শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ

ঠিক চল্লিশ বছর আগে ১৯৭১ সালে তোমার জন্ম হয়েছিল। দেখতে দেখতে ঠিক চল্লিশটা বছর পার হয়ে গেল। চল্লিশ বছরে দেশের বড় বড় লোকেরা তোমাকে কেটকুটে খাচ্ছে প্রতিদিন। জন্মের পরপরই তুমি পেয়েছ ফারাক্কা, এবার হয়তো টিপাইমুখটাও পেয়ে যাবে। উড়ালসেতু, পদ্মাসেতু, পাতালসেতু – এইসব গালভরা নামের সাথে সেইসব বড়লোকেরা তোমাকে সেতু কেলেঙ্কারীতে ফাঁসিয়ে দেয়। ট্রানজিট নামের এক ‘ভদ্রতার’ কারণে তোমার ভেতর দিয়ে অন্য দেশের যন্ত্র দানবকে নিঃসংকোচে চলে যাবার অনুমতি দেয় – এসব দানবরা যে তোমার হার-পাঁজড় গুড়িয়ে দেবে সেটা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র উৎকন্ঠা নেই। এইসব বড় বড় লোকেরা, তোমার খাঁটি সন্তানদের, যারা তোমাকে স্বাধীন করেছিল, তাদেরকে দেয়নি কিছুই। নোবেল পুরস্কার পেয়ে বিশ্ব দরবারে তোমার নাম উজ্জ্বল করা এক সন্তানকে নিয়ে কেটেকুটে ফেলতে চেয়েছিল অনেকেই। ওরা এটুকুও অনুভব করেনি যে নিজের ভাইকে চড় দিলে সেটা নিজের গায়েই লাগে। চল্লিশ বছর আগে, তোমার মেধাবী সন্তানদের যারা মেরে সাপ করে ফেলেছিল, সেসব খুনীগুলো কিন্তু এখনো বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে – তাদের কিছুই হয়নি – বড় বড় লোকেরা তাদের কিছুই করেনি! ঘুষাঘুষি আর দুর্নীতি করে সেসব বড় বড় লোকেরা এখন বিদেশ বিভুঁইয়ে বাড়ি গাড়ি করে। কেউ কেউ তোমাকে শাসন করে, কেউ কেউ আবার তোমাকে শাসন করতে না পেরে ভিন্ন ভিন্ন পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে। তোমাকে ওরা পন্য হিসেবেই দেখে, তোমার কোন দাম তাদের কাছে নেই।

তবে তুমি চিন্তা করোনা। এখনো তোমার অনেক সন্তান আছে যারা তোমাকে নিয়ে ভাবে, তোমার কষ্ট তাদেরকেও ছুঁয়ে যায়। যারা দিনরাত চেষ্টা করছে তোমার মলিন মুখে একটু আলোর ছটা আনতে। তাদের বিশাল স্বপ্ন জুড়ে শুধু তুমিই আছ। তোমার এইসব সন্তানরা আছে দেখেই আমরা স্বস্তি পাই, আমারা আশার আলো দেখি।

তোমার এই চল্লিশ বছরের জন্মদিনে যেন সেইসব মেকী দেশপ্রেমিক বড় বড় লোকরা মুখ থুবড়ে পড়ে আর তোমার সত্যিকারের সন্তানরা যেন মাথা তুলে তোমার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে – সেই দোয়াই করি।

2 thoughts on “শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ”

  1. আমিও আজকে শুভ জন্মদিন বলেছিলাম কিন্তু ফেবুতে একজন ফ্রেন্ডের স্ট্যাটাস

    “বাংলাদেশের জন্মদিন যদি হতেই হয় তবে সেটা হবে ২৬শে মার্চ।স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম।সরকার গঠন করে স্বাধীন দেশের জন্য যে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক স্বীকৃতি দরকার হয়, তাও ১৬ ডিসেম্বরের আগেই ছিল।আর ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালটা হয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যে যুদ্ধ হয়েছিল সেটার সময়কাল।১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস।স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভের দিবস।”

    1. আমি ব্যপারটাকে দেখি অন্যভাবে। একটা বাচ্চা যেমন দশমাস মায়ের গর্ভে থেকে পৃথিবীর মুখ দেখে, বাংলাদেশও তেমনি নয় মাস সুপ্ত থেকে আলোর মুখ দেখেছে। অন্যভাবে বলি। মাটিতে বীজ ফেললেই সাথে সাথে গাছ জন্মায়না। প্রথম চারা মাটির উপরে উঠতে কিছুদিন সময় নেয়। চারা গজাবার সেই ক্ষণটাই হচ্ছে গাছটির জন্মক্ষণ। ২৬ মার্চ হচ্ছে বীজ বপন করার ক্ষণটা, যেদিন বাংলাদেশ নামক মহীরুহটার বীজ বপন করা হয়েছিল। তারপর নয় মাস ধরে সেটাকে লালন পালন করা হয়েছে, বাইরের বিভিন্ন ঝঞ্জা থেকে রক্ষা করা হয়েছে। নয় মাস পর বাংলাদেশ চারা হয়ে প্রথম সূর্যের মুখ দেখে। তাই আমার হিসেবে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্মদিন। 🙂

Leave a Reply