রঙ্গীন দুনিয়া – ৭

শীত কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?

প্রথম ধাক্কায় এইটা বলে নেয়া ভালো এইবার উইন্টারে নেদারল্যান্ডসে গত চৌদ্দ বছরের সবচেয়ে ঠান্ডা পড়লো। রাতের বেলা হেগ শহরে টেম্পারেচার মাইনাস পনেরতে গিয়ে ঠেকত। সাগরের পাশে থাকাতে হেগে ঠান্ডা কম ছিল, অন্যান্য জায়গায় তাপমাত্রা মাইনাস বিশের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো! ঠান্ডায় আমি কি কাবু হব, ডাচ লোকেরাই কাবু হয়ে গেছে! রাস্তায় সবাই বস্তা (ঠান্ডায় যে পরিমান কাপড়চোপড় পড়া হয় সেগুলাকে বস্তা বললে খুব একটা ভুল হবেনা) পড়ে ঘোরাঘুরি করছে, এইটা এদের কাছেও অপরিচিত দৃশ্য। তবে তুষার একেবারেই পড়েনি। এখন পর্যন্ত মাত্র তিন দিন তুষার পড়েছে তাও যেটা সবচেয়ে বেশীক্ষন পড়েছিলো সেটার স্থায়ীত্বকাল ছিল টেনেটুনে চার ঘন্টা!

শীতের দিনে সবচেয়ে যেটা কষ্টের সেটা হল ঘড়ির কাঁটা বলে সকাল আটটা কিন্তু ঘরের বাইরে জমাট অন্ধকার! সূর্য উঠতে উঠতে সকাল নয়টা। মাঝে মাঝে এমনও হয়েছে সাড়ে দশটায় ক্লাস শেষ করে প্রফেসর আমাদের গুড মর্নিং জানিয়ে চলে যান। আবার অন্যদিকে বিকেল চারটা বেজেছে কি বাজেনি সাথে সাথে চারদিকে ঝপাস করে অন্ধকার জেঁকে বসলো। রাতে আঁধারে বাসা ছাড়ি আবার রাতের আঁধারেই বাসায় ফিরি। কি কপাল!

তবে তুষার না পড়লেও বাড়ির পাশের খাল ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল। শুধু বাসার পাশের খাল না, অন্যান্য সব খাল, লেক, নদীও ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছিলো। নেদারল্যান্ডসের সবগুলো খাল, লেক, নদী একটার সাথে আরেকটা কানেক্টেড। তাই কেউ ইচ্ছা করলেই যে কোন খালে নৌকা ভাসিয়েই যে কোন নদীতে গিয়ে হাজির হতে পারে। অবশ্য সেই জন্য রূট জানা চাই। তো শীতে যখন সব পানি জমে বরফ হয়ে গেলো, এইখানকার লোকজন তখন স্কেটিং করা শুরু করল। স্কেটিং করে তারা এক শহর থেকে আরেক শহরে হাজির হত, প্রত্যেক শহরের মাথায় আবার চেকপোস্ট টাইপের একটা পোস্ট বসানো হল, স্কেটিং করে একেকটা পোস্ট পার হলে সেই পোস্ট থেকে একটা সার্টিফিকেট মিলে যাতে লেখা থাকে যে ঐ সার্টিফিকেটের মালিক এই শহর স্কেটিং করে পার হয়েছে! এইভাবে সবাই চায় বেশি বেশি সার্টিফিকেট নেবার জন্য।

পাগল সব দেশেই থাকে। কোথাও একটা দুইটা আবার কোথাওবা দল বেঁধে – এই যা পার্থক্য! এইখানে ও সেরকম দলবদ্ধ পাগলের কমতি নাই, তবে একসাথে আমার দেখা সে পাগলদের সংখ্যাটা শতিনেকের কাছাকাছি। তো এই পাগলদের দেখা মিললো জানুয়ারির এগারো তারিখ স্ক্যাভেনিংখে। স্ক্যাভেনিংখ হল হেগের একটা বীচ, হেগের আরেকটা বীচের নাম কাইকডাউন। যাই হোক স্ক্যাভেনিংখে সব ধরনের সব বয়সের পাগল এক হল, সেসব পাগলদের উৎসাহ দিতে আরো অনেক পাতি-পাগল আসলো। ঠিক দুপুর বারটায় কনকনে শীতের মধ্যে পাগলরা সবাই জামা কাপড় খুলে বরফ শীতল সমুদ্রের পানিতে দিল দৌড়! পেছন থেকে পাতি পাগলেরা চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছে। তাদের শখ হল ঐ বরফ শীতল পানিতে সাঁতার কাটবে। এই কাজটা এরা প্রতিবছর জানুয়ারিতে করে থাকে!

Continue reading রঙ্গীন দুনিয়া – ৭

অনু-সংলাপ!

কিছু কথা কাউকে বলা দরকার। অনেকদিন ধরে মনের ভেতর ধরে রেখেছি।

আমাকে বলা যায়? আমি সবসময় তোর কথা শুনতে রেডি।

আমি সেটা জানি। সেজন্যই সবচেয়ে কাছের বন্ধুর কথা মনে হলেই তোর কথা মনে পড়ে।

হুমম… মনে পড়ে বারেক স্যার একবার ক্লাসে বলেছিলেন ছেলে আর মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারেনা, বন্ধুত্বের মাঝে প্রেম চলে আসে।

সেদিন ক্লাসে আমি এইটা শুনে হেসে ফেলেছিলাম… এখনো মনে আছে।

আর স্যার তোকে বের করে দিয়েছিলেন…

হুমম… এটাও মনে আছে।

তারেকরা আমাকে আর তোকে নিয়ে ঠাট্টা করত… তারেকের কথা মনে আছে?

মনে থাকবেনা আবার! ও আমাদের কে সবসময় সুখী দম্পতি বলত… বেচারা… বন্ধুত্ব আর প্রেমের মধ্যে পার্থক্যটা ও কখনোই ধরতে পারেনি…

না ধরতে পারার যথেষ্ট কারনও ছিলো… পুরো ভার্সিটি লাইফে… আমি প্রেম করার মত কোন ছেলে পেলামনা… আর তুই পেলিনা কোন মেয়ে…

কী মজার দিন গুলো ছিল… তাইনারে!

হু… মজার ছিলো… তোর সমস্যাটা বললিনা যে!

অনেকদিন ধরে একজনকে একটা কথা বলতে চাচ্ছি, কিন্তু পারছিনা।

কেন?

কারন আমি তাকে প্রচন্ড ভালোবাসি।

তো?

ভয় হয় যদি আমাকে না করে দেয়!

তোকে না করবে! মাথা খারাপ নাকি! তোর মত ছেলে কয়টা ভাগ্যবতী মেয়ের কপালে
জুটে?

আমার মনে হয় ও আমাকে পছন্দ করেনা।

ব্যাপারনা… তুই জাস্ট বল্‌ যে তুই ওকে ভীষন পছন্দ করিস… তোর ফীলিংস্‌টাতো ঐ মেয়েকে দেখাতে হবে… নাকি!

আমি প্রতিদিন ওকে এইটা বলতে চাই কিন্তু পারিনা…

আমি তোর অবস্থাটা বুঝি… আমারো এই সমস্যাটা আছে… আমিও কোনদিন ঐ ছেলেকে আমার মনের কথাটা বলতে পারবোনা।

এক মিনিট! একটা ছেলে তোর জীবনে আছে আর আমি জানিনা! কোন ছেলে?

আছে একজন… বাদ দে… তোর ব্যাপারটা বল্‌,…

নাহ্‌ মেয়েটা আমাকে কোনমতেই পছন্দ করেনা?

কে আছে এই পৃথিবীতে যে তোকে পছন্দ করবেনা?

তুই!

কে বললো তোকে… আমার বিপদে আনন্দে তুইই ছিলি আমার সাথী… তুই আমার সবচেয়ে… সবচেয়ে কাছের বন্ধু… তোকে আমি কিভাবে অপছন্দ করব? তোকে যে আমি ভালবাসি!

আমিও … আমিও তোকে ভালোবাসি। অনেক… অনেক ভালোবাসি…

তাহলে এইবার মেয়েটাকে মনের কথা খুলে বল্‌…

আমি যে এইমাত্র সেটা করলাম।

রঙ্গীন দুনিয়া – ৬

কোরবানীর ঈদ

দ্বিতীয়বারের মত দেশের বাইরে ঈদ করলাম। দেশের বাইরে ঈদ করার ঝামেলা একটাই, ঈদ-ঈদ ভাবটা কোনমতেই আসেনা। সাদামাটা একটা দিন, আশেপাশের সবাই যার যার মত কাজে যাচ্ছে মাঝখানে কেবল আমরা কয়েকজন ঈদের নামায পড়ার জন্য বের হয়েছি। সারা জীবন যেইখানে হইহুল্লোড় করে ঈদ করে অভ্যাস সেইখানে এইরকম ম্যাদামারা নির্জীব ঈদ পালন করাই বিরক্তিকর। দেশের ফেলে আসা মুখগুলোর কথা মনে পড়ে, পুরোনো ঈদ্গুলোর কথা মনে পড়ে, মনটা বিরক্তিতে তেতো হয়ে আসে এম্নিতেই।

চুল কাটা

দেশ ছাড়ার পর এই প্রথম চুল কাটাতে গেলাম। যেটাতে চুল কাটাতে গেলাম সেটা আসলে চুল কাটাবার স্কুল, সোজা কথায় নাপিত তৈরির পাঠশালা। এই খানে ভবিষ্যতের নাপিতেরা চুল কাটার তালিম নেয়। এই পাঠশালায় যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য এইটা বেশ সস্তা, নয় ইউরোতে চুল কাটানো যায়, যেখানে অন্য সবখানে লাগে মিনিমাম পচিশ ইউরো। নাপিতের দোকানে ছেলে মেয়ে বাচ্চা বুড়ো কোন ভেদাভেদ নাই- সবাই এইখানে কাস্টমার।

নাপিত-নাপিতানী সবাই নিজের নিজের কাজ করে যাচ্ছে। আমার সাথে যে কয়জন লোক ছিলো সবাই কে দেখলাম একজন করে নাপিতানী এসে নিয়ে যাচ্ছে চুল কাটাবার জন্য। আমিও বসে আছি একজন নাপিতানির জন্য। একসময় আমার ডাক পড়ল, তবে ভাগ্যে নাপিতানী পড়লোনা, কার্লোস নামের এক নাপিত পড়লো। সে হাসি মুখে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল যে আজকে সে আমার নাপিত। কার্লোসের একটা ছোটখাট বর্ণনা দেয়া উচিত। হাইটে ছোটখাট এই শ্বেতাংগ ছেলের কান এবং ঠোঁট ফুট করা এবং সেই ফুটো থেকে বেষ কয়েক ধরনের অলংকার বের হয়ে আছে। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে তার চুলের স্টাইল। একই মাথায় সে দুই ধরনের স্টাইল করে বসে আছে। পুরো মাথার চুলকে দুই ভাগে ভাগ করে সে ডান পাশে এক ডিজাইন করেছে আর বাম পাশে আরেক ডিজাইন। ডান পাশ থেকে দেখলে তাকে মনে হয় মাথায় “মুরগীর ঝুঁটি” কাট আর বাম পাশ থেকে দেখলে মনে হয় বাটি ছাঁট! একেবারে টুইন-ওয়ান যাকে বলে। তবে মাথায় চুলের গোছা যেমনই হোক ছেলে চুল কাটে ভালো।

নিউইয়ার

পশ্চিমা দেশগুলোতে নিউইয়ার একটা কালচারাল ইভেন্টের চেয়েও বড় কিছু। থার্টি ফার্স্ট নাইটে এদের নিউইয়ারের আসল উৎসবটা চোখে পড়ে। পুরো ডিসেম্বর জুড়ে চলে ক্রিস্মাস আর নিউ ইয়ারের প্রস্তুতি। চায়না টাউন বিভিন্ন ধরনের আতশবাজীতে ভরে যায়। আতশবাজী কেনার ধুম পড়ে যায় সারা দেশে। অর্থনৈতিক মন্দার এই বাজে সময়েও কেবল মাত্র নেদারল্যান্ডসে থার্টি ফার্স্টে পোড়ানোর জন্য আতশবাজী বিক্রি হয়েছে প্রায় ছেষট্টি মিলিয়ন ইউরোর যেখানে আগে বছর অর্থাৎ ২০০৭ এ বিক্রির পরিমান ছিলো ষাট মিলিয়ন ইউরো!

থার্টি ফার্স্ট নাইটে আমাদের দাওয়াত ছিলো জুয়ারের বাসায়। দাওয়াত বলে দাওয়াত, একেবারে এলাহী খাওয়া দাওয়া। আম দিয়ে রাঁধা মুরগীর তরকারী থেকে শুরু করে ক্যাংগারুর মাংসের পুরি কোন কিছুই বাদ যায়নাই! খাবার উদ্ভট হলেও খেতে ভালো লাগতো যদি এরা লবন ঠিকমত দিত। এরা আবার লবন খায়না বললেই চলে! টেবিল ভর্তি লোভনীয় সব খাবার কিন্তু সবগুলাতে লবন কম- কেমন লাগে!

আতশবাজী পোড়ানো দেখলাম এবং দেখে শিহরিত হলাম! আতশবাজী যে কেমন হতে পারে সেটা এই প্রথম দেখলাম। কিছু কিছু বাজী আবার তিন চার ধাপে ফুটে। অনেকে আবার ফানুশ বানিয়ে উড়াচ্ছে। চারদিকে পুরোপুরি উৎসব। প্রথমে আতশবাজী পোড়ানো দেখতে স্ক্যাভেনিংখ (হেগ শহরের বীচের নাম) যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু জুয়ারের বিশাল খাবার দাবার আয়োজনের ফলে আর যাওয়া হয়নাই, তবে বাড়ির সামনে যা পোড়ানো হয়েছে সেটাও খুব একটা ছোট না। এক রাতে ছেষট্টি মিলিয়ন ইউরো পোড়ানোর সাক্ষী হয়ে রইলাম।

সেল

ডিসেম্বর মাসের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হল এইটা সেল দেবার মাস। মাঝে ৭৫% পর্যন্ত সেল পাওয়া যায়। জামা, জুতা, পারফিউম সব কিছুতেই সেল। আর এই সময় নারী প্রজাতি আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে। যখনই কোন দোকানে সেল দেয় তখনই সেখানে হানা দেয় তারা। পৃথিবীর সব মার্কেট আসলেই মেয়েদের জন্য। আরো মজার ব্যাপার হল ছেলেদের জিনিসের চেয়ে মেয়েদের জিনিসে সেল বেশি দেয়। কেন কে জানে?


আমি তোমাকে ভালোবাসি!

চরিত্রঃ

একটি ছেলে

একটি মেয়ে

একটি ওয়েটার

স্থানঃ

একটি অভিজাত রেস্টুরেন্ট

দৃশ্যঃ

ছেলেটা আর মেয়েটা মুখোমুখি বসে আছে দুজনের খাওয়া শেষ ছেলেটা অনেক্ষণ ধরে উস্‌খুস করছিলো কিছু বলার জন্য অবশেষে ছেলেটার একহাত মেয়েটির হাতকে স্পর্শ করে…

ছেলেঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি

মেয়েঃ কি বলছ! আমি তোমাকে সবসময় বন্ধু মনে করে এসেছি…

ছেলেঃ বন্ধুকে কি ভালোবাসা যায়না?

মেয়েঃ নাহ, সরি… আমি তোমাকে ভালোবাসিনা

ছেলেঃ (অনুনয় করে) আরেকবার ভেবে দেখনা…

মেয়েঃ কতবার বলব যে আমি তোমাকে ভালোবাসিনা… বাসিনা… বাসিনা

ছেলেটা কিছুটা চুপসে যায় এদিক ওদিক তাকায় এককোনায় ওয়েটার কে দেখে হাত নাড়ে ওয়েটারও প্রত্তুত্তোরে মাথাটা একটু নেড়ে ছেলেটার কাছে এসে দাঁড়ায়

ছেলেঃ (ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে) আমাদের দুজনের দুটো আলাদা বিল হবে

মেয়েঃ (ছেলেটাকে) য়্যাই… দাঁড়াও দাঁড়াও… আমি তোমাকে ভালোবাসি!


[এই গল্পটা কোথায় পড়েছিলাম বা কার কাছ থেকে শুনেছিলাম মনে নেই, আদৌ শুনেছিলাম নাকি নিজেই তৈরি করে স্মৃতির মাঝে ফেলে রেখেছিলাম তাও জানিনা হঠাৎ কথাপ্রসঙ্গে মনে হল এই রকম একটা গল্প তো আমি জানি! তাই ভুলে যাবার আগেই প্রকাশ করে ফেললাম]

রঙ্গীন দুনিয়া – ৫

অনেকদিন হয় ব্লগ লেখা হয়না। একটা সময় ছিল যখন সবকিছু নিয়েই কেবল ব্লগ লিখতে ইচ্ছা করত। ইদানিং আর সেই ইচ্ছেটা মাথাচাড়া দেয়না। খামাখা ব্যস্ততা আমার। কোন কিছুই তেমন করা হয়না, তারপরও কীভাবে কীভাবে যেন দিন চলে যায়। কোন কিছুই ভালো লাগেনা। পরিবার-পরিজন ছাড়া তিন মাস টানা কোথাও কখনো থাকা হয়নাই। তিন মাস! নেদারল্যান্ডসে এসেছি তিন মাস হয়ে গেছে, দিন গুলো কীভাবে কীভাবে চলে যায়! মনে হয় যেন গতকালকে সকালে সবাই আমাকে বিদায় দিয়ে প্লেনে তুলে দিল, আর ক্যালেন্ডার বলছে তিন তিনটা মাস! যাই হোক, এই লেখাটা অনেকদিন ধরেই লিখছিলাম। নতুন পুরনো অনেক কথাই এখানে চলে এসেছে। একেবারে খসড়া খাতা থেকে তুলে দিলাম…

স্প্যাম

আমার জিমেইল স্প্যামবক্স প্রতিদিনই গড়ে ১৫টার মত স্প্যাম ধরে! আর স্প্যামের বাহার কী! কেউ আমাকে লটারিতে মিলিওন মিলিওন ডলার দিচ্ছে, কেউবা আবার আমার শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ চিন্তিত! তবে এইসব স্বাস্থ্যবিষয়ক চিন্তাবিদদের ধ্যানধারনার সাথে ফার্মগেটের খুজলীওয়ালাদের অনেক মিল। পৃথিবীতে যে এত শক্তি-বর্ধক বা বল-বর্ধক ঔষধ পাতি আছে তা এদের মেইল না পেলে বুঝতামনা। ইদানিং আবার মরা কোটিপতিদের উৎপাত বেড়েছে। প্রায়ই মেইল আসে যে, নাইজেরিয়া বা আরবের কোন কোটিপতি অমুক ব্যাঙ্কে প্রচুর টাকা রেখে মারা গেছে, সেই টাকার কোন দাবীদার নাই। তো ব্যাঙ্কের ম্যানেজার আমাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছে যেন আমি সেই টাকাটা তুলে নেই, সেজন্য অবশ্য তাকে ভাগ দিতে হবে। একবার তো ইংল্যান্ডের এক ধনীর দুলালী আমাকে মেইল করল তাকে বিয়ে করার জন্য! তার মেইলের ভাষা ছিলো অনেকটা এইরকমঃ তার বাবা বিশাল ধনী। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই বাবা সুইজারল্যান্ডে ব্যবসায়িক কাজে গিয়ে আততায়ীর হাতে খুন হয়। এখন সুইসব্যাঙ্কে ভদ্রলোকের প্রচুর টাকা যার একমাত্র উত্তরাধিকারী হচ্ছে আমাকে পত্র লেখা এই কন্যা। কিন্তু সে এই টাকা নিতে পারছেনা, কারন তার (ভিলেন) চাচা তাকে ঘরের বাইরে যেতে দিচ্ছে না, যদি আমি তাকে বিয়ে করি তবে সে তার চাচার অধীন থেকে মুক্ত হয় আর আমার সাথে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে টাকা নিবে, আমাকে টাকার শেয়ার দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। হায়রে নাদানের কপাল! এইসব মেইল আসবি যখন ভালোভবেই আয়, স্প্যাম হয়ে কেন যে আসে!

ম্যাক্সপেইন

ম্যাক্সপেইন গেমের সাথে পরিচয় ইন্টারে থাকতে। যদ্দূর মনে পড়ে, চাচাতো ভাই আরেফীনের কাছ থেকে গেমটার সিডি নিয়েছিলাম। টানা সাতদিনে শেষ করেছিলাম গেমটা। কী একখান গেম! বুঝাই যায়না যে গেম খেলছি না মুভি দেখছি। এমনো হয়েছে যে যখন খেলছি তখন পিছন থেকে দেখে অনেকে জিজ্ঞেস করেছে যে এই মুভিটার নাম কি! তো যখন দেখলাম যে এই গেমের মুভি মুক্তি পেয়েছে, মোটেও দেরী করলামনা। দ্বিতীয় সপ্তাহের মাথায় গেলাম মুভি দেখতে প্যাথে সিনেমা হলে, সঙ্গী এরিক। পাঁচটার সময় গিয়ে শুনি যে নেক্সট শো হবে ছয়টায়, এক ঘন্টার ধাক্কা! দুইজনে কিছুক্ষন খাওয়া দাওয়া করে, সিনেমাহলের সামনে রাখা ফ্রী পিএস-থ্রী তে গেম খেলে ছয়টার কিছু আগে ঢুকলাম সিনেমা হলে। এবং আমরা দুজনেই ছিলাম সেই শোর প্রথম দুই দর্শক- পুরা হল খালি!

আমার সন্দেহ হল আমরা বোধহয় ভুল করে অন্য কোন হলে ধুকে গেছি (কারন এরকম আরো আটখান থিয়েটার হল আছে ঐ কম্পাউন্ডে)। এরিক দেখি নির্লিপ্তভাবে সামনের অন্ধকার পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে বললাম আমার সন্দেহর কথা কিন্তু ও পুরা নিশ্চিত যে আমরা ঠিক হলেই ঢুকেছি। আমি যখন প্রায় নিশ্চিত যে আমরা ভুল জায়গায় খামাখা বসে আছি তখন দেখি দুইজন-চারজন করে লোকজন ঢুকছে। দুইজন-চারজন বললাম এই কারনে সবাই জুটি বেঁধে একে একে ঢুকছে। মারমারকাটকাট ছবি দেখতে প্রেমিক জুটি আসে এই প্রথম দেখলাম! (আমার ধারনা ছিলো কেবল রোমান্টিক আমি-তুমি মার্কা ছবিগুলো কেবল জুটিরা দেখে।)

একেরপর এক এ্যাড দেখিয়ে যখন ছবি শুরু হল তখন আমার আক্কেল গুড়ুম! কারন ছবি শুরু হল একটা মিষ্টি মিষ্টি গানের সুর দিয়ে। ম্যাক্স পেইনের মত ভয়াবহ মারামারির ছবিতে এরকম মিউসিক বেশ দুঃখজনক। কোথায় রক্ত গরম করা মিউজিক থাকবে তা না কেমন একটা শান্তি শান্তি ঘুমপাড়ানি মিউজিক! এরপরের কাহিনী আরো হতাশাজনক। স্ক্রীনজুড়ে এক টিনেজ মেয়েকে রঙ্গিন জামা পড়ে ছুটোছুটী করতে দেখা গেল- যেকোন রোমান্টিক ছবির প্রথম দৃশ্য। এইবার আমি ড্যাম শিওর যে এরা ভুল ছবি ছেড়েছে। হলের মধ্যে দেখি সবাই আমার মতই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। এরিককে বললাম যে চলো কমপ্লেইন করে আসি। এরিক সাদাসিধা মানুষ- ঝামেলায় যেতে চায়না, বলল এইটাই দেখি সমস্যা কি! ছেলে বলে কি! খামাখা ২০ ইউরো দিয়ে এই ফাউল টিন-মুভি দেখতে আসছি নাকি! ততক্ষনে স্ক্রীনে টিপিক্যাল টিনেজ মুভির মত হাই স্কুলের করিডর ধরে নায়কের বাস্কেটবল নিয়ে দৌড় শুরু হয়ে গেছে। কপাল ভালো, কিছু সহৃদয় জুটি তখনই উঠে কম্পলেইন করায় ম্যাক্সপেইন শুরু হয়। Continue reading রঙ্গীন দুনিয়া – ৫

রঙ্গীন দুনিয়া – ৪

রবাসী ঈদ

প্রথম বারের মত দেশের পরিচিত গন্ডীর বাইরে ঈদ করলাম। যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলাম ততটা খারাপ হয়নি। ঈদের দিন সকালে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম যে কপালে যাই থাকুক, ক্লাসে যাবনা। সারা জীবন ঈদের দিন কখনো ক্লাস করিনাই, এইবারই বা কেন করব? ঈদ মানে ছুটি। সিদ্ধান্তটা নেবার পর থেকেই মনটা বেশ হাল্কা হয়ে গেল। সকাল থেকেই ছিলো মুষলধারে বৃষ্টি। শেষ কবে ঈদের নামায মিস করেছিলাম মনে করতে পারছিলামনা। তার উপর প্রথম বৈদেশিক ঈদের নামাজ, মিস দেবার কোন কারনই দেখিনা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গেলাম ঈদের নামায পড়তে। অবশ্য একা না, সঙ্গে ছিল মামা, খালু আর এরিক (খালাত ভাই)।

ঈদের নামাজের আয়োজন করা হয়েছে এক ইনডোর বাস্কেটবল কোর্টে। জামাতের ইমাম আবার পাকিস্তানী। এখানেও দেখি পুরা বাংলা স্টাইল। পিছন থেকে কিছু লোক বিভিন্ন আঙ্গুল দিয়ে ইমামকে ইশারা করছিল। অভিজ্ঞ বাঙ্গালী মাত্রই জানে এই ইশারা আসলে টাকা কালেকশনের ইশারা। পাঁচ আঙ্গুল দেখানোর মানে হল ইমাম যেন পাঁদ মিনিট পর জামাত শুরু করে, টাকা তোলার তখনো বাকী। ইমামও তাঁর অনুসারীদের একান্ত বাধ্যগত, টাকা কালেক্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত নামাজ শুরু করলোইনা। দশটার নামাজ সাড়ে দশটায় শুরু হয়ে একসময় শেষ হয়ে গেল। এবার কোলাকুলির পালা। সবাই যখন কোলাকুলিতে ব্যস্ত তখন দেখি এক লোক কিছুক্ষন পর পর আমাকে দেখছিলো। এক সময় আমার কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, ঈদ মুবারাক, আপ রাজ হ্যায়না?। পাইক্কা (পাকিস্তানী) পাবলিক; উর্দুতে কথা বলছে। আমার হিন্দী-উর্দুর দৌড় আবার করেঙ্গা-মারেঙ্গা-ধরেঙ্গা পর্যন্ত। হিন্দী মুভি দেখতে বসলে আমার প্রধান সম্বল হয় ইংলিশ সাবটাইটেল! সাবটাইটেল না থাকলে শিল্পীদের আকার-ইঙ্গিত দেখে হাল্কার উপর ঝাপ্সা দিয়ে কাহিনী মোটামুটি বুঝে নেই। যাই হোক, আগের কথায় ফেরত যাই। একজন পাইক্কা আমাকে রাজ ভেবে ভুল করছে, তাকে শোধরানো উচিত। আমিও আমার হিন্দী জ্ঞান সম্বল করে পালটা জবাব দিলাম, ঈদ মুবারাক, নেহি চাচা, সরি!
লোক বেশ অবাক-
আপ জানতে হ্যায়, আপকো সুরৎ রাজ য্যায়সা হ্যায়!
জান্তা হু! মাথা নেড়ে বললাম।
লোকটা আরো অবাক-
আপ জানতে হ্যায়! ক্যায়সে?
নাহলে আপ মুঝে নেহি জিগাতা হ্যায়। আমার এই কথায় বেচারা কি বুঝল কে জানে বেশ সমঝদারের মত মাথা নেড়ে চলে গেল। একজন লোকের চেহারা রাজের মত, কিন্তু সে রাজ না, এই ব্যাপারটা আবার সেই লোক জানে একজন পাইক্কাকে বিভ্রান্ত করার জন্য এর চেয়ে জটিল কিছু মনে হয় দরকার হয়না! Continue reading রঙ্গীন দুনিয়া – ৪

রঙ্গীন দুনিয়া -৩

হাসি কয় ধরনের? বাঙ্গালী হিসেবে আমি মাত্র চার ধরনের হাসি জানতাম – লাজুক হাসি, মুচকি হাসি, অট্টহাসি আর বাঁকা হাসি। (এর মধ্যে আবার চার নম্বরটা কেবল শুনেই এসেছি কখনো দেখলাম না!) এর বাইরে কি হাসি হয়না? হয় হয়, না হলে হাসি নিয়ে এই বেলা হাঁসফাঁস করতামনা। ইউরোপে পুরো সমাজ ব্যবস্থাটা চলে হাসি’র উপর। গাড়ি পার্ক করতে গিয়ে পাশের গাড়িতে লেগে গেল তাহলে দিতে হবে অপরাধবোধ হাসি। এলিভেটরে কারো সাথে দেখা হলে আসবে সৌজন্যমূলক হাসি। ব্যাঙ্কে গেলে রিসিপশনের মানুষটি দিবে সম্ভাষনসূচক হাসি, এর উত্তরে তখন প্রত্যুত্তরমূলক হাসি দেবার নিয়ম। এভাবে আরো আছে অনুরোধমূলক হাসি, ভদ্রতামূলক হাসি, অনুযোগমূলক হাসি, অবুঝ হাসি, বঞ্চনামূলক হাসি, ভুল শোধরানোর হাসি, অপরাধমূলোক হাসি, ভয়ের হাসি (যদিও এই হাসি আমি কখনো দেখি নাই), সম্মানসূচক হাসি, দুঃখমূলক হাসি, ভালোবাসার হাসি (এখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি), এমনি এমনি হাসি; আরো কত ধরনের হাসি! এখনো সব খুঁজে বের করতে পারিনি। তবে এমন অনেকে আছে হাসতে হাসতে যাদের মুখের কাটিংটাই পারমানেন্টটলি হাসি হাসি হয়ে গেছে। এই প্রজাতির হাসিগুলো হয় বেশ বিভ্রান্তিমূলক। কারন এরা মুখ সামান্য ফাঁক করলেই মনে হয় এরা হাসি দিচ্ছে, হাসিটা কোন ক্যাটাগরির সেটা সহজে বোঝা যায়না।

নেদারল্যান্ডসে একটা প্রবাদ আছে “Be aware of four Ws: Wine, Wealth, Women and Weather!”. এখানকার আবহাওয়াকে মোটেই বিশ্বাস করা যায়না। এই হয়তো ফক্‌ফকা নীল আকাশ, হঠাৎ কথা নাই বার্তা নাই পুরো আকাশ কালো হয়ে ঝপ করে বৃষ্টি নেমে গেল। পুরো ব্যপারটা হয়তো বড়জোড় তিন মিনিটে ঘটে গেল! এর কিছুক্ষণ পরই আকাশ আবার পরিষ্কার। তবে আকাশ যখন পরিষ্কার থাকে তখন পুরোপুরি নীল আকাশ। নীল আকাশ তার মাঝে সাদা মেঘ উড়ে যাচ্ছে। ঢাকায় শেষ কবে নীল আকাশ দেখেছি মনে করতে পারিনা, দেশ ছেড়ে আসার আগেও যে আকাশ দেখে এসেছিলাম সেটা ছিল ধোঁয়া আর ধূলায় ঢাকা ছাই-রঙ্গা ম্যাটম্যাটে একটা আকাশ। বিকেল হলেই দেখা যায় ঝাঁক বেঁধে পাখিরা সব নীড়ে ফিরছে। এখানে বক, হাঁস আর গাংচিলই বেশি চোখে পড়ে। কাকও যে নাই তা না, কাক আছে তবে এদের সাইজ ঢাকার কাকের সাইজের প্রায় অর্ধেক। আমাদের দেশের ডাহুকের মত দেখতে এক ধরনের পাখি দেখা যায় আর দেখা যায় টিয়া পাখি। বিকেল হলেই কোত্থেকে যেন শত শত টিয়া পাখি গাছগুলোতে এসে ভীড় জমায়। ঢাকায় কখনো এমন দেখেছি বলে মনে পড়েনা।

ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় নেদারল্যান্ডস অনেকটা সমতল। ফলে দেখা যায় এখানকার বেশিরভাগ (অথবা সবাই) মানুষই সাইকেল ব্যবহার করে। এই দেশের প্রত্যেকটা রাস্তায় সাইকেলের জন্য আলাদা আলাদা লেইন আছে। এরা আবার সাইকেলকে বলে “ফিয়েটস”। সাইকেলের রাস্তাগুলো এত চমৎকার যে কেউ ইচ্ছে করলেই বেশ সহজেই সাইকেল নিয়ে পুরো নেদারল্যান্ডস ঘুরে আসতে পারে। এদের ট্রেন স্টেশনগুলোতে সাইকেল পার্ক করার আলাদা জায়গা আছে। সে সব জায়গায় দশ-বিশটা না, শত শত সাইকেল পার্ক করা থাকে। অনেক সময়ই দেখা যায় যে সাইকেলের সংখ্যা পার্কিং প্লেস ছাড়িয়ে পাশের রাস্তায় গিয়ে পড়ে!
Continue reading রঙ্গীন দুনিয়া -৩

আবার উল্টো পথে…

দুই বছর, মাত্র দুই বছরের মাথায় আবারো আমি পুরনো জীবনে ফেরৎ আসলাম। পুরনো জীবন মানে সেই জীবন জ্ঞান হবার পরই যে জীবনে অভ্যস্ত ছিলাম। যে জীবন শুরু হয়েছিলো স্কুল দিয়ে। সেই একই কাহিনী, সকালে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া, টীচারদের লেকচার শোনা, বাসায় ফেরা। পুরোপুরি বাঁধাহীন একটা জীবন। কে কি ভাবলো তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন কষ্ট নেই। যা খুশি তাই করার জীবন।

দুই বছর আগে বিজলী মিস্ত্রী হবার প্রথম সনদ পেয়েছিলাম। সনদ পেয়ে এক পাঠশালায় বিজলী মিস্ত্রী তৈরীর কারিগর হিসেবে ঢুকে পড়লাম। সেই সাথে পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। ছাত্রত্বের সব স্বাধীনতা চোখের পলকে উধাও হয়ে গেল। আচার আচরনে গাম্ভীর্য আনতে হল। ফরমাল জামাকাপড় পরার অভ্যাস করতে হল। মেপে মেপে কথা বলার ধরন রপ্ত করতে হল। এক সময় আমি ছিলাম ছাত্র। কিন্তু সময় পালটে এখন আমার কত ছাত্র! এদের সামনে তো আর ফালতু তাফালিং করা চলেনা। বলতে গেলে আমার পুরো জীবনটাই এক লহমায় বদলে গেল।

বদলানো জীবনের প্রথম দিকে বেশ খারাপ লাগত, পরে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিচ্ছিলাম। তারপর হঠাৎ কি মনে হল, আরো পড়াশুনা করার ইচ্ছা জাগলো মনে। এটুকু পড়ে হয়ত সবাই ভাববে যে – নাহ্‌ ছেলেতো বেশ পড়ুয়া, নাহলে আবার কেনো পড়াশুনা করার সাধ জাগে? নিজেকে পড়ুয়া ভাবতে আমারও ভালো লাগে, কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে যে আমি মোটেও তেমন না। আমার চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোনদের কাছে আমি নস্যি। ছোট্ট একটা কাহিনী বলি। ছোট বেলায় আমারা সব ভাইবোন দাদার বাড়িতে ঈদ করতাম। আমার বড় চাচাতো বোন (যে কিনা এখন রাশভারি ডাক্তার) আমার ছয় মাসের বড়। পিঠেপিঠি বলে ওর সাথেই আমার বেশি খাতির। এই কাহিনীটা যখনকার তখন আমরা সবাই প্রায় গুঁড়া বাচ্চা, মাত্র নামতা শেখা শুরু করেছি। ঈদের দিন সকালে সবার সাথে নামাজ পড়তে যাব, হঠাৎ দেখি ও এসে হাজির। খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে বললো, “তাড়াতাড়ি চলে এসো, আজকে নয়ের ঘরের নামতা শিখতে হবে”! যেই ফ্যামিলির বাচ্চাকাচ্চা ঈদের দিন নামতা শেখার কথা বলতে পারে, সেই ফ্যামিলির ছেলে হয়ে নিজেকে বেশ নগন্য লাগে।

যাই হোক আগের কথায় ফেরৎ যাই। আমি মোটেও তেমন পড়ুয়া না। আইইউটিতে এমনও হয়েছে যে পরীক্ষার আগের রাতে মুভি দেখে ঘুমাতে গেছি! তো এই ছেলের আরো পড়াশুনা করার কথা শুনলে অবাক হবারই কথা। কারন আর কিছুই না, চাকরী করতে আর ভাল লাগছিলনা। মাঝে মাঝে মনে হত যেন অল্প বয়সেই বুড়ো হয়ে গেছি। যখন আমার অন্য বন্ধুরা কেউ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বা বুয়েটে পড়াশুনা করছে, সেই সময় কিনা আমি চাকরি করি! তাই চাকরি থেকে বের হয়ে যেতে ইচ্ছা করছিলো। সুযোগ পেয়ে তাই কাজে লাগিয়ে ফেললাম। চাকরী ছাড়তে তাই আমার মধ্যে কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করেনি। পুরনো জীবনে আসতে পেরে আবার বেশ ভাল লাগছে। শুধু পার্থক্য হচ্ছে, এইবার আমাকে থাকতে হচ্ছে দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে। আমি আবার উলটা পথে হাঁটা শুরু করলাম, অচেনা দেশে অচেনা পরিবেশে… দেখা যাক কী হয়…