থিসিসনামা ২: মফিজ ও হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা

শীতকালীন ছুটিতে মফিজ প্রতিদিন ফুটবল খেলোয়াড়ের জার্সি পড়ে একটা হুইসেল আর কিছু পাখির খাবার নিয়ে ভার্সিটির খেলার মাঠে যেত। সেসময় মাঠে কেউ থাকতোনা। মফিজ অনেকটুকু সময় নিয়ে মাঠের উপর খাবারদানা ছড়িয়ে দিত, তারপর হুইসেল বাজিয়ে মাঠ থেকে চলে যেত।

শীতকালীন ছুটি শেষে ভার্সিটি খুলার পর আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল খেলার প্রথমদিন রেফারি মাঠে ঢুকে খেলা শুরু করার জন্য হুইসেল বাজায় এবং খেলাটি কয়েকঘন্টার জন্য স্থগিত করা হয়। মাঠ থেকে শ’খানেক পাখিকে সরিয়ে খেলাটি অবশেষে শুরু করা হয়।

এই ঘটনার উপর মফিজ তার থিসিস লেখা শেষ করল – “… উপরোক্ত উদাহরণ ও আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে যে, আকার-আকৃতি ও কার্য-প্রকরণভেদে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার বাঁশি এবং ফুটবলের রেফারির বাঁশিতে বিশেষ পার্থক্য বিদ্যমান। ইদুঁর কিংবা বাচ্চাদের আকৃষ্ট না করে উপযুক্ত পরিবেশে রেফারির বাঁশি খেলোয়াড়দের পাশাপাশি পাখিদেরও আকৃষ্ট করার সামর্থ রাখে।”

থিসিসনামা ১: মফিজ ও তেলাপোকা

চারদিকে সবাই থিসিস লিখছে। থিসিস না লিখলে মানসম্মান কিছু থাকেনা। নিজের মানসম্মান রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই মফিজ ঠিক করল তারও একটা থিসিস লেখা দরকার। কী নিয়ে থিসিস লেখা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে ঘরের কোনায় কিছু তেলাপোকা দেখে অবশেষে তার মাথায় একটা প্রজেক্টের আইডিয়া খেলে গেল।

প্রজেক্টের প্রথম ধাপ হচ্ছে উপাত্ত সংগ্রহ। এজন্য একটা তেলাপোকা ধরে এনে মফিজ সেটার একটা পা ছিঁড়ে ফেলল। তারপর সেটাকে টেবিলে রেখে মুখে বলল, “পালা!” টেবিলে পড়েই তেলোপোকাটি সামনের দিকে পড়িমড়ি করে ছুটতে লাগল। তারপর মফিজ সেটাকে আবার ধরে আরেকটা পা ছিঁড়ে ফেলল, তারপর টেবিলে রেখে বলল, “পালা!” তেলাপোকাটি আবারো টেবিলে পড়েই আগের মত ছুটে যেতে চেষ্টা করল। এবার মফিজ তেলাপোকাটির তৃতীয় পা ছিঁড়ে ফেলে টেবিলে রেখে বলল, “পালা!” এবারও তেলাপোকাটি হাঁচড়ে-পাঁচড়ে সামনে যেতে চেষ্টা করল। এভাবে মফিজ প্রতিবার একটা করে পা ছিঁড়ে তেলাপোকাটিকে সামনে যেতে বলত। শেষ পর্যন্ত যখন তেলাপোকাটির সবগুলো পা-ই মফিজ ছিঁড়ে ফেলল, তখন তেলাপোকাটি আর নড়াচড়া করতে পারলনা, অসহায় ভাবে টেবিলে পড়ে থাকল। একটা তেলাপোকার উপর পরীক্ষা করে মফিজ তার প্রজেক্টের উপাত্ত সংগ্রহ করল।

উপাত্তের মানের নির্ভুলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য মফিজ আরো শ’খানেক তেলাপোকার উপর একই পরীক্ষা চালায়, এবং নিশ্চিত হয় যে তার ফলাফল প্রতিবারই নির্ভুলভাবে প্রথমবারের পরীক্ষার সাথে মিলে যাচ্ছে। প্রজেক্টের সাফল্যে মফিজ খুশিতে আটখানা।

এবার সে তার থিসিস লেখা শুরু করল – “একটা তেলাপোকার সবগুলো পা কেটে নিলে তেলাপোকাটি বদ্ধকালা হয়ে যায়!”