আবার উল্টো পথে…

দুই বছর, মাত্র দুই বছরের মাথায় আবারো আমি পুরনো জীবনে ফেরৎ আসলাম। পুরনো জীবন মানে সেই জীবন জ্ঞান হবার পরই যে জীবনে অভ্যস্ত ছিলাম। যে জীবন শুরু হয়েছিলো স্কুল দিয়ে। সেই একই কাহিনী, সকালে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া, টীচারদের লেকচার শোনা, বাসায় ফেরা। পুরোপুরি বাঁধাহীন একটা জীবন। কে কি ভাবলো তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন কষ্ট নেই। যা খুশি তাই করার জীবন।

দুই বছর আগে বিজলী মিস্ত্রী হবার প্রথম সনদ পেয়েছিলাম। সনদ পেয়ে এক পাঠশালায় বিজলী মিস্ত্রী তৈরীর কারিগর হিসেবে ঢুকে পড়লাম। সেই সাথে পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। ছাত্রত্বের সব স্বাধীনতা চোখের পলকে উধাও হয়ে গেল। আচার আচরনে গাম্ভীর্য আনতে হল। ফরমাল জামাকাপড় পরার অভ্যাস করতে হল। মেপে মেপে কথা বলার ধরন রপ্ত করতে হল। এক সময় আমি ছিলাম ছাত্র। কিন্তু সময় পালটে এখন আমার কত ছাত্র! এদের সামনে তো আর ফালতু তাফালিং করা চলেনা। বলতে গেলে আমার পুরো জীবনটাই এক লহমায় বদলে গেল।

বদলানো জীবনের প্রথম দিকে বেশ খারাপ লাগত, পরে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিচ্ছিলাম। তারপর হঠাৎ কি মনে হল, আরো পড়াশুনা করার ইচ্ছা জাগলো মনে। এটুকু পড়ে হয়ত সবাই ভাববে যে – নাহ্‌ ছেলেতো বেশ পড়ুয়া, নাহলে আবার কেনো পড়াশুনা করার সাধ জাগে? নিজেকে পড়ুয়া ভাবতে আমারও ভালো লাগে, কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে যে আমি মোটেও তেমন না। আমার চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোনদের কাছে আমি নস্যি। ছোট্ট একটা কাহিনী বলি। ছোট বেলায় আমারা সব ভাইবোন দাদার বাড়িতে ঈদ করতাম। আমার বড় চাচাতো বোন (যে কিনা এখন রাশভারি ডাক্তার) আমার ছয় মাসের বড়। পিঠেপিঠি বলে ওর সাথেই আমার বেশি খাতির। এই কাহিনীটা যখনকার তখন আমরা সবাই প্রায় গুঁড়া বাচ্চা, মাত্র নামতা শেখা শুরু করেছি। ঈদের দিন সকালে সবার সাথে নামাজ পড়তে যাব, হঠাৎ দেখি ও এসে হাজির। খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে বললো, “তাড়াতাড়ি চলে এসো, আজকে নয়ের ঘরের নামতা শিখতে হবে”! যেই ফ্যামিলির বাচ্চাকাচ্চা ঈদের দিন নামতা শেখার কথা বলতে পারে, সেই ফ্যামিলির ছেলে হয়ে নিজেকে বেশ নগন্য লাগে।

যাই হোক আগের কথায় ফেরৎ যাই। আমি মোটেও তেমন পড়ুয়া না। আইইউটিতে এমনও হয়েছে যে পরীক্ষার আগের রাতে মুভি দেখে ঘুমাতে গেছি! তো এই ছেলের আরো পড়াশুনা করার কথা শুনলে অবাক হবারই কথা। কারন আর কিছুই না, চাকরী করতে আর ভাল লাগছিলনা। মাঝে মাঝে মনে হত যেন অল্প বয়সেই বুড়ো হয়ে গেছি। যখন আমার অন্য বন্ধুরা কেউ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বা বুয়েটে পড়াশুনা করছে, সেই সময় কিনা আমি চাকরি করি! তাই চাকরি থেকে বের হয়ে যেতে ইচ্ছা করছিলো। সুযোগ পেয়ে তাই কাজে লাগিয়ে ফেললাম। চাকরী ছাড়তে তাই আমার মধ্যে কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করেনি। পুরনো জীবনে আসতে পেরে আবার বেশ ভাল লাগছে। শুধু পার্থক্য হচ্ছে, এইবার আমাকে থাকতে হচ্ছে দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে। আমি আবার উলটা পথে হাঁটা শুরু করলাম, অচেনা দেশে অচেনা পরিবেশে… দেখা যাক কী হয়…

Leave a Reply