কিশোর আলো বা কিআ – একটি রিভিউ

যখন ছোট ছিলাম তখন পত্রিকার ছোটদের পাতাগুলো (নামগুলো এখন ভুলে গেছি) খুব মনযোগ দিয়ে পড়তাম। পাতাটির আগাগোড়া ভাজ ভাজা হয়ে পড়া হয়ে যেত। তবে প্রতি সপ্তাহে মাত্র একটা ছোটদের পাতায় কী আর পোষায়? আর প্রতিটি পাতাই ছিল একই রকম – একটা কি দুইটা গল্প, কয়েকটা ছড়া, কখনোবা বিখ্যাত কারো কবিতা হয়তো একটাদুইটা থাকতো, কয়েকটা জোক্স, আর আমার মতই ছোট্ট ছোট্ট পাঠকদের আঁকা কয়েকটি ছবি এইতো! এতটুকুতেই পুরে যেত পুরো একটা পাতা সব একঘেঁয়ে ব্যাপার স্যাপার। তারপরও ছোটদের পাতাটুকুকে আপন মনে হত খুব – মনে হত যেন বড়দের শুকনো পত্রিকার মাঝে নিজের একটা রঙিন পৃথিবী! কত আগ্রহ নিয়ে থাকতাম সপ্তাহে এই পাতাটির জন্য!

  Continue reading কিশোর আলো বা কিআ – একটি রিভিউ

ভাষা বিপর্যয়ঃ রোমানাইজড বাংলা ভাষা

বেশিদিনের কথা নয় – বছর দশেক আগেও বাংলাভাষাভাষীদের কাছে কম্পিউটারে বাংলা বর্ণমালায় বাংলা লেখা ছিল স্বপ্নের মত। সেসময় বাজারে বিজয় নামে বাংলা লেখার একটা সফটওয়্যার পাওয়া যেত, যার বাজারমূল্য ছিল বেশ চড়া, তার উপর এতে আবার ইউনিকোড বাংলা লেখা যেতনা। ফলে বিজয় দিয়ে লেখা বাংলা বর্ণগুলো অন্য কম্পিউটারে পড়ার জন্যও অনেক হ্যাপা করতে হত। মনে হত কম্পিউটারের মত “অভিজাত” জায়গায় বাংলা বর্ণমালার বুঝি কোন স্থান নেই। তাই তখন রোমান অক্ষর (A, B, C, D ইত্যাদি) দিয়েই লোকজন বাংলা উচ্চারণে ইন্টারনেট লেখার চেষ্টা করত। কিন্তু এখন সেই দিন নেই। এরই মধ্যে বাংলার একঝাঁক মেধাবী জেনারেশন বাংলা ভাষার প্রতি গভীর মমত্ববোধের নিদর্শন হিসেবে কম্পিউটারে বাংলা লেখার বেশ কয়েকটি সফটওয়্যার বানিয়ে ফেলে। শুরু হয় অভ্র, প্রভাত, ইউনিজয়, জাতীয় প্রভৃতি কিবোর্ডের পথ চলা। খুবই সহজ এসব কিবোর্ড দারুণভাবে রপ্ত করতে একজন বাংলাভাষীর খুব বেশি হলে সপ্তাহখানেক লাগে। শুধু তাই-ই না, সবার কথা মাথায় রেখে এসব কিবোর্ডের ডেভেলপাররা সফটওয়্যারগুলোকে বিনাপয়সায় ব্যবহারের সুযোগ করে দিলেন। সবার হাতে হাতে চলে এল এসব সফটওয়্যার, শুরু হল ইন্টারনেটে বাংলা বর্ণমালার জোয়ার। বাংলা বর্ণমালা কম্পিউটারের অভিজাত জায়গায় নিজের আসন পাকপোক্ত করে নেয়। ইমেইল, ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার – সবখানে বাংলা বর্ণমালা যেন রাজাসনে আসীন হল। ফলশ্রুতিতে ইন্টারনেটে ঢুকলেই নিজের বর্ণমালায় নিজের ভাষার লোকদের দেখি, কথা বলি – কী যে ভালো লাগে তা বলার মত না।

কিন্তু তারপরও বেশ কিছু লোক আছে, যারা এখনো রোমান অক্ষরে বাংলা লিখে চলেছেন। কম্পিউটারে বাংলা বর্ণমালার এই জোয়ারের সময়ও তারা যেন পণ করে রয়েছেন যে তারা সেই রোমানাইজড বাংলাতেই লিখবেন। এখানেই আমার আপত্তি। রোমান হরফে ইংলিশ লিখুক – কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলাকে কেন রোমান হরফে লিখতে হবে? বাংলার তো নিজেরই বর্ণমালা আছে! শুধু তাই না – এরা বাংলাকে রোমান হরফে লিখতে গিয়ে বিদঘুটে সব বাংলা লিখে – যেমন নিচের স্ক্রিনশটটি দেখুন জনৈক মাসুদ রানা কী লিখেছেন!

পড়তে পারছেননা তো? উনি যা লিখেছেন তার উচ্চারণ হচ্ছেঃ

চিথি তা পদে গুড মনে হল , মোবাইল কথা বলের চেয় , চিথি লেখা ভাল , তায় আমরা চিথি লেখা সিচব

Continue reading ভাষা বিপর্যয়ঃ রোমানাইজড বাংলা ভাষা

দ্যা স্পিড ডু অর ডাইঃ মরা-বাঁচার এক অনবদ্য (!) কাহিনী!

বাংলা সিনেমার সময়কালকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় – “খোঁজ-দ্যা-সার্চ এর আগের সময়” এবং “খোঁজ-দ্যা-সার্চ এর পরবর্তী সময়”। যারা অবাক হয়ে ভাবছেন যে খোঁজ-দ্যা-সার্চ আবার কী বস্তু – তারা দয়া করে এখান থেকে ঘুরে আসুন, বহুৎ ফায়দা হবে। খোঁজ-দ্যা-সার্চ নামের সেই কালোত্তীর্ণ মহাকাব্যের পর বাংলার মহানায়ক জলিল (ওরফে অনন্ত) বঙ্গবাসীর জন্য নিয়ে এসেছেন তার নতুন রোমান্টিক-সামাজিক-অ্যাকশন-মেলোড্রামা-সাইফাই-মিস্টেরিয়াস-সাইকোথ্রিলার-ফ্যান্টাসি ছবি “দ্যা স্পিডঃ ডু অর ডাই”। এতটুকু বললে আসলে কম হয়ে যায় – এই ছবিকে ইচ্ছা করলে দেশপ্রেম ভিত্তিক ছবি, কিংবা স্পোর্টস ছবি বা হরর এমনকি লাইভ অ্যাকশন অ্যানিমেশন ক্যাটাগরিতেও ফেলা সম্ভব। ইনফ্যাক্ট সব ধরণের ক্যাটাগরিতেই একে ফেলা সম্ভব। কী নেই এই সিনেমাতে! নায়ক, নায়িকা, অতি পাকনা শিশু শিল্পী, ধুমসি সাইজের চাকরাণী, স্যুট পড়া  ড্রাইভার, ম্যান ইন ব্ল্যাক বডিগার্ড, বাংলাদেশী পুলিশ, মালয়শিয়ান পুলিশ, অনেক প্লেন, বিশাল গাড়ির বহর, আলিশান সব বাড়ি, বিদেশী হোটেল, বিদেশী রেস্টুরেন্ট, অতিমানবীয় নাচ-গান, স্পিড বোট, জেটস্কি, ক্রুজার, মোটর বাইক, দুর্ধর্ষ ভিলেন, সাথে ফাউ ফাউ মহিলা ভিলেন, ভিলেনের সাঙ্গপাঙ্গ, বিশাল ভিলেন বাহিনী, ঘোড়া, ডাক্তারের দল, সমুদ্র, অস্ত্র, ডিজিটাল ঘড়ি, গ্যাস চেম্বার – এলাহী কারবার! এক কথায় লিখে শেষ করা যায়না। সিনেমার ক্যাটাগরি বিশ্লেষনে একটু পর আসছি। তার আগে সিনেমা সম্পর্কে বলে নেই। এ বিষয়ে কোন ভুল নেই যে এই সিনেমা এখন পর্যন্ত “খোঁজ-দ্যা-সার্চ এর পরবর্তী সময়” এর সিনেমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অপরিহার্য সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হবে।

Continue reading দ্যা স্পিড ডু অর ডাইঃ মরা-বাঁচার এক অনবদ্য (!) কাহিনী!

… এবং আইসক্রিম স্যান্ডউইচ!

শিরোনাম পড়ে আপনি যদি মনে করেন যে আমি এখন আইসক্রিম স্যান্ডউইচ নামক অতিশয় সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্যখানার গুনগান নিয়ে আপনার সামনে হাজির হব, তাহলে আপনাকে আইসক্রিম স্যান্ডউইচের বদলে বিশাল একটা ধাক্কা খেতে হবে। এই লেখাখানার বিষয়বস্তু কোন খাদ্যবস্তু নয়, বরং গুগলের অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের নতুন ভার্সনকে নিয়ে। যারা আমার ব্লগ মোটামুটি নিয়মিত পড়েন তারা ইতিমধ্যেই জানেন যে বহু শখ করে বিস্তর গবেষণা করে এই গরীব সপ্তাহ কয়েক আগে একটা ড্রয়েডের মালিক হয়েছি। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন যে আমার মত গরীবের ব্লগে আবার লোকজন নিয়মিত পড়ে! আপনাকে দোষ দিইনা, আমি নিজেই হতবাক যে আমার ব্লগে লোকজন নিয়মিতই আসে। যাই হোক কাজের কথায় আসি। আমি যে ড্রয়েডখানা কিনেছিলাম সেটা ছিল এক্সপেরিয়া ঘরাণার। এর অপারেটিং সিস্টেম ছিল অ্যান্ড্রয়েডের ২.৩.৪ যার কোডনেম জিঞ্জারব্রেড। অনেকদিন ধরেই অ্যান্ড্রয়েডের একেবারে নতুন ভার্সন ৪.০ (কোডনেম আইসক্রিম স্যান্ডউইচ বা আইসিএস) এর জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলাম।

Continue reading … এবং আইসক্রিম স্যান্ডউইচ!

শুভ বন্টুবর্ষ ১২০৪

বছর দুয়েক আগে শেষবারের মত নতুন উবুন্টু আপডেট করেছিলাম। সেসময় রিলিজ হয়েছিল উবুন্টু ১০.০৪ – ল্যুসিড লিংক্স। সেই রিলিজটার বিশেষত্ব ছিল যে ওটা লং টাইম সাপোর্ট রিলিজ (সংক্ষেপে এলটিএস রিলিজ) ছিল। এলটিএস রিলিজগুলো অন্যান্য রিলিজের চেয়ে বেশি সময় ধরে সাপোর্ট পায়, অন্য রিলিজগুলো যেখানে দেড়মাস সাপোর্ট পায় সেখানে এলটিএস রিলিজগুলো তিন বছর সাপোর্ট পায়। প্রতি দু’বছর পর পর এলটিএস রিলিজগুলো বের হয়। অলস মানুষ হিসেবে বিশেষ পরিচিতি থাকায় আমি যে ছ’মাস পর পর অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড না করে প্রতি দু’বছরে একবার করব – সেটা অবশ্য জানা কথা। তাই ল্যুসিডের দু’বছর পর প্রিসাইজ মুক্তি পেয়ে আমার ল্যাপটপ ও ডেস্কটপে ল্যুসিডের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিল। বিদায় ল্যুসিড – পুরো দুবছর কোনরকম উপদ্রব না করে আমাকে বিশ্বস্তভাবে সঙ্গ দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ!

Continue reading শুভ বন্টুবর্ষ ১২০৪

উবুন্টুর ডেস্কটপের সাথে দোস্তি

উবুন্টুর লাইভ সিডি চালিয়ে বা উবুন্টু ইন্সটল করে আপনি টের পেলেন আপনিতো ডেস্কটপের কিছুই বুঝছেননা! উইন্ডোজে যেখানে নীচে একটা টাস্কবার থাকে সেখানে উবুন্টুতে উপরে একটা টাস্কবার। তার উপর টাস্কবারে কোন স্টার্ট বাটন নেই! কোত্থেকে শুরু করবেন কোন কূল কিনারা পাচ্ছেননা, পুরোটাই অচেনা লাগছে, তাই না! চলুন তাহলে অচেনা ভাবটা কাটিয়ে উবুন্টুর ডেস্কটপের সাথে পরিচিত হয়ে দোস্তি করে ফেলি।

Continue reading উবুন্টুর ডেস্কটপের সাথে দোস্তি

উবি দিয়ে উবুন্টু ইন্সটল পদ্ধতি

অনেকেই উবুন্টু ইন্সটল করতে খুব ভয় পায়। কারন বেশির ভাগ লোকজনই ফরম্যাটের ঝামেলায় যেতে চায়না। তাদের জন্য একদম সহজভাবে উবুন্টু ইন্সটল একটা চমৎকার পদ্ধতি হল উবি (Wubi) ব্যবহার করা। উবি দিয়ে যে কেউ কোন ঝামেলা ছাড়াই উইন্ডোজ পিসিতে উইন্ডোজের যেকোন সফটওয়্যার ইন্সটল করার মত করেই উবুন্টু ইন্সটল করতে পারবে। এজন্য বাড়তি কোন সফটওয়্যার বা অন্য কিছুরও দরকার নেই। নতুন ব্যবহারকারীরা উবুন্টু ইন্সটল করতে গিয়ে পার্টিশন নিয়ে না জানার কারণে প্রায়ই গন্ডগোল করে ফেলে, যার ফলে পার্টিশন মুছে যেতে পারে। উবি দিয়ে ইন্সটল করা হলে আপনার পার্টিশানগুলো হেরফের হবার কোন আশংকাই নেই। তাহলে আসুন দেখি কিভাবে উবি দিয়ে উবুন্টু ইন্সটল করতে হয়।

Continue reading উবি দিয়ে উবুন্টু ইন্সটল পদ্ধতি

লাইভ সিডি’র জাদু

উবুন্টুর খুব দারুণ একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এদেরকে লাইভ সিডি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নিশ্চয়ই ভাবছেন যে “লাইভ সিডি” আবার কি জিনিস? নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এটা হচ্ছে “জীবন্ত সিডি”। সাধারণত যেকোন অপারেটিং সিস্টেম (যেমন উইন্ডোজ) কম্পিউটারে ইন্সটল না করে ব্যবহার করে দেখার কোন উপায় নেই। অর্থাৎ আপনি যদি দেখতে চান যে উইন্ডোজ ভিস্তা বা উইন্ডোজ ৭ দেখতে কেমন, তবে সেটা দেখার একমাত্র উপায় হল সেটাকে কম্পিউটারে ইন্সটল করা। কিন্তু লিনাক্স-নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমগুলো এর ব্যতিক্রম। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার হার্ডডিস্কে ইন্সটল না করেই সিডি থেকে বা ইউএসবি স্টিক থেকে এদেরকে চালাতে পারেন। অর্থাৎ ইন্সটল না করেই দেখে নিতে পারবেন যে অপারেটিং সিস্টেমটি কেমন। শুধু দেখাই না বরং একটা পরিপূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমের মত একে ব্যবহারও করতে পারবেন। লেখালেখি, ইন্টারনেট ব্রাউজ, অডিও-ভিডিও চালানো ইত্যাদি সব কাজই করতে পারবেন সিডি থেকে। আর যেহেতু লাইভ মোডে ব্যবহার করতে ইন্সটলেশান করার কোনো দরকার পড়েনা তাই আপনার কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের পার্টিশনও অটুট থাকবে, কোনো ধরণের ড্যাটা হারাবার ভয় থাকেনা। অর্থাৎ ইন্সটলেশান ছাড়াই পুরো সিডিটাকে “জীবন্তভাবে” ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্যই এর নাম “লাইভ সিডি”।

Continue reading লাইভ সিডি’র জাদু