এদেশের কোন কম্পিউটার ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হউক।
এধরণের লেখা কোন ম্যাগাজিন প্রকাশ করবে বলে হয়না। তাছাড়া ছাপানোর জন্য কোন ম্যাগাজিনওয়ালার সাথে পরিচয়ও নেই। 🙁 বছর কয়েক আগে, একবার সাহস করে প্রথম আলোতে ছাপানোর জন্য একটা লেখা ইমেইল করেছিলাম। লেখাটা অবশ্য ছাপা হয়নি কিন্তু লেখাটি যে রিজেক্ট হয়েছে সেটা নিয়েও কোন সাড়া শব্দ পাইনি। সম্ভবত পত্রিকাগুলো নিজেদের লেখকদের বলয়ের বাইরে থেকে নতুন কাউকে নেয়না বা নিতে চায়না।
অভ্রনীল, লিখেছো উত্তম !
তুমি কিন্তু ভালয় লিখতে পার