ভিজিটিং কার্ড

খুব ছোটবেলাতে দেখতাম বড় বড় মানুষেরা কথায় কথায় নিজেদের মধ্যে একটুকরা কাগজ চালাচালি করেসেই কাগজে মানুষটার নাম, অফিসের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার থাকতযাকে দিচ্ছে সে আবার খুব যত্ন করে সেই কাগজ তার মানি ব্যাগে রেখে দিচ্ছে। আরো পরে ঐ টুকরা কাগজের নাম জানলাম, একে বলা হয় ভিজিটিং কার্ড বড় বড় মানুষেরা তাদের পরিচয় অন্যদের দেবার জন্য এই সব কার্ড ব্যবহার করে। আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একটা ফোন নাম্বার দিতে কত ঝক্কি পোহাতে হত। তখন তো আর মোবাইল ছিলনা, ফোন নাম্বার দিতে হলে সেটা কাগজে লিখে দেবার নিয়ম, লিখার জন্য তাই কাগজের খোঁজ পড়ে যেত। যখন কারো কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে একটুকরো কাগজ পাওয়া গেলো তখন দেখা গেলো কলম নাই! এইবার আবার কলম খোঁজার ধুমঅনেক্ষন পর কলমও হয়ত একটা পাওয়া গেল। তারপর লিখে দিতে হত ফোন নম্বর। এই সময় পাশ দিয়ে হয়তো আরেক জন যাচ্ছে, হঠাৎ থেমে হয়ত জিজ্ঞেস করলো আরে এইটা আপনার নাম্বার? আমাকেও একটু লিখে দিয়েন তো। কি আর করা! আবার কাগজের খোঁজ কর, কলম খোঁজ, তারপর লিখ। কপাল খারাপ থাকলে হয়তো আরো একজন এসে চাইবে। অথচ যাদের কার্ড আছে তাদের ঐ ভেজাল নাই। খালি হাসিমুখে একটা কার্ড বের করে দিলেই হল। আহা কী সুখ! তাদের এই সুখ আমাকেও পেয়ে বসল। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম কবে কবে আমি বড় হব, কবে আমার ভিজিটিং কার্ড হবে।

Continue reading ভিজিটিং কার্ড

রঙ্গীন দুনিয়া – ৭

শীত কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?

প্রথম ধাক্কায় এইটা বলে নেয়া ভালো এইবার উইন্টারে নেদারল্যান্ডসে গত চৌদ্দ বছরের সবচেয়ে ঠান্ডা পড়লো। রাতের বেলা হেগ শহরে টেম্পারেচার মাইনাস পনেরতে গিয়ে ঠেকত। সাগরের পাশে থাকাতে হেগে ঠান্ডা কম ছিল, অন্যান্য জায়গায় তাপমাত্রা মাইনাস বিশের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো! ঠান্ডায় আমি কি কাবু হব, ডাচ লোকেরাই কাবু হয়ে গেছে! রাস্তায় সবাই বস্তা (ঠান্ডায় যে পরিমান কাপড়চোপড় পড়া হয় সেগুলাকে বস্তা বললে খুব একটা ভুল হবেনা) পড়ে ঘোরাঘুরি করছে, এইটা এদের কাছেও অপরিচিত দৃশ্য। তবে তুষার একেবারেই পড়েনি। এখন পর্যন্ত মাত্র তিন দিন তুষার পড়েছে তাও যেটা সবচেয়ে বেশীক্ষন পড়েছিলো সেটার স্থায়ীত্বকাল ছিল টেনেটুনে চার ঘন্টা!

শীতের দিনে সবচেয়ে যেটা কষ্টের সেটা হল ঘড়ির কাঁটা বলে সকাল আটটা কিন্তু ঘরের বাইরে জমাট অন্ধকার! সূর্য উঠতে উঠতে সকাল নয়টা। মাঝে মাঝে এমনও হয়েছে সাড়ে দশটায় ক্লাস শেষ করে প্রফেসর আমাদের গুড মর্নিং জানিয়ে চলে যান। আবার অন্যদিকে বিকেল চারটা বেজেছে কি বাজেনি সাথে সাথে চারদিকে ঝপাস করে অন্ধকার জেঁকে বসলো। রাতে আঁধারে বাসা ছাড়ি আবার রাতের আঁধারেই বাসায় ফিরি। কি কপাল!

তবে তুষার না পড়লেও বাড়ির পাশের খাল ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল। শুধু বাসার পাশের খাল না, অন্যান্য সব খাল, লেক, নদীও ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছিলো। নেদারল্যান্ডসের সবগুলো খাল, লেক, নদী একটার সাথে আরেকটা কানেক্টেড। তাই কেউ ইচ্ছা করলেই যে কোন খালে নৌকা ভাসিয়েই যে কোন নদীতে গিয়ে হাজির হতে পারে। অবশ্য সেই জন্য রূট জানা চাই। তো শীতে যখন সব পানি জমে বরফ হয়ে গেলো, এইখানকার লোকজন তখন স্কেটিং করা শুরু করল। স্কেটিং করে তারা এক শহর থেকে আরেক শহরে হাজির হত, প্রত্যেক শহরের মাথায় আবার চেকপোস্ট টাইপের একটা পোস্ট বসানো হল, স্কেটিং করে একেকটা পোস্ট পার হলে সেই পোস্ট থেকে একটা সার্টিফিকেট মিলে যাতে লেখা থাকে যে ঐ সার্টিফিকেটের মালিক এই শহর স্কেটিং করে পার হয়েছে! এইভাবে সবাই চায় বেশি বেশি সার্টিফিকেট নেবার জন্য।

পাগল সব দেশেই থাকে। কোথাও একটা দুইটা আবার কোথাওবা দল বেঁধে – এই যা পার্থক্য! এইখানে ও সেরকম দলবদ্ধ পাগলের কমতি নাই, তবে একসাথে আমার দেখা সে পাগলদের সংখ্যাটা শতিনেকের কাছাকাছি। তো এই পাগলদের দেখা মিললো জানুয়ারির এগারো তারিখ স্ক্যাভেনিংখে। স্ক্যাভেনিংখ হল হেগের একটা বীচ, হেগের আরেকটা বীচের নাম কাইকডাউন। যাই হোক স্ক্যাভেনিংখে সব ধরনের সব বয়সের পাগল এক হল, সেসব পাগলদের উৎসাহ দিতে আরো অনেক পাতি-পাগল আসলো। ঠিক দুপুর বারটায় কনকনে শীতের মধ্যে পাগলরা সবাই জামা কাপড় খুলে বরফ শীতল সমুদ্রের পানিতে দিল দৌড়! পেছন থেকে পাতি পাগলেরা চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছে। তাদের শখ হল ঐ বরফ শীতল পানিতে সাঁতার কাটবে। এই কাজটা এরা প্রতিবছর জানুয়ারিতে করে থাকে!

Continue reading রঙ্গীন দুনিয়া – ৭