রঙ্গীন দুনিয়া – ৭

শীত কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?

প্রথম ধাক্কায় এইটা বলে নেয়া ভালো এইবার উইন্টারে নেদারল্যান্ডসে গত চৌদ্দ বছরের সবচেয়ে ঠান্ডা পড়লো। রাতের বেলা হেগ শহরে টেম্পারেচার মাইনাস পনেরতে গিয়ে ঠেকত। সাগরের পাশে থাকাতে হেগে ঠান্ডা কম ছিল, অন্যান্য জায়গায় তাপমাত্রা মাইনাস বিশের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো! ঠান্ডায় আমি কি কাবু হব, ডাচ লোকেরাই কাবু হয়ে গেছে! রাস্তায় সবাই বস্তা (ঠান্ডায় যে পরিমান কাপড়চোপড় পড়া হয় সেগুলাকে বস্তা বললে খুব একটা ভুল হবেনা) পড়ে ঘোরাঘুরি করছে, এইটা এদের কাছেও অপরিচিত দৃশ্য। তবে তুষার একেবারেই পড়েনি। এখন পর্যন্ত মাত্র তিন দিন তুষার পড়েছে তাও যেটা সবচেয়ে বেশীক্ষন পড়েছিলো সেটার স্থায়ীত্বকাল ছিল টেনেটুনে চার ঘন্টা!

শীতের দিনে সবচেয়ে যেটা কষ্টের সেটা হল ঘড়ির কাঁটা বলে সকাল আটটা কিন্তু ঘরের বাইরে জমাট অন্ধকার! সূর্য উঠতে উঠতে সকাল নয়টা। মাঝে মাঝে এমনও হয়েছে সাড়ে দশটায় ক্লাস শেষ করে প্রফেসর আমাদের গুড মর্নিং জানিয়ে চলে যান। আবার অন্যদিকে বিকেল চারটা বেজেছে কি বাজেনি সাথে সাথে চারদিকে ঝপাস করে অন্ধকার জেঁকে বসলো। রাতে আঁধারে বাসা ছাড়ি আবার রাতের আঁধারেই বাসায় ফিরি। কি কপাল!

তবে তুষার না পড়লেও বাড়ির পাশের খাল ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল। শুধু বাসার পাশের খাল না, অন্যান্য সব খাল, লেক, নদীও ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছিলো। নেদারল্যান্ডসের সবগুলো খাল, লেক, নদী একটার সাথে আরেকটা কানেক্টেড। তাই কেউ ইচ্ছা করলেই যে কোন খালে নৌকা ভাসিয়েই যে কোন নদীতে গিয়ে হাজির হতে পারে। অবশ্য সেই জন্য রূট জানা চাই। তো শীতে যখন সব পানি জমে বরফ হয়ে গেলো, এইখানকার লোকজন তখন স্কেটিং করা শুরু করল। স্কেটিং করে তারা এক শহর থেকে আরেক শহরে হাজির হত, প্রত্যেক শহরের মাথায় আবার চেকপোস্ট টাইপের একটা পোস্ট বসানো হল, স্কেটিং করে একেকটা পোস্ট পার হলে সেই পোস্ট থেকে একটা সার্টিফিকেট মিলে যাতে লেখা থাকে যে ঐ সার্টিফিকেটের মালিক এই শহর স্কেটিং করে পার হয়েছে! এইভাবে সবাই চায় বেশি বেশি সার্টিফিকেট নেবার জন্য।

পাগল সব দেশেই থাকে। কোথাও একটা দুইটা আবার কোথাওবা দল বেঁধে – এই যা পার্থক্য! এইখানে ও সেরকম দলবদ্ধ পাগলের কমতি নাই, তবে একসাথে আমার দেখা সে পাগলদের সংখ্যাটা শতিনেকের কাছাকাছি। তো এই পাগলদের দেখা মিললো জানুয়ারির এগারো তারিখ স্ক্যাভেনিংখে। স্ক্যাভেনিংখ হল হেগের একটা বীচ, হেগের আরেকটা বীচের নাম কাইকডাউন। যাই হোক স্ক্যাভেনিংখে সব ধরনের সব বয়সের পাগল এক হল, সেসব পাগলদের উৎসাহ দিতে আরো অনেক পাতি-পাগল আসলো। ঠিক দুপুর বারটায় কনকনে শীতের মধ্যে পাগলরা সবাই জামা কাপড় খুলে বরফ শীতল সমুদ্রের পানিতে দিল দৌড়! পেছন থেকে পাতি পাগলেরা চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছে। তাদের শখ হল ঐ বরফ শীতল পানিতে সাঁতার কাটবে। এই কাজটা এরা প্রতিবছর জানুয়ারিতে করে থাকে!

একদল পাগল পানিতে নেমে গেছে। পেছনে আরেকদল নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পেছনের দলে কিছু পাতি পাগলও আছে।
একদল পাগল পানিতে নেমে গেছে। পেছনে আরেকদল নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পেছনের দলে কিছু পাতি পাগলও আছে।

আগেই বলেছি এইবার এইখানে তেমন একটা তুষার পড়েনাই। তবে নেদারল্যান্ডসে এমনিতেও তুষার কম পড়ে। তবে এইবার আসাধারন একটা দৃশ্য দেখলাম। সবুজ ঘাসের উপর জমে থাকা শিশিরগুলো ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যায়। সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে দেখা যায় প্রতিটা ঘাষের মাথা যেন কেউ হীরার টুকরো দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছে। মাঠের পর মাঠ সবুজ ঘাষগুলোর মাথা গুলো আলোয় চিকচিক করছে আবার একই সাথে ঘাষের সবুজ গোড়াগুলো বের হয়ে আছে – অদ্ভুত পরাবাস্তব একটা দৃশ্য! রোদ উঠলে চারদিক ঝকমকে হয়ে যায়। যেদিকে তাকাই সেদিকেই যেন ঝকঝকে সবুজ আলোর ছটা।

টেকিবাজঃ

টেকিবাজ হচ্ছে টেকনোলজীক্যাল চাপাবাজ মানে যারা টেকনোলজি নিয়ে চাপা মারে আরকি! তো আমি মনে হয় ধীরে ধীরে এই টেকিবাজদের দলে ঢুকে যাচ্ছি। এবং এর জন্য দায়ী জুয়ায়ের। নেদারল্যান্ডসে আসার পর থেকে ওর ল্যাপি আর মোবাইলের বেশ কিছু ভেজাল ঠিক করে দেই। যদিও তেমন আহামরি কোন ভেজাল না (এই যেমন ওর মোবাইলের সাথে ল্যাপির কানেকশন করে দেয়া বা ওর স্মার্ট ফোনে জিপিএস এনাবল করা – এইরকম হাবিজাবি জিনিস) কিন্তু সমাধান হওয়ার পর ওর ধারনা হয় যে আমি বিশাল কোন টেকি-পার্সন। ওর নিজের ছোটখাট একটা ট্রাভেল কোম্পানি আছে; ছোট বললাম এই কারনে যে কর্মচারী সংখ্যা হচ্ছে মাত্র দুইজন- ও আর ওর বউ! ওর ওয়েবসাইটের একটা হাবিজাবি প্রব্লেম ঠিক করে দেয়ার পর ওর কাছে আমি পুরাপুরি টেকগুরু হয়ে গেছি।

যাই হোক ওর সাথে কথা হলে ওকে বিভিন্ন টেকি উপদেশ দেই। এই যেমন সেইদিন আমাকে এসে বলছিলো যে ওর ব্রাউজার অন করলেই একগাদা পপআপ উইন্ডো ওপেন হয়, আমি যেন ওর ল্যাপিটা দেখে দেই। গিয়ে দেখি ও ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যাবহার করে। ওকে ফায়ারফক্স ব্যবহার করতে বললাম, কিন্তু বেচারা ঐটার নাম শুনেনাই! তারপর ওর ল্যাপিতে ফায়ারফক্স ইন্সটল করে এমন একটা ভাব নিলাম যে বহুত কিছু করে দিলাম। ওতো মহা খুশি। আরেকদিন আবার বললো ওর ভিস্তা নিয়ে প্রব্লেম। শুনে বললাম – ভিস্তা কেন ইউজ কর? এক্সপি ইউজ কর, ভালো জিনিস। আরো ভালো জিনিস হলো লিনাক্স, ঐটা ইউজ করতে পার। লিনাক্স এর কথা শুনে দেখলাম ও ঘাবড়ে গেল। ওরে দোষ দিয়ে অবশ্য লাভ নাই, আমি নিজেও লিনাক্সের কথা শুনলে ঘাবড়ে যাই। কিন্তু একবার যখন মুখ থেকে বের হয়ে গেছে তখন তো আর পিছানো যায়না। আমি পুরা বাপের ব্যাটার মত লিনাক্স নিয়ে হামকিতুমকি করে যাচ্ছি। মনে মনে ভয় ছিলো ও যদি এইবার আমাকে ওর ল্যাপিতে লিনাক্স ইন্সটল করতে বলে তাহলে আমি গেছি। একবার মাতব্বরি করে আমার ল্যাপিতে উবুন্টু ইন্সটল করেছিলাম, এরপর কি করব কিছু বুঝিনাই বলে আবার এক্সপিতে ফেরত গেছি। একসময় ও জিজ্ঞেস করল লিনাক্স নাকি খুব কঠিন জিনিস? আমি মনে মনে এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলাম। আমি ভাবের সাথে বললাম সব কিছুই নতুন নতুন কঠিন লাগে কিন্তু ব্যবহার করতে করতে সহজ হয়ে যায়। ও কি বুঝলো কে জানে, গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বললো যা এই বয়সে নতুন কিছু শিখার ইচ্ছা ওর নাই, ও ওর উইন্ডোজ় নিয়েই থাকবে। আমিও মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি কিন্তু উপর দিয়ে গলাবাজী করি – আরে এইটা কোন ব্যাপার নাকি! উইন্ডোজ হচ্ছে গিয়ে অগা-মগাদের জন্য… তুমি কেন মগাদের জিনিস ইউজ করবে?…ব্লা ব্লা লিনাক্সে কোন ভাইরাস নাই… ব্লা ব্লা ব্লা। লোকটা এরপরও দেখলাম উইন্ডোজের জন্য গভীর মমতা অনুভব করে। সেইটা অবশ্য একদিক দিয়ে আমার মত টেকিবাজদের জন্য ভালো।

বইমেলাঃ

ফেব্রুয়ারি মাস আসলে আমি প্রতিদিনের পেপারের একনিষ্ঠ পাঠক হয়ে যাই। যারা আমাকে ভালো করে চিনে তারা খুব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কারন আমি পারতপক্ষে জগত সংসারের খবরাখবরের দিকে যাইনা। টিভিতেও খবর খুব একটা দেখিনা। অনেককে দেখি একই খবর প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় দেখে। আমি মোটেও সেই দলে পড়িনা। একের পর এক চ্যানেল চেঞ্জ করতে গিয়ে নিউজ চ্যানেলে কিছু দেখালে সেটা চোখে পড়ে, এর বেশি কিছুনা। সে আমি ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়ি। তবে জগৎ সংসারের খবরের জন্য না, বইয়ের খবরের জন্য!

ফেব্রুয়ারিতে খবরের কাগজ ভর্তি থাকে বিভিন্ন বইয়ের বিজ্ঞাপন। আমরা দুই ভাইবোন গোগ্রাসে পেপারের একের পর এক পৃষ্ঠা উলটে যাই আর একটা কাগজে কোন কোন বই কিনব তার একটা লিস্টি বানাতে থাকি। লিস্টিতে বইয়ের নাম, লেখকের নাম আর প্রকাশনীর নামের জন্য আলাদা আলাদা কলাম থাকে। সেই লিস্টি নিয়ে মেলা ঘুরতে যাওয়া হত। একদিন হয়তো বোনকে নিয়ে যেতাম, অন্যদিন হয়তো বন্ধুদের সাথে যেতাম। এই মেলাটার জন্য আমি সারা বছর অপেক্ষা করতাম। চারদিকে বইয়ের ছড়াছড়ি, নতুন বইয়ের গন্ধ, স্টল খুঁজে বের করা- সব কিছুতেই আমি আনন্দ খুঁজে পেতাম। যারা আমার কাছের লোক তারা জানে আমি কেমন উদ্গ্রীব হয়ে থাকি এই মেলার জন্য। কারন অন্য কোন মেলায় আমি যাইনা, হোক সেটা বানিজ্য মেলা কিংবা কম্পিউটার মেলা অথবা বৈশাখী মেলা। অন্য কোন মেলা আমাকে এত করে কখনো টানেনা। সেই প্রানের মেলাটাকেই এবার মিস করলাম। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে বইয়ের স্টলগুলো নিজের চোখে দেখা হলনা।

ভ্যালেন্টাইন ডেঃ

এই দিনটার নাম প্রথম শুনি ক্লাস নাইনে থাকতে। আমাদের স্কুলটা ছিলো পাহাড় কেটে বানানো। তাই স্কুলের আশপাশে অনেক পাহাড় ছিল। ক্লাস নাইনে থাকতে আমাদের ক্লাসের জানালা দিয়ে পাশের পাহাড়টা দেখা যেত। একদিন টিফিন পিরিওডে দেখি ঐ পাহাড়ে বেশ লোকের ভীড়। ঠিক ভীড় না ছাড়া ছাড়া ভাবে অনেক লোক। অবাক হলাম, কারন ঐ পাহাড়ে সাধারনত কেউ তেমন একটা যেতনা। আরো অবাক হলাম ভীড় করা লোকগুলো সুন্দর সুন্দর জামা পড়ে এসেছে। তার উপর আবার ভীড় করা লোকগুলো সবাই সবার সাথে কথা বলছেনা, তারা জোড়ায় জোড়ায় কথা বলছে, প্রতি জোড়ায় আবার একটা ছেলে আর একটা মেয়ে, কোন ছেলে-ছেলে বা মেয়ে-মেয়ে জোড়া নাই। ক্লাস থেকে পাহাড়টা বেশ দূরে, নাহলে আমার যে বুদ্ধি আমি হয়ত ওদেরকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখতাম। ওদেরকে না পেয়ে আমি এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম কাহিনী কি! ঐ ছেলে অবাক, আমার মত আবজাব পোলাপাইন মনে হল সে আর দেখে নাই। যাই হোক আমার মগজের দৌড় সম্পর্কে জ্ঞান থাকায় সে খুব বেশিক্ষন আর অবাক হয়ে থাকলোনা। মুড নিয়ে বললো আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে। আমার মাথা ঘুরে যায়, এই ডের নামতো কোন দিন শুনিনাই! আর যেই কঠিন উচ্চারন নির্ঘাৎ ভয়াবহ কিছু হবে। লাজশরমের মাথা খেয়ে অকে জিজ্ঞেস করলাম- ভেন্টিকুন্টি ডে টা কি জিনিস দোস্ত। আমার দোস্ত বেশ বিরক্ত হয়ে বললো এইটা ভালোবাসা দিবস, এই দিন ভালোবাসতে হয়। এই প্রথম আমি শুনলাম ভালোবাসাবাসি করার জন্য আলাদা একটা দিন আছে। বছরের অন্যান্য দিন ভালোবাস বা নাই বাস এই দিন ভালোবাসতেই হবে, অন্তত ভালবাসার অভিনয় করতে হবে!

প্রেম জিনিসটা যে আসলে কি সেইটা বোঝার মত যথেষ্ট ঘিলু আমার মাথায় নাই। তাই ভ্যালেন্টাইন ডে তে আমাকে সবসময় বাসায় পাওয়া যেত। আমার বন্ধুরা যখন ভ্যালেন্টাইন ডেতে তাদের বিশেষ একজনের হাত ধরে ঘুরাঘুরি করে আমি তখন বাসায় হয় গল্পের বইয়ের মাঝে নাহলে টিভিতে কোন প্রিয় কার্টুন দেখছি। ঠিক একই কাজ করলাম এইবার ভ্যালেন্টাইন ডেতেো। তবে বিদেশে ভ্যালেন্টাইন ডে কে ক্রিসমাসের চেয়ে কোন অংশে কম করে দেখা হয়না। এরা একে বলে ভী-ডে। তো এই ভী-ডে উপলক্ষ্যে চারদিকে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। শপিংমলগুলো লালে লাল হয়ে যায় (লাল নাকি ভালোবাসার রঙ যদিও আগে জানতাম ভালোবাসার রঙ হচ্ছে নীল)। চারদিকে বিশাল বিশাল হার্ট আর কার্ডের ছড়াছড়ি। অনেকে আবার বাসা সাজায়। ১৪ তারিখ দেখলাম ম্যাক্সিমাম লোকজন লাল রঙের ড্রেস পড়ে জোড়ায় জোড়ায় হাঁটছে। পুরা এক উৎসব উৎসব ভাব।

তবে একটা জিনিস আমি এখনো বুঝিনা, এই যে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে পানপাতার মত হার্ট ব্যবহার করা হয়, এর সাথে মানুষের হৃদপিন্ডের মিল কোথায়? প্রায়ই দেখা যায় একটা তীর সেই পানপাতার মত হৃদয়কে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে- এর মানেটা কি? হৃদয়ে তীর বিঁধলে আমি তো বাঁচার আশা দেখিনা।

২৫শে ফেব্রুয়ারিঃ

সকাল বেলা ফেসবুকে ঢুকে দেখি রাফির স্ট্যাটাস এ What is happening to Dhaka? লেখা, পাশে একটা লিঙ্ক দেয়া। লিঙ্কে ক্লিক করে মাথা খারাপ হবার দশা- ঢাকায় পিলখানায় বিডিআর সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ! ঢাকায় যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। সাথে সাথে বুক ধ্বক্‌ করে উঠলো, পিলখানাতো ধানমন্ডিতেই, বাসার খবর কি কে জানে। সাথে সাথে বাসায় ফোন দিলাম। আম্মু ফোন ধরলো, বললো যে সব আল্লাহর রহমতে ঠিক আছে। সবাই বাসাতেই আছে, কোন সমস্যা নাই। কথা বলা শেষ করেই বসে গেলাম ইন্টারনেটে, দেশের খবর নেবার জন্য। সামহোয়্যারিন ব্লগ, সচলায়তন ব্লগ আর প্রথম আলো ব্লগ- তিনটা ব্লগ তিনটা ট্যাবে খুলে গুগলে রিসেন্ট পরিস্থিতি নিয়ে সার্চ করছি। দেশ কি তাহলে গৃহ যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে?

প্রচন্ড টেনশনে পড়ে গেলাম। সেদিন আর ভার্সিটি গেলামনা। খবরে দেখলাম সবাই বিডিআরের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে, বিশেষ করে আম জনতা। ব্লগগুলোতে আর্মিদের বিভিন্ন নেতিবাচক দিক তুলে ধরছেন ব্লগাররা। বিডিআরদের প্রতি সেনাবাহিনীর শোষনই এই বিদ্রোহের মূল কারন। সবাই বিডিআরদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাচ্ছে। রাতের খবরে দেখলাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বিডিআরদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিচ্ছেন, যারা পিলখানায় আটকা পড়েছেন তাদেরকে বের করে নিচ্ছেন। যাক শেষ পর্যন্ত একটা বিহিত হল তাহলে। ভারমুক্ত হয়ে ঘুমাতে গেলাম।

পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে শুনি সরকার নাকি ধানমন্ডি এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলেছে। ব্যাপার কি! খবরে দেখি বিডিআর নাকি আত্মসমর্পন না করে আবার গুলি ছুঁড়ছে। এদিকে সেনাবাহিনী নাকি সাভার থেকে বিশাল বহর আনছে বিডিআরদের মোকাবেলা করার জন্য আর সব জড়ো হচ্ছে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে। সাথে সাথে বাসায় ফোন দিলাম। আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম কাহিনী কি। আম্মু বললো যে কেবল পিলখানা থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে যারা আছে তাদের সরে যেতে বলেছে। আমাদের রোডে নাকি কোন মাইকিং হয়নি। তারপরো আম্মুকে সাবধানে থাকতে বললাম, জানালা থেকে যাতে দূরে থাকে সেই কথাও বললাম। এদিকে খবরে দেখিয়ে চলছে একের পর এক আর্মি অফিসারদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। একসময় বিডিআররা অস্ত্র সমর্পন করল। এরপর থেকে শুরু হল বিভীষিকাময় প্রহর। একের পর এক আর্মি অফিসারদের লাশ পাওয়া যেতে লাগলো। পিলখানায় রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। যারা কিছুক্ষন আগে আর্মিদের গুষ্ঠি উদ্ধার করেছে তারাই দেখলাম এখন আর্মিদের হয়ে কথা বলছে!

জানিনা কী বলে দিনটাকে প্রকাশ করব। আমি পচিশে মার্চের কালো রাত্রি দেখিনি, কিন্তু মনে হয়না পচিশে ফেব্রুয়ারির চেয়ে সেটা কম কিছু ছিলো। আর্মিদের উপর ক্ষোভ থাকতেই পারে, প্রতিবাদ জানাবারও অনেক উপায় আছে; কিন্তু তাই বলে দেশের রক্ষাভার যাদের উপর তাদের একটা সারিকে পুরোপুরি হত্যা করাটা কতটুকু যৌক্তিক? ঘটনার প্রথমদিকে আমার মনটাও বিডিআরদের পক্ষ নিয়েছিলো, ওদের অত্যাচারিত নিগৃহিত হবার কথা শুনেই হয়তোবা। কিন্তু ঘটনার বিভৎসতা দেখে সেই সহমর্মিতার জায়গায় এখন ঘৃণা এসে ভর করেছে। কিন্তু একটা জিনিস আমাকে এখনো ভাবায়, এতোবড় একট ঘটনা বিডিআরের সামান্য জোয়ানদের পক্ষে একলা ঘটানো সম্ভব না। এর পিছনে অন্য কোন ব্যাপার আছে কি, অন্য কোন হাত? যাই হোক সবকিছুর ন্যায়সংগত সমাধান কামনা করি।

এ ঘটনায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি রইল আমার গভীর শ্রদ্ধা, তাদের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহতালা তাদেরকে শান্তিতে রাখুন।

3 thoughts on “রঙ্গীন দুনিয়া – ৭”

  1. TechBaaj : Vai Kotthin naam disen..

    Boymela : Amar dekha shobche kharap boymela aibar .. boy er daam ato beshi… tar upor aibar matro 25% discount dise… age to mone hoy akbar 35% porjonto paytam…Raster upor nia asche onek stall… Tobe BDR ar kahini er jonno boy kinar shomoy melay jayte pari nai… prothome to shudhu dekhsi..

    V-Day: Akta Jogar koren taratari…

    25 february : Hasina er shathe Army officer der kota r Audio ta shunen..Interesting information paybe….Ai audio r jonno Youtube banned chilo BD te..

    1. থ্যাংক্যু… 😀
      আর ভি ডে! এইখানে আমার জান নিয়া টানাটানি তাছাড়া আর সেই বয়স কি আছে! বুড়া হ্য়া গেসি তো! তোমার তো মিয়া সময় আছে, তুমি একখান জোগাড় করে ফেল। 😆

  2. হ্যা খুব কষ্ট লেগেছিল সেদিন বিডিয়ারের কাজ কারবার

Leave a Reply