উৎপলের উৎপাত আর কত?

আগেই বলে রাখি যে আমি ক্রিকেটবোদ্ধা নই, ক্রিকেটপ্রেমীও নই। টিভির সামনে টানা বসে ক্রিকেট খেলা দেখিনা, ধৈর্য হয়না। টুয়েন্টি-টুয়েন্টি, ওয়ান্ডে বা টেস্ট যাই হোক না কেন – বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ম্যাচ শেষে ফলাফলটা জেনে নেই। ওটাই আমার জন্য অনেক কিছু। তবে বাংলাদেশের খেলা থাকলে অবশ্য অন্য কথা। টেস্ট ছাড়া বাকী দুটো’র জন্য কিছুক্ষণ পর পরই আপডেট জানা দরকার হয়ে পড়ে। সোজা কথা, দর্শক হিসেবে বাংলাদেশের একজন সাধারণ মাপের দর্শকের চেয়েও আমার অবস্থান অনেক নিচে। ক্রিকেটের প্রতি টান নেই, তবে টান রয়েছে বাংলাদেশের প্রতি। তাই ক্রিকেট খেলতে যখন বাংলাদেশ মাঠে নামে, তখন এই টানটাই আমাকে সেই ম্যাচে বুঁদ হয়ে থাকতে অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই আমার এই লেখাটিকে ক্রিকেটিয়-বিশ্লেষণ ধরণের কিছু মনে করবার কোন কারণ নেই। গত কয়েকদিন ধরে উৎপল শুভ্র নামের এক সাংবাদিকের হাগড়পাগড় রিপোর্টিং পড়ে নিতান্তই মেজাজ খারাপ হয়ে এই লেখাটির জন্ম।


মাঝে মাঝে খুব অবাক হই যখন তাকিয়ে দেখি যে ২৩-২৪ বছরের ছেলেগুলো কী দৃপ্তভাবে সামনে থেকে আমার হত দরিদ্র দেশটিকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে! যখন ২৩-২৪ বছরের নিজের দিকে তাকাই, যখন চিন্তা করি যে ষোল কোটি মানুষকে তুলে ধরা ঐ ছেলেগুলোর তুলনায় আমি নিজে কি করেছি, তখন ছেলেগুলোর জন্য এক ধরনের গর্বে বুক ভরে যায়। ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন সাকিবের কথাই ধরুন। ষোল কোটি মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে ছেলেটি ১১ জনের একটি দলকে বিশ্ব পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমার ২৩ বছর বয়সে যদি আমাকে এই কাজটা দেয়া হত তাহলে ভয়ে আদৌ নিতাম কিনা কে জানে! অবশ্য আমার নেয়ার আগেও বড় কথা হচ্ছে আমাকে দেয়া হত কিনা! আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি, খেলাটাকে উপভোগ করার যোগ্যতা থাকলেও খেলাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় দলের অধিনয়াকত্ব করার নূন্যতম যোগ্যতাও আমার নেই। যে কাজে আমার যোগ্যতা নেই, সেই কাজটিই যখন তরুণ একজন ছেলে অসম্ভব অবিচলভাবে দৃপ্ততার সাথে করে চলেছে তখন তাকে স্যালুট জানাতেই হয়। সতেরই ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজেদের অধিনায়ককের তাই দেশের মানুষ বরণ করে নিয়েছিল তুমুল হর্ষধ্বনির মাঝ দিয়ে। সেই হর্ষধ্বনি কিন্তু বাংলাদেশ দলের প্রতি দেশের মানুষের বিশ্বাস ও ভালোবাসার অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ। সাকিব আল হাসানকে যখন অধিনায়ক করা হয় তখন তার যোগ্যতা, তার মেধা, তার অতীত পারদর্শীতা, সর্বোপরি তার জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা – সব কিছুকেই বিচার করা হয়েছে। সাকিবকে অধিনায়ক ঘোষণার পর কাউকে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কোন ধরনের আক্ষেপ পর্যন্ত করতে শোনা যায়নি, বরং সবাই আশস্তই হয়েছিল! কারণ সাকিব আল হাসান লোকজনের কাছে সেই বিশ্বাস অর্জন করেছিল।


ভীষণ ব্যস্ততায় ইদানিং দিন কাটাচ্ছি। এরই মাঝে সময় বের করে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতে বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা দেখলাম। আগেই বলেছি ক্রিকেট বুঝিনা। তারপরও ভারতের বিশাল রানের পাহাড় দেখে মন খারাপ হয়েছিল, কিন্তু তামিম আর ইমরুলের ব্যাটিং সূচনা দেখে সেই মন খারাপ ভাবটা বেশিক্ষণ থাকেনি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচে হেরে গেলেও অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে নিজের ভেতরের মন খারাপ ভাবটা আর ছিলনা। বাংলাদেশের “বিনা যুদ্ধে নাহি দেব ছাড়” ধরণের মানসিকতাটা ছিল দেখার মত। দ্বিতীয় ইনিংস দেখে একবারও মনে হয়নি যে বাংলাদেশ খেলা নিয়ে বিচলিত, তারা আগে থেকেই হার মেনে নিয়েছে – বরং ভারতের মাঝেও একসময় আতংক তৈরি করেছিল। খেলা শেষে যার সাথেই কথা হয়েছে কারো মুখে বাংলাদেশ দলকে আক্রমন করে কিছু বলতে শুনিনি, তাই ভেবেছিলাম যে দলের স্পোর্টসম্যানশিপে সবাই খুশি। ভুল ভেবেছিলাম। সবাই যে খুশি নয় সেটা জানতে পারলাম পরদিন – প্রথম আলোর সাংবাদিক উৎপল শুভ্র’র লেখা পড়ে!


২০শে ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে “পরাজয়ে প্রাপ্তি ভবিষ্যতের রসদ” নামে উৎপল শুভ্র’র একটা লেখা বের হয়। লেখাটার প্রায় প্রতিটি লাইনেই বাংলাদেশ দলের পারফর্ম্যান্সে লেখকের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। এক পর্যায়ে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্তের জন্য সাকিবকে কাটাছেঁড়া করে ফেললেন। তারপর দিন ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সাকিবের এক সাক্ষাৎকারে একই লেখক সাকিবকে পুরোপুরি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একের পর এক আক্রমন চালিয়ে গেলেন। লেখাটাকে সাক্ষাৎকার না বলে বরং পুলিশি জেরা বললে আরো মানানসই হয়। যেকোন মূল্যেই তিনি চাচ্ছিলেন সাকিবের মুখ থেকে শুধু একটি কথা বের করতে যে “টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে আমি ভুল করেছি!“। তার জেরার শিরোনামটাই ছিল “টস নিয়ে এত কথা বলার কারণ দেখছি না“, পড়ে মনে হচ্ছে যেন সাকিব তার টসে করা ‘ভুল‘টাকে ধামাচাপা দিতে চাইছেন। সেই সাক্ষাৎকারে (পড়ুন ‘জেরা’) করা কয়েকটি নমুনা প্রশ্ন দেখুনঃ

  • টসে জিতে আপনার ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত তো এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’…
  • আমজনতার মুখে মুখে একটা কথা ফিরছে, বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করলে ভারত চাপে পড়ে যেত। আপনি একমত?
  • ঠিক আছে, আপনি ক্রিকেটীয় যুক্তিবুদ্ধি দিয়েই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিং-তাণ্ডবের সময় কখনো ‘ভুলই করলাম কি না’ মনে হয়নি?
  • আলোচনাটা কি টিম মিটিংয়ে হয়েছে, নাকি টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে?
  • প্রশ্নটা আবার করছি, ভারত ৩০ ওভারেই ২ উইকেটে ১৬৯ করে ফেলার পর সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়েছে কি না, এ নিয়ে নিজের মধ্যে একটুও দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়নি?
  • সিদ্ধান্তটা বুমেরাং হয়ে যাওয়ার মূল কারণ কী?
  • ৩৭০ হয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ কারণ তো বীরেন্দর শেবাগ। ও যখন ওভাবে মারছিল, অসহায় লাগছিল না?
  • এই ম্যাচ নিয়ে এমন হাইপ, মাঠভর্তি দর্শক—টস করতে নামার সময় কি একটু নার্ভাস লাগছিল?
  • ৩৭১ টার্গেট হয়ে গেলে অধিনায়কের কী-ই বা বলার থাকে! তার পরও জিজ্ঞেস করি, ব্যাটসম্যানদের আপনি কী বলেছিলেন?

বাংলাদেশ এখন আর সেই অবস্থায় নেই যে কেবলমাত্র “আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি” সেই আনন্দেই সবাই ভাসছে, বরং বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত। প্রতিটি ম্যাচেই জয়ের লক্ষ্য নিয়েই খেলতে নামে। ভারতের বিপক্ষের ম্যাচ হারায় স্বভাবতই দলের মানসিক অবস্থা খারাপ থাকার কথা, আর এ খারাপ সময়ে দলকে সামনের ম্যাচের জন্য চাঙ্গা করে রাখাটাও জরুরি – এটা বোঝার জন্য মনস্তত্ববিদ হবার দরকার পড়েনা। অথচ আমাদের সাংবাদিক সাহেব যেন সেই কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে আনন্দ অন্বেষণে ব্যস্ত! কেন সাকিব টসে জিতে ফিল্ডিং নিলেন, সেই গূঢ় তত্ত্ব জানতে তিনি বদ্ধ পরিকর। তাই ২২শে ফেব্রুয়ারির পত্রিকায়ও দেখা গেল যে “ঝিমিয়ে পড়ল কি বিশ্বকাপ-নগর!” লেখাটিতেও বাংলাদেশ দল কেন নিজেদের উজ্জীবিত করতে শহীদ মিনারে যায়নি সেটা নিয়ে শেষ লাইনে সাকিবকে খোঁচাতে কার্পণ্যবোধ করেননি। শহীদ মিনারে গিয়ে দল মানসিকভাবে চাঙ্গা হত ঠিকই কিন্তু তাই বলে কেন যায়নি সেটা নিয়ে মায়াকান্না করার কোন কারণ তো দেখিনা। একটা কারণ হতে পারে – সাকিবের দোষ ধরা! তার লেখার শেষ লাইনটি ছিল এরকম – “ভালো তো হতোই। কিন্তু বাংলাদেশ দলে এভাবে ভাবার লোক কোথায়?” এর মানে কি? সাকিব দল নিয়ে ভাবেননা? সব ভাবনা কেবল আমাদের উৎপল শুভ্র’র মাথায়?


দান দান তিন দান” কিংবা “দিন দিন তিন দিন“! পর পর তিন দিন ধরে উৎপল শুভ্র সাকিবকে খুঁচিয়েই যাচ্ছেন। খুব জানতে ইচ্ছা করে কেন করছেন তিনি এটা? তিনি কি জানেন যে কত রকম বিচার বিশ্লেষণ আর পরীক্ষার নীরিক্ষার মাধ্যমে একজন অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়? তিনি কি জানেন না যে টস জিতে ব্যাটিং বা ফিল্ডিং নেবার স্বিদ্ধান্ত কেবল মাত্র অধিনায়ক নেননা? তিনি কি জানেননা বাংলাদেশ দল গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটা খেলেছে তাদের প্রথম খেলায়? তিনি কি জানেন যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আরো ম্যাচ বাকী রয়েছে? মনে হয়না। নাহলে চলমান একটা টুর্নামেন্টে নিজের দেশের অধিনায়কের পেছনে এভাবে আদাজল খেয়ে লাগার অর্থ কি? সাবোটাজ? এ ছাড়া তো আর কিছু মাথায় আসছেনা? তিনি কি ইচ্ছে করেই সাবোটাজ করছেন? ইচ্ছে করেই ভেঙ্গে দিচ্ছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মানসিক শক্তি? সামনের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ যদি খারাপ করে তবে আমার তর্জনী উঠবে উৎপল শুভ্রের দিকে। আমি সব দোষ দিব উৎপল শুভ্র নামের ঐ লোকটাকে, যে কিনা আমার অধিনায়ককে হায়েনার মত নির্লজ্জভাবে কাটাকুটি করেছে!


সাকিব এই অংশটুকু তোমার জন্য ভাই! তুমি যে মাঠে স্পোর্টসম্যানশিপ আর মাঠের বাইরে স্পোকম্যানশিপের পরিচয় দিয়েছ সেটা সত্যিই অতুলনীয়। সত্যি বলতে কী আমার নগন্য ক্রিকেটিয় বিদ্যায় আমি যা বুঝি যে, বাংলাদেশ খুব ভাল এবং যোগ্য একজন অধিনায়কের হাতে রয়েছে, যে কিনা গত কয়েকমাসে আমাদের বড় বড় স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। উৎপল শুভ্ররা ক্ষণিকের অতিথি, এদেরকে কেউ মনে রাখেনা, মনে রাখবেওনা। দেশের লোক উৎপল শুভ্রকে চেনেনা, ওরা চেনে তোমাকে। তাই তো তুমি যখন রিকশা চড়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রবেশ করলে দেশের লোক সজোরে করতালি দিয়ে তোমাকে বরণ করে নিয়েছিল। উৎপল শুভ্ররা কখনোই তোমাকে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারবেনা, তাই ভুলে যাও সেসব লোকদের কথা। ষোল কোটি মানুষের লাল-সবুজ পতাকাটিকে তুমি তোমার দলকে সঙ্গী করে এগিয়ে নিয়ে যাও – আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।


আর কিছু বলার নেই, কেবলমাত্র নিচের ভিডিওটি ছাড়া!


লেখাটি সচলায়তনে প্রকাশিত।

15 thoughts on “উৎপলের উৎপাত আর কত?”

  1. Pingback: Topsy.com
  2. Utpol Shuvro is one of the worst reporter in my life!I’ve already complained many times about him.There were some forum topics against him in Projanmo.

    Shakib is the one of the best sportsman of the world.He knows what to do.How to control nerves in the big match!He knows very well about strategy & planning.

    Who is the hell Utpol Shuvro to talk about him?

    He’s also after Mashrafee & Jamie Siddons for the past few months.He was the main criminial about the quarrel between them.

  3. অসংখ্য ধন্যবাদ অভ্রনীল ভাইকে এমন একটা লেখার জন্য। লেখাটা কয়েকটা ব্লগ-ফোরামে দেখলাম। তারপরও এটা জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের চোখে পড়ার সম্ভাবনা কম।

    সম্ভব হলে লেখাটা সাকিবকে ই-মেইল করুন। কিংবা কোন পত্রিকায় ছাপাতে পারলে আরো ভাল হয়। এসময় এধরনের লেখা দলকে সাহস যোগাবে।

    1. আমার কাছে ওদের কারো ইমেইল থাকলে অবশ্যই পাঠাতাম, দুঃখের বিষয় সেটা নেই। তাই আপাতত পুরো নেটে ছড়িয়ে দিয়ে একটা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে যদি বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে জাতীয় দলের কারো কাছে চলে যায়!

  4. উন্মাতাল তারুণ্য ভাই, এর নাম দিয়েছেন “পৈতাল সাংবাদিকতা”। এ লেখাটি যদি শুক্রবারের আগে কোনভাবে সাকিব- এর কাছে পৌঁছানো যেতো, শুধু ওর নয় পুরো দলের ভেতর এ লেখা টনিকের মতো কাজ করতো।

    সহস্র ধন্যবাদ।

    1. সরাসরি পাঠাবার কোন রাস্তা তো আমার কাছে নেই, তবে সবাই মিলে ফেসবুক, টুইটার আর বাজ করে এই লেখাটা ছড়িয়ে দিতে পারলে হয়তো ক্রিকেট দলের কারো কাছে চলেও যেতে পারে।

  5. অভ্রনীল ভাই উতপল শুভ্র কি জিনীস সে ব্যাপারে আলোচনা করতে হলে আরো জানতে হবে ভাই। আমি, আমার পুরো পরিবার তার ফ্যান। কি পরিমান অসাধারন ক্রীড়া সাংবাদিক তা আপনি তার বিশ্বকাপের সময়কার কিছু লেখা/আগের লেখাগুলো পড়লে বুঝতে পারতেন। আসলে আমার জেটা মনে হয় তা হোল প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সন/বিভিন্ন ব্লগ এ সব জায়গায় সাকিবের সমালোচনা হয়েছে। এ কারনেই সবার জিজ্ঞাসাগুলো শুভ্রদা তার মুখ থেকে করেছেন। প্রথম আলোতেই কিন্তু সাকিবের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছিল যে মিরপুরের মাঠে পরে ব্যাটিং করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড অনেক বেশী।

    অভ্রনীল ভাই আপনি অসাধারন লেখেন। তাই আমার ব্যাক্তিগত অনুরোধ থাকবে আপনি তার এক বা গুটিকয়েক লেখা দেখে মূল্যায়ন না করে আগের লেখাগুলো ও পড়ে দেখুন। শুভ্রদা বাংলদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতার একজন দিকপাল-অন্তত আমি বিশ্বাষ করি…

    1. আপনাকে আঘাত দিয়ে থাকলে আমি দুঃখিত।

      আসলে উৎপল শুভ্রকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা, তার ওপর আমার পূর্ব ঘোষিত কোন রাগও নেই। কিন্তু তিনি যদি “আমার” জাতীয় দলের অধিনায়ককে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলেন তাহলে তো আমি চুপ করে থাকবোনা! দল হেরে যাবার পর দুইভাবে সমালোচনা করা যায় – গঠনমূলক সমালোচনা আর বিধ্বংসী সমালোচনা। তার মত “দিকপাল” সাংবাদিকের তো অন্তত এটা বোঝা উচিত যে বিশ্বকাপের মত বিশাল পরিসরের আসরের প্রথম ম্যাচ খেলে হেরে গেলে এবং প্রথম রাউন্ডের আরো ম্যাচ বাকী থাকলে – একটা দলকে, তাও আবার নিজের দেশের দলকে কিভাবে সমালোচনা করা উচিৎ! কোথায় তিনি দলের মনোবল অটুট রাখার জন্য লিখবেন, সাকিবের ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন, তা না করে পরপর তিনদিন ধরে তিনি সাকিবকে টস নিয়ে খুঁচিয়েছেন, লোকজন প্রতিবাদ না করলে আরো যে খোঁচাতেন সেটা স্পষ্ট। একবার চিন্তা করে দেখুন, প্রথম আলোতে প্রকাশিত সাকিবের “জেরা”টি পড়ার পর সাকিবের মন মানসিকতা ঠিক থাকবে কিনা? সাকিবের জায়গায় আপনি হলে কি করতেন?

      সমালোচনা করার অনেক সুযোগ আছে, তবে তা সাকিবের “টস জিতে ফিল্ডিং” নেওয়ার সাথে সম্পর্কিত না। যেমন ধরুনঃ
      – নতুন বলের বোলারদের লাইন-লেংথ এত বাজে ছিল কেন
      – পাওয়ার-প্লে নিতে কেন এত অনীহা
      – রকিবুলকে বসিয়ে কেন মুশফিককে নামানো হলো
      ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন করা যেত। দেশের মানুষের মনে এসব প্রশ্নই দেখা দিয়েছিল। তাই অধিনায়ক সাকিবকে এই প্রশ্নগুলো করা খুবই যুক্তিযুক্ত। তা না করে স্রেফ টস নিয়ে এভাবে লিঞ্চ করা অনর্থক, আপত্তিকর।

      ক্রিকেটে টিম ম্যানেজমেন্ট-কোচ-খেলোয়াড়দের সম্মিলিত ম্যাচপূর্ব মিটিংয়ে ঠিক হয়ে থাকে টসে জিতলে কি করণীয়। অধিনায়ক কেবল মাঠে গিয়ে সেটা মুখ দিয়ে বলেন, এর বেশি কিছু নয়। অতএব, দোষ দিতে চাইলে সেটা সকলের ঘাড়ে চাপানোই উচিৎ। সাকিব আল হাসানের কাঁধে এখন ষোল কোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ। যার উপর আমরা প্রত্যাশা তুলে দিতে কার্পণ্যবোধ করিনা, তাকে সমর্থন দিতেও আমরা কার্পণ্যবোধ করবনা। তিনি ভুল করলেও আমরা তার পাশেই আছি।

  6. লিখাটি বিসিবি’র এই ঠিকানায় মেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছি গত রাতে।
    info@bcb-cricket.com
    এবং মেইলে অবশ্যই এখানকার লিঙ্কও দিয়েছি।

    মেইলের শুরুতেই বলেছিঃ-

    “স্যার,

    লিখাটি শুক্রবারের আগে সাকিব এর কাছে পৌঁছাতে চাই। কিন্তু কোন উপায় জানা না থাকায় আপনাকে মেইল করতে বাধ্য হলাম।”

Leave a Reply